বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দুনিয়ামুখী ও গতানুগতিক কোন রাজনৈতিক দল নয় বরং আমরা বিশ্বমানবতার ইহজাগতিক কল্যাণ ও আখেরাতের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
একই সাথে জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও আদর্শবাদী একটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের কল্যাণে কাজ করতে সব সময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর মানুষের সে কল্যাণকামীতার প্রতিশ্রুতি পালনের অংশ হিসেবে আজ আমরা অগ্নিদুর্গতদের সাথে সহমর্মীতা জানানোর জন্য এসেছি। আশা করি আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস বিপন্ন মানুষের দুর্দশা লাঘবে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। তিনি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের দুর্দশা লাঘব ও দ্রুত পুনর্বাসনে সরকার, সমাজের বিত্তবান মানুষ সহ জামায়াতের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আশার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর রূপনগরে চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে আর্থিক সাহায্য বিতরণকালে এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, রূপনগর থানা আমীর নাসির উদ্দীন ও সেক্রেটারি আবু হানিফ প্রমূখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, গণমানুষের সকল সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু দেশে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না থাকায় নাগরিকরা রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত থাকলে মানুষের যা প্রয়োজন তা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ইনসাফপূর্ণ সমাধান করা হতো। কিন্তু দেশের চলমান নেতিবাচক রাজনীতি ও ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতালিপ্সার কারণেই আমরা সে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। মানুষের সমস্যা অফুরন্ত। কিন্তু আমাদের সাধ্য খুবই সীমিত। আর সীমিত সামর্থ নিয়েই আমরা দুর্গত মানুষের দুর্দশা লাঘবে কাজ করে যাচ্ছি। এতে কেউ ন্যুনতম উপকৃত হলেও আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। মূলত মানুষের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি সেই স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রকোপ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা সত্যিই রহস্যজনক। বিগত দিনের ভয়াবহতম অগ্নিকান্ডগুলো নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো ইতিবাচক কোন ফল বয়ে আনেনি। ঘটনার কারণও জানা যায়নি। দেশে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোন পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় ও প্রয়োজনীয় গণসচেতনার অভাবে অতি তুচ্ছ ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি অগ্নিনির্বাপনে সনাতনী চিন্তা-চেতনা পরিহার এবং এই গণসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগেও অগ্নিনির্বাপনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আমাদের নাগালের বাইরে। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নিশ্চিত করেছে বলে দাবি করলেও তাদের এ দাবির কোন সারবত্তা নেই। সাম্প্রতিক অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোতে যদি সরকারের দাবি মোতাবেক আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা যেত, তাহলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব ছিল।
তিনি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও আশ্রয়হীনদের যথাযথ ক্ষতিপূরুণ সহ সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে পূনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা সহ অর্থিক সাহায্য এবং ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অধ্যাপক মুজিব বিপদে ধৈর্য্য না হারিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সন্মুখ সঙ্কট মোকাবেলা করতেও ক্ষতিগ্রস্থদের পরামর্শ দেন।