বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, আর্ত-মানবতার কল্যাণ্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টি অর্জনই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জামায়াত মানুষের ইহকালীন কল্যাণ, পরকালীন মুক্তি ও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেশ ও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে বিপন্ন মানবতার সেবায় কাজ করে এসেছি এবং তা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে-ইনশা আল্লাহ। আর সে ধারাবাহিকতায় আজ আমরা ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সর্বহারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। দুর্গত মানুষের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনারা সাদরে গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি। তিনি অগ্নিদুর্ঘটনায় সর্বশান্ত ও আশ্রয়হীন মানুষের কল্যাণে সরকার, সমাজের বিত্তবান মানুষ সহ সকল স্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আশার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর রূপনগরের চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে আর্থিক সাহায্য বিতরণকালে এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, রূপনগর থানা আমীর নাসির উদ্দিন, সেক্রেটারি আবু হানিফ, জামায়াত নেতা জামাল উদ্দীন, লিয়াকত আলী ও মোশাররফ হোসেন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, গণমানুষের কল্যাণকামীতা ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তার ধারণা থেকে আধুনিক রাষ্ট্রের ব্যুৎপত্তি ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই নাগরিক জীবনে সৃষ্ট সকল সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ও তথা সরকারের। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও নেতিবাচক ও আদর্শহীন রাজনীতির কারণেই আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থবহ ও সফল হয়ে উঠেনি। ফলে রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। সুবিধা নিচ্ছে অসৎ ও দুর্নীতিবাজরা। তাই সাধারণ মানুষ আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত। মূলত অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিপন্ন মানুষের কল্যাণ ও আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যই জামায়াতে ইসলামীর পথচলা শুরু হয়। আমাদের সাধ অনেক হলেও সাধ্য খুবই সীমিত। আর আমরা সীমিত সামর্থ নিয়েই আর্ত-মানবতার সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তাই গণমানুষের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রকোপ রহস্যজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে নিমতলী ও চকবাজার সহ দেশের ভয়াবহতম অগ্নিকান্ডগুলোর যথাযথ তদন্ত ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এ ধরনের দুঃখজনক প্রবণতা কমেনি বরং অনেকাংশে বেড়েছে। মূলত সরকার সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেই অগ্নি দুর্ঘটনা কেন্দ্রীক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে এই অশুভ বৃত্ত থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশকে ‘ডিজিটালাইজড’ করে ফেলেছে বলে দাবি করলেও সে কথার কোন সারবত্তা নেই। কারণ, আমাদের দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মান আজও সেকেলেই রয়ে গেছে। অগ্নিনির্বাপনেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতে নেই। তাই অগ্নিদুর্ঘটনা সহ যেকোন দুর্যোগে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তিনি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও আশ্রয়হীনদের যথাযথ ক্ষতিপূরুণ সহ যথাযথ পূনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসার সাথে অর্থিক সাহায্য এবং ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।