বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। সে দেশের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ ভারতের পক্ষে থাকবে। দূর্ভাগ্যজনক ও বোকামী সুলভ বক্তব্য কি দরকার ছিলো? কারণ আরেক পরাশক্তি চীন পাকিস্তানের আয়রন ফেন্ড বলে পরিচিত এ ও যুদ্ধে পাকিস্তানের মিত্র। সুতরাং বিনা ভোটের সরকার আগে ভাগে অতিমাত্রার নতজানুতাকে দেশের জনগণ ভালো চোখে দেখেনি। ভারতের উগ্রপন্থী নেতারা প্রতিদিন বাংলাদেশে জমিদখল, ভারতের শাসন জারি, হিন্দুদের পক্ষে হুংকার দিয়ে আসছে। জনগণের সমর্থনহীন সরকার তার প্রতিবাদটুকু পর্যন্ত করছেনা। প্রিয়া সাহাদের ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ মিথ্যাচারেও সরকার নিরব। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের অস্তিত্ব নিয়ে!
”শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ কালপর্বের কারাস্মৃতি নিয়ে গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’তে লিখেছিলেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ভারত, গণতন্ত্রের পথে যেতে রাজি হয় না কেন? কারণ তারা জানে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের মতামত নিলে ভারতের পক্ষে কাশ্মীরের লোক ভোট দেবে না। তাই জুলুম করেই দখল রাখতে হবে।’ কাশ্মীরে শান্তি না আসার জন্য প্রায় ছয় দশক আগে ভারতের ‘একগুঁয়েমিকেই’ দায়ী করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে ‘সুসম্পর্কের’ আবহে থাকা তাঁর দল আওয়ামী লীগ এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সরকার যখন ইস্যুটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে। (উৎসঃ সাউথ এশিয়ান মনিটর)
“কাশ্মীরে চলমান জুলুম-নির্যাতন বন্ধ, স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেয়া এবং উপত্যকা জুড়ে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতিক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। ৯ আগস্ট র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘কাশ্মীর ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আশা করব ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি নিয়ে কেউ দেশে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না।’ সব হুমকি এড়িয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে কাশ্মীর সলিডারিটি কাউন্সিলের ব্যানারে বিক্ষোভ করে কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সঞ্জীব চত্বরে আয়োজন হয় ‘আযাদীর জন্য সিনেমা’ শিরোনামের অনুষ্ঠান। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর এ অনুষ্ঠানে কাশ্মীরীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ লেখক, গবেষক ও বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারা বক্তৃতা করেন।
৫ আগস্ট সন্ধ্যার পরপর খবর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবার আগে রাতের নিরবতা ভাঙ্গেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক তরুন লিখেছেন- যে কারণে আশা হারাতে হয় না। এই তরুণ-তরুণীদের শুধু সংখ্যা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এখানেই আশার বসত। ওরা একদিন বহু গুণ হবে।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তারে সরকারের অজুহাতের সমালোচনা করে ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘এটি পুরোনো ঔপনিবেশিক অজুহাত। ব্রিটিশরা এভাবেই ২০০ বছর ধরে দেশ চালিয়েছিল’। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি আর ‘গর্বিত নন’ বলেও জানিয়েছেন। আর দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রশ্ন-মোদি সরকার কাশ্মীরে কী গোপন করতে চাইছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সমস্যার সমাধান হলোনা। বরং এটাকে বলা যায় ‘কাশ্মীর রক্ষায় মোদির শেষ চেষ্টা’। বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির মাধ্যমে একটি বড় ধরনের ফাটল তৈরি করা হলো। যা ভারতের ইতিহাস ও সংবিধানকে প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা জামান চৌধুরী বলেন, এমনিতে স্বায়ত্তশাসন থাকলেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল কাশ্মীরীরা। তাদের মানবাধিকার ছিলনা, শিক্ষা ছিলনা, স্বাস্থ্যসেবা ছিলনা। এবার তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। আর পুরো উপমহাদেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে মোদি সরকার।
দুনিয়ার মুসলিম দেশগুলোর বিশেষ করে আরব দেশগুলোর শাসকদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ! কাশ্মীরের ঘটনাবলীতে মধ্যপ্রাচ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে যেন। আরব আমিরাত মোদিকে দিয়েছে সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘অর্ডার অব জায়েদ’। বাহরাইন দিয়েছে ‘কিং হামাদ অর্ডার’। এসবই লজ্জার! তার্কী, মালয়েশিয়া, ইরানসহ কয়েকটি দেশ কাশ্মীরের জনগনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণও কাশ্মীরের জনগণের পক্ষে। এখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো পরাশক্তিগুলো যদি জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবি মেনে নিতে ভারতকে বাধ্য করে, তাহলেই শুধু মুক্ত ও স্বাধীন হতে পারে কাশ্মির। দীর্ঘকাল ধরে চলা এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান কাশ্মীরের সমস্যা একমাত্র সমাধান স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- “তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতীত হচ্ছে ? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও। যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল। (সুরা নিসা: ৭৫-৭৬)
আপাত দৃষ্টিতে শয়তান ও তার সাথীরা বিরাট প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে আসে এবং জবরদস্ত কৌশল অবলম্বন করে কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ও কৌশল দেখে ঈমানদারদের ভীত হওয়া উচিত নয় অবশ্যই তাদের সকল প্রস্তুতি ও কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই আজ গোটা মুসলিম উম্মাহকে কাশ্মীরীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পাশে দাঁড়াতে হবে। সাহয্যের হাত বাড়াতে হবে মজলুমের প্রতি বিশ্বমানবতাকে। আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। ইনশাআল্লাহ সেদিন হয়ত বেশী দুরে নয় যেদিন জালিমদের মসনদ ভেঙ্গে অসংখ্য মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম হবে, কাশ্মীরসহ অনেক রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করবে। আমেরিকা বিশ্বের মধ্যে এখনো সামরিক শক্তি, পলেসি, সব দিক থেকে সুপার পাওয়ার হিসাবেই খ্যাত। সেই আমেরিকা ১৮ বছর আফগানিস্থান দখলের ফলাফল ডাবল জিরো” ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” এই প্রবাদের মত। ভারত কোন দিক থেকেই এর কাছকাছি অবস্থায়ও নেই। তারা কাশ্মীর দখল কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন তাই দেখার বিষয়। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এবার কাশ্মীর দখল ইন্ডিয়ানদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে!। সুতরাং ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপই কাশ্মীরের স্বাধীনতার পথকে ত্বরান্মিত করবে।