মীর কাসেম আলী একটি নাম, একটি ইতিহাস, বাংলার উন্নয়নের রূপকার। একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা। মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম, চিন্তা ও কর্মে তিনি বাংলার মাহাথির হিসেবে খ্যাত। মাতৃভূমিকে অপরুপ মহিমায় সাজানোর কারিগর ছিলেন তিনি। উদ্ভাসিত কর্মে তিনি নতুন প্রজন্মেও রোল মডেল। তাঁর যোগ্যতা ও সফল কর্মে ঈর্ষান্বিত হয়ে আওয়ামীলীগ এই প্রাণপুরুষকে হত্যা করেছে। ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শহীদ মীর কাসেম আলী ক্ষণজন্মা একজন প্রতিভাবান উজ্জল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন এদেশের ছাত্র জনতার প্রিয় কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রিয় সভাপতি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সংগঠক, শিল্প উদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, জনকল্যাণ ও সমাজকল্যাণ মূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কারক হিসেবেই সকলের নিকট পরিচিত ও সমাদৃত। কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন হাজার-হাজার বেকার মানুষের। পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায়, দরিদ্র জনগনের। তিনি আজ নেই। কিন্তু রয়েছে তার বিপুল কর্ম, তার গড়া প্রতিষ্ঠান। যা দেশের মানুষকে সেবা দিয়ে যাবে বহুকাল। শহীদ মীর কাসেম আলী বাংলার মানুষের হৃদয়ে জাগরুক থাকবেন শতাব্দী থেকে শতাব্দী। অবিস্বরণীয় হয়ে থাকবেন স্ব-মহিমায়।
শহীদ মীর কাসেম আলী প্রিয় জন্মভূমির কল্যাণে নিজের মেধা, যোগ্যতা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। একটি সপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে দিন রাত পরিশ্রম করে গেছেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক ও উন্নয়ন বান্ধব লোক যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন, তবে তা ইতিহাসের এক অপদৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মীর কাসেম আলীকে ন্যায় বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” (৫৭:২৫) অন্যত্র বলা হয়েছে-“আল্লাহ তা’আলা কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?”(৯৫ঃ৮)
পৃথিবীর সকল নীতি-নৈতিকতা, মানবাধিকার লংঘন করে ইতোপূর্বে জামায়াতের ৪ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। ২ জন কারাগারে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্ল¬াহর গযব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।” (৪ ঃ ৯৩)
মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার সূতালরী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মীর তৈয়ব আলী সড়ক জনপথ বিভাগের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন। তার চাচা মীর মোশাররফ হোসেন সূতালরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।
পিতার চাকুরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয়েছে মীর কাসেম আলীকে। প্রাথমিক স্তরে পড়াশুনা করেছেন বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়। মীর কাসেম আলী শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি। ১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য।
১৯৭৮ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা রাবেতা আলম আল ইসলামীর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন। তাঁর রাজনীতি ছিল সমাজসেবা। গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যাংক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে গ্রাম, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি সারা দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। পিছিয়ে পড়া চর ও পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন।
শহীদ মীর কাসেম আলী আল-কুরআনের একজন নিবেদিত খাদেম। বাংলাদেশে ব্যাংকিং জগতের আলোড়ন সৃষ্টিকারী, ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই তাঁকে হত্যা করতে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। তিনি মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপনে ভূমিকা পালন ও দেশে বিদেশে মানবিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। অসংখ্য প্রতিভার অধিকারী এই মহান ব্যক্তিত্বকে আওয়ামীলীগ আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যার হীন পথ বেছে নিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।” (৮৫:৮)
আওয়ামী লীগ গোটা জাতিকে বিভেদ, হিংসা আর অ-মানবিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজে আজ গণহত্যাকারী, খুনী, কোটি-কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, লম্পট, চরিত্রহীনরা এখন দেশপ্রেমিক। নিরাপরাধীদেরকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে মিডিয়া ট্রায়াল আর বিকৃত উপস্থাপনার মাধ্যমে বানানো হচ্ছে মানবতা বিরোধী!
এই সাহসী বীরেরা জীবন দিয়ে অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়াবার যে দীক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন তা থেকে এদেশের তরুন প্রজন্ম প্রেরণা লাভ করবে। নিজের আদরের সন্তান আরমান গুম হওয়ার পর আত্নীয়-স্বজন প্রত্যেকে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা আওয়ামী বামদের সবচেয়ে বেশী উদ্বীগ্নতায় ফেলে দিয়েছে। শহীদের পরিবারের বিদায় বেলার “ভি” চিহ্ন বাতিলদের হতাশায় নিমজ্জিত করেছে।
মীর কাসেম আলীর সাথে শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে সকালে তার দুই মেয়ে ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। সুমাইয়া রাবেয়া লিখেছেন: ‘আমার আব্বু নরম মনের মানুষ। প্রতিবার বক্তব্য দিতে উঠলে কেঁদে ফেলতেন। এটা সবাই জানেন। এর আগে যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন আব্বুর চেহারায় বিন্দুমাত্র বিচলতা দেখিনি বরং সবার সাথে হাসিখুশি ছিলেন। তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আব্বু, আমাদের ভাইবোনের জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাতের সুপারিশ করবানা? আব্বু একগাল হেসে বললেন, শুধু তোমরা না, আমার নাতি-নাতনী, বউমা, জামাই সবার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করব। আমরা সবাই হেসে দিয়েছিলাম।
আজকে আবার আব্বুকে দেখতে যাচ্ছি। শেষবারের মতো। কাল আব্বু থাকবে না এ নিয়ে আমরা দুঃখিত নই। শাহাদাতের মর্যাদা কজনের ভাগ্যে জোটে? এ মৃত্যুর জন্যই তো সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহ আমার আব্বুকে কবুল করে নিন।’
তাহেরা তাসনিম লিখেছেন: ‘সবাই আমার বাবা মীর কাসেম আলীর জন্য দোয়া করবেন যেন তিনি জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হতে পারেন! আর আমাদের, তার পরিবারকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দেন এবং এ দেশ ও জাতিকে তার চলে যাওয়াতে অর্থনীতি ও দেশসেবায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে, তা কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দিন। আমিন”।
এই সাহসী বীরেরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার মাধ্যমে লক্ষ-কোটি ছাত্র জনতার ঈমানী শক্তিকে শাণিত করেছে। কারণ জীবন-মৃত্যুর মালিক কেবল আল্লাহই। তাই কোন মানুষের কাছে প্রাণ-ভিক্ষা কোন ঈমানদার চাইতে পারে না। কবির ভাষায়-আমার জীবন দিতে পারি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে পারি না।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাহসী ও বীর সুলভ উচ্চারণ- অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কারীদের এক কাতারে আবদ্ধ করেছে। যারা এই নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে এই দেশকে নতজানু বানিয়ে তাদের লক্ষ হাসিল করতে চায় তাদের ষড়যন্ত্র বুমেরাং হবে ইনশাল্লাহ।
শহীদরা মৃত নন অমর। আল্লাহ বলেন- “আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না। তাঁরা আসলে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না।” (২:১৫৪) তারা আল্লাহ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। আল্লাহ বলেন- “যারা আল্লাহর ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাই তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’ ও ‘শহীদ’ বলে গণ্য। তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে। আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা।” (৫৭:১৯)
হযরত রাশেদ বিন সা’দ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কী? হুজুর (সা.) জবাবে বললেন, “তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট।”
মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ শহীদ মীর কাসেম আলী দেশবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। তিনি ছিলেন দূর্নীতিমুক্ত ও ইনাসফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামে অগ্রসেনানী। যারা সারা জীবন মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান করেছেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা, দক্ষতা দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে। মানুষের হৃদয় থেকে এই মহান সংগ্রামী প্রাণপুরুষদের মুছে ফেলা যাবেনা।
মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের উপাধি ‘শহীদ’। শহীদেরা আল্লাহর মেহমান। শহীদেরা এখন সেই উপাধিতে ভূষিত। এটি দুনিয়ার জীবনে পরম পাওয়া। মহান সিপাহসালারদেরকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। শহীদেরা আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। এগিয়ে যাওয়ার দুরান্ত সাহস। অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়াবার দ্বিগবিজয়ী নেতা। শহীদের নাম বিশ্বব্যাপী এখন উচ্চারিত হয় মর্যাদার সাথে। যতদিন পৃথিবীত থাকবে দুনিয়ার কোন না কোন স্থানে তাঁদের নাম উচ্চারিত হবে। শহীদদের জন্য দোয়া করবে, চোখের পানি ঝরাবে, বায়তুল্লাহর গেলাফ ধরে দোয়া করতে থাকবে। বিনিদ্র রজনীতে বুক ভাসাবে আর খুনিদের অভিশাপ দিতে থাকবে। শহীদেরা আমাদের সেরা সম্পদ। গড়ে গেছেন সাহসের দ্বিধাহীন রাজপথ।
শহীদ কাসেমকে হত্যা করে তাঁর স্বপ্নকে স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি এদেশের ছাত্রজনতার হৃদয়ের স্পন্দন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রিয় সভাপতি। তাঁর রেখে যাওয়া স্বপ্ন লালনকারী ছাত্র-যুবকের সংখ্যা এখন লক্ষ-কোটি। যা দেশের সীমানা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। সুতরাং মীর কাসেমের রক্ত থেকে লক্ষ-কোটি কাসেম শপথ নিয়ে তাঁর আদর্শ কায়েমের জন্য আজ বদ্ধপরিকর। শহীদ মীর কাসেম আলী ৬৩ বছর বয়সে তাঁর মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স¤্রাট মোহাম্মদ বিন কাসেমের যোগ্য উত্তরসূরীর সাক্ষর রেখেছেন। এ জাতি এই সাহসী বীরের অবদানকে স্মরণ রাখবে শতাব্দী থেকে শতাব্দীকাল।
শেষ সাক্ষাতের পুরো সময়টাতে মীর কাসেম আলী ছিলেন প্রাঞ্জল, হাসিখুশি ও স্বাভাবিক। হাসিমুখে হাত নেড়ে পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। মৃত্যুদন্ডের ঘটনায় তিনি বিচলিতও নন। এই মৃত্যু শহীদী মৃত্যু। ‘যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি করেছে তারা কখনোই জয়ী হবে না।’ সাক্ষাতের সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন, তার উপর জুলুম করা হয়েছে। একদিন এর অবসান হবে। তিনি বলেন, আমরাই চূড়ান্ত বিজয়ী হবো। তারা পরাজিত ও লাঞ্ছিত হবে।
পিতার আইনজীবি হিসেবে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আদালতে চালিয়েছেন আইনী লড়াই। পিতার সাথে শেষ দেখাতো দুরের কথা এখনো হদিস মেলেনি তার। পুলিশ পারেনি তার সন্ধান দিতে। সে কোথায় আছে? কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে? তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার ও স্বজনরা!! গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টায় রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএস এর বাসা হতে সাদা পোশাক পরিহিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গ্রেফতার করেছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। খুব অল্প বয়সে একজন আইনজীবী হিসাবে মামলা পরিচালনায় তার মেধা, প্রজ্ঞা এবং দক্ষতা অনেককে হতবাক করেছে।
ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেমের মুক্তি দাবি করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা তাদের উদ্বেগ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার জনগণের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রই যেন এখন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে! এটি প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এটি নাগরিকের প্রতি কারো করুনা নয়। অথচ উদ্বিগ্ন পরিবার ও স্বজনরা থানায় গেলে তাদের মামলা গ্রহন না করা নাগরিক অধিকারের লংঘন নয় কি? কি সেলুকাস এ পৃথিবী! কি অদ্ভুত আর বিষ্ময়কর আমাদের রাজনীতি! কত নিষ্ঠুর, নোংরা, কুলষিত, ক্ষমতার মোহে দিকভ্রান্ত আওয়ামীলীগের এই নেতিবাচক শিষ্টাচার বহির্ভূত অপরাজনীতি! ধিক আজকের সমাজের এই ঘৃনিত জিঘাংসাকে। ধিক্ আওয়ামীলীগের এই অমানবিক, ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে।
পিতার শাহাদাতের পূর্বে শেষ সাক্ষাতের সুযোগটি দিলনা আওয়ামী লীগ সরকার। অনেক আকুতির পরও আদরের সন্তান আরমানের সাথে দেখা হলোনা শহীদ মীর কাসেম আলীর। কিন্তু একদিন হয়ত পিতা-পুত্রের জান্নাতে সাক্ষাত হবে ইনশাআল্লাহ।
মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ শহীদ মীর কাসেম আলী দেশবাসীর হৃদয়ে থাকবেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন দূর্নীতিমুক্ত ও ইনাসফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামে অগ্রসেনানী। যারা সারা জীবন মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান করেছেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা, দক্ষতা দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে। মানুষের হৃদয় থেকে এই মহান সংগ্রামী প্রাণপুরুষদের মুছে ফেলা যাবেনা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনা এ সবই কাগুজে অভিযোগ। যিনি মানবতার সেবায় যে জীবন নিয়োজিত করেছেন আর তাঁকে হত্যা করা হচ্ছে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য!! কিন্তু মনে রাখতে হবে ইতিহাসের চাকা বার-বার ঘুরে আসে। সুতরাং এক মাঘে শীত যায় না, আর আওয়ামীলীগের ক্ষমতাও চিরস্থায়ী নয়।
আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, “এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।” (সফ-৮) তারা ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে ইসলামী আদর্শবাদী আন্দোলন কিংবা তার অনুসারীদেরকে দমানো যায় না। বরঞ্চ নির্যাতন-নিপীড়নের ফলে আন্দোলনের কর্মীদের ঈমান আরো মজবুত হয় এবং আন্দোলন আরো বেগবান ও তীব্র গতি পায়।
আওয়ামীলীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার দিনক্ষণ ঠিক করে উল্লাস করছে। কিন্তুমানুষ খেকো, রক্তপিপাসুদের এই উল্লাস ক্ষণস্থায়ী। জালেমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে হত্যা করে নিজেদের ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিচ্ছে। আর শহীদদেরকে মহান জান্নাতে আল্লাহর মেহমান হিসেবে মর্যাদা লাভ করবে। সেদিন বেশী দুরে নয় তাদের রক্তের বিনিময়ে এ জমিনে ইসলামের বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ।
যুগে যুগে নবী-রাসূল ও সত্যপন্থীদের ওপর জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়ন হয়েছে নানা ভাবে, নানা কৌশলে। কিন্তু কোন দলন নিপীড়নই ইসলামী আন্দোলনের পথচলা থামিয়ে দিতে পারেনি, এখনও পারবে না ইনশাল্লাহ। ইতিহাস বলে শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে বিজয় আসবেই।
তিবরানীতে হযরত মুয়াজ বনি জারুন (রা.) থেক বর্ণিত একটি হাদীস যাতে বলা হয়েছে যে, ইসলামের রাজনৈতিক অবস্থা যখন বিকৃত হয়ে যাবে, তখন বিপদগামি শাসকরা কর্তৃত্বশীল হবে এবং তারা সমাজকে ভ্রান্ত পথের দিকে নিয়ে যাবে। তাদের নির্দেশ মেনে চললে জনগণ গোমরাহ হয়ে যাবে। আর তাদের নির্দেশ অমান্য করলে তারা তাদের হত্যা করবে। এ কথা শোনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করলো তারপর তারা কি করবে, তিনি বললেন : সে সময়ে তোমাদেরকে হযরত ঈসার সহচরগণ যা করছিল তাই করতে হবে। তাদেরকে করাত দিয়ে চিরে ফেলা হয়েছে। শূলে চড়ানো হয়েছ, তবুও তারা বাতিলের কাছে আত্মসর্মপণ করিননি”।
হে! আরশের মালিক, তুমি মীর কাসেম আলী সহ সকল শহীদদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান কর। হে! পরওয়ারদেগার, তুমি তোমার কৃত ওয়াদা জান্নাতুল ফেরদাউস তাদের নসিব কর। তোমার প্রিয় বান্দাদের প্রতি করুণা ও রহমত বর্ষণ কর। হে! আল্লাহ তুমি আমাদের অশ্রুসিদ্ধ ফরিয়াদ কবুল কর। তাদের অ-সমাপ্ত কাজ আমাদেরকে আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক দান কর, আমীন।