মিসরের ইতিহাস পাঠ করলে ফেরাউনের অত্যাচারের লোমহর্ষক ঘটনাবলী সবার মনে আজো মনের অজান্তে ভেসে ওঠে। ফেরাউনের মুখোশ মানুষের সামনে উন্মোচন করে দেওয়ার জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত মুসা (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন। মিসরের ইতিহাসে ফেরাউনের পরে অনেক নব্য ফেরাউন জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদেরই একজন ছিলেন জামাল আবদুল নাসের। যিনি মিসরের জালেম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। জামাল আবদুল নাসের অন্যায় অত্যাচার জুলুম জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শতাব্দিশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ. ইসলামের জন্য নির্বাচিত করে পাঠিয়েছিলেন।
জন্ম :
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.) ১৯০৬ সালে মিসরের উস্ইউত জেলার মুশা গ্রামে কুতুব বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী ইব্রাহীম কুতুব, মায়ের নাম ফাতিমা হোসাইন ওসমান। বাবা মায়ের পাঁচ সন্তান-সন্ততির মধ্যে সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। সকল ভাইবোনই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামী জীবন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হয়ে কঠোর ঈমানী পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে গোটা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উৎস হয়ে রইলেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন :
সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শৈশবেই তিনি কুরআন শরীফ হেফজ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে তিনি কায়রোর তাজহিয়াতু দারুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে ঐ মাদরাসার শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি কায়রোর বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। তিনি ঐ মাদরাসা থেকে ১৯৩৩ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঐ মাদরাসায়ই অধ্যাপক নিযুক্ত হন। কিছুদিন অধ্যাপনা শেষে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন।
আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির ওপরে অধিক জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করে। সেখানে দু’বছরের কোর্স সমাপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সেখানে থাকাকালে তিনি বস্তুবাদী সমাজের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। বস্তুবাদী সমাজের অবস্থা দেখে তার এ প্রত্যয় জন্মে যে, একমাত্র ইসলামী সমাজব্যবস্থাই মানব সমাজকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে।
ইসলামী আন্দোলন ও রাজনীতি :
আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পরই তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমুন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি গভীরভাবে যাচাই করতে শুরু করেন। তিনি ইখওয়ানের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের সাথে একমত হয়ে ১৯৫৩ সালে ঐ দলের সদস্য হন এবং দলের তথ্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নাকরাশী পাশা ইখওয়ানকে অবৈধ ঘোষণা করেন। নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ দলের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলা ইখওয়ানুল মুসলেমুন দলের প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ হাসানুল বান্নাকে শহীদ করা হয়। ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে মিসরে এক সামরিক বিপ্লব ঘটে এবং ঐ বছরই ইখওয়ান পুনরায় বহাল হয়ে যায়। সাইয়েদ কুতুব দলের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মনোনীত হন এবং দলের আদর্শ প্রচার ও আন্দোলনের সম্প্রসারণ তার পরিচালনাধীনে অগ্রসর হতে থাকে। ১৯৫৪ সালে সাইয়েদ কুতুবকে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী-ইখওয়ানুল মুসলেমুন-এর সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
প্রকাশনা :
তার বিশেষ বিশেষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে একাধিক উপন্যাস ও বেশ কয়েকটি শিশু সাহিত্যসহ তেফলে মিনাল কারিয়া, মদীনাতুল মাশহুর, মাশাহেদুল কেয়ামাহ ফিল কোরআন, মা’রেফাতুল ইসলাম ওয়ার রেসমালিয়াহসহ প্রায় বিশটি গ্রন্থ। তাফসির ফি যিলালিল কোরআন- সাইয়েদ কুতুবের এক অনবদ্য অবদান। আট খন্ডে সমাপ্ত এক জ্ঞানের সাগর। তার এসব গ্রন্থাবলী ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ও নেতাদের জন্য পথনির্দেশিকা ও অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে আছে।
গ্রেপ্তার ও নির্যাতন :
সাইয়্যেদ কুতুব সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পরেই কর্নেল নাসের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। কারণ ঐ বছর মিসর সরকার বৃটিশের সঙ্গে নতুন করে যে চুক্তি সম্পাদন করেন ঐ পত্রিকা তার কঠোর সমালোচনা করে। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পর নাসের সরকার ইখওয়ান কর্মীদের উপর কঠোর নির্যাতন শুরু করে এবং এক বানোয়াট হত্যা-ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ এনে দলটিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় এবং দলের নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় সাইয়েদ কুতুবকেও।
জেলে প্রবেশ করার সাথে সাথে হিংস্র জেল কর্মচারীরা তাকে নির্মমভাবে মারপিট করতে থাকে এবং দুঘণ্টা ধরে এ অত্যাচার চলতে থাকে। এতেই শেষ নয়, বর্বর জালেমরা তাঁর ওপর একটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দেয়। কুকুরটি তাঁর পা কামড়ে ধরে জেলের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে বেড়াতে থাকে। এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন কক্ষে। সেখানে তাকে একটানা সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রক্তাক্ত বেদনায় জর্জরিত শরীর এসব শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করার মতো ছিল না। কিন্তু ঈমানের বলে বলীয়ান পাহাড়ের মতো অবিচল মর্দে মুজাহিদ এসব অমানুষিক অত্যাচার অকাতরে সহ্য করেন। এ অবস্থায় তাঁর মুখে উচ্চারিত হতে থাকত আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
এভাবে নির্মম নির্যাতনের ফলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯৫৫ সালের ২ মে তাকে সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐ বছরের ১৩ জুলাই মহকুমাতুস সাব অর্থাৎ জাতীয় আদালতে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে। পরে এ দন্ড বাতিল করে তাঁকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এক বছর কারাভোগের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তিনি যদি সংবাদপত্রের মাধ্যমে ক্ষমার আবেদন করেন, তাহলে তাঁকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাবের জবাবে মর্দে মুমিন বলেন,
আমি এ প্রস্তাব শুনে অত্যন্ত আশ্চার্যান্বিত হচ্ছি যে, মজলুমকে জালিমের নিকট ক্ষমার আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে। খোদার কসম। যদি ক্ষমা প্রার্থনার কয়েকটি শব্দ আমাকে ফাঁসি থেকেও রেহাই দিতে পারে, তবুও আমি এরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে রাজি নই। আমি আল্লাহর দরবারে এমন অবস্থায় হাজির হতে চাই যে, আমি তাঁর প্রতি এবং তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট।
পরবর্তীকালে যতবারই তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, ততবারই তিনি এই বলে জওয়াব দিয়েছেন, ‘‘যদি আমাকে যথার্থই অপরাধের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি এতে সন্তুষ্ট আছি। আর যদি বাতিল শক্তি আমাকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে থাকে, তাহলে আমি কিছুতেই বাতিলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবো না।’’ এর পরে সরকার পক্ষ থেকে প্রলোভন দেখানো হলো যে, যদি তিনি সম্মত হন তাহলে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। সাইয়েদ এ প্রস্তাবের জওয়াবে বললেন,
আমি দুঃখিত। মন্ত্রিত্ব গ্রহণ আমার পক্ষে সে সময় পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত মিসরের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামী ছাঁচে ঢেলে সাজাবার এখতিয়ার দেয়া না হবে।
সাইয়েদ কুতুব ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তাররা কারাগারে ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ইরাকের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফ কায়রো সফর করেন। ইরাকী আলেমদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইরাকী প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের সাথে বৈঠককালে সাইয়েদ কুতুবকে মুক্তি প্রদানের অনুরোধ জানান। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সাইয়েদ কুতুবকে মুক্তি প্রদান করা হয়। কর্নেল নাসের তাকে মুক্তি দিয়ে অত্যন্ত কড়া নজরদারিতে তারই বাসভবনে অন্তরীণ করেন। সাইয়েদ কুতুবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার কারণে মিসরের কমিউনিস্ট গোষ্ঠী এবং তাদের মুরুব্বিরা নাখোশ হয়। শুরু হয় কর্নেল নাসেরের ওপর নানা চাপ। কমিউনিস্ট পার্টি জামাল নাসেরের সহযোগিতার জন্য একটি শর্ত আরোপ করে। তা হচ্ছে মিসর থেকে ইখওয়ানকে নির্মূল করতে হবে।
১৯৬৫ সালে রাশিয়া থেকে নাসেরকে তলব করা হয়। ২৭ আগস্ট মস্কোয় আরব ছাত্রদের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জামাল নাসের ঘোষণা করেন যে, মিসরের ইখওয়ানুল মুসলেমুন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অতীতে বহুবার সে ইখওয়ানকে ক্ষমা করেছে এবার আর ক্ষমা করা হবে না। মস্কো থেকে নাসের দেশে ফিরে এলেই শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার ইখওয়ান কর্মীকে। পুনরায় গ্রেফতার করা হলো সাইয়েদ কুতুবকে। শুধু তাকেই নয় তার ভাই মুহম্মদ কুতুব, ভগ্নি হামিদা কুতুব ও আমিনা কুতুবসহ বিশ হাজারেরও বেশিসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় সাতশ’ ছিলেন মহিলা।
বিচারের নামে প্রহসন :
ইখওয়ানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তা ছিল বাহানামাত্র। আসল ‘ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইখওয়ান নেতা ও কর্মীরা ১৯৫৪ সালের শেষভাগ থেকে জেলখানায় বন্দী জীবনযাপন করেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কোনো চিন্তা-কল্পনা করাও তাদের অসম্ভব ছিল। তবু তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা জেলখানায় অথবা জেলের বাইরে জ্ঞানগত ও চিন্তাধারার দিক থেকে দেশের অভ্যন্তরে ইসলামকে রক্ষার যতটুকু খিদমত করা সম্ভব ছিল তা তারা করেছেন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তারা সাহিত্য রচনা করেছেন। মিসরে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, ইসলামী ইতিহাস এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ওপর বিপুল সাহিত্য বিগত দশ বছরে রচিত হয় এবং তা বিভিন্ন বিষয়ে এত বেশি ছিল যে, লোকেরা লেখকদেরকে সাহস উদ্যম প্রদান এবং প্রকাশকদেরকে প্রশংসা না জানিয়ে পারেনি। ইখওয়ান নেতা-কর্মীদের বিচার শুরু হলো বিশেষ সামরিক আদালতে। ‘প্রথমত ঘোষণা করা হয় যে, টেলিভিশনে ঐ বিচারানুষ্ঠানের দৃশ্য প্রচার করা হবে।
কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ ‘অপরাধ স্বীকার’ করতে অস্বীকার এবং তাদের প্রতি দৈহিক নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ করায় টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর রুদ্ধ দ্বারকক্ষে বিচার চলতে থাকে। আসামীদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না। অন্য দেশ থেকে আইনজীবীগণ আসামী পক্ষ সমর্থনের আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ফরাসী বার এসোসিয়েশনের ভূতপূর্ব সভাপতি উইলিয়ম থরপ ও মরক্কোর দু’জন আইনজীবী আসামী পক্ষ সমর্থনের জন্য রীতিমতো আবেদন করেন। কিন্তু তা নামঞ্জুর করা হয়। সুদানের দু’জন আইনজীবী কায়রো পৌঁছে তথাকার বার এসোসিয়েশনে নাম রেজিস্ট্রি করে আদালতে হাজির হন। পুলিশ তাদের আদালত থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয় এবং মিসর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সাইয়েদ কুতুব ও অন্যান্য আসামীগণ ঊনিশ শ’ছেষট্টি সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার করাকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রকাশ করেন যে, ‘অপরাধ স্বীকার’ করার জন্য তাদের প্রতি অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আসামীদের কোন কথার প্রতিই কর্ণপাত করেন নাই। এমনিভাবে ১৯ মে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আদালতে বিচার প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক জামাল নাসেরের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে ১৯৬৬ সালের ২১ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ৪৩ জন নেতাকর্মীর মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এরা হচ্ছেন সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মদ ইউসুফ, আব্দুল ফাত্তাহ ইসমাঈল, শবরী আরাফাহ, আহমদ আবদুল মজিদ, আব্দুল আজিজ ও আলী উসমাভী। সাইয়েদ কতুবের মৃত্যুদন্ডাদেশ শোনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অথচ সাইয়েদ রায় শোনার পর খুশি মনে বলে উঠলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তিনি হাসতে হাসতে বললেন
আমার কাছে এটা কোনো বিষয় নয় যে, আমি কোথায় মরতে যাচ্ছি এবং কিভাবে যালিমরা আমার মৃত্যুদন্ড দেবে। আমিতো এতেই সন্তুষ্ট যে, আমি আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসাবে শাহদাতের পেয়ালা পান করতে যাচ্ছি।
শাহদাত :
১৯৬৬ সালের ২৮ আগস্ট রাতে সাইয়েদ কুতুব ও তার দুই সাথীকে ফাঁসীর সেলে নিয়ে যাওয়া হলো। ২৯ আগস্ট ভোর রাত। সাইয়েদ কুতুব ও তার দুই সঙ্গীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে ফাঁসির সকল আয়োজন শেষ। সাইয়েদ অত্যন্ত আনন্দিত ও নির্ভীক চিত্তে সামনে পা বাড়াচ্ছেন, তার মুখে তৃপ্তির হাসি। সুবহে সাদিকের আলো ঝলমল ধরণী যেন আজ গভীর বেদনাপ্লুত। সাইয়েদ কুতুব হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠলেন। চারদিকে ভেসে উঠল ফজরের আযান। এমনি এক পবিত্র পরিবেশে কার্যকর করা হলো ইতিহাসের ঘৃণ্যতম আয়োজন, সাইয়েদ কুতুব ও তার সঙ্গীদের ফাঁসি। সারাবিশ্বের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে সাইয়েদ কুতুব পৌঁছে গেলেন তার পরম প্রিয় প্রভুর সান্নিধ্যে।