বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র প্রকৃত শিক্ষা রাষ্ট্রীয়, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারলেই শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তিনি ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদশে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের গুলশান জোন আয়োজিত এক ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তবে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুলশান থানা আমীর আবু আরিয়ান, বনানী আমীর সাইফুল ইসলাম, ভাটারা আমীর ইঞ্জিনিয়ার কামাল উদ্দীন আহমদ ও বনানী নায়েবে আমীর মাহমুদুর রহমান প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, পবিত্র ‘জিলহজ্ব’ এক মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। মুসলিম জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণেই মুসলিম উম্মাহ দিবসটিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা হিসাবে পালন করে আসছে। তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনার্থে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করতে গিয়ে যে ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা শত-সহস্র বছর পরেও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আছে। তাই সেই ত্যাগ ও আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভদ্ধ হয়ে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, বস্তুবাদী লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার লাগাম টেনে ধরে প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করাই ঈদ-উল-আযহার প্রকৃত শিক্ষা। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, বিভেদ-বিসংবাদ বন্ধ ও সমাজে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা পবিত্র ঈদ-উল-আযহার মহাত্ম ও বৈশিষ্ট্য। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা যথারীতি ঈদ উদযাপন করলেও দেশের মানুষ ঈদের প্রকৃত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বস্তুত রাষ্ট্রশক্তি অশুভ শক্তিকে দমনের পরিবর্তে অপশক্তিকেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশে অন্যায়, অনাচার ও অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। তাই পবিত্র ঈদুল আযহার শিক্ষাকে ধারণ করে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতার কারণেই সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী রূপ নিলেও সরকার এখন পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করে মানসম্পন্ন প্রতিষেধক আমদানী ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও উচ্চ আদলতের সে নির্দেশও উপেক্ষিত হয়েছে। দেশ ও জাতির এই সঙ্কটময় সন্ধিক্ষণেই আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। কিন্তু সরকারের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই এবারের ঈদ পুরোপুরি আনন্দঘন হয়ে উঠতে পারেনি।
কারণ, ঈদের দিনেও হাজার-হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মূলত এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই দেশ ও জাতির জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই এই ম্যান্ডেটবিহীন সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন গণদুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। তিনি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান