ভূমিকা : পর্দা-প্রথা হল বিশ্ব জুড়ে বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত এক বিষয়। ইসলামী আদর্শে যারা আসহাশীল, তাদের মতে পর্দা হল সুশৃংখল এবং দায়িত্বশীল যৌনজীবনের নিশ্চয়তা, অবাধ যৌনতাজনিত অসংখ্য সামাজিক ব্যাধির প্রতিষেধক এবং নারীর মান-সম্ভ্রমের রক্ষাকবচ। যারা পাশ্চাত্য সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী, তারা মনে করেন এটি অবরোধের নামান্তর, প্রগতির পথে এক অনতিত্রুম্য বাধা, নারীকে অবদমিত করে রাখবার প্রয়াস। সভ্যতার ইতিহাস আমাদেরকে বলে, কোন সভ্যতার ঊর্ধ্বগতি বা অধোগতি নির্ভর করে নারী-পুরতষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের উপরে। বিশ্বসভ্যতার অতীত এবং বর্তমান যদি মুত্তুমনে পর্যালোচনা করা হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই, নর-নারীর অবাধ মেলামেশা একটি সভ্যতাকে উন্নত আদর্শ ও জীবনাচার থেকে বিচ্যুত করে ত্রুমশঃ ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এটা থেকে শুরত হয় অবাধ যৌনতা যা অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, ভ্রদণহত্যা, অবৈধ সমতান, ধর্ষণসহ নানা প্রকার যৌন-বিকৃতি, নানা প্রকার যৌনরোগ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তজ্জনিত অসংখ্য সামাজিক ও মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়। এ-সব সমস্যা থেকে মুত্তিু লাভের উদ্যোগ গ্রহণও অসম্ভব হয়ে পড়ে; কারণ এ-ধরণের সমাজে মানুষ প্রবৃত্তির দাসানুদাসে পরিণত হয়। বিশ্ব-সভ্যতার অতীত ও বর্তমান সাক্ষ্য দিচ্ছে, এ-ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ইসলাম-নির্দেশিত পর্দা-ব্যবসহা। এটার লক্ষ্য না নারীকে অবরতদ্ধ করে রাখা, না তাকে পশ্চাদ্পদ বা পরনির্ভরশীল করা। অমতরে শালীনতা ও লজ্জাশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানসিক পবিত্রতা অর্জনে সাহায্য করা এবং নর-নারীর যৌন-জীবনকে শৃংখলাপূর্ণ ও কলুষমুত্তু রাখাই এর লক্ষ্য।
পর্দা কি অবরোধ?
এই প্রশ্নের উত্তর পর্দা সম্পর্কিত কুরআনিক নির্দেশনার মধ্যেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। আল্লাহ্ নির্দেশ দিচ্ছেনঃ
“”হে নবী, তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুসলিম নারীদেরকে বল, তারা যেন (ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময়) নিজেদের উপর চাদরের আঁচল টেনে দেয় যেন তাদেরকে (পবিত্রা নারী হিসাবে) চিনতে পারা যায় এবং উত্যত্তু না করা হয়।” [সূরা আল আহযাব, আয়াত-৫৯]
এই আয়াতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারীদেরকে বাড়ির বাইরে যাবার সময়ে করণীয় সম্পর্কে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ বাইরে যাওয়া নারীর জন্য নিষিদ্ধ নয়। অবরোধ কথাটির অর্থ যদি আটক, পরিবেষ্টন, কারাগার বা অমতঃপুর হয় (বাংলা একাডেমীর অভিধানে এই অর্থই প্রদত্ত হয়েছে), তাহলে নারীকে এ অবসহায় রাখার সপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ্র সমর্থন নেই। বরং বাস্তবতা হল এর বিপরীত। আত্মিক উন্নতি, পারিবারিক প্রয়োজন, সামাজিক কল্যাণ এবং জাতীয় নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকাকে ইসলাম অগ্রাহ্য করে না। প্রয়োজনে বাসসহানের বলয় পেরিয়ে আসার সুযোগ তার রয়েছে। কুরআন-সুন্নাহতে এর বিস্তারিত দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যায়। কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল।
ক) মসজিদ ও ঈদগাহে গমন : মহানবী (সা) নারীদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। বরং কোন নারী সেখানে যেতে চাইলে তাকে বাধা দিতে তিনি নিষেধ করেছেন। তিনি মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনঃ “তোমাদের কারো সএী যদি (সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়ার) অনুমতি চায়, তাহলে স্বামী যেন তাকে বাধা না দেয়।[সূত্রঃ বুখারী শরীফ। আযান অধ্যায়] মুসলিম শরীফের সালাত অধ্যায়ে সালিমের পিতা থেকে একই ধরণের বর্ণনা রয়েছে।
নারীদের ঈদের নামাজে যোগ দেবার ব্যাপারে ইসলাম নিষেধাজ্ঞা তো আরোপ করেইনি, বরং উৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋতুবতী নারী, যাদের জন্য নামাজ নয়, তারাও ঈদগাহে যেতেন। হযরত উম্মে আতিয়াহ্ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হত। এমনকি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দরমহল থেকে বের করতাম এবং ঋতুবতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরতষদের গ্গপছনে থাকতো এবংতাদের তাকবিরের সাথে তাকবির বলতো এবংতাদের দুআর সাথে দুআ করতো─ তারা আশা করতো সেদিনের বরকত এবং পবিত্রতা।’ [সূত্রঃ বুখারী শরীফ। দু’ঈদ অধ্যায়। মুসলিম শরীফ। দুই ঈদের সালাত অধ্যায়] একই ধরণের বর্ণনা নবীপত্নি হাফসা (রা)-এর সূত্রেও উল্লেখিত হয়েছে।
এখন অনেক মুসলিম সমাজ নারীদেরকে মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করে থাকে। এর দায় ইসলামের উপরে চাপানো সঙ্গত নয়। মনে রাখা দরকার, কোন সমাজের রীতি বা প্রথা কুরআন-সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।
খ) প্রয়োজনে বাইরে গমন : হযরত আংয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে উম্মুল মুমিনীন সওদা বিনত জামআ (রা) কোন কারণে বাইরে গেলেন। হযরত উমৎর (রা) তাঁকে দেখে চিনে ফেলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! হে সৎওদা (রা) আপনি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারেননি। এতে তিনি নবী (সা)-এর নিকট ফিরে গেলেন এবং উত্তু ঘটনা তাঁর কাছে বললেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশ্তপূর্ণ একখানা হাড় ছিল। এমতাবসহায় তাঁর কাছে ওহী নাযিল হল। যখন ওহী নাযিল হওয়া শেষ হল, তখন নবী (সা) বললেন, আল্লাহ্ তালা প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাবার অনুমতি দিয়েছেন।[সূত্রঃ বুখারী শরীফ। বিয়ে-সাদী অধ্যায়]
গ) জিহাদে গমনের সুযোগঃ জিহাদে অংশ গ্রহণ পুরতষের জন্য বাধ্যতামূলক করা হলেও নারীর জন্য তা ঐচ্ছিক। তথাপি কোন নারী এতে অংশ গ্রহলণ আগ্রহ প্রকাশ করলে মহানবী (সা) তাকে নিরতৎসাহিত করতেন না। একবার রাসূলুল্লাহ (সা) জিহাদের উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক সফরের গুরতত্ব বর্ণনা করছিলেন। এ-সময় উম্মু হারাম (রা) নামক এক মহিলা সাহাবী বললেন, “হে রাসূল! আল্লাহ্র নিকট আমার জন্য দোয়া করতন আমিও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।’ রাসূল (সা) তাঁর জন্য দোয়া করলেন। [সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ। জিহাদের অধ্যায়। ] এ থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়, নারীর সামাজিক বা জাতীয় দায়িত্বের বাইরে অতিরিত্তু কর্মভার যেমন ইসলাম তার উপর অর্পন করে না, তেমনি কেউ সাগ্রহে এগিয়ে এলে তাকে নিবৃত্তও করে না।
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা অবগত হলাম, ইসলাম নারীকে চার দেওয়ালের মাঝে অবরতদ্ধ করে রাখে না। প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে তার কোন বাধা নেই। অতএব, পর্দাকে অবরোধ ভাববার কোন যৌত্তিুকতা নেই। পর্দার লক্ষ্য হল নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশা প্রতিরোধ করা।
পর্দা ও প্রগতিঃ প্রগতি যদি হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি সাধন, তাহলে একজন আদর্শ মুসলিম নারী এ পথে কোনই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়ণ যদি হয় প্রগতির লক্ষ্য, তাহলে মুসলিম সমাজের নারীরা দেখবে, এ-পথ তাদের জন্য উন্মুত্তু রয়েছে। কিমও প্রগতি যদি নর-নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে কাজ করাকে অপরিহার্য মনে করে, তবে ইসলাম এ-পথে পর্বতপ্রমাণ প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করিয়ে দেবে। কারণ, নর-নারীর অবাধ মেলামেশা অধিকাংশ সামাজিক ব্যাধির জন্ম দিয়ে থাকে। এখন আমরা দেখব, মুসলিম নারী প্রগতির পথে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় কি-না।
ক) মুসলিম নারীর জ্ঞানার্জনের সুযোগঃ জন্মের পর একটি শিশুর অধিকাংশ সময় কাটে মায়ের সান্নিধ্যে। মায়ের কথা-বার্তা, আচার-আচরণ থেকেই সে তার প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী পাঠ লাভ করে। অতএব, মাকে অজ্ঞতার আবরণে আপাদমসতক মুড়িয়ে রেখে একটি জাতি উন্নতির রাজপথে স্বচ্ছন্দে চলতে পারে না। তাই ইসলাম নারীর জ্ঞানার্জনকে পুরতষের মতই বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে। মহানবী (সা) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেনঃ “জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ [সূত্রঃ সুনানু ইবনে মাজাহ্। ১ম খন্ড। হাদিস নং-২২৪] লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে নারী-পুরতষে কোনই পার্থক্য করা হয়নি। ইসলাম এ ক্ষেত্রে এতটাই গুরতত্ব আরোপ করেছে যে, দাসীদেরকেও এ সুযোগ প্রদানে কার্পণ্য করেনি। হযরত আবু মুসা আল আশআরী (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যত্তিুর অধীনে কোন দাসী ছিল . . .সে তাকে উত্তম রদপে আদব-কায়দা এবং দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষাদান করেছে, এরপর তাকে স্বাধীন করে দিয়েছে এবং বিবাহ করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।’ [সূত্রঃ বুখারী শরীফ। ইলম অধ্যায়]
ইসলামের সোনালী যুগের নারীরা মহানবী (সা)-এর নসিহত শোনার জন্য আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। জ্ঞান লাভের আগ্রহ তাদের এতটাই অধিক ছিল যে, তাঁরা রাসুল (সা)-এর নিকট দাবী করেন তাদেরকে শিক্ষাদানের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দেবার জন্য। মহানবী (সা) তাঁদের এই দাবী মেনে নিয়েছিলেন। [সূত্রঃ বুখারী শরীফ। ইলম অধ্যায়]
খ) মুসলিম নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডঃ ধন-সম্পদ অর্জন এবং তার মালিকানা ইসলাম নারীকে প্রদান করেছে। এ অধিকারে হসতক্ষেপ করার বৈধতা তার স্বামীর নেই। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেনঃ “পুরতষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ।'[সূত্রঃ আল কুরআন। ৪ঃ৩২]
স্বয়ং মহানবী (সা)-এর সএী যায়নাব (রা) কুটীর শিল্পে সম্পৃত্তু ছিলেন। তিনি চামড়া পাকা করার কাজে দক্ষ ছিলেন। এ কাজে যে অর্থ উপার্জিত হত, তা তিনি আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতেন। [সূত্রঃ সহীহ্ মুসলিম। কিতাবুল নিকাহ্।]
হযরত জাবির (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমার খালাকে তিন তালাক (বায়েন) প্রদান করা হয়। এরপর তিনি খেজুর কর্তনের জন্য গমন করলে জনৈক ব্যত্তিুর সাথে তার সাক্ষাত হয়, যিনি তাকে (ইদ্দত কালীন) ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। তিনি নবী করীম (সা)-এর খিদমতে উপসিহত হন এবং এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি তাকে বলেন, তুমি বের হও এবং খেজুর কর্তন কর। আর তা হতে কিছু সাদকা করবে অথবা ভাল কাজ করবে। [সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ। হাদিস নং-২২৯১
উপরের আলোচনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, জাতীয় উন্নয়ণে অবদান রাখার যথেষ্ট সুযোগ ইসলাম নারীকে প্রদান করেছে। তবে সমাজ-সভ্যতাকে রক্ষা করবার জন্য ইসলাম এক বিশেষ ব্যবসহা গ্রহণ করেছে, সেটিই হল পর্দা। এর সারকথা হল, নারী প্রয়োজনে সকল বৈধ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে স্বতমএ পরিবেশে─ যেখানে পুরতষের অবাধ সান্নিধ্যের সুযোগ থাকবে না। সমাজ-সভ্যতার সূতিকাগার যে পরিবার, তাকে সংশয়, অবিশ্বাস, ব্যভিচার থেকে সম্পূর্ণ মুত্তু রাখতে চায় ইসলাম। এজন্য নিশ্ছিদ্র ব্যবসহাপত্র প্রদান করা হয়েছে কুরআন-সুন্নাহ্য়। এটিই হল পর্দা। প্রশণ হতে পারে, এত সতর্কতার সত্যিই কি কোন প্রয়োজন আছে? এগুলো কি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে না? এর উত্তরে বলতে হয়, অবাধ মেলামেশা এমন এক মায়াবিনী যে সমাজ-সভ্যতাকে ত্রুমশঃ ধ্বংসের অতল গহ্বরের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। পরিশেষে ঘটে শোচনীয় পতন। মানব-সভ্যতার অতীত এবং বর্তমান এ কথার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এখানে পর্দাহীনতাজনিত সামাজিক বিপর্যয়ের কিছু চিত্র তুলে ধরা হল।
গ্রীক সভ্যতায় নর-নারীর সম্পর্কঃ গ্রীসের জাতীয় উন্নয়ণের প্রাক্কালে নারীর অবসহা ছিল শোচনীয়। কৌত~হলবশে প্যান্ডোরা নামক পৌরাণিক নারী যে বাক্স খুলেছিল, তা-ই মানব জাতির সমূহ দুঃখ-দৈন্য-দুর্ভোগের কারণ বলে তারা বিশ্বাস করত। ত্রুমশঃ তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হতে থাকে। তারা নারীকে সম্মান করতে শেখে। গ্রীক সভ্যতার ত্রুমোন্নতির যুগে নারীর ছিল লজ্জা-শরম এবং আত্মসম্মানবোধ। তারা খোলামেলা চলাফেরা এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকত। পুরতষদের সমাবেশ এবং হাট-বাজার তারা এড়িয়ে চলত। তারা একনিষ্ঠভাবে আত্মনিয়োগ করত আপন সমতানকে শিক্ষা-দীক্ষায়, চিমতা-চেতনায় এবং শৌর্য-বীর্যে উন্নত করে গড়ে তুলতে। তারই ফল স্বরদপ গ্রীক সভ্যতা হতে পেরেছিল বিশ্বজয়ী। কিমও একটা সময় এল, যখন তারা চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেষ্ঠত্বও হারাতে লাগল। পতিতাবৃত্তি ব্যাপক আকার ধারণ করল; পতিতালয়ে গমণ হয়ে উঠল সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি সাধারণ ব্যাপার। সমাজে গণিকাদের উচ্চ সম্মান প্রদান করা শুরত হল। সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি এবং তার জারজ সমতান কিউপিডের পূজা শুরত হল দেশব্যাপী। এ-ভাবে জাতীয় জীবনে উন্নত চিমতা-চেতনা, ধ্যান-অধ্যয়নের স্পৃহা ত্রুমশঃ লোপ পেতে লাগল। পরিশেষে অবসহা এমন পর্যায়ে পৌঁছলো যে, সমকামিতা সমাজে বিসতার লাভ করল। যে দুজন বন্ধু হারমেডিয়াস এবং এরোষ্টগীন এই জঘন্য রীতি সমাজে প্রচলন করেছিল, তাদেরকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করা শুরত হল। [সূত্রঃ সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। পর্দা ও ইসলাম। পৃ-৭]
এভাবে কামদেবের দৌরালত্মণ্ঠ উন্নত ধ্যান-ধারণা, চিমতা-চেতনা সমাজ থেকে বিদায় গ্রহণ করতে লাগল। একদা শত্তিুমান গ্রীকজাতি হয়ে পড়ল হীনবীর্য। সৃজনশীলতার সহান দখল করল কামকুশলতা। ফলস্বরদপ এই জাতির শোচনীয় পতন ঘটল।
রোমান সভ্যতায় নর-নারীর সম্পর্কঃ গ্রীক সভ্যতার পতনের অব্যবহতি পরে আবির্ভাব ঘটে রোমান সভ্যতার। এই সভ্যতার উত্থান-পতনের ইতিহাসও গ্রীকদের অনুরুপ। এদের উথুানকালে গ্রীকদের মত নারীসমাজে পর্দাপ্রথার প্রচলন ছিল না। তবে নারীদেরকে সহজলভ্য ভোগের সামগ্রী মনে করা হত না। তাদের শরম-সম্ভ্রমকে সম্মানের চোখে দেখা হত। কোন নারীকে লাভ করার একমাত্র উপায় ছিল বিবাহ।
এক সময় এই জাতিতেও বিকৃতির সূচনা হয়। নারী ত্রুমশঃ সহজলভ্য হয়ে পড়ে। শুরত হয় অবাধ মেলামেশা। ফলতঃ যৌন জীবনের শৃংখলা ভেঙ্গে পড়ে। বিবাহই ছিল যৌন মিলনের একমাত্র বৈধ পমহা। বৈচিত্র-সন্ধানী নারী-পুরতষের আকাংখার কাছে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানও নতি স্বীকার করে। শুরত হয় ব্যাপক বিবাহ-বিচ্ছেদ। বারবার জীবন-সঙ্গী পরিবর্তন নিতামত সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিখ্যাত রোমান দার্শনিক সেনেকা (৪খৃঃপূঃ ─ ৬৫খৃঃ) আক্ষেপ করে বলেনঃ “”রোমে তালাক আজ আর লজ্জাজনক কোন ব্যাপার নয়। নারী তার বয়স গণনা করে স্বামীর সংখ্যা দ্বারা।” [উদ্ধৃতঃ পর্দা ও ইসলাম। পৃ-৮]
বৈচিত্র-বিলাসের চাপে ত্রুমশঃ সকল বিধি-নিষেধ বিদূরিত হয়ে গেল। শুরত হল অবাধ যৌনতার জয়যাত্রা। এপথে কীটো (২৩৪খৃঃপূঃ ─১৪৯খৃঃপূঃ) এবং সিসেরোর (১০৬ ─ ৪৩খৃঃপূঃ) ন্যায় বিখ্যাত দার্শনিকদেরও সমর্থন মিলল। পরিসিহতি এতটা নাজুক হয়ে পড়েছিল যে, রোম সম্রাট টাইবেরিয়াস (খৃঃ১৪─ ৩৭খৃঃ) আইন প্রণয়ন করে সম্ভ্রামত পরিবারের নারীদেরকে পতিতাবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত করার প্রয়াস পান। [সূত্রঃ সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। পর্দা ও ইসলাম। পৃ-, পৃ-৮]
রোমান সভ্যতার দেহে যখন গ্রীকদের মত যৌনতার ব্যৎধি বাসা বাঁধল, তখন তাদের পরিণতিও একই রকম হবে এতে আর আশ্চর্য কি। বিশ্বজয়ী এই সভ্যতারও করতণ অপমৃত্যু ঘটল।
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার চিত্রঃ আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারী-পুরতষের যে সম্পর্ক আমরা লক্ষ্য করি, তা বেশ কয়েকটি বিপ্লবের ফল। শিল্পবিপ্লব নারীকে পুরতষের সান্নিধ্যে নিয়ে আসে, ফরাসী বিপ্লব নর-নারীকে দেয় অসীম ব্যত্তিুস্বাধীনতা, সাহিত্যে যৌনতার আন্দোলন তাকে দেয় যথেচ্ছাচারের প্রেরণা, খোদাহীনতার আন্দোলন তাকে নীতি-নৈতিকতা ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করে। পরিশেষে গণমাধ্যমের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে সিনেমা-টেলিভিশনের আবিষ্কারের ফলে, আর এটা সর্বপ্লাবী যৌনতার বিপ্লব অনিবার্য করে তোলে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লব নারীকে পুরতষের সান্নিধ্যে আসার বিরাট সুযোগ করে দেয়। এই বিপ্লবের ফলে ইউরোপে একের পর এক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। এ-গুলোর জন্য বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন দেখা দেয়। গ্রাম থেকে দলে দলে লোক আসতে থাকে কারখানায়। তাদেরকে চাকুরি দিলেও যে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তাতে তাদের পক্ষে সএী-পরিজন নিয়ে শহরে বাস করা সম্ভবপর হয় না। এরপর পুঁজিপতিদের নজর পড়ে নারীর উপর। তাকে উপার্জনে উৎসাহিত করা হয়। পারিবারিক প্রয়োজনে অনেক নারী এই সুযোগ লুফে নেয়। নারীকে এ-ভাবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবার গ্গপছনে শিল্পপতিদের মানবতা বা মহত্ব ত্রিুয়াশীল ছিল না। বরংনামমাত্র মজুরিতে কাজ আদায় করে নেবার মানসে তারা এটা করেছিল। উইল ডুরাণ্ট যথার্থই বলেছেনঃ “”ইউরোপীয় নারীদের স্বাধীনতা এবংমালিকানা সত্তব লাভের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা উচিত মানুষের প্রতি নয়, বরংযমেএর প্রতি। তাদের ভত্তিুতে মাথা নোয়ানো উচিত যমেএর দাঁতযুত্তু চাকার সামলন, ইউরোপের পুরতষদের সামনে নয়। কোটিপতিদের লোভ এবং অর্থলিপ্সাই তাদেরকে অধিক মুনাফা করবার এবং কম পারিশ্রমিক দেবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এই কারণেই তারা বৃটিশ আইন সভায় নারীর অর্থনৈতিক মুত্তিুর খসড়া পেশ করেন।” [সূত্রঃ Will Durant. উদ্ধৃতঃ Women: Victim or Victor. ] পুঁজিপতিদের উদ্দেশ্য যা-ই হোক, কল-কারখানায় অনেক নারীর আগমণ ঘটতে লাগল। তাদের দিনের অধিকাংশ সময় পর-পুরতষদের সান্নিধ্যে কাটতে লাগল। এসব পুরতষের অনেকেই এমন, যারা সএীদের রেখে এসেছে গ্রামে। ফলে শিল্প-কারখানার পরিবেশ ত্রুমশঃ নৈতিকতার প্রতিকূল এবং অবাধ মেলামেশার অনুকূল হয়ে উঠল। এ হল সূচনাপর্ব।
শিল্পবিপ্লবের সমসাময়িক কালে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯খৃঃ) নর-নারীর মনে অনেক জোর এনে দেয়। শুরত হয় ব্যত্তিুস্বাধীনতার চর্চা। এই দর্শন ত্রুমশঃ মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে। মানুষ নিজেকে নিয়ে বড় বেশি মগ্ণ হয়ে পড়ে। প্রথমে প্রশণ ওঠে, তার বিয়ের পাত্র বা পাত্রী নির্বাচনের অধিকার তো কেবল তারই। এই অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রণয়-অভিসারের চর্চা শুরত হয়। এখানেই থেমে থাকেনি। ব্যত্তিুস্বাধীনতার পরবর্তী যুত্তিু হল, বিবাহের পরে মানুষ কি আর মানুষ থাকে না? তার মনে কি আর ভালবাসা, কামনা-বাসনা থাকে না? সারা জীবন একজনকেই ভালবাসতে হবে, একজনের সাথে কাটাতে হবে─ এ কেমন কথা! এ তো স্বাধীনতার বিপরীত ধারণা। কোন কোন মহলে সতর্কতার সাথে এ-সব কথা উচ্চারিত হতে থাকে।
ব্যক্তিস্বাধীনতার এই দর্শনকে জনপ্রিয় করে তুললো সাহিত্য জগতের যৌন-আন্দোলন। এই আন্দোলনেরও সূচনা হয় ফ্রান্সে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফরাসী ঔপন্যাসিক George Sand এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই নারী তার উপন্যাসকে অবাধ যৌনতা প্রচারের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেন। ব্যত্তিুজীবনে তিনি ছিলেন বহুগামিনী। তার বিভিন্ন উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীর মুখ থেকে তিনি অবাধ যৌনতার সপক্ষে যুত্তিু পেশ করেন। যেমন Lelia উপন্যাসের নায়িকা লেলিয়া স্টেনোকে লিখেছেঃ “”জগতকে যতখানি দেখিবার আমার সুযোগ হইয়াছে তাহাতে আমি অনুভব করি যে, প্রেম সম্পর্কে আমাদের যুবক-যুবতীর ধারণা কতখানি ভ্রামত। প্রেম শুধু একজনের জন্যই হইতে হইবে অথবা তাহার মনকে জয় করিতে হইবে এবং তাহাও চিরদিনের জন্য। এইরদপ ধারণা নিতামতই ভুল।” [উদ্ধৃতঃ সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। পর্দা ও ইসলাম। পৃ-৩৪] জাঁক (Jaucuss) নামক উপন্যাসে উদারমনা স্বামী তার সএীর পরকীয়া প্রেম উদারচিত্তে মেনে নেয়। নিজের সএীকে অন্যের বাহুবন্ধনে আবিস্কার করেও সে ত্রুুদ্ধ বা বিরত্তু হয় না। তার যুত্তিু হলঃ “”যে পুষ্প আমা ব্যতীত অন্যকে তাহার সুরভি দান করিতে চায়, তাহাকে পদদলিত করিবার আমার কি অধিকার আছে?” [সূত্রঃ পর্দা ও ইসলাম। পৃ-৩৫] পরবর্তীকালে Paul Adam, Henry Betaille, Pierre Louis প্রভৃতি সাহিত্যিক George Sand এর আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলেন।
এতসব বিপ্লব এবং আন্দোলনের ফলে শরম, শালীনতা, সতীত্ব প্রভৃতি মূল্যবোধ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রসত হয়। কিমও তখনো ধর্ম এবং নৈতিকতা সত্রিুয় ছিল এবং ব্যভিচারের সয়লাব রোধ করবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এবার খোদাহীনতার দর্শন ধর্মবিশ্বাসের উপর হানল চরম আঘাত। ইংরেজ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইনের যুগামতকারী গ্রমহ The Origin of Species by Means of Natural Selection হল সেই আঘাতের হাতিয়ার। এই মতাদর্শ বলে, সৃষ্টিকর্তার মহাপরিকল্পনায় নয় বরং আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করে। পৃথিবী এবং তাতে প্রাণের উদ্ভবও আকস্মিকভাবে হয়। তারপর অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব লক্ষ-কোটি বছর ধরে রদপামতরিত হতে হতে বর্তমানের মানুষ নামক প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে। কমিউনিস্ট আন্দোলন আপন স্বার্থে এই মতবাদকে ব্যাপকভাবে প্রচারের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলে। উল্লেখ্য, অসংখ্য বিজ্ঞানী এই মতবাদকে প্রত্যখ্যান করেছেন এবং এর বিরতদ্ধে অনেক যুত্তিু-প্রমাণ পেশ করেছেন (এঁদের মধ্যে অনেক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীও আছেন)। যাহোক, বিবর্তনবাদ সৃষ্টিকর্তার অসিতত্বকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে। ফলে স্রষ্টার প্রত্যাদেশ তথা ধর্মও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই মতবাদ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মহিমাণ্বিত আসন থেকে নামিয়ে অন্যান্য জানোয়ারের মত এক জানোয়ার হিসাবে উপসহাপন করে। অতএব, জীবন-প্রণালীকেও পশুর অনুকরণে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা চলতে থাকে। জার্মান সোশ্যাল ডেমোত্রেুটিক পার্টির নেতা Babel এর কথায় ঠিক এই দাবীই উথুাপিত হয়ঃ “”নারী এবং পুরতষ তো পশুই। পশু দম্পতির মধ্যে কি কখনো বিবাহের─ সহায়ী বিবাহের─ প্রশণ উথুাপিত হয়?”[ উদ্ধৃতঃ পর্দা ও ইসলাম। পৃ-৪২] এই যে ধর্মকে অর্থহীন এবং মানুষকে পশু ভাববার প্রত্রিুয়া শুরত হল, যৌন জীবনে পড়ল এর অনিবার্য প্রভাব। বিশিষ্ট পন্ডিত দ্রল ডিউরাস্ট বলেনঃ “”স্পষ্ট ধারণা করা যাচ্ছে, ধর্মবিশ্বাসের উপর ডারউইনের আত্রুমণমূলক চিমতাধারার কারণেই যৌন স্বাদ আস্বাদনের প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যুবকরা যখন দেখল যে, ধর্ম তাদের যৌন স্বাদ আস্বাদন প্রবণতার বিরোধী, তখন তারা ধর্মকেও অকেজো ও হীন নগন্য প্রমাণ করবার শত-সহস্র কার্যকারণ সন্ধান করে নিল।” [দ্রল ডিউরাস্ট। দর্শনের বৈচিত্র। প্রথম খন্ড। পৃ-১৩৪। উদ্ধৃতঃ মুহাম্মাদ কুতুব। বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত। পৃ-২৬৫]
এরপর ঘটল আরেক বিপ্লব─ মিডিয়ার বিপ্লব। আবিস্কৃত হল সিনেমা এবং টেলিভিশন। ফলে এতদিন যা ছিল উপন্যাসের পাতায়, তাকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রাণবমত করে তোলা হল। নারী-পুরতষের প্রণয়, অভিসার, ব্যভিচার প্রভৃতিকে অত্যমত হদদয়গ্রাহী করে পেশ করা হতে লাগল। নগ্ণতা এবং অবাধ যৌনাচার ত্রুমশঃ গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চলতে লাগল। এভাবে চিত্র, ভাস্কর্য সাহিত্য, দর্শন, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন প্রভৃতির অবিরাম প্রচেষ্টায় নারী-পুরতষের মধ্যে সমসত ব্যবধান দূর হয়ে গেল। ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, মেলা-মেশা হয়ে গেল একেবারেই অবাধ। আর এ-পথ ধরে সমাজে প্রবেশ করল অসংখ্য সমস্যা। এখানে তেমন কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হল।
ক) যৌন নিপীড়নঃ এটি এক সর্ববাদীসম্মত সত্য যে, নর-নারী পরস্পরের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ বোধ করে থাকে। বিশেষ করে গোটা নারীদেহে প্রবল আকর্ষণী শত্তিু রয়েছে। আর পুরতষের মানসিক ও জৈবিক গঠন এমনই যে, সে এক পলকেই আকৃষ্ট হতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যেই উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে। সে-ক্ষেত্রে শারীংরকভাবে দুর্বল নারীর পক্ষে তাকে প্রতিরোধ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই, নারী যদি তার রদপ-যৌবন পুরতষের দৃষ্টি থেকে আড়াল না করে তাকে আকৃষ্ট করার কাজে ব্যবহার করে, তবে সে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বসে। আকর্ষণের এই প্রত্রিুয়ায় নারী সৌভাগ্যত্রুমে সঠিক ব্যত্তিুকে পেয়ে যেতে পারে। আবার ভুল কোন ব্যত্তিুর আগমণ ঘটতে পারে তার জীবনে। ফুলের সৌন্দর্য শুধুমৌমাছিকেই টানে না, কীটকেও ডেকে আনে। মানব রদপী কীট একটি জীবনকে কুঁড়িতেই নষ্ট করে দিতে পারে। এ কথার সত্যতা পশ্চিমা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ নারী প্রতিদিন আপন সম্ভ্রম হারানোর মাধ্যমে প্রমাণ করে চলেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নারীর ধর্ষিত হওয়া─ কথাটা অবিশ্বাস্য শোনালেও আক্ষরিক অর্থেই সত্য। NCVS [National Crime Victimization Survey] আমাদেরকে জানাচ্ছে, ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রে ধর্ষণ নয় এরদপ যৌননিপীড়ন এর ঘটনা ঘটে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার। আর ধর্ষণের ঘটনা ঘটে প্রায় ২ লক্ষ (অর্থাৎ গড়ে প্রায় আড়াই মিনিটে একটি ) (সূত্রঃ The Encarta Encyclopaedia. Rape) ।
অর্থনৈতিক মুত্তিুর আশ্বাস দিয়ে নারীকে কর্মক্ষেত্রে পুরতষের পাশে টেনে আনা হয়েছে। অথচ এ-জন্য যে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে─ এই কথাটা বিবেচনায় আনা হয়নি। কর্মসহলে তাকে সহকর্মীদের হাতে অশেষ লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এ-প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নারীবাদী সমাজবিজ্ঞানী লিজ কেলি বলেনঃ
অর্থৎৎ- “”যে-সব কর্মে নারীদেরকে পুরতষের সঙ্গে লেন দেন করতে হয়, সে-সব ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন ব্যাপক, উদাহরণস্বরদপ বারের কাজ, ক্যানটিনের কাজ, শিশুদের দেখাশোনা, ধোয়ামোছার কাজ, সরকারি চাকরী, জনসেবার কাজ, হাসপাতালের কাজ, পাঠাগারের কাজ, দোকানের কাজ, সমাজকর্ম, শিক্ষকতা, ও পরিবহণের কাজ।” [Women, Violence and Male-Power. p-25.] ।
যৌন নিপীড়নের ঘটনা শিক্ষাঙ্গণেও ব্যাপক। সহশিক্ষার নামে কলেজ-ভার্সিটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মেলামেশার অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। পাশ্চাত্যের স্কুল-কলেজে এ-ধরণের ঘটনা ত্রুমশঃ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিশ্বখ্যাত মাইত্রেুাসফট এর বিশ্বকোষে বলা হচ্ছেঃ
অর্থাৎ- “”বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে সংঘটিত যৌন হয়রাভনর অভিযোগও সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।” [“Rape” Encarta Encyclopedia.]
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ২৩% থেকে ৪৪.৮% ছাত্রী ছেলে-বন্ধুদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে [সূত্রঃ Assessment of Family Violence. p-212.] । পাঠক, ভেবে দেখুন, হাইস্কুলের চিত্র যদি এই হয়, তবে কলেজ-ভৎর্সিটির অবসহা না-জানি কতটা মারাত্মক।
এই যে লক্ষ লক্ষ হতভাগ্য নারী, যাদেরকে বলপূর্বক ভোগ করা হচ্ছে, পর্দা তথা শালীন পোশবক এবং পর-পুরতষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার মাধ্যমে এদেরকে রক্ষা করা যেত। বিশ্বখ্যাত ইসলাম প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েক একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়ে থাকেন। দুজন তরতণী, যারা আসলে জমজ বোন, রাসতা দিয়ে হাঁটছে। এরা খুব সুন্দরী এবং দেখতে ঠিক একই রকম। এদের একজন মিনিস্কার্ট পরিহিতা, আরেকজন ইসলামি রীতিতে হিজাব পরিহিতা। রাসতার মোড়ে কিছু বখাটে যুবক দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কাকে উত্যত্তু করবে? খুব সহজ উত্তরঃ শালীন পোশবক পরিহিতাকে নয়, বরং যৌন-উত্তেজক বেশধারিণীকে। এ-ভাবে পশ্চিমা নারীরা শালীন পোশবক পরিত্যাগের মাধ্যমে প্রকারামতরে নিজের রক্ষাকবচকেই ছুয়ড়ে ফেলেছে।
খ) ব্যভিচারের ব্যাপকতাঃ পর্দাহীন নারী কোন দুরাচারের কবলে পড়লে কি পরিণতি হয় তা আমরা দেখলাম। এবার আমরা দেখব, তার উপর “সুনজর’ পড়লে কি পরিণতি হয়ে থাকে।
যে-সমাজে পর্দাহীনতার প্রচলন হয়, সে-সমাজে নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশা রোধ করার কোনই উপায় থাকে না। কারণ, বিপরীতের প্রতি আকর্ষণ এক বিশ্বজনীন বাসতবতা। প্রাণিজগতে তো বটেই, উদ্ভিদকূলে─ এমনকি জড়জগতেও এটা লক্ষ্য করা যায়। চুম্বকের উত্তর মেরত দক্ষিণ মেরতকে আকর্ষণ করে, বিদ্যুতের ধণাত্মক আধান (charge) ঋণাত্মক আধানকে টানে। জীবকঁলে সএী-পুরতষ পরস্পরের প্রতি অনুভব করে দুর্বার আকর্ষণ। বিপরীতের প্রতি এই আকর্ষণ আবার মানবকঁলে অত্যমত প্রবল হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রাণীর মত মানুষের জৈবিক চাহিদা তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে কল্পনাপ্রবণ এবং সৌন্দর্যপিপাসু একটি মন। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সে শুধু জৈবিক আকর্ষণই অনুভব করে না, তার সৌন্দর্যেও সে আকৃষ্ট হয়। আপন সৌন্দর্য-সৌষ্ঠব দিয়েও সে পছন্দের জনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এ-জন্য সে সাজ-সজ্জা, ফ্যাশান, অলংকার প্রভৃতির সাহায্য গ্রহণ করে।
এ-ভাবে আকর্ষণ করা এবং আকৃষ্ট হবার প্রত্রিুয়ায় তারা পরস্পরের নিকটবর্তী হয়। ত্রুমশঃ তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় ঘনিষ্ঠতা। একে অপরের সঙ্গসুখ উপভোগ করতে থাকে তারা। এই মেলামেশার স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে তারা যৌন আকর্ষণ বোধ করতে থাকে যা এক সময় ব্যভিচারে পর্যবসিত হয়। ইউরোপ, আমেরিকা তথা সমগ্র পাশ্চাত্য জগত এবং তাদের ভাবাদর্শে গড়া প্রাচ্যের অনেক দেশ একথার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে। সুইডেনের নারী-পুরতষদের শতকরা ৯৯ জন বিয়ের আগেই যৌনসম্পর্ক সহাপন করে থাকে। যুত্তুরাষ্ট্রের যৌনসক্ষম নারী-পুরতষের (৪৪ বছর পর্যমত যাদের বয়স) উপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ জন বিয়ের আগেই যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। [সূত্রঃ Premarital Sex: the Norm in America.] কানাডায়ও আমরা একই রকম চিত্র লক্ষ্য করি। এই দেশটিতে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়স্কদের শতকরা ৯২ জন এবং ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়স্কদের শতকরা ৮২ জন বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক অনুমোদন করে থাকে। [সূত্রঃ Teen Trends. Pp-46]
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে যে যৌন বিপ্লব (sexual revolution) সূচিত হয়েছিল তা মাত্র বিশ-পঁচিশ বছরে মহামারীর আকার ধারণ করে। প্রথম দিকে দাবী করা হয়, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের জন্য পরস্পরকে চেনা-জানা প্রয়োজন। এজন্য পাত্র-পাত্রীকে সময় এবং সুযোগ প্রদান করতে হবে। কিছুকাল তারা যেন ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে পারে, তার ব্যবসহা থাকতে হবে। এরপর বলা হল, দু’জন নারী-পুরতষের প্রণয়-অভিসার চলাকালে যৌনমিলন ঘটা খুব স্বাভাবিক এবং এটি নিন্দনীয় নয়। “উদারতা’ বৃদ্ধির পরবর্তী সতরে দেখা যায়, প্রেম-প্রণয়কে আর শর্ত হিসাবে ধরা হচ্ছে না; বরং যৌন মিলনের জন্য ঘনিষ্ঠতাকেই যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে। যুত্তুরাষ্ট্রের শতকরা ৮৫ ভাগ কলেজছাত্রী এবং ৪০ ভাগ ছাত্র মনে করে, যৌন সম্পর্ক সহাপনের জন্য ঘনিষ্ঠতা পূর্বশর্ত হওয়া উচিত। [সূত্রঃ Social Psychology : Understanding Human Interaction. pp-324] এখানেই শেষ নয়। দৃষ্টিভঙ্গীর “উদারতা’ এখন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রেম-প্রণয় দূরে থাক, ঘনিষ্ঠতার শর্তও এখন উঠে গেছে। এখন অনেকেই ঘনিষ্ঠতা, অঙ্গীকার বা আবেগীয় বন্ধন ব্যতিরেকেই যৌন সম্পর্ক সহাপন করে থাকে।[সূত্রঃ Social Psychology : Understanding Human Interaction. pp-326] ২০০১ সালে যুত্তুরাষ্ট্রের জাতীয় বিবাহ প্রকল্প ২০ থেকে ২৯ বছর বয়স্ক যুবতীদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করেন। এতে দেখা যায়, শতকরা ৭৫ জন মনে করে, কোন রকম অঙ্গীকার ব্যাতিরেকে কেবল মজা করার জন্য যৌন সম্পর্ক সহাপন করা আজকাল সাধারণ ব্যাপার। ৪০% যুবতী জানিয়েছে, তারা কিছু লোকের সাথে যৌন সম্পর্ক গড়েছিল এমনকি তাদেরকে বিবাহ করার আগ্রহ না থাকা সত্তেবও।[সূত্রঃ A New Psychology of Women. Pp-400] এরকম যৌন আচরণ (অর্থাৎ অঙ্গীকার নেই, ঘনিষ্ঠতা নেই, আবেগ নেই─ এরকম যৌন সম্পর্ক ) কেবল একটি বিশেষ পেশার নারীর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। অতএব, একথা বললে অত্যুত্তিু হবে না যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ত্রুমশঃ পুরতষদেরকে লম্পট এবং নারীদেরকে পতিতার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। কথাটা শ্রততিকটূ শোনালেও এর সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। আমেরিকার বিখ্যাত নারীবাদী সমাজবিজ্ঞানী হিলারী এম লিপ্স বলেনঃ
“”স্পষ্টতঃ ভালবাসা কিংবা কামাসত্তিু নারীর যৌন মিলনের একমাত্র কারণ নয় । দায়িত্ববোধের কারণে কিংবা একজন সঙ্গীকে সমওষ্ট করার জন্য যৌনমিলন এক কথা, কিমও জীবিকার জন্য এই কাজে লিপ্ত হওয়াকে কি বলবেন? অধিকাংশ লোকই অপেক্ষাকৃত ভাল কোন সুযোগ আসার পূর্ব পর্যমত পতিতাবৃত্তিকে সাময়িক পেশা (part-time job) হিসাবে দেখে থাকে । আর অধিকাংশেরই এই কাজের পাশাপাশি নির্দিষ্ট প্রেমিক বা প্রেমিকা থাকে। পতিতাবৃত্তি প্রায়শঃ এক খন্ডকালীন পেশা যা একজন নারীকে প্রয়োজনের সময় কিছু অর্থ উপার্জন করে নিতে সাহায্য করে।”[সূত্রঃ A New Psychology of Women. Pp- 413]
গ) অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণঃ ভ্রমর মধুপানামেত উড়াল দেয়, আর ফুলের অভ্যমতরে ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন। ফল গঠনের গুরতদায়িত্ব তার উপরেই চেপে বসে। নারী-রদপ-ফুলের জীবনেও একই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষতঃ যে নারী তার সৌন্দর্য-জৌলুস পুরতষ নামক পতঙ্গকে আকৃষ্ট করতে সচরাচর ব্যবহার করে, তাদেরকেই এর ফল তথা অনাগত সমতানের দায় গ্রহণ করতে হয়। অবাধ যৌনতার উদ্দাম স্রোতে ভেসে চলা নারী-পুরতষ ভুলে যায় এর মারাত্মক পরিণতির কথা। ফলে অনেক সময় নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। যেসব দেশে অবাধ যৌনতা প্রচলিত আছে, সেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তরতণী এই পরিণতির শিকার হয়ে থাকে। বিবাহ বহির্ভূত যৌন জীবনকে নিরতপদ্রব করতে পাশ্চাত্যের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস, আদালত ─সর্বত্র জন্মনিরোধক সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। কিমও এতে তেমন কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, রোমাঞ্চ সন্ধানী তরতণ-তরতণীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাড়া প্রদানের চেয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাড়া প্রদানে বেশি আগ্রহী। তারা ঘটনাপ্রবাহে স্বাভাবিকতা পছন্দ করে। পূর্ব প্রসতুতি গ্রহণের মাধ্যমে যৌন মিলনে অগ্রসর হওয়াতে যে আড়ষ্টতা, তা তাদের খুব না-পছন্দ। মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী ব্যারন এবং ব্রাইন বলেনঃ
“”অনাকাংখিত গর্ভধারণ হল নব্য যৌন স্বাধীনতার প্রথম নেতিবাচক পরিণতি। যৌন সত্রিুয় তরতণ-তরতণীদের বিস্ময়কর উচ্চ হার কার্যকর জন্মনিরোধক ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা নিয়ম মাফিক ব্যবহার করেনি; ফলে ১৯৭০ এর দশক থেকে প্রতি বছর শুধু আমেরিকা যুত্তুরাষ্ট্রেই এক মিলিয়নের (দশ লক্ষ) অধিক অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে থাকে।. . . এই তারতণ্যে গর্ভধারণের মহামারী সংশ্লিষ্ট ব্যত্তিু এবং সমাজের জন্য দুর্দশার এক অবিরাম উৎসে পরিণত হয়েছে।” [সূত্রঃ Social Psychology : Understanding Human Interaction. pp-328 ] ১৯৯৪ সালে আমেরিকার যত নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তাদের ৪৯% অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক ছিল অনাকাংখিত গর্ভধারণ । [সূত্রঃ Unintended Pregnancy in the United States.]
ঘ) গর্ভপাত বা ভ্রুণহত্যাঃ উপরের তথ্যচিত্র আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, অধিকাংশ বিবাহবহির্ভূত গর্ভসঞ্চার ঘটে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে। স্বভাবতঃই এরা মানসিকভাবে এবং আর্থিকভাবে অনাগত সমতানকে স্বাগত জানাতে প্রসতুত থাকে না। তদুপরি, তাদের ক্ষণিকের যৌনসাথীরাও দায়িত্ব পালনে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে না। ফলে সিদ্ধামত গ্রহণ করতে হয় মেয়েটাকেই। এরকম পরিসিহতিতে অনেকেই গর্ভপাত ঘটিয়ে ঝঞ্চাট থেকে মুত্তু হয়। জ্যাফি এবং ড্রাইফুজ নামক দুজন মার্কিন গবেষক অনিচ্ছাকৃতভাবে গর্ভবতী হয়ে পড়া তরতণীদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করেন। তাঁরা দেখতে পান, এসব তরতণীদের শতকরা ৩৮ ভাগ গর্ভপাত তথা ভ্রদণহত্যার আশ্রয় নেয়। [সূত্রঃ Courtship, Marriage and Family: American Style. pp-87] ১৯৯৬ সালে যুত্তুরাষ্ট্রে ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭ শ ৩০ টি গর্ভপাত ঘটানো হয়। [সূত্রঃ The World Almanac-2002. pp-88]
উত্তর আমেরিকার আরেকটি উন্নত দেশ কানাডাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ১৯৭০ সাল থেকে এদেশটিতে গর্ভপাত হু হু করে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই বছর “বৈধভাবে’ ভ্রদণহত্যা করা হয় ১১ হাজার। দশ বছর পরে ১৯৮০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় গুণ অর্থাৎ ৬৬ হাজার। আরো দশ বছর পরে ১৯৯০ সালে এসে আমরা ৯৪ হাজার গর্ভনাশের কথা অবগত হই। যুত্তুরাষ্ট্রের মত এই দেশটিতেও গর্ভঘাতিনীদের অধিকাংশই ছাত্রী এবং তাদের শতকরা ৭৪ জনের বয়স ২০ বছর বা তদপেক্ষা কম। [সূত্রঃ Teen Trends. Pp-43] ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডএ ১৮,৩৪০ টা গর্ভপাত ঘটানো হয়। [সূত্রঃ Statistics Newzealand. 08.01.2009] ইউরোপীয় সভ্যতার মশালবাহী ইংল্যান্ডে ২০০৬ সালে ১,৯৩,৭০০ টি গর্ভপাত ঘটানো হয়। [সূত্রঃ Abortion Statistics, England and Wales: 2006]
ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি, অবাধ যৌনতার ব্যাপারে পাশ্চাত্যের “উদারতা’ ত্রুমশঃ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার প্রভাব গর্ভপাতের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। বিপুল সংখ্যক তরতণী যখন গর্ভবতী হয়ে পড়ছে, তখন এটাকে আইনগত বৈধতা না দিয়ে আর উপায় কি। অতএব, গর্ভের শিশুটিকে মরতেই হবে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এক্ষেত্রে পথ প্রদর্শন করল। তারা ১৯২০ সালে গর্ভপাতকে বৈধতা প্রদান করে আইন প্রণয়ন করল। এরপর ১৯৪৮ সালে জাপান, ১৯৫০ এর দশকে পূর্ব ইউরোপীয় দেশ সমূহ এবং ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে বাকি ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশ সমূহ গর্ভসহ শিশুকে হত্যা করার বৈধতা প্রদান করল।[The Encarta Encyclopedia. Abortion]
ভ্রদণহত্যা সমর্থনকারীরা সর্বাপেক্ষা জোরালো যে যুত্তিু পেশ করেন তা হল, ব্যত্তিু স্বাধীনতা। দেহটা যেহেতু নারীর নিজের, সেহেতু এটার ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধামত গ্রহণের অধিকার তার রয়েছে। এটা যাকে খুশি সে দান করতে পারে। দান করতে গিয়ে এর মধ্যে যদি নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়, তবে তা বাঁচিয়ে রাখা বা না রাখাও তার ইচ্ছাধীন। কী সর্বনাশা স্বাধীনতা! অন্ধ কামদেবতার বেদীমূলে আপন সত্তার মধ্যে বেড়ে ওঠা নিষ্পাপ প্রাণ বলি দেওয়া হচ্ছে লাখে লাখে।
এ তো গেল গর্ভসহ সেই মানব-শিশুটির কথা, যে জানতেও পারল না কি অপরাধে তাকে প্রাণদন্ড দেওয়া হল। যে নারী আপন গর্ভের সমতান নষ্ট করে তার অবসহা মোটেই স্বসিতকর হয় না। সেণ্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগের প্রশিক্ষক ড্যানিয়েল জে, মার্টিন বলেনঃ
“”যে নারী গর্ভপাতের পমহা অবলম্বন করে, তার দেহে গর্ভপাতের প্রভাব বিরাট এবং সব সময় নেতিবাচক। নারীদেহের উপর গর্ভপাতের কোন উপকারের কথা আমি ভাবতে পারি না।” [সূত্রঃ ‘Human Life and Health Care Ethics’.]
এ, লেভিন এবং তাঁর সহ-গবেষকবৃন্দ জানাচ্ছেন, যেসব নারী গর্ভপাত ঘটায়, তাদের ডিম্বনালীতে গর্ভ সঞ্চারের (ectopic pregnancy) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, তাদের বন্ধ্যা হয়ে যাবার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ।[সূত্রঃ American Journal of Public Health. Vol.72. pp-253 ] জ্যানেট ডেলিং এবং তাঁর সহযোগী গবেষকবৃন্দ ১ হাজার ৮শ জন নারীর উপর গবেষণা পরিচালনার পর জোর দিয়ে বলেন, গর্ভপাত যে সতন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এ ব্যাপারে তাঁদের হাতে জোরালো প্রমাণ রয়েছে। গর্ভঘাতিনী নারী ৪৫ বছর বয়ঃত্রুমের মধ্যে সতন ক্যান্সারে আত্রুামত হবার আশংকা ৫০% বৃদ্ধি পায়। ১৮ বছর বা তদপেক্ষা কম বয়স্ক তরতণী যদি ৮ সপ্তাহ পরে গর্ভপাত করে, তবে তার সতন ক্যান্সারে আত্রুামত হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ৮০০ %। [সূত্রঃ Journal of the National Cancer Institute. Vol.86. pp-1584]
এ-তো গেল গর্ভঘাতিনী নারীর শারীংরক সমস্যার কথা। মানসিকভাবেও তারা কম সমস্যার সম্মুখীন হয় না। তাদের মানসিক সমস্যা সম্পর্কে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ডঃ ওয়ান্ডা ফ্রান্জ বলেনঃ
“”যেসব নারী গর্ভপাত হতে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রতিত্রিুয়ার কথা জানায়, তারা ঠিকই জানে তাদের সমস্যাটা কি। তারা ভয়ংকর দুঃস্বপেণর কথা উল্লেখ করে যাতে তারা দেখতে পায় শিশুরা আবর্জনার সতুপ থেকে, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রত্তেুর মধ্য থেকে তাদেরকে ডাকছে। যখন তাদেরকে গর্ভপাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, তখন এই নারীরা পুনরায় সেই অভিজ্ঞতা লাভ করে ভয়ানক মানসিক যাতনা সহকারে।. . . তারা নিজেদেরকে অকর্মণ্য এবং অসহায় শিকার বলে মনে করে, কারণ তারা সর্বাপেক্ষা স্বাভাবিক মানবীয় কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে তা হল মাতৃত্বের ভূমিকা।” [সূত্রঃ Medical and Psychological Impact of Abortion.]
লস্ এঞ্জেলস্ টাইমস্ নামক বিখ্যাত পত্রিকা ১৯৮৯ সালে গর্ভপাতের উপর এক মতামত জরিপ করে। এই জরিপে দেখা যায়, গর্ভপাত করেছে এমন নারীদের শতকরা ৫৬ জন এজন্য অপরাধবোধে ভুগছে। শতকরা ২৬জন একাজের জন্য অত্যমত অনুতপ্ত। [সূত্রঃ The Sacramento Bee. March, 1989. pp-A7]
ঙ) অবৈধ সমতানঃ একজন অবিবাহিতা নারী যখন অবাধ যৌনতার পরিণতি স্বরদপ গর্ভধারণ করে, তখন তার সম্মুখে তিনটি পথ উন্মুত্তু থাকে। এক, সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সমতানটি গ্রহণ করবে। দুই, অবাঞ্ছিত সমতানটিকে গর্ভপাতের মাধ্যমে শেষ করে দেবে। তিন, অবিবাহিতা অবসহাতেই সে সমতানটি গ্রহণ করবে। মার্কিন সমাজ-গবেষক জ্যাফি এবং ড্রাইফুজ ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়স্কা কুমারী মাতাদের উপর জরিপ পরিচালনা করে দেখেন, এদের শতকরা ২৯ ভাগ বিবাহবহির্ভূত জন্মদানের মাধ্যমে শেষ হয়। [সূত্রঃ Courtship, Marriage and Family: American Style. pp-87]
অবাধ যৌনতার আধিক্যের কারণে অবৈধ সমতানে পাশ্চাত্য জগত ভরে উঠেছে। মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রে ১৯৯৮ সালে যত শিশু জন্ম গ্রহণ করে, তার ৩২.৮% হল বিবাহ-বহির্ভূত যৌন মিলনের ফল। [সূত্রঃ The World Almanac.2001. Pp-873] এর অর্থ হল, গড়ে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন জারজ সমতান।
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, যৌনজীবন সম্পর্কে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গী ত্রুমশঃ “উদার’ থেকে “উদারতর’ হচ্ছে। প্রথমে অবাধ মেলামেশাকে উৎসাহিত করা হল। এরপর অবাধ যৌনতাকে বৈধতা দেওয়া হল। তারপর বৈধ করা হল ভ্রদণহত্যাকে। পরিশেষে, অবৈধ সমতান জন্মদানকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হল। কানাডার একটা তথ্যচিত্র আমাদের সামনে রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৭৩ ভাগ নারী এবং ৬৭ ভাগ পুরতষ বিবাহিত না হয়ে সমতান গ্রহণকে অনুমোদন করে থাকে। [সূত্রঃ Teen Trends. Pp-33]
আমরা পূর্বাহেু লক্ষ্য করেছি, তরতণীদের ব্যাপকহারে গর্ভধারণকে মহামারি (teenage pregnancy epidemic) হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ কলেরা, ডায়রিয়া, প্লেগ প্রভৃতি মহামারীর ক্ষেত্রে যা করা হয়, এক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটাই করা হচ্ছে। উপরোত্তু মহামারীর ক্ষেত্রে আত্রুামতদেরকে দ্রতত চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং রোগের বিসতার রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। অথচ, অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ-রদপ মহামারীতে আত্রুামত তরতণীদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ফলাফল স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে এবং এই মহামারীর বিসতার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ (অবাধ মেলামেশা বন্ধকরণ) গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদেরকে আশ্বসত করা হচ্ছে, তোমরা যার সঙ্গে খুশি যৌনমিলন করতে চাও? ক্ষতি কি? তোমাদের গর্ভে সমতান এসেছে? সমস্যা নেই। তোমরা ভ্রদণহত্যা করতে চাও? করতে থাকো। বিবাহ ব্যতিরেকেই সমতান গ্রহণ করতে চাও? তা-ও মেনে নেওয়া হল। এ যেন লোকদেরকে বলা, তোমরা ডোবা-নালা, খাল-বিল যেখান থেকে খুশি পানি পান করতে চাও? অনুমতি দেওয়া গেল। তোমাদের কলেরা হয়েছে? হোক না। তোমরা বমি করতে চাও? করতে থাকো। তোমরা বিছানাতেই পায়খানা করতে চাও? মেনে নেওয়া হল। এভাবে একের পর এক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, আর সমাধান না করে সহ্য করে যাবার বিধান দেওয়া হচ্ছে।
যাহোক, গর্ভের অবাঞ্ছিত সমতানকে পৃথিবীর আলো দেখতে দেবার সিদ্ধামত গ্রহণ করা যতটা সহজ, তাকে সর্বামতঃকরণে গ্রহণ করাটা তত সহজ নয়। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, অমততঃ ২৯% ভ্রদণ স্বাভাবিকভাবে ভূমিষ্ঠ হবার সুযোগ পায়। এসব শিশুর অধিকাংশেরই জীবনকাল হতাদর, বঞ্চনা আর অবহেলার বিরাট যোগফল ছাড়া আর কিছু নয়। মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতি বছর হাজার হাজার সদ্যপ্রসূত শিশু পরিত্যত্তু অবসহায় আবিস্কৃত হয়। এদের গর্ভধারিণীরা এভাবে তাদের সাময়িক আনন্দ-বিলাসের অবাঞ্ছিত ফসলকে বিসর্জন দিয়ে দায়মুত্তু হয়। এসব শিশুদেরকে পরে হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন শিশুসেবা কেন্দ্রে কিংবা দত্তক প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে দৈহিক স্বাসেহর পুষ্টি সাধনের সব রকম ব্যবসহা থাকে। তবে, মানসিক স্বাসেহ্যর জন্য এসব সহান মোটেই অনুকূল নয়। বিখ্যাত সাহিত্যিক রাউলিং তাঁর ছোটগল্প এ মাদার ইন ম্যানভিল এ সেণহ-মমতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে চমৎকার বলেছেনঃ “”রতটি ছাড়াও অন্য খাবার রয়েছে এবং দেহের মত অমতরও দ্রতত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তে পারে।”
শিশুসেবা কেন্দ্রে আশ্রিত শিশুদের ক্ষুধা লাগলে সুষম খাদ্য মেলে, কিমও সেণহ-মমতা-ভালবাসা মেলে না। তাদের পরিচর্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরা তাদের মুখে ফিডার তুলে দিতে পারে, কিমও মায়ের মমতায় বুকে জড়িয়ে নিতে পারে না। আর এটা সম্ভবও নয়। ফলে এরা জীবন ও জগতকে ভালবাসতে শেখে না। এরা একেক জন হয়ে ওঠে সমাজ বিরোধী অথবা সমাজ বিদ্বেষী।
চ) যৌনরোগের ব্যাপকতাঃ যৌন-বিপ্লবের আরেকটা বড় অর্জন হল যৌনরোগের ব্যাপক বিসতার। এণ্টিবায়োটিক ব্যবহার করে এসব রোগের অনেকগুলোর চিকিৎসা করা সম্ভব। তথাপি সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, জেনিটাল ওয়ার্টস, জেনিটাল হার্পিস, এইডস প্রভৃতি কঠিন রোগের বিসতার রোধ করা সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর চার হাজারেরও বেশি লোক ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া এবং সিফিলিসে আত্রুামত হয়। [সূত্রঃ Epidemiology Report. No-21] ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডে সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, জেনিটাল হার্পিস, জেনিটাল ওয়ার্টস─ এই পাঁচটা রোগে নতুন আত্রুামত হয়েছে ৩,৯৭,৯৯০ জন। এই দেশটিতে দশ বছর আগের তুলনায় গনোরিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২%, ক্ল্যামাইডিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫০%, ওয়ার্টস ২৮% এবং হার্পিস ৫১%। [সূত্রঃ STD Statistics for the UK. Avert International] আমেরিকান জনগণের প্রায় ১০ শতাংশ বিভিন্ন যৌনরোগে ভুগছে। এর সাথে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে ৫ লক্ষ নতুন রোগী। [Social Psychology: Understanding Human Interaction. pp-329]
যৌনবাহিত রোগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক হল এইডস। এই রোগের জীবানু আবিস্কৃত হবার পর পঁচিশ বছর অতিত্রুামত হয়ে গেল, এখনো এর কোন চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়নি। এযাবৎ কয়েক কোটি লোক এই মহামারিতে প্রাণ হারিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ড হলব্রতক বলেনঃ “”১১ সেপ্টেম্বরে (অর্থাৎ টুইন টাওয়ার হামলায়) যত লোক নিহত হয়েছিল, এইডস এর কারণে প্রত্যেক দিন তার তিন গুণ লোক প্রাণ হারায়।”[The Bangladesh Observer. News in Brief. 02.03.2003] পাঠক, ভেবে দেখুন। টুইন টাওয়ারে হামলার প্রতিশোধ নিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আফগানিসতান ও ইরাকের লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। অথচ গত পঁচিশ বছর যাবৎ যে নীরব ঘাতক প্রতিদিন ৯/১১ এর তিনগুণ লোক হত্যা করে চলেছে, তাকে মঁকাংবলা করার মত নৈতিক শত্তিু তো পাশ্চাত্য জগত রাখেই না, বরংতাকে সযতেণ জিইয়ে রেখেছে। যৌন জীবনে শৃংখলা ও সংযম ফিরিয়ে আনাই ছিল এইডস মুকাংবলার সর্বাপেক্ষা কার্যকর পদক্ষেপ। কিমও এ-কাজের জন্য যে চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রয়োজন, তা কবেই হারিয়ে বসেছে পাশ্চাত্য জগত। এখন অবাধ যৌনতাকে বজায় রেখেই এই মহামারি থেকে মুত্তিু লাভের চেষ্টা করা হচ্ছে। যুবসম্প্রদায়কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এইডস থেকে বাঁচতে কনডম ব্যবহার করতন। কিমও এতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। সমাজবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ তরতণ-তরতণী এটা ব্যবহার করছে না। রোমাণ্টিক তরতণ-তরতণীরা পরিকল্পিতভাবে সাড়া দেবার চেয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাড়া প্রদানে বেশি আগ্রহী। তারা ঘটনাপ্রবাহে স্বাভাবিকতা পছন্দ করে। পূর্ব প্রসতুতি গ্রহণের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়াতে যে আড়ষ্টতা তা তাদের খুবই না-পছন্দ। [Courtship, Marriage and Family: American Style.pp-87]
ছ) যৌন-বিকৃতিঃ যে সমাজে অবাধ যৌনতা ব্যাপকতা লাভ করে, গ্গসখানে জীবনের সকল ক্ষেত্রে এটা হয়ে যায় এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। চিত্রে, ভাষ্কর্যে, প্রচ্ছদে, পুসতকে, সঙ্গীতে, ভঙ্গীতে, ফ্যাশনে, বিজ্ঞাপনে, সিনেমায়, নাটকে─ সর্বত্র যৌনতার বাড়াবাড়ি শুরত হয়। মানুষ উঠতে বসতে শুতে সর্বক্ষণ এই একটা বিষয় দ্বারা প্রভাবিত, বরং বলা যায় তাড়িত হতে থাকে। এর ফলে ত্রুমশঃ যৌন-বিকৃতি ঘটতে থাকে। তাছাড়া, যৌনসঙ্গী খুব বেশি সহজলভ্য হওয়ায় অনেকে নানাভাবে বৈচিত্রের গ্গপছনে ছোটে। অনেকে শিশু-ধর্ষণ (pedophilia) করে, অনেকে সমকামিতার আশ্রয় নেয়, কেউ আবার স্বেচ্ছায় পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়, কেউ কেউ নগ্ণতায় তৃপ্তি খুঁজে পায়। অনেকের রতচি এতটা বিকৃত হয়ে পড়ে যে, তারা রত্তুসম্পর্কের অতি আপনজনের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। এছাড়াও রয়েছে পশুমৈথুন (zoophilia), অন্যদের যৌনকর্ম দেখে তৃপ্তিলাভ(Peeping Tom) আরো কত বিকৃতি! এখানে কিছু যৌনবিকৃতির ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনা করা হল।
এক. শিশু-ধর্ষণঃ এটা সবচেয়ে লজ্জাজনক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যে, পাশ্চাত্যে বিপুল সংখ্যক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এক জরিপে দেখা গেছে যত যৌন নিপীড়নের ঘটনা পুলিশে রিপোর্ট করা হয় তার তিন ভাগের এক ভাগ ঘটে ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের উপর (সূত্রঃ Criminology. p-39) । ১৯৯৪ সালে বিশ্বব্যাংক এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, নরওয়ে, যুত্তুরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, বার্বাডোস ও নেদারল্যান্ডসের নারীদের প্রতি তিনজনে একজন শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় (সূত্রঃ Social Problems. p-92) । এসব শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন কারো দ্বারা আত্রুামত হয় যারা তাদের পরিচিত। অনেক সময় গুরতজন শ্রেণীর লোকেরা এই জঘন্য কাজটা করে থাকে, যাদেরকে সম্মান করার কথা, শ্রদ্ধার চোখে দেখবার কথা। পাশ্চাত্যে বিবাহ-বিচ্ছেদের হার খুব বেশি হবার কারণে বিপুল সংখ্যক শিশু তাদের প্রকৃত পিতা-মাতা উভয়ের সাথে বাস করার সুযোগ পায় না। এদের সৎ পিতারা অনেক সময় অসৎ কর্মটা করে থাকে। ফলে আশ্রয় হারাবার ভয়ে তাদেরকে দিনের পর দিন নীরবে সবকিছু সয়ে যেতে হয়। যৌনজীবন সম্পর্কে খুব নেতিবাচক এবং ভীতিকর ধারণা বদ্ধমূল হয় তাদের শিশুমনে যা পরিণামে তাদেরকে সুসহ যৌনজীবনের অনুপযুত্তু করে তোলে।
দুই. সমকামিতাঃ যৌনবিকৃতির আরেকটা রদপ হল সমকামিতা। বিপরীত লিঙ্গ অতি সহজলভ্য হবার কারণে অনেকে বৈচিত্রের সন্ধানে সমলিঙ্গের দিকে ধাবিত হয়। আর “উদারতা’র মমেএ দীক্ষা নেবার কারণে সমাজেও এটার স্বীকৃতি মেলে। ২০০০ সালের আদমশুমারি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যুত্তুরাষ্ট্রে সমকামী (homosexual) লোকের সংখ্যা ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি (সূত্রঃ Sociology. p-342) । এখানেই শেষ নয়, সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহও পাশ্চাত্যের অনেক দেশে আইনগত স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই জঘন্য অপ্রাকৃতিক কাজের কারণে একদা লুত (আ) এর জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রামেত এসে (১৯৮৩ সালে) এই ঘৃণ্য রীতির সর্বনাশা ফল আবারও প্রকাশ পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এইডস নামক মরণব্যাধির কারণ হিসাবে সমকামিতাকে চিহিুত করেন। Avert নামক ইংল্যান্ডের এইডস বিরোধী সংসহা ২০০৪ সালে পুরতষদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, এই বছর ৩২,৪১২ জন সমকামী পুরতষের দেহে HIV জীবানু পাওয়া যায়। [Avert. September-2004] এই রোগে প্রতিদিন পৃথিবীর দশ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারায়।
তিন. পতিতাবৃত্তিঃ এটা হল বিকৃতির আরেক করতণ ছবি। পাশ্চাত্যে যৌনজীবনে যথেচ্ছাচার এতটা ব্যাপক যে, আপন যৌনাঙ্গ হেফাজতের কথা যারা ভাবে, তাদেরকে কৃপার পাত্র মনে করা হয়। এ-সব সমাজে এমন নারী-পুরতষ খুব কমই আছে যারা কয়েকজনের সাথে যৌন সম্পর্ক সহাপন করেনি। ফলে পতিতাবৃত্তিকে অনেকে “কাম্য নয়’ ভাবলেও “উচ্ছেদযোগ্য’ সম্ভবতঃ কেউই ভাবে না। তাইতো দেখা যায়, মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রে পাঁচ লক্ষের ষবশি পেশাদার পতিতা ও সমসংখ্যক খন্ডকালীন পতিতা রয়েছে। (সূত্রঃ Abnormal Psychology and Modern Life. P-586) । এই যে খন্ডকালীন পতিতা, এদের অধিকাংশই সমাজের সম্মানিত নারী। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, পছন্দসই চাকরী জোটানোর আগে অনেকে হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে খন্ডকালীন পেশা হিসাবে (part-time job) পতিতাবৃত্তি করে থাকে। এটা নারীত্বের জন্য কতই না অবমাননাকর!
চার. অযাচার (Incest)ঃ এটাকে অগম্যাগমণও বলা হয়। এর অর্থ হল, রত্তু সম্পর্কের অতি আপনজনের সাথে যৌনকর্ম। যেমন পিতার সাথে কন্যার, মাতার সাথে পুত্রের, ভাইয়ের সাথে বোনের যৌন সম্পর্ক। মুসলিম সমাজে এটা কল্পনা করাও পাপ মনে করা হয়; এমনকি জঘন্য পাপীও এটাকে মহাপাপ মনে করে থাকে। অথচ পশ্চিমা বিশ্বে এটা বিরল কোন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ভাই-বোনের মধ্যে এই সম্পর্ক অনেকটা সাধারণ ব্যাপার। এ সম্পর্কে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী এরিক গুডি বলেন-
“”ভাই-বোনের মধ্যকার যৌন সম্পর্ক বোধ হয় অতি সাধারণ ব্যাপার; রত্তু সম্পর্কের অতি ঘনিষ্ঠজনদের সাথে যৌন সম্পর্কের যত ঘটনা ঘটে এটি (অর্থাৎ ভাই-বোনের অবৈধ সম্পর্ক) তার অর্ধাংশ এবং ক্ষুদ্র পরিবারগুলিতে এ-ধরণের ঘটনা যত ঘটে তার ৯৪%।” [Deviant behavior, p-223]
আসলে পশ্চিমা জগতের অনেকে নিজেদের মানুষ না ভেবে পশু ভাবতে বেশি আগ্রহী, যে ভাবনার সূত্রপাত হয়েছিল বিবর্তনবাদের সাথে সাথে। পিতা-মাতা, ভাই-বোনের বাছ বিচার করাটা পশুদের মধ্যে সুলভ নয়। অতএব, মানুষ নামক পশুই বা কেন বাছ বিচার করতে যাবে।
পাঁচ. নগ্ণ হয়ে বিচরণঃ অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় প্রদর্শনেচ্ছা (exhibitionism)। এই সমস্যা যাদের মধ্যে দেখা দেয়, তারা প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ নগ্ণ হয়ে বিচরণ করতে পছন্দ করে। এই যৌনবিকৃতিও পাশ্চাত্যে ত্রুমবর্ধমান হারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত, সুইমিং পুল, পার্ক প্রভৃতি সহানে প্রায় নগ্ণ হয়ে বিচরণ করা অর্ধ শতাব্দী ব্যাপী চলে আসছে। এটা নতুন কোন ব্যাপার নয়। এখন অনেকে এসব সহানে সম্পূর্ণ নগ্ণ হয়ে ঘুরে বেড়ায়, ক্যাম্প করে। ভার্জিনিয়ার হোয়াইট টেইল পার্কে ২০০৩ সালে নগ্ণ তরতণ-তরতণীদের এরকম একটা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল যুত্তুরাষ্ট্রের নগ্ণদের তৃতীয় ক্যাম্প। [সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৪। ০৩। ২০০৫]
জ) পরকীয় সম্পর্কঃ পাশ্চাত্যে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত বৈপরিত্য রয়েছে। সেটা হল, বিবাহপূর্ব যৌনতায় (premarital sex) কোন বিধি-নিষেধ নেই; অথচ বিবাহ-পরবর্তী অবাধ যৌনতার (extramarital sex) ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। এটা ফৌজদারী অপরাধ না হলেও নিন্দনীয় আচরণ হিসাবে বিবেচিত হয়। বিবাহিত নর-নারীর নিকট আশা করা হয় যে, তারা অন্য কারো সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সহাপন করবে না; পরস্পরের প্রতি বিশ্বসত থাকবে। কিমও প্রশণ হল, এর প্রেরণা সে কোথুেকে পাবে? একটা সময় ছিল─ সেই সনাতন কালে─ যখন ইজ্জতের মূল্য ছিল অপরিসীম। মানুষ জান দিত তবু ইজ্জত দিত না। অনেক সাধনা করে চেতনার জমিন থেকে সেই স্পৃহা সমূলে উৎপাটন করা হয়েছে। সেখানে রোপন করা হয়েছে বৈচিত্রময় যৌনজীবনের চারা। সেই চারা যখন শাখা-প্রশাখা বিসতার করে বিরাট মহীরতহ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সহসা দাবী করা হচ্ছেঃ ওটা উপড়ে ফেল। কিমও এ-তো এক অসম্ভব দাবী। তাই তো দেখি পাশ্চাত্যে পরকীয় সম্পর্ক দুর্লভ নয়। আমেরিকার “দি রেড বুক সার্ভে’ ১৯৭৮ সালে বিবাহ-পরবর্তী ব্যভিচারের উপর বিবাহপূর্ব ব্যভিচারের প্রভাব নির্ণয়ের জন্য এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, যে-সব বিবাহিতা নারী এই জরিপে অংশ নেয়, তাদের শতকরা ৩০ জনের স্বামী ছাড়াও অন্যের সাথে দৈহিক সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে আবার ২৬ জন বিবাহের পূর্বেও যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছিল। [সূত্রঃ Marriage and Family Development. Pp-35] অতএব দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে যে স্বাধীনতা তারা ভোগ করছে, তা ছেড়ে দিতে তারা মোটেই আগ্রহী নয়। এত দিন যা করেছ- করেছ, বিয়ের মমএ পড়ার সাথে সাথে সৎ আর সতী হয়ে যাও─ এটা সহজ তবে অবাসতব দাবী (councel of perfection)।
ংববাহিত নর-নারীর এই ব্যভিচার সমাজে অনেক মারাত্মক সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। এখানে তেমন কিছুসমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হল।
এক. শিশু নির্যাতনঃ অবাধ যৌনতার কারণে বিশেষ করে পিতৃকঁলের অবচেতন মনে এক অবিশ্বাস দানা বাঁধে যা শিশু-কিশোরদের জন্য প্রভূত অকল্যাণ বয়ে আনে। সংসারে সমতানের আগমনে পিতা-মাতার চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত─ এরকম দৃশ্য পাশ্চাত্যে বড় বিরল। সে সমাজে কোন পিতাই তার গৃহজাত শিশুকে আপন ঔরসজাত বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারে না। একজন পুরতষ নিজে যেমন সএীর প্রতি পরিপূর্ণ নিষ্ঠাবান এবং বিশ্বসত না হয়ে পরনারীর সঙ্গ উপভোগ করে থাকে, তেমনিভাবে অপর কোন পুরতষও তার নারীর (সএীর) সঙ্গসুখ উপভোগ করে না─ এ নিশ্চয়তা সে কোথায় পাবে? নীতি-নৈতিকতার কাছে? সে-তো কোন্ কালে প্রবৃত্তির বেদীমূলে আত্মদান করেছে। আইনের কাছে? প্রবৃত্তির গতি নির্বিঘণ করতে সে-তো সেই কবে পথ করে দিয়েছে। বিশ্বসততা এবং নিষ্ঠার সকল পথই রতদ্ধ। কার সমতান কোন্ গৃহ আলো করছে সে হিসাব গোলমালে গুলিয়ে গেছে। এমতাবসহায় মনের নিভৃত কোণে সংশয় যদি উঁকি দেয়, তাতে বিস্মিত হবার কিছু নেই। কাক যদি বুঝত, নিজের অজ্ঞাতসারে সে সচরাচর কোকিলছানা পালন করে থাকে, তাহলে বাচ্চা পালনে তার যে নিষ্ঠা, তাতে নিঃসন্দেহে ভাটা পড়ত। সন্দেহ সম্পর্কের মধ্যে অদৃশ্য অথচ দুর্লঙ্ঘ্য দেয়াল তুলে দেয়। মহামতি শেক্স্পিয়র যথার্থই বলেছেনঃ
“”ঈর্ষা থেকে সাবধান!
এ হল সবুজ চোখের দানব
যে নিজের শিকার ধরে
আবার তাকেই ব্যঙ্গ করে।”[ Othello, Act III , Scene iii]
পিতার অবচেতন মনে যে সন্দেহ বিরাজ করে, তার প্রভাব স্বভাবতঃই তার আচরণের উপর পড়ে। এজন্য পাশ্চাত্যে বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর পিতাদের দ্বারা শারীংরকভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে। আমাদের হাতে এতদ্সংত্রুামত যে তথ্য আছে তা রীতিমত আতঙ্কজনক। অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞানের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পাঠ্য পুসতকে বলা হচ্ছেঃ
“”অবিশ্বাস্যভাবে, প্রতি বছর যুত্তুরাষ্ট্রে ১ থেকে ২ মিলিয়ন (১০ থেকে ২০ লক্ষ) শিশু পদাঘাত, প্রহার কিংবা মুষ্ঠাঘাতের শিকার হয় তাদের পিতা-মাতা কর্তৃক, আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংঘটিত হত্যাকান্ড অন্য যে কোন প্রকার হত্যাকান্ডের চেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।” [Maladaptive Behaviour: an Introduction to Abnormal Psychology. p-334]
বিশ্বখ্যাত মাইত্রেুাসফ্ট এর বিশ্বকোষে বলৎ হচ্ছেঃ
“”যদিও শিশু নির্যাতনের ব্যাপকতা পরিমাপ করা কঠিন, তথাপি এটা একটা বড় সামাজিক সমস্যা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে, বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশসমূহে।” [The Encarta Encyclopedia. Child Abuse]
মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রের শিশু-নির্যাতন ও অবহেলা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ জানাচ্ছে যে, প্রতি বছর ১৮ বছরের কম বয়স্ক প্রায় ২০০০ শিশু-কিশোর পিতা-মাতা কিংবা পরিচর্যাকারীর হাতে নিহত হয়। প্রতি বছর পানিতে ডুবে, পড়ে গিয়ে, শ্বাসরতদ্ধ হয়ে, অগ্ণিকান্ডের ফলে কিংবা গাড়ি দুর্ঘটনায় ৪ বছরের কম বয়স্ক যত শিশুর মৃত্যু ঘটে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক শিশু পিতা-মাতার নির্যাতন বা অবহেলায় মৃত্যুবরণ করে। প্রতি বছর ১৮,০০০ এর বেশি শিশু নির্যাতন বা অবহেলার কারণে চিরতরে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। [The Encarta Encyclopedia. Child Abuse.]
দুই. পারিবারিক অশামিতঃ পারিবারিক শামিতর অন্যতম পূর্বশর্ত হল স্বামী-সএীর পারস্পরিক বিশ্বসততা। তাদের পরস্পরের প্রতি থাকতে হবে আমতরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। এ-সবই সুখময় দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি। কিমও দাম্পত্য সুখের অপরিহার্য এই পূর্বশর্তগুলি সেই পরিবারে অনুপসিহত থাকতে বাধ্য, যে পরিবারে স্বামী-সএী বৈচিত্রময় যৌনজীবন যাপনে আগ্রহী। স্বামী যদি তার সদ্য আবিষ্কৃত কোন ঊর্বশীর উষ· সান্নিধ্য লাভের নেশায় মত্ত থাকে , তাহলে সএীর প্রতি অনাগ্রহী এবং উদাসীন হতে বাধ্য। উপপতির কল্পনায় বিভোর সএী তার স্বামীর প্রতি নিরতৎসুক না হয়েই পারে না। এহেন বৈচিত্রবিলাসী স্বামী-সত্রীর পরিবারে বৈবাহিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি যে বিশ্বাসবোধ, তা ধসে পড়াটা অতি স্বাভাবিক। সন্দেহ আর অবিশ্বাস এককালীন উষ· সম্পর্ককে করে শীতল, তিত্তু আর দুর্বিসহ। এ ধরনের পরিবারে স্বামী-সএীর মধ্যে ত্রুমশঃ এক দুসতর ব্যবধান রচিত হয়। একের অসিতত্ব অপরের নিকট অসহ্য মনে হয়। এহেন পরিসিহতিতে অনেক দাম্পত্য জীবন বিবাহ-বিচ্ছেদের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। যারা এর পরও বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখে, তারা বড় বিপত্তিকর সময় অতিবাহিত করে। একে অপরকে আত্রুমণ, প্রহার, লাঞ্ছিতকরণ তখন হয়ে ওঠে নৈমিত্তিক ঘটনা।
মার্কিন মুল্লুকের এগনেস এমনি এক পরকীয় সম্পর্কের অসহায় শিকার। তিনি একজন শিক্ষিকা। তার স্বামীও শিক্ষকতা করে। তিনি বলেন, বিয়ের কয়েক বছর পরে যখন তিনি তার স্বামীর বিছানায় এক তরতণীকে আবিষ্কার করেন, তখন থেকে শুরত হয় স্বামীর নির্যাতন। সে প্রত্যেক সন্ধ্যায় তাকে প্রহার করত। বেতনের টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিতে তাকে বাধ্য করা হত। তাকে দাসী-বান্দী বলে গালি দেওয়া হত। প্রায় দুই বছর ব্যাপী এই নির্যাতন চলেছিল। এ্যাগনেস এই প্রহারের ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করেননি, এমনকি ঘভবষ্ঠজনদের কাছেও না। কারণ, তিনি বলেন, “আমি খুবই আতঙ্কিত ছিলাম, এবং এতই বিব্রত বোধ করতাম যে, আমি চাইনি লোকে এটা জানুক।’ [A New Psychology of Women. pp-426]
পশ্চিমা বিশ্বে এরকম এ্যাগনেস বিরল নয়। বরং এ এক অতি সাধারণ চিত্র। কলম্বিয়া, কানাডা, যুত্তুরাষ্ট্রসহ ১০টি দেশে ব্যাপক জরিপ পরিচালনা করে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন ঘনিষ্ঠ কোন পুরতষের দ্বারা শারীংরক নির্যাতনের শিকার হয় [সূত্রঃ Social Problems. Annual Edition-02/03. p-92.] এটা কিমও খুব যথার্থ চিত্র নয়। নানা কারণে পারিবারিক মারপিটের অতি অল্প ঘটনাই পুলিশে রিপোর্ট করা হয়। অপরাধ বিজ্ঞানের এক বিখ্যাত পাঠ্য পুসতকে বলা হচ্ছেঃ
“”গবেষকগণ একমত যে, পরিবারের মধ্যে আত্রুমণাত্মক আচরণ এমন অপরাধ যার রিপোর্ট করা হয় অত্যমত কম।” [সূত্রঃ Criminology. p-300]
সমাজবিজ্ঞানী এরিক গুডি বলেনঃ “”পরিবারের সদস্যরা যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটায় তা অচেনা লোদের দ্বারা সৃষ্ট সহিংসতার চেয়ে শত সহস্র গুণ বেশি। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর কথা বাদ দিলে পরিবার হল সমাজের সর্বাপেক্ষা সহিংস প্রতিষ্ঠান।” [সূত্রঃ Deviant Behaviour. Pp-215]
এই যে বিপর্যসত পারিবারিক জীবন─ এটা অবাধ যৌনতার সাথে সমানুপাতিক। অবাধ যৌনতার মাত্রাবৃদ্ধিতে দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এর স্বাভাবিক পরিণতি যা হবার তা-ই হয়ে থাকে। অবিশ্বাসের পথ ধরে দাম্পত্য জীবনে আসে বিপর্যয়। যুত্তুরাষ্ট্রের একজন খ্যাতিমান মনোবিজ্ঞানীর বর্ণনায় সে দেশের অশামত পারিবারিক জীবনের এক করতণ চিত্র ফুটে উঠেছেঃ
“”সকল সাংঘাতিক অপরাধের মধ্যে নিঃসন্দেহে সর্বাপেক্ষা দুঃখজনক এবং দুর্বোধ্য হল পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি সংঘটিত অপরাধ। স্বামী-সএীর একের দ্বারা অন্যের প্রহদত হওয়া, নিপীড়িত হওয়া কিংবা নিহত হওয়ার সংবাদ, বিশেষতঃ পিতা-মাতার দ্বারা সমতানের উপর এমনটি ঘটার সংবাদে আমরা গভীর মর্মযাতনা বোধ করি। সম্ভবতঃ সর্বাপেক্ষা অবোধগম্য বিষয় হল এই যে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংঘটিত সমএাস , সকল সাংঘাতিক অপরাধের মধ্যে সর্বাধিক লক্ষ্যনীয়।” [সূত্রঃ Maladaptive Behaviour: An Introduction to Abnormal Psychology. pp-334]
স্বামী-সএীর বিবাদ ও হানাহানির এক করতণ চিত্র ঐ একই গ্রমেহ তুলে ধরা হয়েছে এভাবেঃ
“”সামগ্রিক পর্যালোচনা এই ইঙ্গিত প্রদান করে যে, শুধুমাত্র যুত্তুরাষ্ট্রে প্রায় দুই মিলিয়ন (অর্থাৎ কুড়ি লক্ষ) স্বামী এবং সমান সংখ্যক সএী একে অপরকে বৎসরে অমততঃ একবার আত্রুমণ করে। এর মধ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ প্রহারের ঘটনা মারাত্মক হয়ে থাকে, উভয় শ্রেণীর মধ্যেই, যদিও নারীরা সাধারণতঃ পুরতষদের তুলনায় অধিক আহত হয়ে থাকে।” [সূত্রঃ Maladaptive Behaviour: An Introduction to Abnormal Psychology. pp-334]
তিন. বিবাহ-বিচ্ছেদঃ বিবাহবিচ্ছেদও অবাধ যৌনতার সাথে সমানুপাতিক। অবাধ যৌনতার ফলে সৃষ্ট সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে বিপুল সংখ্যক বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সম্পর্কে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী ডুভাল বলেনঃ
“”সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, অধিকাংশ স্বামী এবং সএী দাম্পত্য বিশ্বাস ভঙ্গের প্রতি এমন আবেগীয় প্রতিত্রিুয়া দেখায় যে, তাতে বৈবাহিক সম্পর্কহানি ঘটে।” [সূত্রঃ Marriage and Family Development. pp-36]
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ব্যারন এবং ব্রাইন বলেনঃ “”পুরতষ ও নারীর মধ্যে ঈর্ষার ব্যাপারেও পার্থক্য আছে, পুরতষ বেশি ঈর্ষাকাতর হয় যৌন অবিশ্বসততার ব্যাপারে, অথচ নারীর ঈর্ষা বেশি জোরালো হয় তার সঙ্গী অন্য কারো প্রতি আবেগের বন্ধনে আবদ্ধ হলে।” [সূত্রঃ Social Psychology: Understanding Human Interaction. pp-340]
মার্কিন সমাজে অবাধ যৌনতা প্রতিনিয়ত ব্যাপক হতে ব্যাপকতর হচ্ছে। সেই সাথে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাও অধিক থেকে অধিকতর হচ্ছে। আমেরিকায় প্রতি বছর প্রয় ২.৪ মিলিয়ন বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। আবার এক বছর সময়কালে ১.২ মিলিয়ন বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। অনেক যাচাই বাছাই করে অনেক মেলামেশার পরে যে জীবন সঙ্গী জুটানো হয়, বিবাহের দুই থেকে ছয় বছরের মধ্যে তার ৫০ % ই ভেঙ্গে যায়। [সূত্রঃ Social Psycholog: Understanding Human Interaction. pp-342] কানাডাতেও বিবাহ-বিচ্ছেদের হার খুব বেশি। যৌন বিপ্লবের দশকে ১৯৬৮ সালে যেখানে ১০ হাজার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেছিল, মাত্র ২১ বছর পরে এসে সেই সংখ্যা ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ। [সূত্রঃ Teen Trends. Pp-30]
বিবাহবিচ্ছেদ ছাড়াও অনেক দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। এর কারণ হল এই যে, স্বামী বা সএী বৈচিত্রের সন্ধানে কোন সঙ্গী বা সঙ্গীনি জুটিয়ে নিয়ে চিরতরে নিরতদ্দেশ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে Duvall বলেনঃ
“”পরিত্যাগের ঘটনা তখন ঘটে যখন স্বামী কিংবা সএী তার সঙ্গীকে ফেলে রেখে গৃহত্যাগ করে। প্রতি বছর সঙ্গী ত্যাগের ঘটনা এক মিলিয়নের মত (দশ লক্ষ) দাঁড়ায়। কিছু পলাতক কখনোই প্রত্যাবর্তন করে না; অপর কতক তত দিন দূরে অবসহান করে, যতদিন গৃহের অবসহা হতে সৃষ্ট বিরত্তিু বা বিরাগ কাটিয়ে উঠতে না পারে।” [সূত্রঃ Marriage and Family Development. pp-435]
পাশ্চাত্যের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যত্তিুরা প্রবৃত্তির লালায়িত রসনার তৃপ্তি বিধানে বড় বেংশ তৎপর। তাই বৈচিত্রের নেশায় আজ তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। আজ এক সঙ্গী নির্বাচন করছে, তার সান্নিধ্যে কয়েকদিন কাটাতে না কাটাতেই তার প্রতি নিরতৎসুক, আগ্রহহীন হয়ে পড়ছে। তারপর একদিন তাকে পরিত্যাগ করে নতুন কোন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে দু’দিনের খেলাঘর রচনা করে; দু’দিন পর সে-ও পরিত্যত্তু হচ্ছে।
চার. বিপর্যসত প্রজন্মঃ স্বামী-সএী হয়ত অপর কোন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সান্নিধ্যে থেকে বৈচিত্রের স্বাদ আস্বাদন করে। কিমও তাদের মুখাপেক্ষী, অসহায় সমতানগুলো বড় বিপত্তির মধ্যে পড়ে যায়। তারা বাধ্য হয়ে একজন মাত্র অভিভাবকের সন্নিধানে থেকে লালিত হয়। মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রে যত শিশু আছে, তার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি তাদের প্রকৃত পিতা-মাতা (biological parents) উভয়ের সাথে বসবাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। [সূত্রঃ Social Psychology: Understanding Human Interaction. pp-344] কানাডায় এই হার প্রতি চার জনে একজন। [সূত্রঃ Teen Trends.pp-30] এর মূল কারণ হল, হয় পিতা নয়ত মাতা পারিবারিক জীবনে পদাঘাত করে নিরতদ্দেশ হয়। সীমাহীন ব্যত্তিুস্বাধীনতা থেকে সৃষ্ট স্বার্থপরতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা আজ পশ্চিমা নর-নারীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমতানের জন্য ভাববার সময় কোথায় তাদের? এই হতভাগ্য সমতানদেরকে তাদের পরিবার সম্পর্কে মমতব্য করতে বলা হলে তারা যা বলে তা নিমণরদপঃ
আমার পিতা-মাতা বিবাহিত; কিমও তারা আলাদা থাকেন। আমি মায়ের সাথে থাকি।
আমার পিতা আবারো বিয়ে করেছেন; মা-ও আরেকবার বিয়ে করেছিলেন কিমও এখন তালাকপ্রাপ্তা।
মা কখনো আমার সত্যিকারের পিতাকে বিয়ে করেননি, যদিও এখন তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহিতা।
তারা কখনোই বিয়ে করেননি। এটা বিয়ে করার মতই।
তিনি আমার প্রকৃত পিতা নন, কিমও পিতা বলে কেবল তাকেই চিনি।
আমি পিতা-মাতার সাথে থাকি। আর তারা একত্রে বাস (live together) করেন। কিমও তাদের আসলে ছাড়াছাড়ি হয়েছে, আর তাদের প্রত্যেকের একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী আছে। [সূত্রঃ Teen Trends. Pp-31]
একক অভিভাবকের সান্নিধ্যে লালিত শিশুর সেণহ-তৃষ·ার পূর্ণ নিবৃত্তি কখনোই হয় না। দিনের কর্মব্যসততাই এ পথে প্রধান বাধা। শত ব্যসততার মাঝে অপত্যসেণহের তাভকদ দুঃখজনকভাবে চাপা পড়ে যায়। দায়িত্বের দুঃসহ বোঝা অপসারণের সুযোগ যখন মেলে, তখন ক্লামিত এসে দেহ-মন আচ্ছন্ন করে ফেলে। একক অভিভাবক যথেষ্ট আয়েশে তার সমতানের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারেন, কিমও চাইলেই তার শিশুহদদয়ে সেণহবারি সিঞ্চন করতে পারেন না। ফলে স্বভাবতঃই এ সকল শিশুর বিকাশন প্রত্রিুয়ায় আবেগীয় শূণ্যতার প্রভাব পড়ে।
পরিবারই হল শিশুর সামাজিকীকরণের প্রাথমিক এবং সর্বাপেক্ষা গুরতত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই মাধ্যমের অসিতত্বই যখন বিপন্ন তখন দায়িত্বসচেতন, ভারসাম্যপূর্ণ প্রজন্ম আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। শিশু জীবন ও জগত সম্পর্কে ধারণা লাভ করে মূলতঃ তার পিতা-মাতার নিকট থেকে। যখন সে পিতা-মাতাকে কর্তব্যপরায়ণ না পেয়ে ইন্দ্রিয়পরায়ণ পায়, সমতানের প্রতি সেণহবৎসল না পেয়ে যৌনসঙ্গীর প্রতি কাম-উচ্ছল পায়, তখন স্বভাবতঃই সে জগত সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা লাভ করতে ব্যর্থ হয়। কানাডার মণ্ট্রিলবাসী ১৬ বছর বয়সী খুব চিমতাশীল এক তরতণী তার জীবন-ভাবনা এভাবে তুলে ধরেছেঃ
আমরা যত বেশি বাঁচি, জীবন তত
বেশি বিরত্তিুকর হয়ে যায়
জীবন হল কালো
এটা এক কৃষ· গহ্বর
নোংরা, খাদযুত্তু
দূষিত জগতের বুকে
এক কলুষিত বিন্দু
আমি হারিয়ে যেতে চাই
কোন এক কৃষ· বিবরে
আর বেরিয়ে আসতে চাই
বিপরীত দিক দিয়ে
যেখানে সব কিছুই সুন্দর
কোন আত্মহত্যা নেই
সহিংসতা নেই, দূষণ নেই
যুদ্ধ নেই, কালো নেই। [Teen Trends. Pp-78]
পাঁচ. মানসিক সমস্যাঃ যৌবনের উদ্দামতায় নর-নারী জীবনের কিছুটা সময় উপভোগ করতে পারে সন্দেহ নেই। তবে তারা তাদের সমতানদের জন্য জগতটাকে বড় বিস্বাদ করে তোলে । অনাদর, অবহেলার মধ্য দিয়ে লালিত হচ্ছে এসব সমতান। ফলে স্বভাবতঃই এসব শিশুর মানসিক বিকাশ প্রত্রিুয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রসত হয়। পরিবারই হল শিশুর সামাজিকীকরণের প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরতত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের অসিতত্বই যখন বিপন্ন, তখন দায়িত্ববান, ভারসাম্যপূর্ণ প্রজন্ম আশা করাটা অযৌত্তিুক । নষ্টনীড়ের বাচ্চা যে নষ্ট হয়─ এটা মনোবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের সর্বজন স্বীকৃত সত্য। তাই তো পাশ্চাত্যে মানসিক ব্যৎধির এত ব্যাপকতা। ২০০৪ সালে আমেরিকায় মানসিক ব্যাধির উপর এক জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ২ কোটি ৯০ লক্ষ লোক mood disorder এ (যেমন- major depressive disorder, dysthymic disorder, bipolar disorder) , ৪ কোটি লোক anxiety disorder এ (যেমন- panic disorder, obsessive-compulsive disorder, post-traumatic stress disorder, generalized anxiety disorder এবং নানা রকম phobia) তে ভুগছে। এছাড়াও রয়েছে schizophrenia, eating disorder, attention deficient hyperactivity disorder (ADHD) ইত্যাদি। [সূত্রঃ Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders. 4th Edition. ]
ছয়. আত্মহত্যাঃ অনাদর, বঞ্চনা, বিচ্ছেদ প্রভৃতি থেকে সৃষ্ট জীবন যমএণার কারণে ভগ্ণ পরিবারের সমতানদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেংশ। জীবন ও জগত সম্পর্কে মোহমুত্তু তরতণেরা স্বাভাবিকভাবেই আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে। জীবন থেকে একের পর এক আপনজনকে বিদায় জানানোর ফলে জীবন হয়ে পড়ে তিত্তু, বিস্বাদ। একজন মার্কিন চিকিৎসক চমৎকার বলেছেন-
“”আমি নিশ্চিত, অধিকাংশ রোগী সানন্দে তিন দিন অক্সিজেন তাঁবুতে অচেতন পড়ে থাকা পছন্দ করবে তথাপি চেতনার সাথে একটি দিন অতিবাহিত করতে প্রসতুত হবে না যেখানে (জীবন থেকে কাউকে না কাউকে) বিদায় জানাতে হয়।” [সূত্রঃ Marriage and Family Development. Pp-417]
শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ ইউরি ব্রনফেন ব্রেনার বলেনঃ
“”বিগত দুই দশকে তরতনদের মধ্যে আত্মহত্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবার জন্য আমেরিকার পরিবারসমূহের ভাঙ্গন দায়ী।” [সূত্রঃ Ibid, pp-457]
মনোবিজ্ঞানের এক বিখ্যাত পাঠ্যপুসতক আমাদেরকে জানাচ্ছে, ১৯৫০ সালের পর থেকে মার্কিন তরতণ-তরতণীদের মধ্যে আত্মহত্যা ৬০০% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। [সূত্রঃ Psychology: An Introduction. Pp-420]
সাত. মাদকাসত্তিুঃ ভঙ্গ পরিবারের শিশুদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এদের অনেকেই পলায়নপর মনোবৃত্তি সম্পন্ন হয়ে থাকে। তারা সমাজ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখে। এদের অনেকে হয় মাদকাসত্তু। উন্নত বিশ্বের পুরোধা মার্কিন যুত্তুরাষ্ট্রে হদদ্রোগ এবং ক্যান্সারের পরে মাদকাসত্তিু হল মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। এই দেশটিতে প্রতি বছর ২ লক্ষ নতুন নাম মাদকাসত্তেুর (সাধারণ মদ্যপায়ী নয়) তালিকায় যুত্তু হয়। মাদকাসত্তিু মার্কিন সমাজকে এতটাই বিপর্যসত করে তুলেছে যে, এটাকে তারতণ্যের বেদনা ( teen age tragedy) বলা হয়।[সূত্রঃ Abnormal Psychology and Modern Life. Pp-416]
আট. অপরাধ প্রবণতাঃ নষ্টনীড়ের সমতানদের মধ্যে মানসিক কাঠিন্য, ক্ষোভ এবং তজ্জনিত অপরাধ প্রবণতাও প্রকট। এসব পরিবারের সমতান হয় উদ্ধত এবং দুর্বিনীত। একজন মনোবিজ্ঞানী এ সম্পর্কে আমাদের নিমণরদপ তথ্য প্রদান করলছনঃ
“”সমাজবিরোধী আচরণের সাথে অশামত পারিবারিক পরিবেশের সম্পর্ক সুপ্রমাণিত। গ্রীয়ার লক্ষ্য করেছেন যে, সমাজবিরোধী ব্যত্তিুত্বের একটি নমুনার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগের শৈশব অভিজ্ঞতায় আছে পিতা-মাতা কোন একজনকে হারানো─ যার কারণ সমূহ হল বিবাহবিচ্ছেদ, পরিত্যাগ কিংবা মৃত্যু।” [Maladaptive Behaviour: An Introduction to Abnormal Psychology. pp-334—335.]
সাউদার্ণ ক্যালিফোর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ম্যানগোল্ড এ সম্পর্কে অত্যমত স্পষ্ট ভাষায় বলেনঃ
“”স্বাভাবিক আচরণের অভ্যাস গঠনের জন্য যে সকল সিহতি উপাদান প্রয়োজন, ভেঙ্গে যাওয়া সংসারে সচরাচর তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। দুষ্কৃতির সাথে ভেঙ্গে যাওয়া সংসারের যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। যত অধিক গৃহ ভগ্ণাবসহায় থাকবে, দুষ্কৃতিকারীর সংখ্যাও তত অধিক হবে।” [Problems of Child Welfare, pp-375.]
১৯৬০ সালের পর থেকে আমেরিকায় বিভিন্ন অপরাধের হার ৪০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। [The Worldbook Encyclopedia. Crime] প্রতি ২ সেকেগ্ধন্ড একটাগুরততর অপরাধ (serious crime) এবং প্রতি ১৬ সেকেগ্ধন্ড একটা মারাত্মক অপরাধ (violent crime ) সংঘটিত হয়।
পশ্চিমা জগত আজ অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। স্বসিত ও সামাজিক নিরাপত্তা আজ সেখানে সোনার হরিণ। যে সমাজ নতুন প্রজন্মকে সাদর অভ্যর্থনা না জানিয়ে বঞ্চনার আসতাকুঁড়ে নিক্ষেপ করছে, সে সমাজের উপর উপযুত্তু প্রতিশোধ গ্রহণ করছে নতুনেরা। স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক সমাজের সুখ-স্বপণকে তছনছ করে দিচ্ছে ওরা। এভাবে পাশ্চাত্যে যৌনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গী যত “উদার’ হচ্ছে, পারিবারিক অশামিত এবং বিবাহ বিচ্ছেদ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসহায়-বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা। বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকাসত্তিু, আত্মহত্যা, অপরাধপ্রবণতা প্রভৃতি সামাজিক ব্যাধি। যত অধিক গৃহদাহ, তত অধিক ক্ষতধারী─ সমানুপাতিক।
মুসলিম বিশ্বের অতীত ও বর্তমানঃ এক সময় মুসলিম জাতি ষশ±র্য-বীর্যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন ছিল। অমুসলিম ঐতিহাসিকদেরও অকপটে একথা স্বীকার করতে হয়েছে। পূর্বে ভারতবর্ষ থেকে পশ্চিমে স্পেন─ এই সুবিশাল ভূখন্ড মুসলিমদের পদানত ছিল প্রায় সাত-আটশ বছর। জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জনক এম, এন, রায় বলেন, “”মুসলিমদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইউরোপ আধুনিক সভ্যতার নেতৃত্ব দিচ্ছে। এমনকি আজও তার শ্রেষ্ঠ সমতানেরা এই অতীত ঋণের কথা স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করেন না।” [সূত্রঃ The Historical Role of Islam. pp- 90] বিখ্যাত ঐতিহাসিক রবার্ট ব্রিফল্ট বলেন, “”বিজ্ঞান হল আধুনিক বিশ্বের প্রতি আরব সভ্যতার সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান।” [Making of Humanity. Quoted in ‘Wisdom of Prophet Muhammad’. pp-73] মুসলিম জাতি এই ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছিল পর্দাহীনতার মাধ্যমে নয়, বরং পর্দা-ব্যবসহা এই উন্নতির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। নারী-পুরতষ নির্বিশেষে তাদের সময়-শ্রম, মেধা-মনন সবকিছু প্রয়োগ করেছিল আত্মার পরিশুদ্ধি এবং জাতীয় উন্নয়ণে, পরস্পরকে আকৃষ্ট করণে কিংবা অভিসার-ব্যভিচারে নয়।
অন্যান্য সভ্যতার মত মহিমাণ্বিত ইসলামী সভ্যতার অবনতির মূলেও ছিল পর্দাহীনতা। এর সূত্রপাত হয়েছিল রাজপ্রাসাদসমূহে। রাজা-বাদশাহ্রা যখন জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের পরিবর্তে নর্তকী-রক্ষিতাদের সাহচর্যে থাকা বেশি পছন্দ করতে লাগল, তখনই মূলতঃ সর্বনাশের বীজটা বপন করা হল। সুরা-নারীতে আসত্তু বিলাসী রাজপুরতষেরা এতটাই হীনবীর্য হয়ে পড়ল যে, আপন রাজ্য রক্ষাও তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ল। ফলে একের পর এক রাজ্য তাদের হাতছাড়া হতে লাগল। অন্যদিকে, রাজকীয় পৃষ্ঠপোষতকার অভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতিও সহবির হয়ে পড়ল। এভাবে এককালের বিশ্বজয়ী মুসলিম জাতি শত্তিুতে এবং জ্ঞানে হয়ে পড়ল পশ্চাদ্পদ।
এই শোচনীয় অবসহা থেকে মুসলিম মানসে জন্ম নিল হীনমণ্যতা। তারা বিজয়ী জাতিসমূহকে সবদিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নিল। তৎদের অন্ধ অনুকরণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নতি অর্জন সম্ভব বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে নিল। আজ মুসলিম মানস পাশ্চাত্যের দাসত্বের নিগড়ে অসহায়ভাবে বাঁধা পড়ে গেছে। ওরা যে তত্তব আওড়াচ্ছে, এরা তৎক্ষণাৎ তার প্রতিধ্বনি করছে। কোন রকম বিচার-বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা করবার প্রয়োজন তারা বোধ করছে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ যারা, তাদের থেকে এটা এসেছে; অতএব ভেবে কালক্ষেপন করা কেন? ওরা যখন কোন ইসলামী বিধানের সমালোচনা করছে, এরাও নির্দ্বিধায় কণ্ঠ মেলাচ্ছে। ওরা বলছে, “”পর্দা তো অবরোধ, নারীর জন্য অবমাননাকর।” এরা বলছে, “”এক্কেবারে খাঁটি কথা!” ওরা বলছে, “”জাতীয় উন্নয়ণে নারীকে পুরতষের কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে।” এরা বলছে, “”হে নারী! বেরিয়ে এসো, কাঁধে কাঁধ মেলাই।” পশ্চিমা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনার দাসত্ব বরণকারী এসব লোকগুলো যে সোজা কথাটি বুঝতে পারছে না তা হল, ওদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি সমাজকে কাঙ্খিত শামিত ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি। বরং বৈজ্ঞানিক আবিস্কার যথা সিনেমা, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইণ্টারনেট ইত্যাদি নিয়মএণের কোন নীতিমালা না থাকায় এগুলো নির্লজ্জতা, ব্যভিচার, বলাৎকার, অজাচার ইত্যাদির ব্যাপক প্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমেরা আজ ইসলামী মূল্যবোধের ধ্বংসসতুপের উপরে পশ্চিমা ধাঁচের সমাজ নির্মাণে বদ্ধপরিকর। শতাব্দীকাল ব্যাপী এই প্রয়াস চলে আসছে যার ফল কয়েক যুগ আগে থেকেই ফলতে শুরত করেছে। মুসলিম দেশগুলিতে আজ পর্দাহীনতা ত্রুমশঃ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা। এর পথ ধরে ব্যভিচার, গর্ভপাত, অপহরণ, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, পারিবারিক অশামিত, বিবাহ-বিচ্ছেদ, যৌন-বাহিত রোগ প্রভৃতিও ত্রুমশঃ ব্যাপকতা লাভ করছে। পাশ্চাত্য যেখানে চরমভাবে ব্যর্থ, সেখানে তাদের দৃষ্টামত অনুসরণ করে সফলতা আসবে─ এটা আশা করা বাতুলতা।
পর্দাঃ সমাজ-সভ্যতার রক্ষাকবচ─ উপরের আলোচনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, নারী-পুরতষের অবাধ মেলা-মেশা সমাজ-সভ্যতাকে বিপর্যয়, এমনকি ধ্বংসের দ্বারপ্রামেত নিয়ে যায়। নর-নারীর পরস্পরের প্রতি যে দুর্বার আকর্ষণ তা যেমন মানব জাতিকে রক্ষা করবার জন্য অপরিহার্য, তেমনি এই আকর্ষণ যদি হয় নিয়মএণহীন, তবে তা কোন সভ্যতার অপমৃত্যুর কারণ হতে পারে। যুগে যুগে নানা সভ্যতা এ-কথারই প্রমাণ বহন করছে। নারী-পুরতষের এই আকর্ষণকে কল্যাণের পথে চালিত করে একটি সুখী সমাজ এবং মহান সভ্যতা বিনির্মাণের জন্য ইসলাম এক বিশেষ ব্যবসহা গ্রহণ করেছে, সেটিই হল পর্দা। এর সারকথা হল, বিবাহে বাধা নেই এমন নারী-পুরতষ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসবে না; সৌন্দর্য-সৌষ্ঠব দিয়ে পরস্পরকে আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করবে না; চিমতা-চেতনা, আচার-আচরণ ও পোশাক-পরিচ্ছদে থাকবে শালীনতা ও লজ্জাশীলতার ছাপ। এখানে ইসলামের এই মহান ব্যবসহার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলঃ
ক) পর্দা পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়ঃ পর্দাকে অনেকে পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন। আলোচনার শুরততেই এই ভুল ধারণার অবসান হওয়া দরকার। আসলে পর্দার পরিধি ব্যাপক; অবচেতন মনের গভীরতম প্রদেশ পর্যমত ব্যাপ্ত। এর লক্ষ্য হল অমতরে সদাজাগ্রত এক চেতনা সৃষ্টি করা যেন একজন মু’মিন চিমতায়, আচরণে এবং পোশাকে নিজেকে লজ্জাশীল ব্যত্তিু হিসাবে গড়ে নেয়, যেন বিপরীত লিঙ্গের কাউকে কোনভাবে আকৃষ্ট করা কিংবা তার দ্বারা আকৃষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।
চিমতা-চেতনার সংস্কার সাধন এবং লজ্জাশীলতা সৃষ্টি যে পর্দার লক্ষ্য, সেটি পরিস্কার হয়ে যায় তিরমিযী শরীফের একটি হাদিস থেকে। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু ঊমার (রা)। রাসূল (সা) বলেছেনঃ তোমরা কখনো উলঙ্গ হবে না। কেননা, তোমাদের সাথে ফেরেশতাগণ রয়েছেন, যারা তোমাদের কাছ থেকে পৃথক হন না তোমাদের পায়খানা-প্রস্রাব ও সএী-সহবাসের সময় ব্যতীত, সুতরাং তাদেরকে লজ্জা করবে এবং তা’যীম করবে। [সূত্রঃ মেশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড] এখানে আমরা লক্ষ্য করছি, নির্জনে উলঙ্গ হওয়াকেও ইসলাম অপছন্দনীয় কাজ মনে করে। অমতরের এই লজ্জাশীলতা এতটাই গুরতত্বপূর্ণ যে, এটিকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত ইব্ন উমৎর (রা) বলেনঃ লজ্জা ও ঈমান অঙ্গাঅংঙ্গভাবে জড়িত। যখন ঐ দু’টির একটি তিরোহিত হয়ে যায়, তখন আরেকটিও সাথে সাথে বিদায় নেয়। [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ]
অমতরকে কু-চিমতা থেকে পবিত্র রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যমত গুরতত্বপূর্ণ। এ-জন্য বিশ্বনবী (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি কোন মহিলাকে দেখে ফেলে আর তাকে পছন্দনীয় মনে হয়, তবে সে যেন তার সএীর কাছে চলে যায়। কেননা, সএীরও তা আছে যা এ-মহিলার আছে। [সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ। শিশুদের দুগ্ধপান অধ্যায়] তাছাড়া, রাসূল (সা) মহিলাদের উপদেশ দিয়েছেনঃ একজন নারী আরেকজন নারীর সাথে দেখা সাক্ষাতের পর স্বামীর কাছে গিয়ে তার (রদপ-সৌন্দর্যের) বর্ণনা এমনভাবে করবে না, যেন সে (স্বামী) তাকে দেখতে পাচ্ছে। [সূত্রঃ বুখারী শরীফ। বিয়ে-শাদী অধ্যায়।] কোন নারী এমনটা করলে স্বামীর অমতরে সেই প্রশংসিত নারীর প্রতি আসত্তিু জাগতে পারে; এটা অমতরের পবিত্রতার পরিপমহী।
একজন মু’মিন সব সময় আপন অমতরকে শালীনতা ও লজ্জাশীলতার আবরণে আবৃত রাখবে─ এটাই ইসলামের লক্ষ্য। সে এমন কোন আচরণ করবে না যাতে অন্যের লজ্জাশীলতা ক্ষতিগ্রসত হয়। এ-জন্যই আল্লাহ্ তা’লা পরিবারের সদস্যদেরকেও হুট করে একে অন্যের ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন বিশেষ করে বিশ্রামের সময়ে (যেমন ফজরের নামাজে আগে, দুপুরে এবং ঈশার নামাজের পরে)। [সূত্রঃ আল কুরআন- সূরা নূর, আয়াত-৫৮] কারো ঘরে─ তা সে পিতা-মাতা হোক, ভাই-বোন হোক, কিংবা সমতান হোক─ তার অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করাটাকে ইসলামের দৃষ্টিতে অশালীন আচরণ গন্য করা হয়। একবার এক ব্যত্তিু হযরত হুযাইফা (রা)-কে প্রশণ করল, “আমি কি আমার মায়ের কাছে যেতেও তাঁর অনুমতি প্রার্থনা করব?’ উত্তরে তিনি বললেনঃ “যদি তুমি তাঁর কাছে যেতে অনুমতি না চাও, তবে এমন অবসহা তোমার চোখে পড়তে পারে যা দেখতে তুমি পছন্দ কর না।’ [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ] অন্য এক হাদিসে হযরত জাবির (রা) বলেছেনঃ কোন ব্যত্তিু তার পুত্রের কক্ষে প্রবেশ করতেও তার অনুমতি চাইবে। তার মাতার কক্ষে প্রবেশ করতে, যদিও তিনি বৃদ্ধা হন, এমনকি তার ভাই, বোন ও তার পিতার কক্ষে প্রবেশ করতেও অনুমতি চাইবে। [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ] আচরণগত পর্দার আরেকটি দৃষ্টামত হল, নারীদেরকে একাকী সফর থেকে বিরত রাখা। রাসূল (সা) বলেছেনঃ কোন মুসলিম মহিলার জন্য কোন মুহরিম পুরতষ সঙ্গী ছাড়া এক রাতের দূরত্ব সমান সফর করাও বৈধ নয়। [সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ। হজ্জ এর নিয়ম-পদ্ধতি অধ্যায়]
খ) পর্দা পুরতষের জন্যও প্রযোজ্যঃ পর্দা সম্পর্কিত আরেকটি ভুল ধারণা হল এটি মনে করা যে, পর্দা শুধু নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের এই বিধান পুরতষের জন্যও বাধ্যতামূলক। বলতে কি, পর্দা সম্পর্কিত নির্দেশ নারীর আগে পুরতষকে প্রদান করা হয়। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছেন-
“”মু’মিন পুরতষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের ংহফাজত করে। এটা তাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ্ সে-বিষয়ে সম্যক অবহিত।” [সূত্রঃ আল কুরআন- ২৪ঃ ৩০]
পুরতষের দৃষ্টি সংযতকরণ সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্যা আমরা হাদিস গ্রমেহ পাই। হযরত বুরাইদা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) একদা হযরত আলী (রা)-কে বলেনঃ আলী, হঠাৎ একবার দেখার পর পুনরায় দেখো না। কেননা, তোমার জন্য প্রথমবারের অনুমতি রয়েছে এবং দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই। [সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ। সংকলিত- মেশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড। হাদিস নং-২৯৭৬]
ব্যভিচারমুত্তু, পবিত্র সমাজ-জীবন নিশ্চিত করার জন্য দৃষ্টিকে সংযত রাখা খুবই গুরতত্বপূর্ণ। কারণ, নর-নারী পরস্পরের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকলে কিংবা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে তারা একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে, অমতরে আলোড়ন সৃষ্টি হবে, সান্নিধ্য লাভের বাসনা জাগবে। এভাবে ত্রুমশঃ অবাধ মেলামেশা অনিবার্য হয়ে পড়বে আর এ-পথে ব্যভিচার এবং অন্যান্য সামাজিক ব্যৎধি সমাজকে গ্রাস করবে। এ-জন্য মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা) নর-নারীকে দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ-নির্দেশ পুরতষকে প্রথমে দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। প্রকৃতিগতভাবেই পুরতষ নারীর তুলনায় বেশি আগ্রাসী, কম লজ্জাশীল। দৃষ্টিঘটিত পাপও পুরতষ বেশি করে থাকে।
পুরতষের চোখের পর্দা তথা দৃষ্টি সংযত করণের আরো কিছু ক্ষেত্র ইসলাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। যেমন, কারো বাড়িতে বা ঘরে উঁকি ঝুকি মারা ইসলামের দৃষ্টিতে খুব গর্হিত অপরাধ। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর গোলাম সাওবান (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যত্তিুর জন্য বিনা অনুমতিতে কারো অমতঃপুরে দৃষ্টিপাত করা বৈধ নয়। যদি সে এরদপ করে, তবে সে যেন তাতে প্রবেশই করল।[সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ]
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ তোমার অনুমতি ব্যতিরেকে যদি কোন ব্যত্তিু তোমার ঘরে উঁকি দেয় আর তুমি তার চক্ষে কঙ্কর নিক্ষেপ করে তার চোখ কানা করে দাও, তবুও তোমার কোন দোষ হবে না। [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ]
পোশাকের পর্দা থেকেও পুরতষকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। নাভি থেকে হাঁটু পর্যমত আবৃত রাখা তার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একদা রাসূলুল্লাহ্ (সা) মা’মার ইবনে আব্দুল্লাহ্র নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁর উভয় রাণ খোলা ছিল। তিনি বললেনঃ মা’মার, তোমার রাণ ঢাকো। কেননা রাণদ্বয় আবরণীয় অঙ্গ। [সূত্রঃ মেশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড। হাদিস নং-২৯৮০]
হযরত জারহাদ ইবনে খুওয়াইলেদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) একদা আমাকে বললেনঃ জারহাদ, তুমি জানো না যে, রাণ আবরণীয় অঙ্গ? [সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ। সংকলিত- মেশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড। হাদিস নং-২৯৭৮]
পর্দা-ব্যবসহাকে সফল করার জন্য পুরতষের আচরণকেও নিয়মিএত করা হয়েছে। মুসলিম পুরতষের প্রতি নির্দেশ হল, সে হুট্ করে কোন বাড়িতে প্রবেশ করবে না। প্রথমে তাকে অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে। অনুমতি প্রার্থনার নিয়ম হল গৃহবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করা। সালামের জবাব পেলে বুঝতে হবে, অনুমতি মিলেছে। অন্যথায় তাকে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ্ নির্দেশ দিচ্ছেন-
“”হে ঈমানদারগণ! নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে তাদের সম্মতি না নিয়ে ও সালাম না জানিয়ে প্রবেশ করো না। এটি তোমাদের জন্য উত্তম বিধান। সম্ভবতঃ তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।” [সূত্রঃ আল কুরআন। সূরা নূর, আয়াত- ২৭]
মুসলিম পুরতষের প্রতি আরেকটি নির্দেশ হল, সে নির্জনে এমন কোন নারীর সাথে সাক্ষাত করবে না, যার সাথে বিবাহে তার কোন বাধা নেই। নর-নারীর নিভৃতে মেলামেশা চলতে থাকলে পদস্খলন ঘটা অসম্ভব নয়। বরং যে-সব সমাজে নর-নারীর এরকম সাক্ষাৎ দূষণীয় মনে করা হয় না, সেখানে সচরাচর সংযম টুটে যায়, পদস্খলন ঘটে যায়। তাছাড়া, তেমন কিছু না ঘটলেও সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, কোন দুর্মুখ ব্যত্তিু মিথ্যা অপবাদ রটানোর সুযোগ পেয়ে যায়। এতে করে স্বামী বা সএীর মনে সংশয় জন্ম নিতে পারে এবং সুখময় দাম্পত্য জীবনের সমাধি রচিত হতে পারে। এজন্য মহানবী (সা) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমরা বিবাহ করা বৈধ এরকম নারীর সাথে গোপনে ও একাকীত্বে মিলিত হবে না। আল্লাহ্র শপথ, যেখানেই একজন পুরতষ একজন ভিন্ মেয়েলোকের সাথে মিলিত হবে, সেখানেই তাদের দুজনের মধ্যে শয়তান অবশ্যই প্রবেশ করবে ও প্রভাব বিসতার করবে।” অন্য একটি হাদিসে উকবা ইবনু আমের (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ (গাইর মাহরাম) মহিলাদের কাছে একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। [সূত্রঃ বুখারী শরীফ। বিয়ে-শাদী অধ্যায়]
গ) নারীর জন্য পর্দার বিধানঃ পর্দার বিধানে পুরতষের তুলনায় নারীর ক্ষেত্রে বেশি নিয়মএণ আরোপ করা হয়েছে। এটিই স্বাভাবিক, এটিই যৌত্তিুক। দুর্বলতা যেখানে বেশি, সতর্কতার প্রয়োজনও সেখানে বেশি। মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এই নীতি মেনে চলে। যে উদ্ভিদে গবাদি পশু মুখ দেয় না, তাকে কেউ বেষ্টনীবদ্ধ করে না। গরত-ছাগলের খাদ্য যে উদ্ভিদ, তাকেই বেড়া দিয়ে ঘিরতে হয়। যে-সব সম্পদ মূল্যবান, তা-ই সযতেণ আগলে রাখা হয়; যত্রতত্র ফেলে রাখা হয় না। নারী সুন্দর (fair sex), নারী শারীংরকভাবে দুর্বল (weaker sex); তাই তার আত্রুামত হওয়ার আশংকা বেশি। অতএব, তাকে আগলে রাখার প্রয়োজনও বেশি। পর্দা সংত্রুামত প্রথম কুরআনী নির্দেশে এ-কথাটিই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা’লা নির্দেশ দিচ্ছেন-
“”হে নবী! আপনার সএী, কন্যা ও ঈমানদার লোকদের নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের ওপর চাদরের আাঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এটি অতি উত্তম ব্যবসহা যেন তাদের (সচ্চরিত্রা নারী হিসাবে) চিনতে পারা যায় এবং উত্যত্তু করা না হয়।” [সূত্রঃ আল কুরআন। সূরা-আহযাব, আয়াত-৫৯]
পর্দাহীন নারীর সম্ভ্রম যে কত অরক্ষিত এবং সে যে কতভাবে নির্যাতিত হতে পারে তার কিছু চিত্র আমরা পাশ্চাত্য সমাজে লক্ষ্য করেছি। ইসলাম নারীকে পাশ্চাত্য সমাজের মত অবমাননাকর অবসহায় দেখতে চায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা অনেক উচ্চে। তার সম্ভ্রম-শালীনতার গুরতত্ব অনেক বেশি। নারীর মান-সম্ভ্রম রক্ষা করতে ইসলাম অত্যমত যতণবান। নারীর সম্মানের প্রতি সামান্য আঘাতও এই মহান জীবনাদর্শ বরদাশত করে না। তাই তো দেখি, কুরআন পাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, কেউ যদি কোন সচ্চরিত্রা নারীর প্রতি অপবাদ দেয় এবং সপক্ষে চারজন সাক্ষী উপসিহত করতে না পারে, তবে তাকে আশিটা কষাঘাত করতে হবে এবং কখনও তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। পুরতষের বিরতদ্ধে অপবাদ রটনাকারীকে কিমও এরকম শাসিতর আওতায় আনা হয়নি। যাহোক, পর্দা হল নারীর নিরাপত্তা এবং মান-সম্ভ্রমের রক্ষা-কবচ।
পর্দা-ব্যবসহা সফল করতে দৃষ্টিকে নিয়মএণ করা অতীব জরতরি। আমরা ইতোপূর্বে লক্ষ্য করেছি, পুরতষকে দৃষ্টি নিয়মএণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারীকেও এই নির্দেশের বাইরে রাখা হয়নি। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-
“”ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাসহানের ংহফাজত করে।” [সূত্রঃ আল কুরআন। সূরা-আন নূর, আয়াত-৩১]
দৃষ্টি নিয়মএণের ক্ষেত্রে পুরতষের তুলনায় নারীর কিছুটা ছাড় রয়েছে। পুরতষের জন্য কোন নারীর প্রতি একাধিকবার দৃষ্টি নিক্ষেপ বা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা বৈধ নয়। এ-ব্যাপারে মন£ষীগণ সবাই একমত। কিমও নারী কোন গায়ের মাহরাম পুরতষের প্রতি তাকিয়ে থাকতে পারে কি-না সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। একদল মনে করেন, মহানবী (সা) যেহেতু একবার তাঁর সএী উম্মঁ সালমা (রা) ও মাইমুনা (রা)-কে অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) থেকে পর্দা করতে বলেছিলেন (কারণ, উত্তু সাহাবী দেখতে না পেলেও নবীপতণীরা তাঁকে দেখছিলেন), সেহেতু নারীদের পক্ষে পুরতষদের দিকে তাকিয়ে থাকা বৈধ নয়। অপর দলের দলিল হল সেই হাদিস যেখানে রাসূল (সা) আয়িশা (রা)-কে সুযোগ দিয়েছিলেন কয়েকজন সাহাবীর অসএচালনা দেখবার। অতএব, তারা মনে করেন, পুরতষের অলক্ষ্যে নারী তাদেরকে দেখতে পারে। মুফতী মুহাম্মৎদ শফী (রঃ) উভয় মতের সমন্বয় সাধন করেছেন এ-ভাবে-
“”এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, কামভাব সহকারে (নারী কর্তৃক পুরতষকে) দেখা হারাম এবং কামভাব ব্যতীত দেখাও অনুত্তম।” [সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন। সূরা নূর এর ৩১তম আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ]
আসলে দৃষ্টিপাত থেকে জাগে আকর্ষণ আর তা থেকে ঘটে পদস্খলন। তাই রাসূল (সা) অসংযত দৃষ্টিপাতকে “”শয়তানের তীর” বলে অভিহিত করেছেন।
শালীনতাপূর্ণ পবিত্র চিমতা-চেতনার অনুকূলে সমাজকে ঢেলে সাজানোর জন্য ইসলামের আরেকটি পদক্ষেপ হল সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত রাখা। বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে আকৃষ্ট করার এটা মোক্ষম হাতিয়ার। ইতিহাসের ঊষালগ্ণ থেকেই দেখা যায়, নারী নানা অলংকারে ভূষিত হয়ে নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। যাহোক, এভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শন চলতে থাকলে সমাজ থেকে না ব্যভিচার নির্মূল করা সম্ভব, না অশামিত । গোটা বিশ্বে এমন জাতি মেলা ভার, যাদের ইতিহাসে সুন্দরী নারী নিয়ে রত্তুক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়নি। সুন্দরী হেলেনকে নিয়ে পালিয়েছিল ট্রয়ের যুবরাজ প্যারিস, এর ফলে দীর্ঘদিনের রত্তুক্ষয়ী যুদ্ধের পর ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল; সুন্দরী পদ্মাবতীর জন্য চিতোরে অনেক রত্তু ঝরিয়েছিলেন আলাউদ্দীন খিলজী। সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন কোন না কোন করতণ ঘটনা প্রকাশিত হয় যার মূলে রয়েছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। কখনো দেখি এক সুন্দরী কোন এক যুবককে প্রত্যাখ্যান করায় এসিড-সমএাসের শিকার হয়েছে, কখনো-বা একদল যুবক কোন এক সুন্দরীকে অপহরণ করে পালাত্রুমে বলাৎকার করেছে, আবার কখনো মনোহারিনীকে জীবন-সাথী হিসাবে না পেয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। এরকম আরো অনেক করতণ ঘটনা প্রতিদিন ঘটে চলেছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণই এর মূল কারণ। তাই ইসলাম এটা নিয়মিএত করেছে। যাদের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ কিংবা যেসব শিশুরা নারীদের গোপনীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শনে নিষেধ নেই। কিমও যাদের সঙ্গে বিবাহে বাধা নেই, তাদেরকে রদপের জালে আটকানোতে বাধা আছে। এ-ব্যাপারে আল্লাহ নারীদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেনঃ
“”তারা (নারীরা) যেন যা স্বত:ই প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তারা যেন মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে। . . . তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। [সূত্রঃ আল কুরআন। সূরা-আন্ নূর, আয়াত-৩১]
আল কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
“”তোমরা জাহেলি যুগের নারীদের মত নিজেদের রদপ-সৌন্দর্য ও যৌবনের প্রদর্শনী করে বেড়িও না।” [সূত্রঃ সূরা আল আহযাব, আয়াত-৩৩]
এসম্পর্কে রাসূল (সা) বলেনঃ যে নারী তার পরিবারের লোকদের বাইরে সুসজ্জিতা হয়ে ঠাক-ঠমকে চলে, তার উদাহরণ হল কিয়ামৎতের দিবসের আঁধারের মত। সে-দিন তার জন্য কোন আলো থাকবে না। [সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ। শিশুদের দুগ্ধপান অধ্যায়।]
পারিবারিক পরিবেশেও নারীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাকে তো সতর (অর্থাৎ মুখমন্ডল এবং কব্জি থেকে হাত পর্যমত বাদে গোটা দেহ) আবৃত রাখতেই হবে, এছাড়াও তাকে অমতরের পর্দা তথা লজ্জাশীলতা এবং আচরণগত পর্দাও মেনে চলতে হবে। নইলে পরিবারেও পদস্খলন বা বিপর্যয় ঘটা অসম্ভব নয়। বিশেষ করে দেবরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরতরি। কারণ, একজন নারীর এখান থেকে বিপর্যয়ের আশংকা তুলনামূলকভাবে বেশি। “দেবরের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে স্বামী কর্তৃক সএীকে তালাক প্রদান’, “ভাবীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জেরঃ ভাইয়ের হাতে ভাই খুন’, “স্বামী-সমতান ছেড়ে দেবরের হাত ধরে ভাবীর পলায়ন’─ এধরণের খবর সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন চোখে পড়ে। এগুলো সবই হল অসচেতনতা বা পর্দাহীনতার ফল। এজন্য মহানবী (সাঃ) দেবর সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছিলেনঃ “দেবর তো মৃত্যুতুল্য।’ অর্থাৎ মৃত্যুকে যেমন মানুষ ভয় পায়, এড়িয়ে চলতে চায়, দেবরের ক্ষেত্রেও তেমনটি করা উচিত।
সৌন্দর্য প্রদর্শন ছাড়াও আকর্ষণের আরো অনেক পমহা রয়েছে। এগুলোর সবই ইসলামে নিয়মএণ করা হয়েছে। এখানে তেমন কিছু বিধি-নিষেধ উল্লেখ করা হলঃ
পর্দা পালনের উদ্দেশ্যে ব্যবহদত চাদর, জিলবাব কিংবা বোরকা এমন পাতলা হবে না যার মধ্য দিয়ে নারীর অবয়ব ফুটে ওঠে। একবার আংয়শা (রা)-এর বোন আসমা (রা) পাতলা কাপড় পরে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁকে দেখে মহানবী (সা) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, তখন এমন কাপড় পরা উচিত নয় যাতে তাদের শরীর দেখা যায়। তবে এইটুকু এইটুকু ছাড়া, একথা বলার সময় তিনি মুখমন্ডল ও দু’হাতের তালুর দিকে ইশারা করলেন। [সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ। চিরতণী করা অধ্যায়]
নারী এমন আঁটোসাঁটো পোশাক পরিধান করবে না, যা তার দেহ-কাঠামোকে প্রকট করে তোলে, তার শরীরের সাথে লেপটে থাকে। এতে পোশাকের যে মূল উদ্দেশ্য─ শরীরকে আবৃত করা─ তা পূর্ণ হয় না। বিশ্বনবী (সা) বলেনঃ (অনাগত ভবিষ্যতে) একদল মহিলা থাকবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। যারা অন্যদের আকর্ষণকারী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবসহা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার ঘ্রাণও পাবে না। [সূত্রঃ মুসলিম শরীফ। পোশাক ও সাজ-সজ্জা অধ্যায়]
নারী যদি সুগন্ধী ব্যবহার করে বাইরে যায়, তবে পুরতষরা আকৃষ্ট হতে পারে। তাই এটাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (উল্লেখ্য, পরনারীকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন পুরতষের জন্যও সুগন্ধী ব্যবহার করা বৈধ নয়) মহানবী (সা) বলেছেনঃ যখন সুগন্ধী ব্যবহার করে কোন মহিলা পুরতষের মাঝে যায় যেন তারা তার ঘ্রাণ অনুভব করে, তবে সে এরদপ এরদপ অর্থাৎ তাদের সম্পর্কে তিনি শত্তু মমতব্য করেন। [সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ। চিরতণী করা অধ্যায়]
কণ্ঠস্বরেও রয়েছে প্রবল আকর্ষণী শত্তিু। বিশেষকরে নারীদের এই আকর্ষণ এড়ানো পুরতষের পক্ষে বেশ কঠিন। যারা দুর্বল চিত্তের পুরতষ তারা সহজেই নারীর সুরেলা কণ্ঠের স্বরে ঘায়েল হতে পারে। এ-জন্য নারীকে পর-পুরতষের সাথে বাক্যালাপে কোমলতা পরিহার করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ্ তালা নির্দেশ দিচ্ছেন-
‘তোমরা যদি সত্যিই আল্লাহ্কে ভয় করে থাকো, তাহলে কখনও কোমল (মধুর) স্বরে কথা বলবে না। (এভাবে কথা বললে) যাদের অমতরে ব্যাধি আছে তারা লালসা-কাতর হয়ে পড়বে। বরং স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত কথাই বলবে।’ [সূত্রঃ আল কুরআন। সূরা- আহযাব, আয়াত-৩২]
ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, পুরতষদেরকেও একই ধরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেষ কথাঃ নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশা অসংখ্য সামাজিক সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। এর কারণে নারী ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয় যা পাশ্চাত্যে ব্যাপক। অবাধ মেলামেশার পথ ধরে আসে অবাধ যৌনতা; পাশ্চাত্যে এটাও বহুল প্রচলিত। এই অবাধ যৌনতা থেকে হয় অনাকাংখিত গর্ভধারণ, ভ্রদণহত্যা, জারজ সমতানের জন্ম─ এসব সামাজিক ব্যাধির প্রত্যেকটা পাশ্চাত্যে প্রকট। অবাধ যৌনতার আরেকটা অবদান হল যৌনবাহিত রোগ (STD) যার কারণে গত দশ বছরে যত লোক মৃত্যু বরণ করেছে, পৃথিবীর একশ’রও বেশি দেশের জনসংখ্যাও তত নয়। অবাধ যৌনতার আরেকটা কুফল হল যৌনবিকৃতি যেমন, নগ্ণচারিতা, সমকামিতা, শিশুধর্ষণ, পশুমৈথুন, অযাচার ইত্যাদি। বন্ধনহীন যৌনজীবনের আরেকটা পরিণতি হল বিপর্যসত পরিবার; পাশ্চাত্যে এটা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পারিবারিক পরিবেশ শিশু-বিকাশের প্রতিকূল হওয়ায় মনোরোগ, মাদকাসত্তিু, আত্মহত্যা, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতির হার অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সামগ্রিক চিত্র সামনে রেখে যদি প্রশ্ন করা হয়, এগুলো কি প্রগতির লক্ষণ? এতসব সামাজিক সমস্যা সমাজের কোন্ উন্নয়ন ঘটাবে? এসব কি সমাজকে বিপর্যয়, বিশৃংখলা এবং অশামিতর বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন করবে না? এরপরও যদি দাবী করা হয় জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়ণের স্বার্থে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন, তাহলে দুইটা কথা থাকে। এক. এই অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কোন জাতি কি এতসব সামাজিক অবনতি মেনে নিতে প্রসতুত হবে? ক্ষুদ্র পরিসরে (micro level) চিমতা করতন, এমন কে আছে যে তার সএীর পরকীয় সম্পর্ক, এক মেয়ের ধর্ষণের শিকার হওয়া, আরেক মেয়ের কুমারী মাতা হওয়া─ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গর্ভপাত ঘটানো, এক ছেলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, এক ছেলের মাদকাসত্তিু, আরেক ছেলের আত্মহত্যা─ সব কিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে শুধু এই কারণে যে তার প্রচুর অর্থ প্রাপ্তি ঘটছে? দুই. যদি কোন দেশে কখনো এরদপ অবসহা দেখা দেয় যে, নারীর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ অনিবার্য হয়ে পড়ে, তখন পুরতষের সাথে অবাধ মেলামেশাকে এড়িয়ে কি এটা করা সম্ভব নয়? নারীদের জন্য পৃথক পরিবেশ সৃষ্টি করা কি খুব কঠিন? পর্দার দাবী তো এটিই। পর্দার লক্ষ্য তো নারীকে গৃহবন্দী করা নয়, বরং সর্বনাশা অবাধ মেলামেশা থেকে তাকে বিরত রাখা।
[প্রবন্ধটি ২০ অগাস্ট ২০০৯ তারিখে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।]
তথ্যসূত্রঃ
আল কুরআনঃ বঙ্গানুবাদ । ডঃ মুসতাফিজুর রহমান অনূদিত। খোশরোজ কিতাব মহল, ঢাকা।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রঃ)। তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ)। বুখারী শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ)। আল-আদাবুল মুফরাদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবুল হুসায়ন মুসলিম (রঃ)। মুসলিম শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবূ ঈসা আত-তিরমিযী (রঃ)। তিরমিযী শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবু দাউদ (রঃ)। আবু দাউদ শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাজাহ্ (রঃ)। সুনানু ইবনে মাজাহ্। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী (রঃ)। মেশকাত শরীফ। এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। পর্দা ও ইসলাম। আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা।
মুহাম্মাদ কুতুব। বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইউসুফ আল কারজাভী। ইসলামে হালাল হারামের বিধান। খায়রতন প্রকাশনী, ঢাকা।
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম। নারী। খায়রতন প্রকাশনী, ঢাকা।
Women: Victim or Victor . Masoumeh Raghebi Bayat. Iranian Cultural Centre, Dhaka.
Muhammad Amin. Wisdom of Prophet Muhammad. Islamic Book Service. New Delhi, India.
M.N. Roy. The Historical Role of Islam. Ajanta Publications. New Delhi. India.
Benjamin B. Lehey & Anthony R. Ciminero. Maladaptive Behaviour: An Introduction to Abnormal Psychology. Scott, Foresman & co. U.S.A.
James C. Coleman. Abnormal Psychology and Modern Life. 5th edition. Scot Foresman & Co. U.S.A.
Erich Goode. Deviant Behaviour. 3rd edition. Prentice Hall. U.S.A.
Robert A. Baron, Donn Byrne. Social Psychology: Understanding Human Interaction. 7th edition. Prentice Hall. U.S.A.
Evelyn Millis Duvall. Marriage and Family Development. 5th edition. J.B. Lippincot Company. U.S.A.
George B. Mangold. Problems of Child Welfare. 3rd edition. The Macmillan Company. U.S.A.
Social Problems. Annual Edition-02/03. McGraw-Hill. U.S.A.
Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders. Fourth Edition. U.S.A.
The Worldbook Encyclopedia. U.S.A.
Reginald Bibby, Donald Postersky. Teen Trends. Stoddart. Canada.
Hilary M. Lips. A New Psychology of Women. 2nd edition. McGraw-Hill. U.S.A.
The Encarta Encyclopedia. Microsoft Corporation. U.S.A.
William Shakespeare. Othello. Penguin Classics.
Richard T. Schaefer. Sociology. 9th edition. McGraw-Hill. U.S.A.
Avert Magagine. September-2004. U.K.
Adler. Mueller. Laufer. Criminology. McGraw-Hill. U.S.A.
Sexually Transmitted Disease in South Australia 2007. Epidemiology Report. No-21.
The Bangladesh Observer.
The World Almanac-2001
The World Almanac-2002
George Skelton. Abortion Often Causes Guilt. The Sacramento Bee. March, 1989.
Wanda Franz, Ph.D. Medical and Psychological Impact of Abortion. 101st Congress. March 16, 1989.
Janet Daling, et al. Risk of Brest Cancer Among Young Women: Relationship to Induced Abortion. Journal of the National Cancer Institute. Vol.86. November-1994.
A.Levin, et al. Ectopic Pregnancy and Prior Induced Abortion. American Journal of Public Health. Vol.72. March, 1982.
Daniel J. Martin M.D. The Impact of Legal Abortion on Women’s Minds and Bodies. Paper presented at the ‘Human Life and Health Care Ethics’. National conference. April, 1993.
Statistics Newzealand. 08.01.2009
Abortion Statistics, England and Wales: 2006. Department of Health. U.K.
Stanley K. Henshaw. Unintended Pregnancy in the United States.
Warner Jennifer. Premarital Sex the Norm in America. WebMD News Archive.
Ammerman & Hersen. Assessment of Family Violence. 2nd edition. John Wiley & Sons. U.S.A.
Hester, Kelly, Radford. Women, Violence and Male-Power. Open University Press, USA.
Everett D. Dyre. Courtship, Marriage and Family: American Style. The Dorsey Press. U.S.A.
লেখক : খোন্দকার রোকনুজ্জামান