মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আল-ইসলামকে মনোনিত করেছেন। এই একটি মাত্র জীবনবিধান যুগে যুগে নবী-রাসূলদের কাছে প্রেরণ করে তা কায়েম করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ﴾
‘তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই সব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন এবং (হে মুহাম্মাদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার আদেশ দিয়েছিলাম আমি ইবরাহীম (আ) মূসা (আ) ও ঈসা (আ) তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, এ দীনকে কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর ভিন্ন হয়ো না। (হে মুহাম্মাদ) এই কথাটিই এসব মুশরিকের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় যার দিকে তুমি তাদের আহবান জানাচ্ছো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আপন করে নেন এবং তিনি তাদেরকেই নিজের কাছে আসার পথ দেখান যারা তাঁর প্রতি রুজু করে।’ (সূরা আশ-শুরা: ১৩)
সর্বশেষ নবী ও রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য হিসেবে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ﴾
‘তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত এবং ‘দীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দীনকে অন্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।’ (সূরা আস-সফ: ৯)
এছাড়া ফাতাহ:২৮, তাওবা: ৩৩ প্রায় একই রকম বক্তব্য রয়েছে।
মুমিনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
‘প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত,ইনজিল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সূরা তাওবা: ১১১)
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরো বহু দৃষ্টান্ত পবিত্র আল-কুরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে। যা দ্বারা একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে তাঁর বাণীবাহক নবী-রাসূলগণকে মূলত হেদায়াত ও দীনকে কায়েম ও বিজয়ী করার জন্য তাঁর পথে সংগ্রামের জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁরা তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত সিনসিয়ার ও সিরিয়াসলি পালন করেছেন।
একইভাবে মুমিনগণের জান ও মাল আল্লাহ তা’য়ালা বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়ে তাদেরকেও দীনকে বিজয়ী করতে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তা’য়াল মুমিদেরকে তাঁর খলিফা ও আনসারুল্লাহর মর্যাদা প্রদান করেছেন।
ইসলামী আন্দোলন আল্লাহ তা’য়ালার নিজেরই আন্দোলন। এ আন্দোলনের মূল অভিবাবক মহান আল্লাহ তা’য়ালা। আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও কুরআনের আন্দোলন হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বিজয়ী হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অঙ্গিকারও বটে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
﴿يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ﴾
‘এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা আস-সফ: ৮)
অর্থাৎ বিজয়ের পূর্ব শর্ত হলো, আমাদেরকে প্রকৃত ও খাঁটি মুমিন হতে হবে। আর ঈমান আনার শর্তই হচ্ছে তাগুতকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
﴿لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
‘দীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে ) সবকিছু শোনেন ও জানেন।’ (সূরা বাকারা: ২৫৬)
এ আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ঈমানের নেয়ামত কারো গলায় জোর করে পরিয়ে দেয়া হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে দিয়ে সঠিক বা বেঠিক মত গ্রহণের ব্যাপারে ব্যক্তিকে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। চাইলে সে সত্যকে গ্রহণ করতে পারে আর না করতে চাইলেও এটা তার একান্ত বিষয়। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি ঈমান গ্রহণের দাবি করে তাহলে তাঁকে তাগুতকে অস্বীকার করেই তা করতে হবে। তাগুতকে অস্বীকার না করে ঈমান আনার দাবি অসার ও হাস্যকর।
কেননা তাগুত হচ্ছে কাফিরের চাইতেও ভয়ংকর। ইসলামী চিন্তাবিদগণ তাগুতের সংজ্ঞায় বলেছেন, তাগুত নিজে তো আল্লাহর পথে চলে না অন্যকেও আল্লাহর পথে চলতে বাঁধা প্রদান করে। উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাগুতকে সরাসরি অস্বীকার বা বর্জন করতে বলেছেন। আর কাফিরকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি নিজের পিতা ও ভাইদেরকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন যদি তারা ঈমানের পথের পরিবর্তে কুফরীকে প্রাধান্য দেয়।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ﴾
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের বাপ ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের ওপর কুফরীকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকেও নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই জালেম।’ (সূরা তাওবা: ২৩)
সুতরাং তাগুতি ও কুফুরী শক্তিকে বর্জন ও বন্ধুরূপে গ্রহণ না করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রত্যাদেশ যেখানে আমাদের কাছে স্পষ্ট অথচ যে তাগুতি শক্তি্টি এদেশের ইসলামী আন্দোলনের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব অসংখ্য তাফসীর মাহফিলে যাদের ভয়ঙ্কর চরিত্র সম্পর্কে বার বার দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন করেছেন, সেই নাস্তিক্যবাদীদের বুদ্ধি ও পরামর্শে এবং তাদেরকে পাশে বসিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এত বড় প্লাটফর্মকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার হীন কাজ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা সকলকে হেফাজত করুন এবং তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে মহান আল্লাহর ভাষায় জালিম হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
বস্তুত আমরা যারা ইসলামী আন্দোলনের সফলতা চাই তাদেরকে খাঁটি মুমিনের যোগ্যতা অর্জনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র আল-কুরআনের সুরা মুমিনুনের প্রথম ১১ আয়াতে এবং সূরা ফোরকানের শেষ রুকুতে যে বৈশিষ্টগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো আত্মস্ত করে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের অন্য ভাই-বোনদেরকে এ ব্যাপারে মোটিভেশন চালাতে হবে।
সূরা আল মুমিনুনে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ﴾ ﴿الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ﴾ ﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ﴾ ﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ﴾ ﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ﴾ ﴿إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ﴾ ﴿فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ﴾ ﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ﴾ ﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ﴾ ﴿أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ﴾ ﴿الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
‘নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা যারা নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়, বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে, যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবে না, তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী, নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, এবং নিজেদের নামাযগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে। তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে ফিরদাউস লাভ করবে এবং সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে।’
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’য়ালা সূরা আল ফোরকানের ৬৩ থেকে ৭৬ নাম্বার আয়াতে যা বলেন-
﴿وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا﴾
৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়,
﴿وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا﴾
৬৪) তোমাদের সালাম। তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا﴾
৬৫) তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব ! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা।
﴿إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا﴾
৬৬) আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা”।
﴿وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا﴾
৬৭) তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
﴿وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا﴾
৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণ হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তিভোগ করবে।
﴿يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا﴾
৬৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়।
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
৭০) তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ইমান এনে সৎ কাজ করতে থেকেছে। এ ধরনের লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।
﴿وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا﴾
৭১) যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎকাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসো।
﴿وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا﴾
৭২) (আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়।
﴿وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا﴾
৭৩) তাদের যদি তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয় হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না।
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا﴾
৭৪) তারা প্রার্থনা করে থাকে, “ হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”
﴿أُولَٰئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا﴾
৭৫) (এরাই নিজেদের সবরের ফল উন্নত মনজিলের আকারে পাবে। অভিবাদন ও সালাম সহকারে তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে।
﴿خَالِدِينَ فِيهَا ۚ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا﴾
৭৬) তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। কী চমৎকার সেই আশ্রয় এবং সেই আবাস!
এছাড়াও কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনের গুণাবলী সংক্রান্ত যেসব আয়াত ও সহীহ হাদীস রয়েছে, সেগুলো আত্মস্ত করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়নের পাশাপাশি ইসলামী বিপ্লব বা দীনকে বিজয়ের প্রকৃত পন্থা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
বস্তুত ইসলামী আন্দোলন ও অন্য দশটি সাধারণ আন্দোলনের বিজয়ের পথ ও পন্থা এক নয়। সাধারন আন্দোলনের বিজয়ের ক্ষেত্রে নগদ পাওয়ার হাতছানি তাড়িয়ে বেড়ায়। তারা সাময়িক বিজয়ের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যেতে পারলেই খুশি। ভোটের আগের রাতে জনগণের রায় কেড়ে নিয়ে হলেও তাতে কোন অসুবিধা নেই।
সাধারন আন্দোলনের মুখ্য লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতায় আরোহণ করা। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইসলামী আন্দোলন ভোটের আগের রাতে নয় বরঞ্চ ভোটের ১ সপ্তাহ আগেই কিংবা ভোট গ্রহণের সারাদিনই নিজেদের প্রভাবাধীন এলাকায় এক চেটিয়া জালভোট দেয়ার সুযোগ পেলেও জনগণের রায় কেড়ে নিয়ে নোংরা পথে ক্ষমতায় যাওয়াকে কখনই বৈধ মনে করে না। এ ধরনের অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন চিন্তাই করতে পারে না।
কিন্তু কিছু লোকের হাব-ভাব, কথাবার্তা, আচরণ ও ফেসবুকের স্ট্যাটাসে মনে হয় ইসলামী আন্দোলন নামক এ মহান আন্দোলনও যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার তথাকথিত কৌশল গ্রহণ করুক। দুনিয়ার কোথাও কেউ কোনভাবে ক্ষমতায় চলে এলে এবং কিছুদিন টিকে গেলে এটাকেই মহাসাফল্য বলে শোরগোল করছে।
অথচ তাড়াতাড়ি ও যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়া ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের মানদন্ড নয়। ইসলামী আন্দোলন এক সর্বব্যাপি সাফল্যের নাম। প্রকৃত অর্থে মহান আল্লাহর মাগফিরাত লাভ করে জান্নাত লাভ করাই হচ্ছে প্রকৃত সফলতা।
এ পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের সঠিক কর্মপন্থা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের জন্য প্রধান গুণ হচ্ছে মজবুত ও খাঁটি ঈমান। যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ইসলামী বিপ্লবের সফলতার জন্য যে বৈশিষ্ট্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অবশ্যই অর্জন করতে হবে তা হলো- ব্যাপক দাওয়াতী কাজ।
দাওয়াতি কাজকে ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে ব্যাপক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এ লক্ষ্যে গণসংযোগ করতে হবে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতে হবে। প্রতিবেশী পরিবারগুলোর সাথে দাওয়াত ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে সেবামূলক তৎপরতা চালানো দরকার। মৌখিক দাওয়াতের পাশাপাশি চারিত্রিক মাধুর্যতার মাধ্যমে ইসলামের বাস্তব সাক্ষ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
এ ব্যাপারে বানিয়ে জামায়াত সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ.) তাঁর ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চরিত্র ও মাধুর্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘খোদার পথে যারা কাজ করবেন তাদেরকে উদার হৃদয় ও বিপুল হিম্মতের অধিকারী, সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবতার দরদী, ভদ্র ও কোমল স্বভাবসম্পন্ন, আত্ননির্ভরশীল ও কষ্ট সহিষ্ণু, মিষ্টভাষী ও সদালাপি হতে হবে। তাদের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হবে এমন কোন ধারনাও যেন কেউ পোষণ করতে না পারে। তাদের থেকে কল্যাণ ও উপকার সবাই কামনা করবে। নিজের প্রাপ্যের চাইতে কমের উপর সন্তুষ্ট ও অন্যকে প্রাপ্যের চাইতে বেশী দিতে প্রস্তুত থাকবে। মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দিবে। কমপক্ষে মন্দ দিয়ে দিবে না।’
‘নিজের দোষত্রুটি স্বীকার ও অন্যের গুণাবলীর কদর করবে। অন্যের দূর্বলতার প্রতি নজর না দেয়ার মতো বিরাট হৃদয়পটের অধিকারী হবে। অন্যের দোষত্রুটি ও বাড়াবাড়ি মাফ করে দেবে। নিজের জন্য কারো উপর প্রতিশোধ নেবে না। অন্যের সেবা গ্রহণ করে নয় অন্যকে সেবা দিয়ে আনন্দিত হবে। নিজের স্বার্থে নয় অন্যের ভালোর জন্য কাজ করবে। কোন প্রকার প্রশংসার অপেক্ষা কিংবা নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে। খোদা ছাড়া কারো পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি দেবে না।’
‘বল প্রয়োগ করে তাদের দমন করা যাবে না, ধন-সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করা যাবে না। কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের সামনে নির্দিধায় ঝুঁকে পড়বে। তাদের শত্রুরাও তাদের ওপরে বিশ্বাস রাখবে যে, কোন অবস্থায়ই তারা ভদ্রতা ও ন্যায়নীতি বিরোধী কোন কাজ করবে না। এগুলো তলোয়ারের চাইতেও ধারালো এবং হীরা, মনি-মুক্তার চাইতে মূল্যবান। এ চারিত্রিক গুণাবলী মানুষের মন জয় করে নেয়। এ ধরনের গুণাবলী অর্জনকারীরা চারপাশের জনবসতির উপর বিজয় লাভ করে।”
এছাড়া মাওলানা মওদূদীর মতে এ বিজয়ের জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে নিম্নোক্ত মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে।
ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তগ্রহণ শক্তি, প্রবল বাসনা, উচ্ছাসা ও নির্ভীক সাহস, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সহনশীলতা ও পরিশ্রমপ্রিয়তা, উদ্দেশ্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ এবং সেজন্য সব কিছুরই উৎসর্গ করার প্রবণতা, সতর্কতা, দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টি, বোধশক্তি ও বিচার ক্ষমতা, পরিস্থিতি যাচাই করা ও তদানুযায়ী নিজেকে ঢেলে গঠন করা, অনুকূল কর্মনীতি গ্রহণ করার যোগ্যতা, নিজের হৃদয়াবেগ, ইচ্ছা-বাসনা, স্বপ্নসাধ ও উত্তেজনার সংযমশক্তি, অন্য মানুষকে আকৃষ্ট করা ও তাদেরকে কাজে লাগানোর বিচক্ষণতা কারো মধ্যে পুরোপুরি বর্তমান থাকলে তবে এ দুনিয়ায় তার জয় সুনিশ্চিত।
ইসলামী আন্দোলনের সফলতার জন্য আরেকটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে- ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। এটা আল্লাহ তা’য়ালার আরেকটি বড় কৌশল। এ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সত্য, সঠিক পথ, সবল ও মজবুত ঈমানদারদেরকে মিথ্যা, বাতিল, কৃত্রিম, মেকি, মোনাফিক ও ভেজাল থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যা সত্য পথের পথিক ঈমানদার মুজাহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশাল উপহার। এর মাধ্যমে দূর্বলচিত্ত, ভিতু, কাপুরুষ ও কপট ব্যক্তিরা শতই বাঁচাই ও ছাঁটাই হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
﴿أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ﴾ ﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ﴾
‘লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ অবশ্যই দেখবেনকে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।’ (সূরা আনকাবূত: ২-৩)
﴿أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ﴾
‘তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।’ (সূরা বাকারা: ২১৪)
﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ﴾ ﴿الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ﴾ ﴿أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ﴾
‘আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। তাদেরকে সুসংবাদ দাও। তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
﴿قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ ۖ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَٰكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ﴾
৩৩) হে মুহাম্মাদ ! একথা অবশ্যি জানি, এরা যেসব কথা তৈরী করে, তা তোমাকে কষ্ট দেয় কিন্তু এরা তোমাকে মিথ্যা বলে না বরং এ জালেমরা আসলে আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করছে।
﴿وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَىٰ مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّىٰ أَتَاهُمْ نَصْرُنَا ۚ وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِن نَّبَإِ الْمُرْسَلِينَ﴾
৩৪) তোমাদের পূর্বেও অনেক রসূলকে মিথ্যা বলা হয়েছে কিন্তু তাদের ওপর যে মিথ্যা আরোপ করা হয়েছে এবং যে কষ্ট দেয়া হয়েছে, তাতে তারা সবর করেছে। শেষ পর্যন্ত তদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে গেছে। আল্লাহর কথাগুলো পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারোর নেই এবং আগের রসূলদের সাথে যা কিছু ঘটে গেছে তার খবর তো তোমার কাছে পৌঁছে গেছে।
﴿وَإِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكَ إِعْرَاضُهُمْ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَن تَبْتَغِيَ نَفَقًا فِي الْأَرْضِ أَوْ سُلَّمًا فِي السَّمَاءِ فَتَأْتِيَهُم بِآيَةٍ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدَىٰ ۚ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
৩৫) তবুও যদি তাদের উপেক্ষা তোমার কাছে অসহনীয় হয়ে থাকে তাহলে তোমার মধ্যে কিছু শক্তি থাকলে তুমি ভূগর্ভে কোন সুড়ঙ্গ খুঁজে নাও অথবা আকাশে সিড়িঁ লাগাও এবং তাদের কাছে কোন নিদর্শন আনার চেষ্টা করো। আল্লাহ চাইলে এদের সবাইকে হেদায়াতের ওপর একত্র করতে পারতেন। কাজেই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আনআম: ৩৩-৩৫)
সুতরাং যেখানে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু বিষয়ে পরীক্ষা করবো।’ সেখানে ইসলামী আন্দোলনের এ পথে পরীক্ষা আসাটাই স্বাভাবিক। না আসাটা বরঞ্চ অস্বাভাবিক।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক নির্ধারিত এ পরীক্ষা পদ্ধতিকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পেরে কোন কোন ব্যক্তি প্রশ্ন উত্থাপনের চেষ্টা করেন যে, এতগুলো মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি না করে কি পারা যেতো না? কিংবা ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের জন্য এত কুরবানীর কি দরকার ছিলো? অথবা এগুলো সংগঠিত হতে পেরেছে কোন রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারনে।
এ ধরনের বক্তব্য শুধু তারাই দিতে পারে যাদের কাছে কুরআনী দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার না। কোন বিশেষ সালকে সামনে এনে যারা এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেন তাদের যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় ১৯৭০ সালে পল্টনে জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় হামলা করে যে ২ জনকে শহীদ করা হলো, সে ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী? কারণ তখন তো ৭১ সাল ছিল না। তারও আগে জামায়াত ইসলামীর প্রথম দিকে লাহোর সম্মেলনে সরকারী গুন্ডাবাহিনী সশস্ত্র হামলা চালিয়ে একজনকে শহীদ করাসহ অসংখ্য আন্দোলনের কর্মীদেরকে আহত করেছিলো। সে ব্যাপারে কি বক্তব্য? তখন তো ৭১ আসেনি।
মিশর ও তুরস্কে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীগণ তাদের স্ব স্ব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে আমরা জানি। কিন্তু তাদের ওপরে জুলুম-নির্যাতনের কারন কী? এরকম মতলবী কথাবার্তা বলে মূলত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে সংশয় সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়।
যারা ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীতা করে তারা মূলত আল্লাহরই বিরোধীতা করে। তাদের ব্যাপারে ফায়সালার ভার আল্লাহর হাতেই রয়েছে। প্রকৃত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা এসব বিরোধীতা-নির্যাতন দেখে ঘাবড়ে যায় না। এদিক ওদিক ছুটাছুটি এবং পালিয়ে বেড়ায় না। বরং তারা নির্যাতনের সম্মুখীন হয়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বকে আরো বেশী ভালোবাসতে এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও ভালোবাসতে শেখে। সব ধরনের নগদ পাওয়ার হাতছানি ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে দীনকে বিজয়ী করার জন্য তারা আরো দৃঢ়তার সহিত নিরলসভাবে কাজ করে যায়।
লেখকঃ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।