বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের যেকোন নির্বাচনের চেয়ে আলাদা গুরুত্ব বহন করে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন থাকবে কি না, অধিকার হারা মানুষ অধিকার ফিরে পাবে কি না তা নির্ধারিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। তাই দলমত নির্বিশেষে বিভেদ ভুলে ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমানকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সকলকে অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে ঢাকা-১৫ আসনের ২০ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দের সাথে এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগরী উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান জাহান, রেজাউর রহমন তপন ও আরিফুল ইসলাম, কাফরুল থানা বিএনপি’র সভাপতি আখতার হোসেন জিল্লু এবং সহসভাপতি আলী আরশাদ মামুন। জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মো. তসলিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও আলাউদ্দীন মোল্লা এবং জামায়াত নেতা খান হাবিব প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী, তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোটের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। মূলত এবারের নির্বাচন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার নির্বাচন। যেহেতু জননেতা ডা. শফিকুর রহমান ২০ দলীয় জোট, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের মনোনীত প্রার্থী। তাই তিনি এখন থেকে আমাদের এ আসনের অবিভাবক। তিনি যেভাবে আমাদেরকে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে। মূলত তাকে নির্বাচিত করা মানেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা। তারা ডা. শফিকুর রহমানকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সরকারের সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে নির্বাচনী ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিএনপি’র সকল স্তরের নেতাকর্মীর সহ সাধারণ জনগণের প্রতি আহবান জানান।
সেলিম উদ্দিন আরো বলেন, এবারের নির্বাচন কোন বিশেষ দল বা প্রার্থীকে নির্বাচিত করার নির্বাচন নয় বরং গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী এবং গণতান্ত্রিক শক্তিকে নির্বাচিত করার নির্বাচন। মূলত দেশ ও জাতি এক মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সারাদেশেই ঢালাওভাবে গণগ্রেফতার ও গণনিগ্রহ চলছে। তফসিল ঘোষণার পর শুধুমাত্র ঢাকা-১৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০ দলীয় জোটের অন্তত দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই বরং সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন ও বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে ভোট বিপ্লব ঘটাতে হবে। অন্যাথায় আবারও জাতির ঘাড়ে অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শক্তি চেপে বসবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত আছে বলে দাবি করলেও কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার সাথে একমত নন। ফলে নির্বাচন কমিশন টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছে না তাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মূলত সারাদেশেই বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এপর্যন্ত সারাদেশে ১৪ জন বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলীয় প্রার্থীর উপর গুলীবর্ষণ ও পুলিশ কর্তৃক প্রার্র্থীর পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে সরকার একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতা দখল করার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা সরকারকে সে সুযোগ দেবে না বরং ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের যথাযথ জবাব প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-১৫ আসনে এখনও বিরোধী দলের উপর জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল মিরপুর মডেল থানা পুলিশ ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণার সময় গোলাম রব্বানী, রেদওয়ান ও আনোয়ার নামের ৩ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এমতাবস্থায় বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা তো দূরের কথা নিজেদের বাড়ীঘরেও থাকতে পারছেন না। তিনি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নির্বাচনী কর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।