বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, মহান মুক্তিসংগ্রাম ও বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাই মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সর্বাত্মক ব্যালট বিপ্লব ঘটাতে হবে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন এবং ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, মিরপুর পূর্ব থানা আমীর শাহ আলম তুহিন, রূপনগর থানা আমীর নাসির উদ্দীন ও দারুসসালাম থানা আমীর মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, অনেক ত্যাগ ও কোরবানী বিনিময়ে গণমানুষের বিজয়ের আকাঙ্খা বাস্তবরূপ লাভ করেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা জন্য আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও পাকিস্তানের জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার সংগ্রামের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব শহীদ সিরাজউদ্দৌলা, শহীদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেক মহান নেতা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা আজও স্বাধীনতার সুফলগুলো পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারিনি।।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজই স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য। কিন্তু বিশেষ মহলের ক্ষমতালিপ্সা, অপরাজনীতি ও অহমিকার কারণেই সে প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। মাত্র ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ব পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর আগেই তদানীন্তর সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করে আসছিলো। ১৯৭৩ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আল মাহমুদ অভিযোগ করেছিলেন, ‘গণকন্ঠ অত্যন্ত বেআইনিভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়ার ফলে তথাকার পৌনে তিনশ’ সাংবাদিক ও কর্মচারী বেকার হইয়াছেন। সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মুহূর্ত মাত্র সময় না দিয়া অফিস হইতে কাজ অসমাপ্ত রাখা অবস্থায় বাহির করিয়া দেয়া হইয়াছে’। যা ছিল মহান স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল নির্বচনে অংশ নেয়ায় সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার পরিবর্তে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী সহ নেতাকর্মীদের উপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যুগপৎভাবে হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নিগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনে ২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। এমনকি তার কর্মীরাও প্রচারকাজে হামলা, মামলা, ভাঙ্গচুর ও গণগ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন।
মহানগরী আমীর বলেন, গত রাতে ডা. শফিকের নির্বাচনী এজেন্ট লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের মিরপুর-১৩ নং এর বাইশটেকির বাসায় হানা দিয়ে পুলিশ তার ৮৪ বছর বয়স্ক বয়োবৃদ্ধ পিতা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা লস্কর আব্দুল হাইকে নাজেহাল করে এবং নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদান করা হয়। একজন সাবেক সহকর্মীর সাথে পুলিশ সদস্যদের এমন ন্যাক্কারজনক আচরণে প্রমাণ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারিত্ব হারিয়ে এখন ক্ষমতাসীনদের পদলেহনে ব্যস্ত রয়েছে। তাই এই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন দিয়ে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি লস্কর আব্দুল হাইকে পুলিশি নিগ্রহের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।