মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল জব্বার ও ছাত্রনেতা সালাহউদ্দীন আইয়ুবী প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সাম্য, উদার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরেও আমরা বিজয়ের সুফলগুলো পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারিনি। সাম্যের পরিবর্তে অসাম্য, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে ফ্যাসিবাদ, আইনের শাসনের নামে অপশাসন-দুঃশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সীমাহীন বৈষম্যসহ দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে দাসানুদাসে পরিণত করা হয়েছে। যা কোন স্বাধীন, সার্বভৌম ও কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়। তাই স্বাধীনতা ও মহান বিজয়কে অর্থবহ করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে আরেকটি বিজয় অর্জনের জন্য আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লব ঘটাতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং যুদ্ধাহত-পঙ্গুত্ববরণকারী মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। মাত্র ৪ টি রাষ্ট্রায়াত্ব পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা হয়। মূলত জনগণের সাথে বিশ^াসভঙ্গের কারণেই আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তারা ২০০৮ সালের পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন এগিয়ে আসলেও নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি দলের প্রার্থীরা কেন্দ্র দখল ও বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা সহ প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। প্রতিকূল নির্বাচনী পরিবেশ ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা-১৫ আসনের ২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। তিনি সৎ, যোগ্য, আল্লাহভীরু ও প্রতিশ্রুতিশীল জাতীয় নেতা হলেও সরকার দলীয় প্রার্থী প্রতিনিয়ত তার চরিত্রহনন সহ নানা ধরনের হুমকী দিয়ে যাচ্ছেন। মূলত তার যোগ্যতর ও প্রতিগতিশীল নেতৃত্ব থেকে দেশ ও জাতিকে বঞ্চিত করার জন্যই সরকার নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ঢাকা-১৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মহানগরী আমীর বলেন, এখানেই শেষ নয়। গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে নির্বাচনী প্রচার কাজ চালানোর সময় ইমাম হোসেন খোকন, ভোর রাতে ইকবাল হোসেন সহ ২ জনকে নিজ বাড়ী থেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার জু’মার নামাজের পর ধানের শীষ প্রতীকের লিফলেট বিতরণকালে স্থানীয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা রশিদ আহমেদ রাসেল, আনোয়ার হোসেন, আল মামুন ও আশিকুর রহমানের উপর হামলা করে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে গ্রেফতার করে কাফরুল থানায় নিয়ে যায়। সর্বোপরি ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় পুলিশ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা যুগপৎভাবে হামলা, মামলা, পোষ্টার ছেঁড়া ও ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে। নির্বাচনী কর্মীদের মারধর ও গণহারে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এমনতাবস্থায় বিরোধী দলের পক্ষে নির্বাচনে মাঠে থাকাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা, বাধাদান ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহবান জানান।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দাখিল :
ঢাকা-১৫ আসনে ২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. শফিকুর রহমানের নির্বাচনে কাজে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ কর্তৃক বাধাদান, কর্মীদের উপর হামলা, মামলা, পোষ্টার ছিনতাই ও গণগ্রেফতারের বিষয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে শেগুনবাগিচাস্থ রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ সময়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন উত্তরখান থানা আমীর মুস্তাকিম আলম, উত্তরা পশ্চিম থানা সেক্রেটারি ফিরোজ আলম, এ্যাডভোকেট এনামুল হক শিশির ও এ্যাডভোকেট তৌহিদ প্রমূখ।