বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ক্রীড়া-সংস্কৃতিচর্চা স্বাস্থ্যবান ও মননশীল জাতি গঠন এবং নতুন প্রজন্মের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়ক হয়। মূলত যুবসমাজকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে হলে সুস্থ্যধারার ক্রীড়া-সংস্কৃতি চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তাই প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ সৃষ্টিতে সরকার, ক্রীড়া সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, চ্যারিটি সংস্থা সহ সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ, শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগীর রামপুরা থানা আয়োজিত ৪৮ তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আন্তঃওয়ার্ড প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর এফ ইউ মানিকের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি এফ এ ফজলুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থানা নায়েবে আমীর এস এইচ ঈমাম, থানা শ্রমিক কল্যাণ সেক্রেটারি প্রফেসর এ হালিম, জামায়াত নেতা এম এ রশীদ, শাফিউল ইসলাম, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান শামীম, জহিরুল আলম স্বাধীন, মাওলানা এ লতিফ, আবুল হাসনাত পাটোয়ারি, আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া, আব্দুর রহমান, মোবারক হোসেন, আবুল আ’লা রিয়াদ, মাওলানা দলিল উদ্দীন, জালাল রহমান, মাওলানা জাকির হোসেন, নজরুল ইসলাম, শফিকুর রহমান করিম ও ছাত্রনেতা আতিকুল ইসলাম প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে বিরোধী দলের সকল দাবি ও পরামর্শ উপেক্ষার পরও সীমাহীন প্রতিকুলতার মধ্যে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার ‘সিদ্ধান্ত সাহসী ও ইতিবাচক’ হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। যদিও গত ৩০ নভেম্বর বৃটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’ বিরোধী দলের এই সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রত্যাসিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমতাবস্থায় সরকারের দায়িত্ব ছিল অংশীজনের সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম করা। কিন্তু এ বিষয়ে বিরোধী দলগুলো যতই আন্তরিকতা দেখাচ্ছে, সরকার পরিকল্পিতাবেই নির্বাচনী ময়দানকে ততই বেশী অসমতল করে তুলছে। আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনও বিরোধী দলের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। এমনকি বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাছাই নিয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন নি। সরকারি দলের প্রার্থীদের বড় বড় ত্রুটি থাকা স্বত্ত্বেও তাদের প্রার্থীতা বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের ছোটখাট ত্রুটি সহ বিভিন্ন অজুহাতে অসংখ্য প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। কোন কোন প্রার্থীর মনোপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা উপরের নির্দেশের কথা বলে গ্রহণই করেননি। উচ্চ আদালতের রায়ে পরে গ্রহণ করা হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাছাইপর্বে বাতিল করার পর আপীল করার জন্য বাতিলাদেশের সার্টিফায়েড কপিও প্রদান করা হয়নি। প্রার্থীতা বাছাই পর্বশেষ হলেও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, গণগ্রেফতার ও নানাভাবে হয়রানী বন্ধ হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই অংশীজনদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রত্যাশা এখনও পূরুণ হয়নি বরং তা এখন পর্যন্ত সোনার হরিণই রয়ে গেছে। তাই প্রমাণ হয়েছে বর্তমান মেরুদন্ডহীন কমিশনের অধীনে কোন ভাবেই অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, মূলত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগই এখন সরকারের নির্দেশেই কাজ করছে। তাই মামলা, হামলা, গুম ও অপহরণ এখনও বন্ধ হয়নি। এমনকি সরকারি দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ না করে বরং বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে বা পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জন বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে। একজন প্রার্থী খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী ক্যাম্পেইন তো দূরের কথা বরং বাড়ীঘরেও নিরাপদ বোধ করছেন না। মূলত সরকারের সদিচ্ছার অভাব, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপতিত্বের কারণেই দেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে মারাত্মক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বস্তুত, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। তাই জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে জনগণের ভোট প্রদানকে নির্বিঘ্ন করার মাধ্যমে সরকারের সকল অশুভ উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।