গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়াকে রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে এবং হাতিরঝিল থানা পূর্বের সেক্রেটারি খন্দকার রুহুল আমীনকে ঢাকার নয়াপল্টনস্থ কর্মস্থল থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে অস্বীকারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে আটককৃতদের সন্ধান সহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম ।
এক বিবৃতিতে মহানগরী উত্তর সেক্রেটারি বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। জনগণ তাদেরকে ভোট দেবে না বলেই তারা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এজন্য তারা দেশের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকেই দলীয়করণ করে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশনকে পরিণত করা হয়েছে আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে কিন্তু দেশপ্রেমী জনতার জাগরণে সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে জনগণের উপর দলন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন ক্ষমতা রক্ষার জন্য পেশী শক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তারা বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য প্রতিনয়ত না ধরনের ফন্দি-কৌশল করছে। তার সাথে যোগ হয়েছে গায়েবী মামলার নতুন ফেৎনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি জোরদার হলেও সরকার পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচনী ময়দানকে অসমতল করে তুলছে। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, গুম ও অপহরণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গত ২৯ শে নভেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার জোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া ও নয়াপল্টন থেকে হাতিরঝিল থানা পূর্বের সেক্রেটারি খন্দকার রুহুল আমীনকে ডিবি পুলিশ জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আটককৃতদের পরিবারের ডিবি অফিস সহ সংশ্লিষ্ট সকল থাকায় যোগাযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আটক করার ঘটনাটি পুরোপুরি অস্বীকার করায় তারা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। অথচ তাদেরকে ডিবি কর্তৃক তুলে নেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি তাদেরকে বহনকারী গাড়ীর নম্বরও স্পষ্ট। বস্তুত, প্রকাশ্য দিবালোকে নিরাপরাধ মানুষদের তুলে নিয়ে আবার অস্বীকার করা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী ।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব হলো আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু সরকার অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার জন্য তাদেরকে জনগণের বিরুদ্ধেই লেলিয়ে দিয়েছে। ভিকটিমদের প্রকাশ্য দিবালোকে তুলে নেয়ার পর তা অস্বীকার করা হচ্ছে। এমনকি আটকের পর কয়েকদিন অতিক্রান্ত হলেও আইন অনুযায়ি আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়নি। যা প্রচলিত আইন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। নেতৃবৃন্দ ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া ও খন্দকার রুহুল আমীনকে অন্যায় ভাবে আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে আটককৃতদের সন্ধান সহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
খন্দকার রুহুল আমীনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সুরমার বিবৃতি-
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল থানা পূর্ব সেক্রেটারি খন্দকার রুহুল আমীনকে ঢাকার নয়াপল্টনস্থ কর্মস্থল থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে অস্বীকার করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ, অবিলম্বে তার সন্ধান সহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন ভিকটিমের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সুরমা।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত ২৯ নভেম্বর তার স্বামী খন্দকার রুহুল আমীন নয়াপল্টস্থ নিজ অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিকাল ৩.৪৫ টায় সাদা পোষাকধারী ডিবি পুলিশ তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি শিশুসন্তানসহ ডিবি অফিস, হাতিরঝিল, রমনা ও পল্টন থানায় যোগযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার স্বামীকে আটক করার ঘটনাটি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষকে তুলে নিয়ে আবার অস্বীকার করা মানবাধিকার ও আইনের শাসন পরিপন্থী বলে দাবি করেন তাহমিনা আক্তার সুরমা।
তিনি আরও দাবি করেন, তার স্বামীকে আটক করার পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। এমনকি তাকে এখনো আদালত তথা আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়নি। যা প্রচলিত আইন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি একান্ত মানবিক কারণে অবিলম্বে তার স্বামী খন্দকার রুহুল আমীনের সন্ধান ও আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার প্রতি আহবান জানান।
যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়ার পরিবারের বিবৃতি-
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়াকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়ার বড় বোন ডা. ফেরদৌসী জানিয়েছে, গত ২৯ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় কাওরান বাজার এলাকা থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। এ সময় এক ব্যক্তি নিজেকে ডিবির এসি শাহাদাত বলে পরিচয় দেন। ব্যারিস্টার যোবায়ের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র।