১. মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক এবং মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সমাজের সর্বস্তরের মানুুষের কাছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (১) অনুযায়ী জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা এবং অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) অনুযায়ী চিকিৎসার মৌলিক উপকারণ পৌঁছে দেয়া হবে।
২. অঞ্চল, গোত্র, ধর্ম-বর্ণ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে।
৩. UH & FWC কে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার `First referal center’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গ্রাম,ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার সহজ লভ্যতা নিশ্চিত করা হবে। এতে পর্যপ্ত জনবল মানসম্পন্ন উন্নত ও ব্যবহারোপযোগী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি,ঔষধ ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
৪. প্রতিরোধযোগ্য মাতৃ মৃত্যুর হার (MMR) এবং শিশু মৃত্যুর হার (IMR) কমাবার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো হবে। এজন্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সন্তোষ জনক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যত শীঘ্র সম্ভব প্রতিটি গ্রামে নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত এসব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
৫. জাতীয় প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নের সামগ্রিক কার্যক্রমকে একই কাঠামো ও সমন্বিত কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
৬. আর্সেনিক দূষন জনিত রোগ প্রতিরোধে আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা সমূহ যথাযথ চিহ্নিত করা , জনগণকে সচেতন করা এবং পানির বিকল্প উৎস সন্ধানের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালানো হবে।
৭. শহর ও গ্রামের জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ,স্বাস্থ্য সম্মত পয়ঃ প্রণালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮. নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য শাস্তির বিধান রেখে এসব আইনকে সংশোধন করা হবে। সমন্বিত খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে, যাতে নিন্মমানের ও ভেজাল খাদ্য এবং ঔষধ থেকে জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
৯. হাসপাতাল বর্জ্যরে নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ও ব্যয়-সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। হাসপাতাল এলাকার সন্নিহিত স্থান সমুহে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিত প্রয়াস চালানো হবে।
১০. দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও অসহায় পরিবার সমূহকে স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত করে শিশু ও মহিলাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
১১. সরকারী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এজন্য হাসপাতাল সমূহের ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও প্রদত্ত সেবার মান সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। জনগণ যাতে সরকারী হাসপাতালের সুযোগ সুবিধার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার যাতে করতে পারে সে জন্য জনগণকে অবহিত, সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা হবে।
১২. মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল/ক্লিনিক সমূহের নিয়ন্ত্রন পরিচালনা ও সেবার মান সম্পর্কে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও নিয়ম নীতির প্রচলন করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করা হবে ।
১৩. জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৪. দূর্যোগ কবলিত জনগণের কাছে জরুরী সহায়তা হিসেবে স্বাস্থ্য সেবা, ঔষধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। দূর্যোগ প্রবণ এলাকা সমূহে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে।
১৫. প্রতিরোধযোগ্য রোগ (preventable disease) সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হবে। রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে Surveillance এর মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচীর সমন্বয় সাধন করা হবে।
১৬. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়কে পাঠ্যসূচীর অর্ন্তভূক্ত করা ও প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সকল টিকাদান কর্মসূচীতে সকল শ্রেণীর জনগনের অংশ গ্রহণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৭. শিল্প কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শিল্পমালিক ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হবে।
১৮. মানসিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়ো-বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করা হবে।
১৯. দেশের অভ্যন্তরে সবরকম রোগের আর্ন্তজাতিক মানের সন্তোষজনক চিকিৎসা ব্যবস্থার আয়োজন করার চেষ্টা করা হবে।
২০. দূরারোগ্য, জটিল এবং গরীব রোগীদের সাবসিডি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারী হাসপাতাল সমূহের সমাজ কল্যাণ তহবিলকে জোরালো করা হবে।
২১. এলাকাভিত্তিক ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়া এবং যক্ষা ও ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষা (MDR-TB)প্রতিরোধে গবেষণা ও নির্ণয়ে সহযোগিতা করা হবে এবং এসব রোগের চিকিৎসা জনগণের কাছে অধিকতর সহজলভ্য করা হবে।
২২. WHO ঘোষিত Neglected tropical disease (NTD) এর মধ্যে যেসব রোগের আমাদের দেশে প্রাদুর্ভাব বেশি যেমন- ডেঙ্গু, কুষ্ঠ,ফাইলেরিয়া,মাটি বাহিত কৃমির উপসর্গ ইত্যাদি প্রতিরোধ
২৩. ঔষধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন এবং কার্যকর নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ঔষধের ক্রয় সাধ্য মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর ঔষধ স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।
২৪. কালাজ্বর , ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষা প্রভৃতি রোগের কার্যকর ঔষধ (যেমন-Inj.Amphotericin B) ইত্যাদি স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের জন্য সহযোগিতা করা হবে।
২৫. অনুনমোদিত, ভেজাল ও নকল ঔষধের উৎপাদন, সংরক্ষন, বিতরণ ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে ।
২৬. কিউরেটিভ হেলথ কেয়ার এর বাজেট বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে।
২৭. অসংক্রামক রোগের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা ও অকাল মৃত্যু হ্রাস করার জন্যে সমন্বিত উপায়ে সকল পর্যায়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সরকারী ও বেসরকারী খাতের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রধান প্রধান অসংক্রামক ব্যধি সমুহ যেমন: হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রভৃতি সর্ম্পকে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও জীবন ধারা পরিবর্তনের কাজে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
২৮. সংক্রামক রোগ যেমন: শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, ডায়ারিয়া, ডেঙ্গু , যক্ষা প্রভৃতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনের বর্তমান কর্মসূচী জোরদার এবং আরও সম্প্রসারণ করা হবে।
২৯. চিকিৎসা সেবা সহ স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য খাতের গবেষণা ও সেবা প্রদান ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়াসকে শক্তিশালী করার জন্য বিশ্ব ও আঞ্চলিক তথ্য নেটওয়ার্কের সাথে কার্যকর সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৩০. ধূমপান ও মাদকাসক্তি দূরীকরনে সচেতনতা এবং কঠোর ও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩১. HIV/AIDS এবং STI(sexually transmitted infections) নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সকল ধর্মীয় নেতা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। ব্যাপক প্রচারাভিযান চালিয়ে জনগণকে ধর্মীয় মূল্যবোধে ও সংযত জীবনযাপনে দীক্ষিত করা হবে।
৩২. তৃণমূল জনগণের দরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌছাবার লক্ষ্যে এ খাতকে দূর্নীতিমুক্ত করা হবে।
৩৩. দূর্ঘটনা, আঘাত প্রাপ্ত, পোড়া রোগী ও সহিংসতার শিকার নারীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারী সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
৩৪. জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে।
৩৫. নব-আবির্ভুত যেমন- SARS,Avian Flue, Anthrax ও পুনরায় উদ্ভুত রোগসমূহ মোকাবিলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৩৬. সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিজ্ঞান ভিত্তিক ও মানোন্নয়ন করা হবে।
৩৭. চিকিৎসা সেবার সকল ক্ষেত্রে Medical Ethics মানার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
৩৮. প্রয়োজনের ভিত্তিতে চিকিৎসা,শিক্ষাও প্রশিক্ষন কার্যক্রমকে আরো গণমুখী ও যুগোপযোগী করা হবে। চিকিৎসা জনশক্তির শিক্ষাকালীন সময়ে সেবার মান, রোগীর প্রতি সংবেদনশীল আচরণ,মমত্ববোধ ও নৈতিকতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেয়া হবে।