যেহেতু শিক্ষা মানুষের জন্য অতএব, শিক্ষা বিষয়ে ধারণা পেশ করার পূর্বে মানুষের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। মানুষ মূলত: দুটি মৌলিক উপাদানে তৈরী। দেহ ও আত্মা (Body and soul)। অতএব এ কারণে মানুষকে দৈহিক, আধ্যাত্বিক এবং বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন জীব (Physical, Spiritual and rational being) জীব বলা হয়- যা অপরাপর যে কোন সৃষ্ট জীব থেকে সম্পূর্ণ পৃথক মানুষকে তার আধ্যাত্বিকতা ও নৈতিকতার পরিচয় নিয়ে বাস করতে হলে তাকে তার কিছু মৌলিক প্রয়োজন সম্পর্কে জানতে হবে, অর্জন করতে হবে এবং পালন করতে হবে। তবে সকল মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান প্রয়োজন। মানব জাতির ইতিহাসে এটাই প্রমাণিত সত্য। এজন্যই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মদ (সা:) এর প্রতি অবতীর্ণ কোরআনের প্রথম শব্দটিই ছিল শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। ঐ সময়ে সারা দুনিয়া বিশেষ করে আরব বিশ্বে বিদ্যমান অসংখ্য ধ্বংসাতœক ও মানবতাবিরোধী সমস্যা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তায়ালা ৬১০ সালে কোরআন নাজিলের সূত্রপাতই করেন শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন সংক্রান্ত বিষয় দিয়ে। এর অর্থ হচ্ছে সীমাহীন সংকটের মূল কারণই ছিল এবং আছে শিক্ষার সমস্যা এবং শিক্ষাই যাবতীয় সংকট দূরীকরণে শুধু মৌলিক ভূমিকাই রাখেনা বরং তা চালিকা শক্তি (Motivating factor) হিসেবেও কাজ করে। বিশ্ব স্বীকৃত ও বিশ্ব নন্দিত এবং অনুসরণীয় যে সুশিক্ষিত এবং সুসভ্য জাতি মহানবীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল আরব বিশ্বকে কেন্দ্র করে তা মূলত: শিক্ষা সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছিল- সে শিক্ষা আজও একই ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। অতএব, যোগ্যতাসম্পন্ন দায়িত্ববান এবং জবাবদিহিতামূলক ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষার কোনই বিকল্প নেই। আর এ শিক্ষা হতে হবে উপস্থাপিত শিক্ষা ব্যবস্থা। যেহেতু ইসলাম প্রদত্ত শিক্ষাই ব্যক্তি ও জাতি গঠনের একমাত্র পরিচালিকা শক্তি- অতএব, শিক্ষার অর্থ, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং চূড়ান্ত অর্জন সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন।
শিক্ষার গুরুত্ব
জ্ঞান বা শিক্ষার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কিছু জানা, এটি হচ্ছে কোন প্রকার তথ্য, দক্ষতা, বা উপলব্ধি যা চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা হয়ে থাকে। জ্ঞানের রয়েছে তার নিজস্ব উৎস। এ উৎস বিভিন্ন ধর্ম, দর্শন ও জাতিতে ভিন্নতর। ইসলাম ছাড়া অপরাপর সকল ধর্ম ও দর্শনে জ্ঞান বা শিক্ষার উৎস হচ্ছে শুধুমাত্র মানবীয় চিন্তা চেতনা, অর্ন্তজ্ঞান (intuition) অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান (empirical experimental knowledge)- এর অর্থ হচ্ছে অভিজ্ঞতালব্ধ না হলে গবেষণালব্ধ না হলে কোন জানা জিনিস বা দক্ষতা জ্ঞান বা শিক্ষা হিসেবে গণ্য হবে। এ প্রত্যয় ইসলামে সমর্থিত নয়। কারণ ইসলামী দর্শনে আল্লাহ তায়ালা, নিজেই জ্ঞানের উৎস- যার উপস্থিতি বিদ্যমান আল কোরআন ও আল হাদিসে। তবে অভিজ্ঞতা এবং গবেষণালব্ধ তথ্যকে ইসলাম বর্জন করেনি বরং এগুলোকে গৌন উৎস (Secondary Source) হিসেবে গ্রহণ করেছে। অতএব, ইসলামী দর্শন বা ইসলামী আইনে আসমানী তথ্য এবং মানবীয় অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের সমন্বিত যোগফলই হচ্ছে শিক্ষার উৎস। শিক্ষা মূলত একটি মৌলিক দাবী এবং মৌলিক চাহিদা এর অভাব মূলত: মানবতার প্রধান সমস্যা। পবিত্র কোরআনের যাত্রা শিক্ষাগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ের মাধ্যমে শুরু হওয়াই এর সত্যতা বহন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে:
“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবাধা রক্ত থেকে। পড়, তোমার প্রভু বড়ই দয়ালু।। তিনি শিখায়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না এবং তিনি কলমের সাহায্যে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। ” ( আল কোরআন, আল আলাক, ৯৬:১-৫)
অজানা জিনিস যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন- তিনি হলেন মানুষের মনিব আল্লাহ তায়ালা। জ্ঞানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে যিনি কলম দ্বারা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনিই হচ্ছেন জ্ঞান বা শিক্ষার উৎস। নবীদের তিনি প্রেরণ করেছেন শিক্ষকের ভূমিকায়। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মদ (সা:) বলেছেন, “শিক্ষা অর্জন সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।” (মুসলিম কিতাব: ইলম)
শিক্ষার উদ্দেশ্য
শিক্ষা অর্জনের বিভিন্নমূখী উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এসব হচ্ছে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন, চাহিদা ও কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে নিবেদিত। তবে মৌলিকভাবে এবং সাধারণ অর্থে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব হচ্ছে আতœার পরিশুদ্ধি করে একজন শিক্ষার্থীকে অনুগতশীল ও জবাবদিহীমূলক শিক্ষার্থী গঠন করা। এ উদ্দেশ্যকেই পবিত্র কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে: “আমি মানুষ ও জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার এবাদত করার জন্য।”- (আল কোরআন, আল যারিয়াত ৫১:৫৬), এ প্রসঙ্গে মহানবীর (সা:) নিদের্শনা হচ্ছে: আমাকে পাঠানো হয়েছে যাতে আমি (মানব) চরিত্রকে এর উন্নত শিখরে পৌঁছে দেই।” (সহীহ বোখারী)।
অতএব, মানবজাতি সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই যেখানে আল্লাহর এবাদত করা অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া বিধানকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও বিভাগে অনুসরণ করা- সেক্ষেত্রে শিক্ষার মূল টার্গেটই হবে আল্লাহর অনুগতশীল মানবমন্ডলী সৃষ্টি করা। আর মহানবীর (সা:) প্রধান কাজ হচ্ছে মানবচরিত্রকে এর উন্নত আসনে পৌছে দেয়া। চরিত্র উন্নয়নের অর্থ হলো মানবাতœাকে পাক-পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে এমন নির্মল করা, যে আতœায় থাকবেনা কালিমার চিহ- যে আতœা তৃপ্তি ও প্রশান্ত লাভ করবে- তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর স্মরণে ও আনুগত্যে। আর এমন পরিশুদ্ধ আত্মাই জন্ম দেবেও অনুশীলন করবে নির্মল, ত্র“টিমুক্ত অপরাধমুক্ত, দুণীর্তিমুক্ত কর্ম আর এমন আত্মার অধিকারীর ললাটেই লিপিবদ্ধ আছে সাফল্য। অনুগত মানব মন্ডলী গঠনের লক্ষ্য মহানবীর (সা:) প্রতি প্রদত্ত কয়টি মৌলিক দায়িত্বের কথা পবিত্র কোরআনের ভাষায় বলা হচ্ছে এভাবে: (ইব্রাহীম (আ:) বললেন)- “হে প্রভূ! এদের মধ্য স্বয়ং এদের জাতি থেকে এমন একজনকে নবী হিসেবে পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত পাঠ করে শুনাবেন, এদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেবেন এবং এদেরকে পবিত্র-পরিশুদ্ধ করবেন।” (আল-কোরআন, আল বাক্বারাহ: ২:১২৯, ১৫১)। মূলত: কোরআন ও হিকমাতের জ্ঞানসম্পন্ন একজন ব্যক্তিই হবে পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী। আর এ পরিশুদ্ধ (Purified Man)মানুষই হবে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন, আমানতদার, ধর্মভীরু, ধৈর্যশীল, সংযমশীল, মিতব্যয়ী, কঠোর পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী, নির্ভরযোগ্য, মধ্যমপন্থী সর্বোপরী জবাবদিহী (answerable) , স্বচ্ছ ও নির্মল-যার উপর ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্ভর করতে পারে। এ জাতীয় শিক্ষার্থী হবে সৎপথে স্বয়ং চালিত- সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা না হয়ে এরা হবে জাতীয় সম্পদ। আর এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল লক্ষ্য।
শিক্ষার স্তরবিন্যাস ও ব্যয়ভার
প্রচলিত পদ্ধতি ও কারিকুলামের আলোকে শিক্ষা শুরু হয় ৪-৫ বছর বয়স থেকে এবং বিভিন্ন স্তরে এসে এর সমাপ্তি ঘটে। ইসলামী আইনের বা শরীয়া’র এটা একটা মৌলিক কর্ম। আর এ জন্য ইসলামে ৪-৫ বছর অপেক্ষা নয় বরং গর্ভ ধারণের সময় থেকে, জন্মগ্রহণের পরপরই আজান ও ইকামত দানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়ে যায়। গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে পিতা- মাতার কর্তব্য, মায়ের স্বাস্থ্য ও চরিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে। সুস্থদেহী সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে তা একান্ত উপাদেয়। যেহেতু সুশিক্ষাই মানব জীবনের শুরু ও শেষ- অতএব,্ ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে। শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা ও পরিবেশ অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে শিশু, প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা, পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা (Post Higher) এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার স্তর বিন্যাস করা যেতে পারে। জনম-মৃত্যু পর্যায় শিক্ষা সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সা:) বলেন, “শিক্ষাগ্রহণ কর দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত।” নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই শিক্ষা গ্রহণ হবে বাধ্যতামূলক। তবে অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার দুটো পর্যায় রয়েছে-যার একটি অর্জন সকলের জন্য বাধ্যতামূলক (Individual obligation) এবং সমাজের কতিপয় লোকের জন্য বাধ্যতামূলক (Social obligation) . বাধ্যতামূলক শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত থাকবে ঈমান, ইসলাম, তাওহীদ, রেসালাত, আখেরাত, আখলাক, হারাম-হালাল, কোরআন, সুন্নাহ এবং শান্তিপূর্ণ জীবন পরিচালনার সংক্রান্ত বিষয়াবলী। আর সামাজিক বা দলগত (Social Collective obligation) শিক্ষা হচ্ছে বিশেষায়িত (Specialized education) শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, মেডিসীন, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞান প্রভৃতি। মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও একই স্তর কার্যকর করা যেতে পারে। শিক্ষাব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে ফ্রি করা যেতে পারে। উচ্চ ও জীবনভর শিক্ষাকেও ফ্রি করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারী বেসরকারী স্কলারশীপ অথবা শিক্ষা অনুদান ও ঋণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
শিক্ষার্জনের চূড়ান্ত অর্জন (End Result of Education)
চূড়ান্ত ও প্রত্যাশিত অর্জনের বিষয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনের রয়েছে ভিন্নতা। সেকুলার, স্যোসালইজম, কম্যুনিজম, ক্যাপিটালইজম, জড়বাদ (Matenalism) এর লক্ষ্য হচ্ছে এর স্ব স্ব আদর্শের স্বার্থক অনুসারী তৈরী করা- যে অনুসারীরা হবে জড়বাদী, প্রগতিশীল, ধর্মহীন এবং বাধাধরা নৈতিকতার শৃংখলমুক্ত- তথা মুক্ত চিন্তার অধিকারী। এ ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষার টার্গেট গ্র“প হচ্ছে সকল মানবসমাজ। কেননা ইসলাম হচ্ছে সার্বজনীন মতাদর্শ (Universal Ideology) এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে একজন ভাল আইনমান্যকারী নাগরিক সৃষ্টি করা। ইসলাম প্রদত্ত শিক্ষার মাধ্যমে একজন মুসলিম তার প্রভূ আল্লাহর অর্থবহ আনুগত্য করতে শিখবে এবং অমুসলিমগণ করবে তাদের স্বস্ব দেবতার আনুগত্য। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলেই সক্ষম হবে- তাদের আতœশুদ্ধি অর্জন করতে তাদের স্ব স্ব ধর্ম কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ম-নীতির মাধ্যমে। মুসলিমের আতœশুদ্ধি অনুশীলন তাকে নিয়ে যাবে তার প্রভূর আরও সান্নিধ্যে। তেমনি হবে তা অমুসলিমদের জন্য তার দেবতার দিকে। আতœশুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকই পারে অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে। তবে অমুসলিমদের কোনভাবেই ইসলাম গ্রহণ বা ইসলামী পদ্ধতিতে আতœশুদ্ধিকরণে বাধ্য করা হবে না।
অতএব, চূড়ান্ত অজর্ন হিসেবে ইসলামের শিক্ষা ও কর্মে যাতে শিক্ষার্থীগণ নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করে এবং আতœস্থ করতে পারে যেমন- প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে পরিচিত হয়-
* তাওহীদী দর্শন অর্থ্যাৎ আল্লাহর একত্ববাদে যেন বিশ্বাস করতে পারে।
* নবুয়্যাতের প্রতি সাধারণভাবে এবং মুহাম্মদ (সা:) এর ব্যাপারে যেন বিশেষভাবে জানতে পারে।
* আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবের সাথে বিশেষ করে আল কোরআনের সাথে পরিচিত হতে পারে।
* পরকালের প্রয়োজন, এর অস্তিত্ব ও বাস্তবতা সম্পর্কে পরিচিত হওয়া।
* ইসলামের বাহ্যিক ও ব্যবহারিক দিকের সাথে পরিচিত হওয়া এবং মুসলিমের ক্ষেত্রে একজন প্রাকটিসিং মুসলিম হওয়া।
* যাবতীয় অনৈতিক কর্ম ও সংস্কৃতির মোকাবেলায় ইসলামী আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পন্ন সংস্কৃতি চর্চা ও অর্জনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা।
* আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান এবং অর্জিত জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়া।
* শিক্ষাসহ সকল দর্শনের সর্বশেষ উন্নয়নের অবস্থা সম্পর্কে জানা।
* বিশ্ব পরিস্থিতি এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
* ইসলাম ও তুলনামূলক বিষয়ে জ্ঞানের সকল শাখায় সাফল্যজনক বিচরণ করা।
* স্মরণ অতীতকাল থেকে নিয়ে অদ্যাবধি পর্যন্ত চলে আসা জ্ঞানের সকল বিষয় সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা।
* অতীত ও বর্তমান সময়ের উদ্ভূত সকল প্রশ্নের ইসলামিক জবাব দানে সক্ষম হওয়া।
* যাবতীয় কর্মে জবাবদিহিতার মানসিকতা ও যোগ্যতা অর্জন করা ।
* আল্লাহ ভীতি অর্জন করার মত যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া এবং অমুসলিমদের ক্ষেত্রে স্ব-স্ব দেবতা পুজনীয় শিক্ষার্থী হওয়া।
* দোষ, ত্র“টিমুক্ত আত্মার অধিকারী, মধ্যমপন্থী, বিনয়ী ও অনুগত আচরণের অধিকারী হওয়া। এটা এ জন্য যে, নির্মল ও নিষ্কন্টক আতœাই হচ্ছে যাবতীয় সুকর্ম সম্পাদনের মাধ্যম এবং দুষ্কর্ম মুক্ত থাকার উপায়। অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে প্রয়োজন ত্র“টিমুক্ত আতœা (Spirit/ Soul) আর অনুরূপ আতœা গঠনের কাজই হলো ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলকাজ।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি
যে কোন নীতি বা আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন একটা বৈধকর্তৃত্বশীল সত্ত্বা। আর সরকারই হলো সেই কর্তৃপক্ষ। ইসলামের কিছু সীমিত দিক ব্যক্তি ও ব্যক্তি সমষ্টি কর্তৃক বাস্তবায়ন করা যায় বটে তবে এ বাস্তবায়নের সঠিক ও চূড়ান্ত দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠিত ও বৈধ সরকারের শিক্ষা বাস্তবায়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে শিক্ষানীতি প্রণয়ন, শিক্ষাক্রম (Syllabus / Curricular) তৈরী, শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পরীক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষাপত্র মূল্যায়ন ও ফল প্রকাশ, শিক্ষক-কর্মচারী কর্মকর্তার বেতন ভাতা, পদায়ন, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, ছাত্র ভর্তি সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা। যে কোন সরকারই এজন্য দায়িত্ববান। তবে ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ইসলামী সরকারের।
নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলাম বর্জন
যে সরকারের দলীয় ও রাষ্ট্রীয় দর্শনই ইসলামমুক্ত এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলাম অনুপস্থিত সে সরকার ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে যাবে কেন? অতএব, খুঁটি নাটি নয় পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে ইসলামে আদর্শে বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ইসলামের শিক্ষার কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য
ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই একটা ভিন্নতর বিষয়। এর প্রতিটি দিকই বিশেষ বৈশিষ্ট্্েযর দাবিদার। এর কয়েকটি হলো:
১.ইসলামের শিক্ষায় ও জ্ঞান ব্যবস্থায় আল্লাহ-তায়ালাই হচ্ছেন শিক্ষাসহ সকল বিষয়ের উদগাতা (Originator).
২.ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত (Revealed source) উৎস এবং মানবীয় গবেষণা লব্ধ উৎসের সমন্বয়ক / সমাহার।
৩.আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন এর প্রধান ও অদ্বিতীয় উৎস (Originator)| কারণ মানবীয় উৎস ও মূলত আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও অনুশীলনের ফল।
৪.জ্ঞান বা শিক্ষা অর্জন একটি মৌলিক ও বাধ্যতামূলক কর্তব্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য।
৫.বাধ্যতামূলক শিক্ষা সরকারী খরচে অবৈতনিক হতে হবে।
৬.শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রধান মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত থাকবে।
‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক দল বিধায়- এই দল ইসলামের আলোকে প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থাকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য শিক্ষা ব্যবস্থা বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। জামায়াতে ইসলামী গণমানুষকে নিয়ে ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে- এর প্রথম এবং প্রধান কাজই হবে ইসলামের দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। যেমনটি করেছিলেন আল্লাহর নির্দেশে মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) তার প্রতিষ্ঠিত মদীনাভিত্তিক রাষ্ট্রে।