বাংলাদেশের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশ্বের মুসলমানদের এক দশমাংস বসবাস করেন এই দেশে। এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার-হাজার ওলী আউলিয়া ও ইসলামী ব্যক্তিদের স্মৃৃতি চিহ্ন। ইতিহাস থেকে প্রমাণিত সত্য যে, এ অঞ্চলের মানুষ রাসুল (সা.) এর একান্ত প্রিয় সাহাবী ও অন্যান্য মনিষীদের সহচার্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের চরিত্র মাধুর্য্য ও আন্তরিকতায় এই এলাকার সহজ সরল এবং নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে এসে শান্তির সন্ধান পেয়েছিলেন। ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সবখানেই ইসলাম তার নিজস্ব গুণেই উল্লেখযোগ্য স্থান দখন করে নেয়। শত ঘাত প্রতিঘাতেও এ অঞ্চলের জনগণ তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিলীন হতে দেয়নি। শাহজালাল, শাহমাখুদম, তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহর মতো সাহসী ব্যক্তিরা প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠার সাথে এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতিসত্ত্বা টিকিয়ে রাখতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইসলামী মুল্যবোধ টিকিয়ে রাখার উপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করে। অতীতের মতো বর্তমানেও আমাদের মূল্যবোধ ধ্বংসের কাজ চলছে পরিকল্পিতভাবে। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুপ্রবেশের জন্য। তরুন প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ মদ, জুয়া আর নেশায় মত্য। গ্রাম বাংলার ছোট-ছোট চা-এর দোকানগুলোও আজ সিনেমা হলে পরিণত হয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা তাদের জীবনের মূল্যবান কাজের সময়টা পার করছে এ সবের মাঝে ডুবে থেকে। আমাদের সম্মানিত মায়ের জাতি নারীকে কেউ কেউ পন্য হিসাবে ব্যবহার করছে মিডিয়ায়। মোট কথা শুধুমাত্র ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের নামটি রেখে ভিতর থেকে এর অন্তরাত্মা ধবংসের প্রচেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দায়িত্বশীল সংগঠন হিসাবে সর্বগ্রাসী এই আগ্রাসনের ব্যাপারে সজাগ। এজন্য সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছে। এগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো-
১। ইসলামের কল্যাণময় বাণী প্রচার ও মূল্যবোধ বিকাশের জন্য কুরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য প্রকাশ।
২। নতুন প্রজন্মকে আদর্শবান রূপে গড়ে তোলার জন্য শিশুতোষ প্রকাশনা, অডিও ভিডিও প্রডাক্ট নির্মাণ ও ছড়িয়ে দেয়া।
৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদসহ উত্তরসূরী কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও নতুন নতুন লেখায় উৎসাহ প্রদান।
৪। সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেশব্যাপী সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠন বিস্তার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
৫। জাতীয় দিবস সমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন।
৬। মাহে রমজান, রবিউল আউয়াল, ঈদ ইত্যাদি দিবস সমূহ ব্যাপকভাবে উদ্যাপন।
৭। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জাতি গঠনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারে উদ্বুদ্ধ করা।
৮। সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে পেশাদারীত্ব মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা সংশ্লিষ্টদের যোগ্যতা বিকাশে সহযোগিতা করা।
৯। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, র্যালী ইত্যাদির আয়োজন করা।
১০। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধ করা।
১১। সাহিত্য সংস্কৃতির সকল শাখা ও বিভাগে ইতিবাচক কর্মসূচীর বিস্তার ঘটানো।
বাাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উল্লেখিত কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত করতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ তার ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ নিয়ে টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।