বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, পবিত্র আশুরা মুসলমানদেরকে ইতিহাসের এক বিয়োগান্তক ও শোকাবহ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরি সালে ১০ মহররমের এই দিনে ইরাকের কুফা নগরীর অদূরে কারবালা প্রান্তরে রাসুল (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিদ্র ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.) ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গী সহ নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এমন আত্মোৎস্বর্গের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। তিনি পবিত্র কারবালার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়, অবিচার ও জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম প্রমূখ।
এম এস উদ্দিন বলেন, উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়ার কারণেই হযরত হোসাইন (রা.) এর সাথে সংঘাত অনিবার্য করে ওঠে। সম্মূখ যুদ্ধে সুবিধা হবে না জেনেই স্বৈরাচারি ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা.) এর সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। একটি সমঝোতায় পৌঁছার জন্য তাকে কুফায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু পথিমধ্যে ইমাম হোসাইন, তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীরা ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ইমাম হোসাইন (রা.) শত্রুবাহিনীর ওপর বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মর্যাদাপূর্ণ আশুরা বিভিন্ন ঘটনাপুঞ্জে সমৃদ্ধ হলেও সর্বশেষে সংঘটিত কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতই এ দিবসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মূলত আশুরার এই দিনটিই ইতিহাসে অধিক স্মরণীয়।
তিনি বলেন, আশুরা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ১০ মহররম আশুরার দিনেই আল্লাহ রাববুল আলামিন আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাওহে মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টি জীবের আত্মা সৃজন করেছেন। হযরত আদম (আ.) এর সৃষ্টির দিনও ছিল ১০ই মুহাররম, হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা ৮০জন সহচর নিয়ে যেদিন নিরাপদে জুদী পর্বতে অবতরণ করেছিল সে দিনটিও ছিল ১০ই মুহাররম। এভাবে হযরত ইউসুফ (আ.) এর কুপ থেকে উদ্ধার, আইয়ুব (আ.) এর আরোগ্য লাভ, হযরত ইউনুস (আ.) এর মৎস উদর হতে মুক্তি লাভ, মূসা (আ.) এর পরিত্রাণ, হযরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলেন এই দিনে। তাই আশুরার দিন বিভিন্ন দিক থেকেই গুরুত্ব বহন করে।
তিনি আরও বলেন, মুসলিম উম্মাহ আজ ইসলামের সেই গৌরবৌজ্জল অতীত ভুলে যেতে বসেছে। ত্যাগ, নিষ্ঠা ও কুরবানীর শিক্ষা হারিয়ে আত্মপুঁজা ও ইন্দ্রয়পরায়নতায় লিপ্ত হয়েছে। সবকিছুই এখন অশুভ শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। একটি অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসীবাদী শক্তি দেশ ও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। তারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের নামে গণমানুষের সাথে প্রতারণা ও প্রহসনের আশ্রয় নিচ্ছে। তাই এই স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে পবিত্র আশুরার চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে। তিনি অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।