মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভাষানটেক থানা আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর আলাউদ্দীন মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা ইকবাল হোসাইন, ওমর ফারুক ও মিজানুর রহমান প্রমূখ।
ড. এম আর করিম বলেন, সাম্য, অবাধ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরেও আমরা স্বাধীনতার ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারিনি। সাম্যের পরিবর্তে অসাম্য, গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ, আইনের শাসনের নামে অপশাসন-দুঃশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সীমাহীন বৈষম্যসহ দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে দাসানুদাসে পরিণত করা হয়েছে। যা কোন স্বাধীন, সার্বভৌম ও কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি বিজয় অর্জনের জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং যুদ্ধাহত-পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। মাত্র ৪ টি রাষ্ট্রায়াত্ত পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করে দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল। মূলত জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই তাদেরকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তারা ২০০৮ সালের পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে বহুধাবিভক্ত করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অপশাসন-দুঃশাসনের কারণে সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।
সরকারের জামায়াত বিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। সরকারের অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই দেশ বহির্বিশ্বের স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে। দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আসলে সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তিনি ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।