বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, অনেক ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতালিপ্সা, অহমিকা, বিভেদের রাজনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দি পরেও এর সুফল আজও আমাদের কাছে অনেকটাই অধরায় রয়ে গেছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদেরকে অনৈক্য, বিভেদ ও নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৭৫৭ সালের পলাশী ট্রাজেডির মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা অস্তমিত হয়। ফলে বাংলায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অপশাসন ও দুঃশাসন শুরু হয়েছিল। দেশকে বিদেশী শাসনমুক্ত করতে আব্দুল ওয়াহাব, হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর ও ফকির মজনু শাহ সহ বিখ্যাত মুসলিম মনিষীগণ অসামান্য আবদান রাখেন। ফলে ইংরেজ সরকার ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি গ্রহণ করলে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করে। খুব সঙ্গত কারণেই ১৯৪০ খৃষ্টাব্দের ২৩শে মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এক সম্মেলনে ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক’ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ও ১৫ই আগষ্ট ‘পাকিস্তান’ ও ‘ভারত’ নামে দু’টি পৃথক জাতিস্বত্ত্বার উম্মেষ ঘটে। কিন্তু পাক শাসকগোষ্ঠীর অহমিকা, অদূরদর্শিতা ও ব্যর্থতার কারণেই পাকিস্তান রাষ্ট্রকে অখন্ড রাখা সম্ভব হয়নি বরং ১৯৭১ সালে এক সর্বাত্মক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের এক নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। বিশ্ব ইতিহাসে এতো চড়া মূল্য দিয়ে আর কোন জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেনি।
তিনি বলেন, সাম্য, মৈত্রী, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হলেও মহলবিশেষের নেতিবাচক ও অপরাজনীতির কারণেই তা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র পুনর্গঠনে প্রয়োজন ছিল বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী শাসক গোষ্ঠীর অপরাজনীতির কারণেই তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীনরা এখনো গোটা জাতিকে বহুধাবিভক্ত করে রেখেছে। দেশের স্বার্থকে জালাঞ্জলি দিয়ে ভিন দেশের স্বার্থে বিভিন্ন চুক্তি করতে চলছে যা দেশ ও স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, খুন, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে দেশ বিশ^ মানচিত্রে এক রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। দুঃশাসন, দলীয়করণ, বাকস্বাধীনতা হরণ গোটা দেশকেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচেছ। ফলে বহির্বিশে^ আমাদের দেশ এখন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই অবমাননাকর। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় বর্ষীয়ান আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমীরে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও অধ্যায়ক মিয়া গোলাম পরওয়ার সহ জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। কিন্তু দলন-পীড়ন চালিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, আর কারো হবেও না। তিনি আটক আমীরে জামায়াত মকবুল আহমাদ সহ সকল রাজবন্দীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
কাফরুল উত্তর
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে কাফরুল উত্তর থানার উদ্যোগে নগরীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন থানা আমীর আব্দুল মতিন খান। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা খান হাবিব মোস্তফা, আব্দুল আহাদ জিহাদী, নূরুস সফা হাসান ও ইসমাঈল খান প্রমূখ।