পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট আর কমিশন বাণিজ্য হয়েছে।
আর এই লুটপাটের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন তার সরকারের প্রথম পছন্দের ব্যক্তি সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনিও ৫ আগস্টের পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তিনি দেশে আছেন নাকি কারো সহযোগিতায় দেশত্যাগ করেছেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতে পারছেন না। শুধু ওবায়দুল কাদের নন, সড়ক-মহাসড়কে একাধিক মেগা প্রকল্পের নামেও মহা লুটপাট হয়েছে।
আর এই আয়োজনের সাথে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সাবেক একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জড়িত থাকা ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাই নানা প্রকল্প দাঁড় করিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। এই লুটপাটের বেশির ভাগ টাকাই তারা নিরাপদে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর সাথে ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও দলীয় অনেকেই জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো এই মন্ত্রণালয় আঁকড়ে নীরবে লুটপাট চালানোর চেষ্টা করছেন।
বড় বড় মেগা প্রজেক্ট তৈরির নামে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাট কমানোর পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন ক্রয় কার্য সম্পাদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন শতভাগ দেশীয় অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্প এবং পরিচালন বাজেটের আওতায় পিএমপি (মেজর) সংশ্লিষ্টদের ক্রয়ের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ক্রয়কারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো প্যাকেজ দু’টি জেলার মধ্যে বিস্তৃত হলে সংশ্লিষ্ট সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ক্রয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিপত্রে প্রতিটি ক্রয় কার্যক্রমের দাফতরিক (অফিসিয়াল কোস্ট ইস্টিমেট) টেন্ডার ডাটা শিট এবং পার্টিকুলার কনডিশনস অব কন্ট্রাক্টে সন্নিবেশিত শর্তগুলো সংশ্লিষ্ট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। ঠিকাদারকে বিল দেয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কাজের টেস্ট রিপোর্টসহ কাজের পরিমাপ ও পরিমাণ সংশ্লিষ্ট সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করতে হবে। সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা ক্রয় কাজ এবং আউটপুট মূল্যায়ন, সুপারভিশন এবং মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন উল্লেখ করে আরো বলা হয়, প্রকল্প ও পিএমপি (মেজর) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের অন্যান্য দফতরের সাথে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।
গতকাল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৫ বছরে সারা দেশে সড়কের যতগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার বেশির ভাগ কাজই ঠিকাদাররা নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্ধারিত পার্সেন্টেজ (কমিশন) না দিয়ে বিল নিতে পারেননি। এটা সড়ক ভবনে ওপেন সিক্রেট ছিল। তবে কেউ ভয়ে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। কারণ ওবায়দুল কাদেরের সিন্ডিকেট ওই সময় অনেক শক্তিশালী ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীও ওবায়দুল কাদেরের কথার বাইরে সহজে যেতেন না!
পরিপত্রে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর দফতরসহ অধীনস্থ সব দফতরে অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
গতকাল রাতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের সাথে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি করা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।