রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রামের ডিমের পাইকারি আড়তে দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। সে কারণে খুচরা পর্যায়ে কমেছে সরবরাহ। ফলে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাকে এক প্রকার জিম্মি করে প্রতি ডজন ডিম ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একদিন আগেও সর্বোচ্চ ১৯০ টাকা ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে ডিমের নতুন দর নির্ধারণ করেছে সরকার। যা আজ থেকে কার্যকর হবে। এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রতি ডজন ডিম ১৭০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে এই ডিম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি আড়ত বন্ধ। তারা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। যে কারণে সরবরাহ কমেছে। বেড়েছে দাম।
তেজগাঁও ডিম আড়তদার সমিতি সূত্র জানায়, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তার তুলনায় ক্রয় মূল্য বেশি পড়ছে। আর যদি সরকারের মূল্য মেনে ডিম বিক্রি করতে হয় আমাদের ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। যে কারণে আড়ত পর্যায় থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
নয়াবাজারে ডিম কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে ডিমের দাম হু হু করে বাড়ছে। কে দেখবে, কারা নিয়ন্ত্রণ করবে কিছুই জানি না। আর আমার এত বেশি টাকা দিয়ে ডিম কেনার সামর্থ্য নেই। যে কারণে না কিনে বাড়ি ফিরছি।
এদিকে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আজ থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। মঙ্গলবার দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে। নতুন মূল্য কার্যকরের পর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। মহাপরিচালক বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে যাতে বেশি দামে ডিম বিক্রি না করা হয় সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। তারপরও বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে মহাপরিচালক বলেন, উৎপাদন ও ক্রেতার মাঝে বহুস্তর বা মধ্যস্বত্বভোগীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা পর্যায় বাদে অন্যান্য স্তরগুলো বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা, উৎপাদন পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা ও পাইকারি পর্যায়ে ১১.১ টাকা বেঁধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে না পারায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারের আড়তগুলো দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবারের মতো মঙ্গলবারও ডিমের বেশিরভাগ আড়ত বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে খুচরা বাজারে দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার যেখানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে মঙ্গলবারও প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকার বেশি দামে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম নগরীতে মঙ্গলবারও অভিযান পরিচালনা করেছে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স। লাইসেন্স না থাকায় একটি ডিমের দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির অভিযানে কৃষি বিপণন লাইসেন্স না থাকায় একটি ডিমের দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ করা, পণ্যের ওপর মূল্য লেখা না থাকার অপরাধে খলিলুর রহমানের মুদির দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় বাজার তদারকি করা হচ্ছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে কিভাবে দ্রব্যমূল্য নিযন্ত্রণ করা যায়। অভিযানে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিপণন, টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পাহাড়তলী বাজারের আড়তদাররা জানান, মঙ্গলবার সরকার ডিমের দাম আবারও নির্ধারণ করেছে। বলা হয়েছে, বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল-উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা করে কিনতে এবং পাইকারিতে সেটি ১১ টাকা ১ পয়সা করে বিক্রি করতে। কিন্তু উৎপাদক পর্যায় থেকে ডিম কিনতে খরচ পড়ছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৫ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় চট্টগ্রামের ডিমের আড়ত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।