রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরতে গঠিত কমিশনগুলো কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কমিশনগুলো একাধিকবার বৈঠক করেছে। তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য গঠিত ৬টি কমিশনই একাধিকার বৈঠক করেছে। গুমের বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করছে গুম সংক্রান্ত কমিশন। আর দুদক সংস্কারে মতামত আহবান করেছে দুদক সংস্কার কমিশন। অন্যান্য কমিশনগুলোও জনগনের মতামত গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করবে সরকার।
গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের মতো বৈঠক করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সচিবের সাথে বৈঠক করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনের অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে এগুলো দূর করার জন্য প্রস্তাব তৈরি করবেন।
এদিকে গত রোববার রাতে ভার্চুয়ালি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত। সভায় তারা কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের লক্ষ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ চেয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন। গতকাল সোমবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রথম সভা করেছেন। সভা শেষে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীসহ মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ শুরু করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন : বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে গঠিত ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের’ তৃতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কমিশন প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান এ কথা বলেন। এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হকও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন। আজ বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেছেন, বিচার বিভাগের সাথে স্টেক হোল্ডার তথা বিচারকগণ ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করবে কমিশন।
বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, আজ তৃতীয় দিনের মত সংস্কার কমিশন বৈঠকে বসে। কমিশনের কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে এ বিষয়ে এজেন্ডা প্রয়োজন। বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডা ঠিক করা হয়েছে। কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের দেশের অধস্তন আদালতের কার্যক্রমে ত্রুটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, অধস্তন আদালতে মামলা মোকদ্দমার প্রয়োজনে যারা আসেন তারা দিশেহারা হয়ে যান। এখানে নানা হয়রানি ও খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে তা থেকে কিভাবে রিলিফ দেয়া যায় এ নিয়ে কমিশন সুপারিশ করবে। পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদেরকে সহায়তায় লিগ্যাল এইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে কিভাবে আরও সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।
কমিশন প্রধান বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা বিষয়ে আমরা সুপারিশ করবো। সংস্কার কমিশনের কাজই হল সুপারিশ করা।
কোনরূপ আইন বিধি-বিধান তৈরির এখতিয়ার সংস্কার কমিশনের নয়। এটি উপদেষ্টা পরিষদ দেখবে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত গেজেটে ৯০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ দেয়া জটিল হলেও আমরা চেষ্টা করব।
সময় বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের এখতিয়ার বলে মন্তব্য করেন কমিশন প্রধান। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। কমিশন প্রধান বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বদল হয়েছে।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলা কিভাবে করা যায় তা দেখা হবে। সংস্কারের লক্ষ্য হচ্ছে ভাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সংস্কারের ক্ষেত্রে কমিশন যে সমস্ত বিষয় নিরূপণ করবে তা লিখিত আকারে প্রকাশ করা হবে। সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত গেজেটের আলোকে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক হয় ৬ অক্টোবর ও দ্বিতীয় বৈঠক হয় ৮ অক্টোবর। গতকাল হয় তৃতীয় বৈঠক।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। কমিশনের অন্যান্য সদস্য বৈঠকে অংশ নেন।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৩ অক্টোবর গঠন করা হয়।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রথম সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত
সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রথম সভা গত রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুসতাইন বিল্লাহ ও জনাব মো. মাহফুজ আলম অংশ নেন।
কমিশনের সদস্য ড. শরীফ ভুইয়া ভ্রমনে থাকার কারণে অংশ নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করা এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভার শুরুতে গৃহীত শোক প্রস্তাবে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা-উত্তরকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও গত পনেরো বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহিদ এবং আহত ও নির্যাতিতদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
কমিশন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তী কালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের আত্মদানকে স্মরণ করে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে, ‘তাঁদের আত্মত্যাগ ও বীরত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।’
কমিশন নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায় এবং এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে। সভায় কমিশনের কর্মপরিধি ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে খুব শিগগিরই একটি ই-মেইল একাউন্ট এবং দ্রুত একটি ওয়েবসাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে সংসদ ভবন এলাকায় কমিশনের জন্যে কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশনের পরবর্তী বৈঠক আগামী ২১ অক্টোবর ঢাকায় কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিন সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম চিহ্নিত করা হবে – বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটা জাতীয় নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনিয়ম ও ব্যত্যয়গুলো চিহ্নিত করা হবে। এরপর কিছু সুপারিশমালা তৈরি করে উপদেষ্টাম-লীর কাছে উপস্থাপন করবে কমিশন।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান বদিউল আলম মজুমদার।
বিগত তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী অগ্রাধিকার দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই যেসব অনিয়ম, ব্যত্যয় ঘটেছে, এগুলো আমরা চিহ্নিত করবো। ভালো কিছু হয়ে থাকলে সেগুলোও চিহ্নিত করবো। নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা তো একদিনের বিষয় নয়। এটা একটা সাইকেল। এ সাইকেল পর্যালোচনা করে ব্যত্যয় যা করেছে তা চিহ্নিত করে সুপারিশ করবো। স্থানীয় নির্বাচন কখন হবে, এটাও আমাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।
অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবেন কি না এমন প্রশ্নে সুজন সম্পাদক বলেন, আমাদের সুপারিশ থাকবে। তবে সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। আমরা কর্মকর্তা এবং কমিশনের বিষয়ও পর্যালোচনা করবো। আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছি। আমরা একটা ওয়েবসাইট তৈরি করছি। এ ওয়েবসাইট নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সাবডোমেইন হবে। এটা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই করা হবে।
‘না’ ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুই বিবেচনায় নেবো। যত মতামত আসবে তত পর্যালোচনা করবো। নির্বাচন বিষয়ে যে কেউ যে কোনো মতামত দিতে পারবেন। উন্মুক্ত মতামত নেওয়া হবে। আমরা তো নিশ্চিত করতে পারবো না যে কেউ অপকর্ম করবে না। তবে আমরা গার্ডরেল তৈরি করবো। সিঁড়ির পাশ দিয়ে যেমন বেরিয়ার থাকে। কেউ যেন পড়ে না যায়। কিন্তু কেউ যদি ঝাঁপ দিতে চায় তাহলে তো কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো এমন সব সুপারিশ করার, যেন একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়।
দুদক সংস্কারের বিষয়ে পরামর্শ আহ্বান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের লক্ষ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ চেয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন। গতকাল সোমবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত দুদক সংস্কার কমিশন আগ্রহী সবার অভিজ্ঞতালব্ধ সুনির্দিষ্ট পরামর্শ জানতে আগ্রহী।
দুদক সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দুদক সংস্কার কমিশনকে ই-মেইলের মাধ্যমে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরামর্শ পাঠানোর ই-মেইল ঠিকানা: cc.rc2024@gmail.com
‘জনপ্রশাসন সংস্কারে মাঠ পর্যায়ে আলোচনা করবে কমিশন’
সরকারি চাকরিজীবীসহ মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ শুরু করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে কমিটির প্রথম সভা শেষে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের ব্যাপারে আজকে প্রথম মিটিং হয়েছে। জাস্ট পরিচিতির জন্য নিজেদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা বলেছি। সংস্কার নিয়ে তিন মাস কাজ করবো। প্রথম দিন আমরা কীভাবে বলে দেব বাচ্চা ছেলে না মেয়ে হবে? এটা সম্ভব না। আলোচনা করেছি সার্বিক বিষয়ে কী হতে পারে। এখন আমরা এটাকে আস্তে আস্তে প্রক্রিয়াজাত করবো, আগাবো। তিন মাসের মধ্যে করার কথা, কাজেই দুই মাস পরে গিয়ে তখন সত্যিকার অর্থে একটা রূপরেখা পাবো।
কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আলোচনা করবো, বিভিন্ন এলাকায় যাবো। জনগণের কথা শুনবো। স্থানীয় যারা চাকরি করে তাদের কথা শুনবো। চেম্বারের সঙ্গে আলোচনা করবো। এসব আলোচনা করেই আমরা প্রকৃত কাজটি শুরু করবো।’
১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ নেবে গুম সংক্রান্ত কমিশনে
গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ দেয়ার সময় আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে অভিযোগ দেয়া যাবে। এর আগে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ জানানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জোরপূর্বক গুমের ঘটনার ভুক্তভোগী নিজে বা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যেকোনো ব্যক্তি সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। ডাকযোগে বা ই- মেইলেও অভিযোগ জানানো যাবে।
অভিযোগ জানানোর ঠিকানা- গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি, ৯৬, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা-১২১২। ই-মেইল: edcommission.bd@gmail.com
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সরকারের সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের কাজে সরকারের পক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। যার পরিমাণ এতই যে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা কোনো সংস্থার কাছে নেই।
দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত ২৭ আগস্ট ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে ৩ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি। এসময় সংস্থাটি জানায়, এ পর্যন্ত যত ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছেন তার বেশিরভাগ অভিযোগ এসেছে র্যাবের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ডিবি, সিটিটিসি, ডিজিএফআই; এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩ অক্টোবর ডিজিএফআই এর আয়নাঘর ও সিটিটিসি’র ইন্টারোগেশন সেল পরিদর্শন করে সংস্থাটি। তবে কোনো ভুক্তভোগী পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিএফআই এর আয়নাঘরের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে বলে জানায় সংস্থাটি। তবে ডিজিএফআই বিভিন্ন স্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো মুছে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছে গুম সংক্রান্ত কমিশন।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের তলব করা হবে যদি তারা সাড়া না দেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানায় সংস্থাটি। কমিশন ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।