জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গণহত্যার বিচার করতে প্রস্তুত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ভবনের বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হবে। আর শুরুতেই গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করবে প্রসিকিউশন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিক নেতাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলনের সময় সংগঠিত হত্যাকা-ের জন্য ভিক্টিমের পরিবারের পক্ষে দুই শতাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলাও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হবে। অর্থাৎ এসব মামলার বিচার কার্যক্রমও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংগঠিত অন্তত ১৫টি গুমের অভিযোগ তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল (বিচারক নিয়োগ) পুনর্গঠন এবং মাসখানেকের মধ্যে বিচার কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথে সম্প্রতি সাক্ষাৎ শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমরা আশা করি ফুল স্কেলে বিচারকাজ হয়তো মাসখানেকের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা (আইন মন্ত্রণালয়) যখন ট্রাইব্যুালের জন্য জাজ চাইতাম তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলা হতো যে, জাজের অনেক সঙ্কট রয়েছে। এখন আশা করি সে সঙ্কটটা অনেকটা দূর হয়েছে। অনেকজন নতুন জাজ (হাইকোর্টে ২৩ অতিরিক্ত বিচারপতি) নিয়োগ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এখন বিচারক নিয়োগ হয়ে গেলে কাজটার একটা ধাপ শুরু হবে। যদিও ট্রাইব্যুনালের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের যে প্রসিকিউশন টিম আছে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে ৮ অক্টোবর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই গণহত্যার দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। সেই কাজ শুরু হওয়া দরকার। বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ এবং ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের কাজও দ্রুত শেষ হবে বলে তিনি আশা করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বিচার চাওয়া হয়েছে। গত ২ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কারফিউ জারি করার। এমনকি আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত হয় ১৪ দলের বৈঠকে। তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরই গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হয়। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দল হিসেবে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দল- সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ এবং জাতীয় পার্টি-জেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তদন্তপূর্বক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।
গুমের অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি গুমের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুই দফায় প্রায় ১ বছর ৮ মাস গুম করে রাখার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক। অভিযোগ দায়েরের পর তিনি বলেন, আয়নাঘর ছিল শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর হাতিয়ার। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি গুম হয়েছি। ওখানে অনেকে মারা গেছেন। ওখানে গরমে, ভয়ে, আতঙ্কে মারা যাবেন। প্রতিদিন ওখানে চিৎকার হচ্ছে। কান্নাকাটি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি প্রথমে গুম কমিশনে আবেদন করেছি। তারপর ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলাম। আমি গুম হয়েছি শেখ হাসিনার আদেশে। তার চক্রে তারিক সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য যারা আছেন তদন্ত করে বের করতে হবে।