দেশের সবজিবাজার সিন্ডিকেটের দখলে। এতে সরকারের নানা উদ্যোগের পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের আগে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তবেই দাম ক্রেতাদের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় টানা তিন সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। শুধু তা-ই নয়, কাঁচামরিচের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। মুরগি আর মাছের দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না, ভেবে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁপে, পটোল, ঢেঁড়স ও মুলা দাম একমাত্র ১০০ টাকার নিচে রয়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি পেঁপের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া পটোল, ঢেঁড়স ও মুলার কেজি বাজারভেদে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা দরে। এর মধ্যে আছে গোলবেগুন, বরবটি, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, ধুন্দলের মতো সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এসব সবজির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এ দিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে বেড়েছে ক্রেতাদের অস্বস্তি। গতকাল বাজারভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা। আবার কখনো প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ৪০০ টাকারও বেশি দেখা গেছে।
বাংলাদেশ পাইকারি কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, দেশে আসলে কাঁচাবাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেশির ভাগ সবজির দাম বেশি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি অস্বাভাবিক। উত্তরাঞ্চলেরও বেশ কিছু এলাকায় বন্যা হচ্ছে। ফলে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেও সরবরাহ কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সেজন্য উৎপাদন এলাকায় কৃষকরাও এখন তুলনামূলক দাম বেশি নিচ্ছেন।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭৫০ টাকা, খাসি ১০০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজি, সোনালি ২৮০ টাকা কেজি, আলু ৫৫ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা কেজি, দেশী পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এ দিকে আমদানির উদ্যোগ ও শুল্ক কমানোর খবরে গত তিন দিনে ডিমের দাম কমেছে। গতকাল প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা সপ্তাহের শুরুতেই ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
মিরপুর-৬ মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আকবর আলী বলেন, বেশি দামের কারণে গ্রাহকেরা আগের তুলনায় কম পরিমাণে সবজি কিনছেন। আর বিক্রি যত কম হয়, আমাদের লাভের পরিমাণও কমে যায়।
এ দিকে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি চাষের শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছ (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশী মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়ালমাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশী কই ১২০০ টাকা, শোলমাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গতকাল পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৮১৮ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।