প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি রেলস্টেশন নির্মাণ করেছে রেলওয়ে। প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে—এমনটা ধরে নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে স্টেশনটি থেকে দিনে গড়ে যাত্রী যাতায়াত করেছে মাত্র ৪৭ জন। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের হিসাবে বছরে এই স্টেশনে ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। অথচ বছরে গড় আয় সোয়া ৯ লাখ টাকা। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের পাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। চালুর ছয় বছর পর দেখা যাচ্ছে, এই স্টেশনে মাত্র দুটি ট্রেন থামে। এগুলো হচ্ছে টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। অথচ এই স্টেশন হয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের পথে ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। মূলত যাত্রী না পাওয়ায় এসব ট্রেন এই স্টেশনে থামানো হয় না।
গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আগ–পাছ বিবেচনা করা হয়নি। খেয়ালখুশিমতো অবকাঠামো বানানো হয়েছে। এখন যেখানেই হাত দিই, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, রেল মন্ত্রণালয়
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে রেলের যাত্রীসেবা উন্নত করা হয়নি। কেনা হয়নি রেলের প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ। জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। অথচ এই সময়ে বিপুল ব্যয়ে নতুন রেললাইনের পাশাপাশি স্টেশন ভবন নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। যদিও এসব স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলে না কিংবা চললেও থামে না। ফলে সাধারণ মানুষের তা কোনো কাজে লাগছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আগ–পাছ বিবেচনা করা হয়নি। খেয়ালখুশিমতো অবকাঠামো বানানো হয়েছে। এখন যেখানেই হাত দিই, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এভাবে অপরিকল্পিতভাবে কোনো প্রকল্প নেবে না। অতীতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, বিগত সরকারের আমলে সারা দেশে ৪৮৪টির মধ্যে ১১৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের টাকায় হয়েছে। রাজস্ব খাতের প্রকল্প থেকেও কিছু কিছু স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে ২৩৭টি স্টেশন ভবন মেরামত ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশন ভবন, রেলস্টেশন ও রেললাইন নির্মাণে বিগত সরকার জোর দিলেও ইঞ্জিন-কোচ কেনায় আগ্রহ ছিল না। কারণ, ইঞ্জিন-কোচ কেনার প্রকল্প সময়সাপেক্ষ। মেরামত কিংবা নতুন রেললাইন নির্মাণে ‘কমিশন’ বেশি। এ জন্য রেলমন্ত্রী, কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের এমন প্রকল্পে আগ্রহ বেশি ছিল।
ইঞ্জিন-কোচের অভাবে লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে এক লাইনের ট্রেন দিয়ে অন্য লাইনে চালানো হচ্ছে। তাই স্টেশন ভবন আর নতুন রেললাইন নির্মাণ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
মো. হাদীউজ্জামান অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট
কালিয়াকৈর স্টেশনে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি
রেলের হিসাব অনুযায়ী, কালিয়াকৈর স্টেশনে বর্তমানে স্টেশনমাস্টার, টিকিট বিক্রেতাসহ ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। মাসে তাঁদের বেতন-ভাতা দুই লাখ টাকার ওপরে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আছে। সব মিলিয়ে বছরে খরচ ৩০ লাখ টাকার বেশি।
কিন্তু এ খরচের বিপরীতে আয় অনেক কম। যাত্রী বহনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই স্টেশন থেকে আয় মাত্র ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বছরে গড় আয় সোয়া ৯ লাখ টাকা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে স্টেশনটি নির্মাণে ২০১৫ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ রেলস্টেশনটির মূল নকশা করা হয়েছে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলে।
গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো আগ–পাছ বিবেচনা করা হয়নি। খেয়ালখুশিমতো অবকাঠামো বানানো হয়েছে। এখন যেখানেই হাত দিই, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
আইকনিক স্টেশনে বিপুল ব্যয়
প্রথমবারের মতো সৈকত শহর কক্সবাজারে ট্রেন চালু হয়েছে গত বছর নভেম্বরে। এই পথে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি নতুন স্টেশন। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছে নির্মিত ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশনের ব্যয় ২১৫ কোটি টাকা। ২৯ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা স্টেশনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের। এখানে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা থাকার কথা বলা হয়েছে। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই পথে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন ও নয়টি স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্র শহরে বলে আইকনিক স্টেশনটি দরকার ছিল। কিন্তু ব্যয় বেশি হয়েছে। এ পথে এখন তিন জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে দুই জোড়া ট্রেনই কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মাঝের কোনো স্টেশনে থামে না। আর এক জোড়া লোকাল ট্রেন মাঝের চারটি স্টেশনে থামে। বিপুল ব্যয়ে আইকনিক স্টেশন নির্মিত হলেও অন্য স্টেশনগুলো পুরোপুরি ব্যবহৃত হচ্ছে না।
গ্রামের মাঝখানে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ১৫০ কোটি টাকার স্টেশন। গত বুধবার ঘারুয়া ইউনিয়নের বামনকান্দায়ছবি: আলীমুজ্জামান
বিপুল ব্যয়ে আরেকটি স্টেশন নির্মাণের উদাহরণ হলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন। এটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন ও ১৪টি নতুন স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ১৫০ কোটি টাকায় তৈরি করা হয়েছে একটি আইকনিক স্টেশন।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ভাঙ্গার নতুন স্টেশনটির পাঁচ কিলোমিটার পরে ভাঙ্গা জংশন এবং ১২ কিলোমিটার আগে মাদারীপুরের শিবচর স্টেশন। পুরোনো জংশনটি প্রকল্পের আওতায় মেরামত ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দুটি (ভাঙ্গা জংশন ও শিবচর) স্টেশনের মাঝখানে এমন কোনো শহর বা উল্লেখ করার মতো কোনো স্থাপনা নেই। অনেকটা মাঠের মাঝখানে বিপুল টাকায় ভাঙ্গা স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি তিনতলাবিশিষ্ট। এতে একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
শুরুতে এখানে বিপুল টাকায় স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল না। রেলওয়ে সূত্র জানায়, তৎকালীন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) এবং তাঁর ভাই ভাঙ্গা এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) আগ্রহে বিশাল এই স্টেশন নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাঁরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে। সরকার পতনের পর এই দুজন আত্মগোপনে গেছেন। তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মাদারীপুরে অলিম্পিক ভিলেজ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে—এই কথা বলে লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী স্টেশনটি করার জন্য চাপ দেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই পথে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন ও নয়টি স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
ব্যবহার নেই, তবু স্টেশনে ব্যয়
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩৩৬ কোটি টাকায় রূপপুর রেলস্টেশন এবং ২৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রেলপথটি চালু হয়। কিন্তু এখনো এতে কোনো ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। কবে এই স্টেশনে ট্রেন যাবে, তা জানে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-লাকসাম অংশে আরেকটি নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৩টি স্টেশন আধুনিকায়ন করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার ময়নামতি, লালমাই ও আলীশ্বরও রয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালে চালুর পর এসব স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না।
জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম-চিনকি আস্তানা অংশে আরেকটি লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার নওটি, নাঙ্গলকোটের শার্শাদি, ফেনীর জেলার কালীদহ এবং মহুরীগঞ্জ স্টেশন আধুনিকায়ন করা হয়। তবে স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামে না।
এ ছাড়া ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত যে নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে, সেই পথের অন্তত চারটি নতুন স্টেশনে ট্রেন থামে না। এগুলো হচ্ছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বোড়াশী, চন্দ্রদিঘলিয়া, কাশিয়ানীর ছোট-বাহিরবাগ এবং চাপতা। ২০১৮ সালে এসব স্টেশন চালু করা হয়।
বড় বড় স্টেশন বানানোর মূল লক্ষ্য ছিল প্রকল্পকে ‘মেগা’ আকার দেওয়া। রেলের মূল কাজ হচ্ছে যাত্রীসেবা। এর কোনো নামগন্ধ নেই। ইঞ্জিন-কোচের অভাবে লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে এক লাইনের ট্রেন দিয়ে অন্য লাইনে চালানো হচ্ছে। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা না করে স্টেশন ভবন আর নতুন রেললাইন নির্মাণ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান
মুজিব বর্ষে স্টেশন মেরামতে প্রকল্প
২০২২ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী উদ্যাপন’ উপলক্ষে রেলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের অধীনে ৫৫টি স্টেশন মেরামত-প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হয়। এ ছাড়া ৫০টি কোচ ও কিছু রেললাইন মেরামতও ছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে আধুনিকায়ন করা চট্টগ্রাম ও খুলনা স্টেশনও মেরামত করা হয় ওই প্রকল্পের আওতায়। চট্টগ্রাম স্টেশনটি আগে আধুনিকায়ন করা হয়েছিল ২১৫ কোটি টাকায়। আর খুলনা ও বেনাপোল স্টেশন একটি প্রকল্পের আওতায় ৮৫ কোটি টাকায় আধুনিকায়ন করা হয়েছিল।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জের যশোদলপুর স্টেশনে ট্রেন না থামলেও স্টেশন দুটি আধুনিকায়ন করা হয় মুজিব বর্ষের প্রকল্পের আওতায়।
রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, মুজিব বর্ষে ওই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আগ্রহে। এর অনেকগুলোই অপ্রয়োজনীয় ছিল। কাজও হয়েছে নিম্নমানের।
সেবায় মনোযোগ নেই
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেললাইন, স্টেশনসহ অবকাঠামো নির্মাণে বড় প্রকল্পের অধীনে ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু এই সময়ে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচের অভাবে ট্রেন বাড়ানো যায়নি।
রেলওয়ের হিসাবে, রেলে যাত্রীবাহী কোচ আছে প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে ব্যবহারের উপযোগী দেড় হাজারের মতো। বাকিগুলো মেরামত কারখানায় থাকে। এ জন্য একই কোচ একাধিক পথের ট্রেনে চলে। ফলে সময়সূচি মেনে ট্রেন চালানো যায় না। রেলে ইঞ্জিন আছে ৩০০টির মতো। এর মধ্যে ১৮০টি ইঞ্জিন ২০ বছরের বেশি পুরোনো। এগুলো রেলের ভাষায় মেয়াদোত্তীর্ণ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বড় বড় স্টেশন বানানোর মূল লক্ষ্য ছিল প্রকল্পকে ‘মেগা’ আকার দেওয়া। রেলের মূল কাজ হচ্ছে যাত্রীসেবা। এর কোনো নামগন্ধ নেই। ইঞ্জিন-কোচের অভাবে লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে এক লাইনের ট্রেন দিয়ে অন্য লাইনে চালানো হচ্ছে। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা না করে স্টেশন ভবন আর নতুন রেললাইন নির্মাণ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।