দেশে গত দুই বছরে ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেড়েছে। চলতি মাসের ১১ দিনেই মারা গেছেন ৩৮ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। অক্টোবরের ১১ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত চলতি বছরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহ্ফুজুল হক জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যারা হাসপাতালে ভর্তি তাদের বেশির ভাগেরই রয়েছে বিপজ্জনক উপসর্গ। যাদের ডেঙ্গুর সঙ্গে বিপজ্জনক উপসর্গ বা ‘শক সিনড্রোম’ আছে, অথবা অন্য একটি রোগ আছে-যার কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে। যেমন কারও হার্টের সমস্যা, কারও কিডনির সমস্যা, কারও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অথবা কারও প্রেগন্যান্সি-এই জাতীয় ক্ষেত্রে আমরা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধাণ কারণ হলো- সময়মতো বিপদচিহ্ন শনাক্তে ব্যর্থ হয়ে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না আসা এবং সর্বোপরি ডেঙ্গু মশা নিধনে অব্যবস্থাপনা।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। একদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৯০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৯৫ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ২২৫ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিভাগে ১২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৯ জন, বরিশাল বিভাগে ২৭ জন, খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ১১ই অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪০ হাজার ৮৯৫ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ২০১ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯, মৃত্যু ৩ জন। মার্চে আক্রান্ত ৩১১, মৃত্যু ৫ জন। এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪, মৃত্যু ২ জন। মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন। জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ এবাং মৃত্যু ৮ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু ১২ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২১ জন এবং মারা গেছেন ২৭ জন। চলতি সেপ্টেম্বরে চলতি বছরের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্ত ১৮ হাজার ৯৭ জন এবং মারা গেছেন ৮০ জন। অক্টোবরে ১১ দিনে আক্রান্ত ৯ হাজার ৯৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৩৮ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় মূলত বর্ষাকালে। আগস্ট থেকে বাড়তে থাকে এর ভয়াবহতা। কিন্তু চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে এডিস মশা তাদের প্রজননে উপযুক্ত আবহাওয়া পেয়ে গেছে বর্ষার আগেই। এখনো এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আর এর অন্যতম কারণ ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংসে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন তারা। একইসঙ্গে আবহাওয়ার তারতম্যও সমানভাবে দায়ী উল্লেখ করে তারা বলছেন, এখনি এডিসের জীবাণুবাহী মশার প্রজননস্থল ধ্বংস না করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ২০০০ সালের পর থেকে গত দুই দশকে ২০২৩ সালে এবং চলতি বছরে বেড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুহার। বিগত কয়েক বছরে জুলাই মাস থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং কমতে শুরু করে পরের বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, অন্য বছরের তুলনায় সারা বছরই হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা যায় ডেঙ্গু রোগী।