বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাত্র ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী আইসিটি সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে। আর প্রাথমিকে এই সরঞ্জাম ব্যবহারের হার মাত্র ১.৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের বাংলাদেশের এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে পারিবারিক শিক্ষার ব্যয় ২০২২ সালের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ ও মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩ সালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এটি প্রকাশ করে গণসাক্ষরতা অভিযান। এতে সারা দেশের ১৬ জেলার শহর ও গ্রামাঞ্চলসহ ১২৮টি স্কুলের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ মোট ৭ হাজার ২২৫ জন উত্তর দেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে বিদ্যালয়ে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণির ৪.৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। আর শিক্ষার্থীরা (প্রাথমিক ৯২ ও মাধ্যমিক ৯৩ শতাংশ) প্রায় সকলেই বাণিজ্যিক গাইড বইয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রাথমিকের ৪১ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল। উভয় পর্যায়ের দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষকের ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই।
২০২২ সালে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর জন্য পরিবার বার্ষিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, মাধ্যমিকে ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে পারিবারিক শিক্ষার ব্যয় ২০২২ সালের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ ও মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ৪১ শতাংশ অভিভাবক এবং মাধ্যমিক স্তরের ১৭ শতাংশ অভিভাবক বলেন, প্রতি সন্তানের তাদের মাসিক ব্যয়ের সামর্থ ছিল ২ হাজার টাকার মধ্যে। যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের গড় ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
উপজেলা পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়নের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের আওতাভুক্ত স্কুলের সংখ্যার তারতম্য রয়েছে। উপজেলার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক স্তরে ৩৮টি থেকে সর্বোচ্চ ২৮৫টি বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে যা ৯টি থেকে সর্বোচ্চ ১০৪টি। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রাথমিকে ১১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ২৫.৪ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে আইসিটি এবং এ সংক্রান্ত উপকরণ ছিল। ৬৭.২ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি পরীক্ষাগার রয়েছে। তবে গ্রামীণ এলাকায় ২৮ শতাংশ একটি বিজ্ঞানাগার রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে নিজস্ব মিড-ডে মিল চালু করেছে। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ৯ শতাংশ প্রাথমিকে ও ১৬ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে বেত দেখা গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়ার সরঞ্জাম ব্যবহার অত্যন্ত নগণ্য। প্রাথমিকে মাত্র ১.৫ শতাংশ আর ১১ শতাংশ মাধ্যমিকে।
এতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। অন্যতম হলো উপবৃত্তি ও পরিকল্পিত আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, বিবাহিত মেয়েদের উপবৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নিয়ম বাদ দেয়া, শ্রেণিকক্ষে মনিটরিং, প্রাইভেট টিউটরিং এবং গাইড বই নির্ভরতা কার্যকরভাবে হ্রাস করা, মুখস্থ নির্ভর শিখন থেকে নিবৃত করা, স্কুল কর্তৃক আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক ফি নিয়ন্ত্রণ করা, স্কুল মিল কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা, কানেক্টিভিটি, হার্ডওয়্যার, ডিজিটাল কন্টেন্ট, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তায় ব্লেন্ডেড লার্নিং সম্প্রসারণ করা, সরকারি বাজেট বৃদ্ধি ইত্যাদি।