কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বাংলাদেশী মাছ ধরার ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলী বর্ষণ করেছে। এতে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন স্থানীয় সুলতান আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ রাজু ও শফি উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ রফিক। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে মাছ ধরার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনী ৭২ মাঝি-মাল্লাসহ বাংলাদেশী ৫ ট্রলার আটক করার ২৪ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ৪টার দিকে ট্রলারগুলো সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছে। ট্রলার মালিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমানের ২টি, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহর একটি, তার ভাই আতা উল্লাহর একটি ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেমের একটি। এদিকে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ ধরার নৌকায় বাংলাদেশী ট্রলারক লক্ষ্য করে গুলী করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। একই সময় জেলেসহ ৬টি মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যায়।
মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলীতে নিহত ওই জেলে হলেন-শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচু মিয়ার ছেলে মো. ওসমান গনি। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কোম্পানির মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে। আহত ২ জেলেও ওই একই ট্রলারের। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত বুধবার দুপুর আড়াইটায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছ ধরার ট্রলারে নৌবাহিনী গুলী করে। এতে ১ জন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। এছাড়া জেলেসহ ৫টি ট্রলার আটকে রেখেছে মিয়ানমার নৌবাহিনী।
ট্রলার মালিক সাইফুল বলেন, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ মিয়ানমার নৌবাহিনীর সদস্যরা জেলেদের ধাওয়া করে গুলীবর্ষণ করে। এরপর ৫টি ট্রলারসহ মাঝি-মাল্লাদের ধরে নিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে তার মালিকানাধীন ট্রলারে গুলীবিদ্ধ ৪ জনের মধ্যে একজন মারা যান। এরপর আজ বৃহস্পতিবার ওই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে। নিহত ও আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলারটি দুপুর আড়াইটায় শাহপরীর দ্বীপে এসে পৌঁছে।
ট্রলার মালিক মতিউর রহমান জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত জেলেসহ সাইফুলের মালিকাধীন ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে আসে। এরপর বিকেল ৪টার দিকে অপর ৫টি ট্রলার জেলেরাসহ সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছে।
নিহতকে নিয়ে আসা ট্রলারের মাঝি জানিয়েছে, অন্যান্য ট্রলারসহ জেলেদের মিয়ানমারে আটকে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, গুলীবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছেন।
টেকনাফে দায়িত্বরত নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কাসেম জানান, জেলের মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে কোস্টগার্ডের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি নানাভাবে শুনেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ চলছে। কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, গুলীবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। তিনজন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। ট্রলারটি ঘাটে আসার অপেক্ষায় আছি। ঘাটে আসার পর জানা যাবে। একই সঙ্গে অপর ৪টি ট্রলারও ছেড়ে দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।