প্রতি বছর ডেঙ্গুর মওসুম শুরুর আগেই কয়েকদফা জরিপ চালানো হয়। প্রাক জরিপে ওঠে আসে মশার বংশবৃদ্ধির সার্বিক চিত্র। এই চিত্রের পর্যালোচনা থেকেই মশাবাহিত রোগ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, নানা আশংকা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরও এসব উদ্যোগের কোনটারই কমতি-ঘাটতি ছিলনা। ঘাটতি ছিল আন্তরিকতায়। যার কারণে ডেঙ্গুর মওসুম শুরুর আগেই সংশ্লিষ্টরা সতর্ক হননি। হেলায়-অবহেলায় পার করেছেন সময়। এখন ডেঙ্গুর মওসুম শুরুর পর আক্রান্ত ও মৃত্যুর ভয়াবহতায় শুরু করেছেন নানা তোড়জোড়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সারাদেশেই মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম অবহেলার শিকার হয়েছিল। তারা একটি প্রবাদ তুলে ধরে ডেঙ্গুর সার্বিক চিত্র বোঝাতে বলেন,“ হেলায় কেটেছে বেলা, অবেলায় তোড়জোড়”। তারা এটাও বলেন,“সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়”। সময়ের কাজ সময়ে না করলে এমনই হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, সময়মতো উদ্যোগ নিলে মশার বংশবৃদ্ধি এতোটা বাড়তো না, ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করতো না।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে, এ কথা আগেই বলেছিলাম। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় চলতি অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪০৫ জনে। গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯৯ জন।
রাজধানীতে ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। কোনো ক্রমেই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংস্থা দুটি।
ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশন তার নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে মশক নিধন অন্যতম কাজ। কিন্তু এ কাজটিই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঠিকমতো করতে পারছে না এবং তারা এ কাজে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন নাগরিকরা।
তবে ভিন্ন কথা বলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির দাবি, এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। এর দায় নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি। তাই মশা নিধনে নিজ বাড়ির আঙিনা নিজেকেই নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। আর বাইরে ড্রেন, নালা বা অন্য কোনো স্থানে মশা জন্মালে সিটি করপোরেশন তা নিধন করবে।
আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু : ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে এডিস ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। গত বছর ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই লাখ ছাড়ায়। এ রোগে মারা গেছে দেড় হাজারের বেশি। চলতি বছরও প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি।
কীটতত্ত্ববিদরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে যেখানেই বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আবার এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা প্রজনন করছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি। প্রত্যেককে নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।তারা বলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে গেলে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হয় উড়ন্ত মশা নিধনে। আমরা এখনো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। অক্টোবরে এটি আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
প্রতি মাসেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭ হাজার ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে ১৬ হাজার ২৯৮ জন ও এর বাইরে ভর্তি হয় ২১ হাজার ৫১০ জন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে মারা গেছে ১২৯ জন ও ঢাকা মহানগরের বাইরে ৫৯ জন।
জুলাই মাসে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ৪৭৩ জন, মৃত্যু হয় একজনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ৬৭৬ জন, মৃত্যু হয় ছয়জনের।
আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৯২ জন, মৃত্যু হয় একজনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৯০৯ জন, মৃত্যু হয় ১৭ জনের। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১৮ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয় ৮০ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৯৭৭ জন, মৃত্যু হয় ১৫ জনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৭৮৫ জন, মৃত্যু হয় ৩৮ জনের।
ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির কারণ : বছরের আগের মাসগুলোর তুলনায় আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে হওয়া অতিবৃষ্টিকে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টির পরিমাণ একেবারে কম ছিল না। আবার চলতি মাসেও স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কবে নাগাদ ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে- জানতে চাইলে কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এলে এক মাসের মধ্যেই সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে এ মুহূর্তে ডেঙ্গুর হটস্পট নির্ধারণ করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
যে কারণে ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে শহরে মশক নিধন কর্মসূচি পালিত হতো। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দুই সিটির আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলররা। এর দুই দিন আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে সব মেয়র ও কাউন্সিলরকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। কয়েদিন পর আবার ঢাকা দক্ষিণের প্রশাসক পরিবর্তন করে সরকার। তারা মেয়রের ক্ষমতা পেলেও আগের মতো মশক নিধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা না থাকায় ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।
উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার মশার উপদ্রব বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনকে মশা মারতে দেখা যায় না। অথচ হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মোহাম্মদপুরের আজম রোড, আসাদ এভিনিউ, রাজিয়া সুলতানা রোড, তাজমহল রোড, শের শাহ সুরি রোড, নূরজাহান রোড, জাকির হোসেন রোড ও শাহজাহান রোড এলাকা নিয়ে উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ড।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুযায়ী, এখন জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মুগদা এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে শত শত মানুষ ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন।
জুরাইন এলাকায় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জুরাইনে নি¤œ আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। এখন তারা ডেঙ্গুতে বিপর্যস্ত। এ এলাকার প্রায় সব বাসাবাড়িতেই ডেঙ্গু হানা দিয়েছে। আমরা আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু চাই না।’ মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুরাইনের ড্রেন, নালায় এডিস মশা জন্মাচ্ছে। অনেক বাড়ির নিচ তলায় পরিত্যক্ত ফ্ল্যাটেও মশা জন্মাচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা তদারকি করছে না। ফলে ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।’
আজিমপুর, পলাশী ও রসুলবাগ এলাকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, আগে প্রতিদিন সকাল ৯টায় এই ওয়ার্ডের বনানী কার্যালয়ের সামনে থেকে মশক নিধনে বের হতেন মশককর্মীরা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তাদের আর তেমন দেখা যায় না। একদিন ওষুধ দিলে সাতদিন দেয় না।
উত্তর সিটিতে তিনটি তদারকি টিম গঠন : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দপ্তর সূত্র জানায়, আগে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা বা কর্মসূচি চালিয়েছে তারা। কিন্তু এবার সরকার পতনের পর তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু গত ১৯-২৬ সেপ্টেম্বর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারা।
উত্তর সিটির মশক নিধন অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও নিবিড় তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে তিনটি তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুজন করে কর্মকর্তা রয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই তদারকি টিম মনিটরিং শুরু করেছে। এই তদারকি কার্যক্রম টানা দুই সপ্তাহ চলবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
নিয়মিত জরিমানা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ৭৫টি ওয়ার্ডে সারা বছরই নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। এরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। নিয়মিত করা হচ্ছে জরিমানা।
জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে দৈনন্দিন নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি সব ওয়ার্ডে ক্রমান্বয়ে ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন’ কার্যক্রম তথা চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং নাগরিকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকালে লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম ও বিকেলে এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমও চলছে।
অবহেলায় ডেঙ্গু কাড়ছে ঢাকার মানুষের প্রাণ : তাবিথ আউয়াল : সিটি করপোরেশনের অবহেলায় এডিস মশা ঢাকাবাসীর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর পল্লবীতে বুধবার (৯ অক্টোবর) এক গণসচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এই জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ বছর ৪০ হাজার ছাড়াল ভর্তি রোগী, মৃত্যু ১৯৯ : স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৬০ জন, ঢাকা বিভাগে ১৪৯ জন, ময়মনসিংহে ২৯ জন, চট্টগ্রামে ২২ জন, খুলনায় ২৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ জন, রংপুর বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৬২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৭১১ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৪৯৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১৭৭২ জন; আর ১৭২৩ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৩ হাজার ১৪ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৯১ জন।
গত একদিনে যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, একজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং একজন বরিশাল বিভাগীয় এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৯৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই মাসেই সবচেয়ে বেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনে ৯৪৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।