বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত শুধু ফেনীর মুহুরীর চর দখল করেই তার থাবা গুটিয়ে নেয়নি। ফেনী নদীর পানির ওপর পড়েছে তার ললুপ দৃষ্টি। বাংলাদেশে উৎপত্তি বাংলাদেশেই অবস্থান এই নদীর। নদীর কোনো অংশই ভারতে পড়েনি। অথচ ভারত দাবি করছে এই নদীর উৎপত্তিস্থল ভারত। তাদের দাবি বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্তকারী ফেনী নদীর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। অথচ মাটিরাঙ্গার ভগবান টিলা থেকে উৎপন্ন হয়ে ১০৮ কিঃ মিঃ নদীর কোনো অংশই ভারতে প্রবেশ করেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরসরাইয়ের আমলীঘাট সীমান্ত এলাকায় ২০১১ সালেই ভারত তাদের অংশে ব্লক তৈরী করে তাদের অংশে সুরক্ষা দেয়। এখানে বাঁধের নিচ দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে শক্তিশালী মোটরের সাহায্যে গোপনে পানি নিয়ে যাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। বিগত ভারতের তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকাশ্যেই পানি উত্তোলন চলে । ২০১৯ সালে ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ফেনী নদীর পানি নিয়ে এত হৈচৈ কেন? তিনি বলেন, সাব্রুমের মানুষ পানির জন্য সংকটে আছে। আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে পানি দিচ্ছি। তারপর থেকেই তারা বেপরোয়াভাবে পানি উত্তোলন শুরু করেছে।এখানে প্রায় ২৫টি পাইপ বসিয়ে ভারতের উপেন্দ্র নগরের জন্য এবং তাদের সাব্রুম শহরের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। সেই থেকে প্রতিনিয়ত ভারত ফেনী নদীর পানি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে। ভারত এভাবে একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে থাকলে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর পরশুরাম ছাগলনাইয়া ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ফেনীর ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হবে। ফেনী নদীর বিশাল জলাধার পানিশূন্য হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মুহুরী সেচ প্রকল্প ধ্বংস হয়ে যাবার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
ভারত মুহুরীর চরের মতই বাংলাদেশের আচালং মৌজার ১৮০০ একর জমি দখল করে রেখেছে। ভারত ফেনী নদীর ব্যাপারে যতটা সরব এবং তৎপর তার বিপরীতে বাংলাদেশ নীরব ও নিষ্পৃহ ভূমিকা পালন করছে। এই নদী সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্যও সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগের কাছে নেই। আচালং থেকে ফেনী পর্যন্ত ১০৮ কিঃ মিঃ কোথাও বাংলাদেশিরা এই নদী ,নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেনা। পক্ষান্তরে তারা অবাধে পানি নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশিরা এই নদীতে নামতেই বিএসএফ হৈ হৈ করে ছুটে এসে বাধা প্রধান করে। অথচ এই ফেনী নদীর উপর নির্ভর করে বাংলা দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা। ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ না হলে এসব মানুষের ভাগ্য অমানিশায় ঢেকে যাবে।
ফেনীর মুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিরা বলছে ফেনী নদীর উৎপত্তি বাংলাদেশে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় শ্রেণী নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ভগবান টিলার পাহাড় থেকেই এ নদীর উৎপত্তি। ওখান থেকে যাত্রা করে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আমলীঘাট, করেরহাট হয়ে বাংলাদেশের ফেনীর ছাগলনাইয়া ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলা পাড়ি দিয়ে বঙ্গপোসাগরে মিলিত হয়েছে।
বাংলাপিডিয়া,ইউকিপিডিয়া ,আন্তর্জাতিক ভূচিত্রাবলিতে ভারতের প্ররোচনায় ভুল তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ইউকিপিডিয়ায় এভাবে উপস্থাপন করা হয় যে ,দক্ষিণ ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপত্তি হয়ে ফেনী নদী ত্রিপুরার সাবরুম শহর হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। বাংলাপিডিয়ায় বলা হয় ,ফেনী নদীর ত্রিপুরার পাহাড়ী অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে আলীগঞ্জ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সীমান্ত রেখা তৈরী করেছে। এরপর সমতলে নেমে এসে নদীটি চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীকে (ফেনীকে) আলাদা করে বঙ্গপোসাগরে পড়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে ফেনী নদীর উপর ভারতের কোন দাবি ন্যায়সঙ্গত নয়। কারণ এ নদীর কোন অংশ ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেনি। তথাপি ফেনী নদীর বিভিন্ন অংশে শক্তিশালী সেচপাম্প বসিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এর ফলে দিনদিন ফেনী নদী ক্ষীণকায় হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফেনী নদী একদিন মরা নদীতে পরিণত হবে। আর মরুভূমিতে পরিণত হবে এতদাঞ্চলের বিশাল এলাকা।