ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৬ হাজার। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৮৬ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। এরমধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে সর্বাধিক ৯৯ জন মারা গেছেন। এই সিটিতে আক্রান্তও সর্বোচ্চ। চলতি ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক করেছিল। রাজধানী দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ঝুঁকিতে ছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই দুই সিটির সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি কতোটুকু আমলে নিয়েছে। বরং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য দোষছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে।
ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত বেশি কেন জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির মানবজমিনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন জাতির সামনে ডেঙ্গু নিয়ে হিসাবে ভুল তথ্য দিচ্ছে। তাদের এলাকায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ১লা জানুয়ারি থেকে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত ২০ জন বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, এই এলাকায় দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলো থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার রোগীরা এখানে ভর্তি হন। যা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়ে। ডেঙ্গুর এসব তথ্য ঢালওভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে অধিদপ্তর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানোর পরও সংশোধন না করে তারা প্রতিদিন ভুল তথ্য দিচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরের শুরু থেকে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এলাকায় মাইকিং, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন থানায় ও বড় বড় হাসপাতালে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবন প্রসঙ্গে রিহ্যাবকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, তাদের এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আশাকরি এ মাসে মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে।
এদিকে, রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসছে বেশি। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই ঢাকার বাসিন্দা। তবে ২০-২৫ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন।
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৬ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২২৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৫৯০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ৩২ হাজার ৮০১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়ই ৪৫১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৮১ জন, বরিশালে ৮৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৯ জন, খুলনায় ১১১ জন, ময়মনসিংহে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৭ জন রোগী, রংপুর বিভাগে ৫৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ডেঙ্গু প্রসঙ্গে বলেছেন, গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এ বছর বেশি না হলেও মৃত্যুহার বেশি। সুতরাং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কমে আসছে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। এ বছর এখন পর্যন্ত একদিকে প্রচণ্ড তাপ, অন্যদিকে প্রচণ্ড বৃষ্টি। এ রকম উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এডিস মশার ডিম ও প্রজনন খুব দ্রুত হয়। বৃষ্টি হচ্ছে, আবার গরম পড়ছে। কাজেই একদিকে মশা নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আমাদের জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মশক নিধনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনগণ ও প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।