বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু অবহেলিত নারী সমাজের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নিতান্তই অপ্রতুল। তাই আমরা সীমিত সামর্থ নিয়ে প্রান্তিক নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করছি। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব ব্যক্তি বা সংগঠনিক পর্যায়ে সমাধান সম্ভব নয়। তিনি গণমানুষের সকল সমস্যা সমাধানে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর মগবাজারে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল পশ্চিম থানা আয়োজিত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলী মোল্লার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাতিরঝিল পূর্ব থানার আমীর এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জামায়াত নেতা আখতার হোসেন, সুলতান মাহমুদ, গোলাম মাওলা ও আবু সাঈদ মন্ডল প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মানুষকে মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খেদমতে খাল্ককে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেন। তাই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য আমাদেরকে আর্ত-মানবতার কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু সমাজের একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বেশি করে । মানুষের সমস্যা সমধানের পরিবর্তে মধ্যস্বত্ত্বভোগের জন্য গণদুর্ভোগ সৃষ্টিই তাদের কাজ। বিপদে-আপদে ও যেকোন দুর্যোগকালীন মহুর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য হলেও আমাদের সমাজে সে আদর্শ ও সংস্কৃতি এখনও গড়ে উঠেনি। গণমানুষের মধ্যে সেবার চেতনা সৃষ্টি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। তিনি দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সরকার, বেসরকারি দাতা সংস্থা সহ সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, আজ আরাফার দিন। আল্লাহর ঘরের মেহমানরা আজ ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছেন। রাসুল (সা.) জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে এই ময়াদানে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যা বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই দিবসের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, বছরের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যে, আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় তার বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন। আরাফার দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দার অধিক নিকটবর্তী থাকেন। অতঃপর ফেরেশতাদের কাছে গৌরব প্রকাশ করে জানতে চান- আমার এ বান্দারা কী চায়? (মুসলিম) তাই আমাদের উচিত আরাফার দিন ইবাদত-বন্দেগিতে সময় অতিবাহিত করা।
তিনি আরও বলেন, আইয়্যামে তাশরিকও মুসলমানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। মূলত ৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই তাকবিরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। আইয়্যামে তাশরীকের কোন একদিন দিনেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা নাসর নাযিল করে মু’মিনদেরকে বিজয়ের সুসংবাদ শুনিয়েছিলেন। মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের চেতনা ছিল অপশাসন, দুঃশাসন ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তির চেতনা। তাই সেই মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতিকে অপশাসন-দুঃশাসন থেকে মুক্তি ও সমাজের সকল স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর আন্দেলনের মাধ্যমে নতুন বিজয় অর্জন করতে হবে। তিনি হারানো গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাঙ্খিত বিজয় অর্জনে সকলকে নতুন করে প্রত্যয় গ্রহণের আহবান জানান এবং নগরবাসীকে ঈদ উল আযহার শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।