ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত জটিলতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি হাতে নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে কমিশন না থাকায় ভোটার হালনাগাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেছেন, ২০০৯ সালে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হবে। আমাদের রুটিন আছে ২রা জানুয়ারি থেকে করা। এখন প্রতিদিনের ভোটার হালনাগাদ করছি। কমিশনের অনুমোদন ছাড়া ভোটার হালনাগাদ করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, এটা কমিশনের কাজ। সুতরাং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে। আমার লিগ্যাল অথরিটি নেই।
বর্তমানে কমিশনহীন ইসিতে আইনে নির্ধারিত রুটিন কাজগুলো করছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। আইন অনুযায়ী, কমিশনের অনুমোদনক্রমে প্রতিবছর দুই জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২রা মার্চ প্রকাশের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হলে তার আগেই নতুন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলমের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন কমিশন নিয়োগ দিতে এখনো তিন মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। ফলে বিদ্যমান আইনানুযায়ী এই সময়ের মধ্যে নতুন কমিশনের পক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ইসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে অন্তত ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাদের ছবি তোলা এবং চোখের আইরিশ ও আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার মতো কাজ শেষ করতে পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এখনই নতুন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু ইসি সংস্কার কমিশন সুপারিশ রিপোর্ট না দেয়া পর্যন্ত পরবর্তী কমিশন গঠন করা যাচ্ছে না। ফলে পিছিয়ে যেতে পারে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। এতে ভোটার আইন সংশোধন ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করতে পারবে না ইসি।
এ বিষয়ে ইসি’র একাধিক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ সালেই জাতীয় নির্বাচন করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে পারবে। সেটি পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছার উপর।
তবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ২১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো অনিবার্য কারণবশত কোনো নির্বাচনী এলাকায় বা, ক্ষেত্রমতো, ভোটার এলাকায় ভোটার তালিকা প্রস্তুতাকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব না হইলে কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত নির্বাচনী এলাকায় বা, ক্ষেত্রমতো, ভোটার এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।’
এদিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ইকুইপমেন্ট ঠিকঠাক আছে কিনা দেখা হচ্ছে। কমিশন থেকে আদেশ পেলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে ইসি সচিবালয়। তবে এখনই কমিশন নিয়োগ না করা গেলে এই কার্যক্রম পিছিয়ে পরের বছরে চলে যেতে পারে। এতে জাতীয় নির্বাচনও পিছিয়ে যেতে পারে। ২০২২ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে ২০২৫ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটারদের অ্যাডভান্স ডাটা রয়েছে। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারির পরের ডাটা ইসি’র কাছে নেই। সেক্ষেত্রে ভোটার হালনাগাদ না করে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হলে ভোটার উপযুক্ত কেউ যদি রিট করে তাহলে ভোট স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।