আমরা সংখ্যালঘু কনসেপ্টে বিশ্বাস করিনা বরং সংবিধান অনুযায়ি আমরা প্রত্যেকেই গর্বিত বাংলাদেশী নাগরিক; তাই জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর মিরপুর ১৩-এর গ্রান্ড প্রিন্স রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে মিরপুর-কাফরুল এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও পূঁজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিকের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মো. শহিদুল্লাহ ও শাহ আলম তুহিন, মজলিসে শূরা সদস্য রেজাউল করিম ও ডা.আহসান হাবিব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি বাবু তপনেন্দ্র নারায়ণ হোড়, সাধারণ সম্পাদক বাবু হরিপদ দাস দোলন, কেন্দ্রীয় মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ডাক্তার বিপ্লব বিজয়ী হালদা, সাবেক সভাপতি বাবু নিথীশ কুমার সাহা, বাবু মনোজ সরকার, শিব শঙ্কর সাহা ও শ্রী দেবদ্রী চক্রবর্তী প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। এখানে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। অধিকারের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই সমান। আমাদের সংবিধানও প্রতিটি নাগরিকের জন্য সে নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। জামায়াত কোন দিন ক্ষমতায় গেলে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নারীরা একাকী ভ্রমণ করলেও তাদেরকে দিকে কেউ চোখ তুলবে না। এমনি একটি ইনসাফ ও ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। জামায়াত দেশের বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ আমরা করি না বরং মানুষকে ভালোবেসেই আমরা আমাদের আদর্শের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে চাই। তিনি দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তিকে আস্থায় নেওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় শত্রুদের চিহ্নিত করে সম্মিলিতভাবে তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। আগস্ট বিপ্লবের চেতনাই ছিল সকল ক্ষেত্রে ন্যায়, ইনসাফ ও জাস্টিস প্রতিষ্ঠা। তাই এই চেতনা থেকে আমাদের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি ফ্যাসীবাদী আমালের দেশের লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে বলেন, যারা চাঁদাবাজী, ঘুষ, দখলদারি ও দুর্নীতির সাথে জড়িত তারাই জাতীয় শত্রু। জামায়াতের নেতা-কর্মী তো দূরের কথা কোন সমর্থকের বিরুদ্ধে এসব অপকর্মের কোন অভিযোগ নেই বরং আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই জাতীয় শত্রুদেরকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবলা করতে হবে।
মহানগরী উত্তর আমীর বলেন, জামায়াত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্নত ও মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আপনারা যেকোন সমস্যার কথা আমাদেরকে নিঃসংকোচে বলবেন। আপনারা আপনাদের সমস্যার কথা না বলতে পারলে আমরা ধরে নেবো আপনারা আমাদেরকে আপন মনে করতে পারছেন না। চিকিৎসা সহ যেকোন মানবিক সেবা দিতে আমরা সব সময়ই আন্তরিক। তিনি আগামী নির্বাচন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এ সরকার কারো দাবি দাওয়া পূরুণ করতে আসেন নি বরং তারা আগামী নির্বাচনে রেফারীর ভূমিকা পালন করতে এসেছেন। তারা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।