দীর্ঘ জুলুম-নির্যাতন ও শাহাদাতের পথ পরিক্রমায় জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের প্রাণপ্রিয় কাফেলায় পরিণত হয়েছে, তাই আমরা জনগণের আস্থার যথাযথ মর্যাদা রক্ষায় সব সময় আপোষহীন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মোহাম্মদপুর মধ্য থানা আয়োজিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমির মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও মোহাম্মদপুর জোন পরিচালক জিয়াউল হাসান। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দ।
মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার যুগপৎ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান হয়েছে। দেশে ফিরে এসেছে ইতিবাচক পরিবেশ। শত-সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই গৌরবের বিজয়। তাই এই বিজয়কে কোন ভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বরং এই নতুন বিপ্লবকে মানুষের সত্যিকারের মুক্তির বিপ্লব, শান্তির বিপ্লব, নিরাপত্তার বিপ্লব, উন্নতির বিপ্লব, সমৃদ্ধির বিপ্লব, ভালোবাসার বিপ্লব ও সম্প্রীতির বিপ্লবে পরিণত করে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন সুযোগ নেই বরং রাষ্ট্রের কার্যকর ও ফলপ্রসূ সংস্কারের মাধ্যমে জাতিকে এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এক্ষেত্রে সব সময়ই আপোষহীন। তিনি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান। অন্যথায় ফ্যাসীবাদ ও বাকশালী অপশক্তি আবারো মাথাচাঁড়া দিতে পারে।
তিনি বলেন, দেশে দীর্ঘ পরিসরে অপশাসন-দুঃশাসন চলেছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঈমান-আকিদা, বোধ-বিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি, তাহজিব- তামুদ্দন, আশা-আকাঙ্খার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে চালানো হয়েছে স্বৈরাচারি, বাকশালী ও বিজাতীয় আদর্শের অপশাসন। ফলে দেশে কোন উন্নতি হয়নি বরং রাষ্ট্রস্বত্তাকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল ও ভঙ্গুর করা হয়েছে। দেশ গড়ার পরিবর্তে সকল কিছুকে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও অপরাজনীতি চালু করা হয়েছে। শাসক গোষ্ঠীকে দেশের মালিক ও আমাদেরকে প্রজাতে পরিণত করা হয়েছে। তারা ভালবাসা ও আদর্শ দিয়ে দেশ শাসন করার পরিবর্তে দেশে প্রতিহিংসা ও বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছে। দেশে কোন সুনাগরিক তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। মূলত, মানবরচিত মতবাদ দিয়ে দেশ শাসনের জন্যই আমাদের এই অধঃপতন হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেশকে এই পৈশাচিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই এবার দেশকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। তিনি অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
মহানগরী উত্তর আমীর বলেন, জামায়াত একটি আদর্শবাদী ও গণমুখী রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা একটি আদর্শভিত্তিক জাতি গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সে লক্ষ্যে আমরা দেশে প্রভূত সংখ্যক, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানও। আমরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেছি। তাই বিরোধী শক্তি জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। আমরা সব সময় জবাবদিহীর অনুভূতি নিয়ে কাজ করি। গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে আমরা সবসময়ই আপোষহীন। ধর্ম নিয়ে আমরা কোন বিভেদ সৃষ্টি করি না। এদেশে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান ও রাসূল (সা.) অনুসৃত নীতি অনুসরণ করবে। আমাদের মূল মিশন হলো আল্লাহকে খুশী করা। আর এই সংগ্রাম আমরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চালিয়ে যাবো-ইনশাআল্লাহ। তিনি দেশকে ক্ষুধা,দারিদ্র, অপশাসন ও দুঃশাসন মুক্ত করতে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।