বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলে আমরা গণতন্ত্র-গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার ফিরে পাইনি। যাদের রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি শাসকগোষ্ঠীর অহমিকা ও আত্মকেন্দ্রিক অপরাজনীতির কারণেই সেসব ভাষা শহীদদের যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান ২১ এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার , ফ্যাসিবাদী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা প্রামূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯৪৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। তমদ্দুন মজলিস এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন এ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ভাষার দাবিতে মানপত্রও পাঠ করেছিলেন। তিনি ডাকসুর নির্বাচিত জিএস থাকলেও রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে ডাকসুর নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নির্মম ও অমানবিক নির্যাতনে কারারুদ্ধ অবস্থায় এই ভাষাসৈনিক মৃত্যুবরণ করেন। সরকার প্রতিহিংসাবশতই ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্ব থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমকে বঞ্চিত করার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত। কিন্তু সরকারের সে স্বপ্নবিলাস কখনোই সফল হবে না বরং ইতিহাসই প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চত করবে। তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস চর্চায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সাম্য, ন্যায় বিচার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং অপরাজনীতি ও বৈষম্যের পরিবর্তে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও দীর্ঘকালের পরিক্রমায়ও স্বাধীনতার সুফল আমাদের কাছে অধরায় রয়ে গেছে। সরকারের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর উপর চালানো হচ্ছে গণগ্রেফতার ও নিমর্ম নির্যাতন। স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলনের দূর্বার চেতনা আজ ফ্যাসিবাদের কালো থাবায় জর্জরিত। তাই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকারের পতনের কোন বিকল্প নেই। তিনি ২১ এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফ্যাসীবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই বিরাজনীতিকরণের পথ বেছে নিয়েছে। সে অপকৌশলের অংশ হিসেবেই বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন ও সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ আছেন নায়েবে আমীর বর্ষীয়ান জননেতা মাওলানা আব্দুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। এমনকি সরকারের জিঘাংসার কারণেই বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল সহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা কারাগারে অন্তরীণ। তিনি আমীরে জামায়াত সহ আটক সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় গণআন্দোলনের মাধ্যমেই শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করা হবে।
আলোচনা সভা শেষে ভাষা শহীদদের মাগফিরাত ও স্বজনদের কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।