আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়, অনিয়ম, অনাচার ও দুর্নীতির উপাখ্যান এত বিশাল এবং বিস্তৃত যে এগুলো শনাক্ত করা, সবগুলোর ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী প্রতিকারমূলক অবস্থান নেওয়া আসলে খুবই কঠিন। তবে রাজনৈতিক নিপীড়ন, গণহত্যা এবং ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের পর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অনিয়ম ও জালিয়াতি সম্ভবত হয়েছে বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করেই। আর বিদুৎখাতের সবচেয়ে বড়ো দুর্নীতি হয়েছে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে। মূলত এই অন্যায্য প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দেশের অর্থনীতিকে বিকিয়ে দিয়ে দলীয় কিছু লোককে কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলিওনার বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করেছে। আর এ কাজটি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আহমদ কায়কাউসসহ বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, ক্যাপাসিটি চার্জের বিলের নামে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কুইক রেন্টাল মালিকদেরকে ভাড়াবাবদ ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিনির্ধারক এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের পকেটে গিয়েছে। কুইক রেন্টালের প্রক্রিয়াই এমন ছিল যে, কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া এসব রেন্টাল আর কুইক রেন্টালের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়েছিল দেশের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর কাছে যার মধ্যে অন্যতম ছিল সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, বারাকাসহ অন্যান্য কোম্পানি। আওয়ামী লীগ শুধু দলীয় লোকদেরকে কুইক রেন্টালের সুবিধা দিয়ে টাকা পাচারের ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হয়নি। কেউ যেন কুইক রেন্টাল প্রকল্পের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে তা নিশ্চিতে ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের নামে একটি ইনডেমনিটি আইনও প্রণয়ন করেছিল।
অনুমতি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে, এসব বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই শর্তেই তাদেরকে লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছিল। অথচ প্রকৃতপক্ষে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পরিমাণে কার্যকর থাকে। অর্থাৎ এই কেন্দ্রগুলো বছরের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই অলস বসে ছিল।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে এসব রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিচালন ব্যয়ে। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। টাকার অবমূল্যায়নসহ নানাবিধ কারণে মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিচালন ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ভর্তুকি বাবদ। আরেকটি বড় অনাচার হলো, এই কেন্দ্রগুলো এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি সরকারকে এই কেন্দ্রগুলোকে দিয়েই যেতে হচ্ছিল। আর এর খেসারত হিসেবে বেসরকারি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবহার না পাওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ প্রতিবছর গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিগত সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে ২৮ হাজার ০৯৮ মেগাওয়াট। অথচ সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর দুটো কারণ। একটি হলো পর্যাপ্ত সঞ্চালন লাইন তৈরি না করেই সস্তা রাজনীতির ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ শিরোনামের অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সংকট। বিশেষ করে, গ্যাসের অভাবে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র টার্গেটের তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
২০১০ সালে বলা হয়েছিল, এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র আপৎকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য। আরো বলা হয়েছিল, কুইক রেন্টালের সবগুলোই স্বল্পমেয়াদি। কিন্তু এরপরও গত দেড় দশকেও এগুলো আর বন্ধ করা যায়নি। কারণ এগুলো ছিল সরকারের অর্থ পাচারের সবচেয়ে মোক্ষম কৌশল। শুধু তাই নয়। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-কে যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে তার পুরোটাই দিতে হয়েছে ডলারে। এক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের বিনিময় হারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন হওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের ব্যয়ও বেড়ে গিয়েছিল। এ সুযোগে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলেও কিংবা ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে গেলেও অসাধু বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করার সুযোগ পেয়ে যান।
দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। তবে ক্যাপাসিটি চার্জের হার নির্ধারণে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জড়িত উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দরকষাকষির ভিত্তিতে বছরভিত্তিক ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া সরাসরি লাইসেন্স দেওয়ায় এমনিতেই কুইক রেন্টালগুলোর নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জের হারও অনেক বেশি। এ সুযোগে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।
ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কুইক রেন্টালগুলোকে যে বিপুল পরিমাণ ডলার দেওয়া হয়েছে এর সিংহভাগই গেছে নসরুল হামিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পকেটে। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার এবং সে টাকায় বিলাসবহুল বাড়িসহ নানা সম্পদ কেনার তথ্য। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে সেই কোম্পানির মাধ্যমে নসরুল হামিদের হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে নসরুল হামিদ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত নিজ বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেন। পাঁচ বেডরুমের এই বাসার বাজারমূল্য ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ৪২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রে শরীফ হায়দার নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নসরুল হামিদ তার স্ত্রী সীমা হামিদকে নিয়ে ‘পথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ট্রেড করপোরেশনের লাইসেন্স নেন। এই করপোরেশনের আওতায় মবিল গ্যাস স্টেশনসহ দেড় ডজনের মতো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ফ্লোরিডায় অবস্থিত ওই গ্যাস স্টেশনটি কেনা হয় কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে। শরীফ হায়দারের মাধ্যমেই হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন নসরুল হামিদ।
শুধু নসরুল হামিদই নন। কুইক রেন্টাল খোলার এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ গড়ার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয় স্বজন। এক্ষেত্রে প্রথম নাম এসেছে সামিট গ্রুপের। সরকার ঘনিষ্ঠ এই গ্রুপটি গোপালগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের টানা ছয়বারের এমপি ও সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানদের পারিবারিক ব্যবসা। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আইপিপিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধুমাত্র ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সামিট গ্রুপকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে। এটি পরিশোধিত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সামিট গ্রুপই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের দেওয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রধান সুবিধাভোগী। কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, বিশেষ আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের নামে হাজার কোটি টাকা পাচার করে সামিট।
শেখ হাসিনার আমলে ব্যবসা করে দেশের প্রথম শত হাজার কোটি টাকার মালিক হন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। এমনকি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় আছে তার নাম। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ আছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। যা বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ বেসরকারি বিনিয়োগ। আইনি ইনডেমনিটিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুকূল চুক্তির সুবাদে ক্যাপাসিটি চার্জ ও বিক্রয়মূল্যসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া আয়ই হয়ে উঠেছে সামিট গ্রুপের ব্যবসার বড় ভিত্তি। শুধু গত বছরেই সামিটের সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাড়া পেয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে আছে ইউনাইটেড গ্রুপের ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এগুলো পেয়েছে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। কনফিডেন্স গ্রুপ বিনা দরপত্রে পেয়েছে ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কেন্দ্র ভাড়া পাওয়ার দিক থেকে গ্রুপটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ৬টি কেন্দ্র বাবদ তারা পেয়েছে ৯৬২ কোটি টাকা। কেন্দ্র ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে আছে বাংলাক্যাটের ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর ভাড়া ৮৮৩ কোটি টাকা। আর ষষ্ঠ সিঙ্গাপুরভিত্তিক সেম্বকর্প, ভাড়া ৭৮৫ কোটি টাকা। সপ্তম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এপিআর এনার্জি, এর ভাড়া ৬৮০ কোটি টাকা। নবম ডরিন গ্রুপের ৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার ভাড়া ৬৫১ কোটি টাকা এবং দশম স্থানে দেশ এনার্জির চার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাড়া পায় ৫১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডরিন পাওয়ারের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও ঝিনাইদহ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী তাহজীব আলম সিদ্দিকী। দেশ এনার্জি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে দেখা যায়, একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শের ব্যবসায়ীদের পকেটেই গেছে এসব হাজার কোটি টাকা। খাতটিতে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট- যা জনগণের পকেট থেকেই গেছে।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৮ তারিখ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান আইন স্থগিত করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে করা বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ বিধান) আইনের অধীন চলমান সব কার্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে শুধু বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, এ টাকা দেশের নাগরিকদের। যার এই ভয়াবহ দুর্নীতি ও জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিল, সবাইকেই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এমনটা করতে হলে কুইক রেন্টালের মালিকদেরকে দেওয়া ইনডেমনিটি প্রত্যাহার করতে হবে। আশার কথা হলো, গত ২ সেপ্টেম্বর কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি এবং ক্রয় সংক্রান্ত ৬ (২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। এ আইনটি সংবিধানের ৭, ২১, ২৬, ২৭, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ১৪৩ ও ১৪৫ এর লঙ্ঘন বলে রিটে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করছি, আইনী এই পদক্ষেপগুলো বিদ্যুৎখাতের ভয়াবহ এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের শাস্তি প্রদানের পথ আরো সুগম করবে।