লাগামহীন দুর্নীতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নির্লজ্জ ষড়যন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ হিসাবেই দেশে একটি সফল বিপ্লব ও ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; তাই এদেশের মানুষ নতুন করে দুর্নীতিবাজ,লুটেরা ও চরিত্রহীন নেতৃত্ব মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ছাত্র আন্দোলনের সাবেকদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব। দারসুল কোরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড.অধ্যাপক আব্দুস সামাদ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও জামাল উদ্দীন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমূখ।
ডা. সৈয়দ তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ হচ্ছে আল্লাহর বিধান ও রাসূল (সা.) অনুসৃত নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। মূলত, আমাদের আদর্শ হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ; তার সংগ্রামই হলো আমাদের সংগ্রাম। আল্লাহ তায়ালা সকল দ্বীনের ওপর দ্বীনে হকের বিজয় দানের জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। সে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল রাসূল (সা.)-এর হাত ধরেই। এ বিজয়ের আগেই আল্লাহ তায়ালার মোমিনদের জন্য সুসংবাদ হিসাবে সুরা নসর নাযিল করেছিলেন। সে সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, দলে দলে মানুষ ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। এখন আমাদের দেশে সে পরিস্থিতি অনুভূত হচ্ছে। মানুষ দলে দলে ইসলামের পথে অগ্রসরমান। তাই আমরা যদি আমাদের যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা, নিষ্ঠা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। তিনি ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, রুকনিয়াত একটি মানের নাম। মূলত, রুকন হওয়া আমাদের টার্গেট না; জীবনের উদ্দেশ্যও নয় বরং আমাদের মূল টার্গেট হলো প্রকৃত মোমিন হওয়া। পবিত্র কালামে হাকীমের সুরা মোমেনুনে আল্লাহ তায়ালা মোমিনদেরকে সফল হিসাবে ঘোষণা করেছেন। আর মোমিন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনকে সহজ করে দেয় রুকনিয়াত। মূলত, এটি মোমিন হওয়ার জন্য ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ মাত্র। বস্তুত, ব্যক্তি জীবনে সবকিছু দ্বীনের আদলে পরিবর্তনের নামই রুকনিয়াত। তাই ব্যক্তির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই একটি সফল বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠবে।
তিনি আরো বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের দীর্ঘদিনের অপশাসন- দুঃশাসনে এদেশে সেকুলারিজমের শেকড় অনেক গভীর পৌঁছে গেছে। গণপ্রশাসনে স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদের প্রতিভূরা এখনো বহাল তবিষয়তে। একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। তাই দেশ, জাতি ও দ্বীনের বৃহত্তর স্বার্থেই রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ করতে হবে। জাতীয় পাঠ্যসূচি থেকে ইসলামবিরোধী সকল অনুসঙ্গ অবিলম্বে অপসারণ করা দরকার। একই সাথে দায়িদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। মূলত ফ্যাসীবাদের শেকড় এদেশ থেকে চিরতরে উপরে ফেলতে হবে। এজন্য আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য এবং দৃঢ়ভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে যখন যে নির্দেশ আসে তা হযরত আবু বকর (রা.)-এর মত অকুন্ঠচিত্তে মেনে নিতে হবে। তিনি মিরাজের ঘটনা নিয়ে যেভাবে সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আমাদেরকেও একই আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই এদেশে থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম- নির্যাতন বন্ধ হবে। অভ্যুদয় ঘটবে নতুন এক বাংলাদেশের। তিনি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য সকলকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, অপশাসন- দুঃশাসন, গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সকল সময়ের সীমা লঙ্ঘন করায় ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম এক অভিনব আঙ্গিকে একটি সফল ও স্বার্থক আন্দোলন করেছে। তারা প্রচলিত হরতালের বিপরীতে বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট সাট ডাউন এবং অসহযোগ আন্দোলন করে দেখিয়ে দিয়েছেন এদেশের মানুষ সব সময় অপরাজেয় ও দুর্জেয়। আর তাদের সে ডাকেই সারা দিয়েছে রাজপথে নেমে এসেছিল আবাল- বৃদ্ধ-বনিতা। এই আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।