বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-ই আমাদের প্রকৃত মডেল, তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই রাসূল (সা.)-এর সিরাত ও আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত কুরআন ও ইসলামী জ্ঞান প্রতিযোগিতা-২০২৪-এর পুরস্কার প্রদান ও সীরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান,বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কুরআন, ক্বারী মাওলানা হাবিবুল্লাহ বেলালী, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ক্বারী হাফেজ মাওলানা এ কেম এম ফিরোজ,ঢাকা মহানগরী উত্তরের উলামা বিভাগের সভাপতি ড.মাওলানা হাবিবুর রহমান । উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) আমাদের প্রকৃত আদর্শ ও মানদন্ড।মানব জীবনের এমন কোন সমস্যা নেই যে সমস্যার সমাধান ইসলামে নেই। মূলত, রাসূল (সা.)-এর জীবন ছিল ঘটনাবহুল এবং চড়াই-উৎরাইয়ে পরিপূর্ণ। ছিল সংঘাতও। তাই মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধানে রাসূল (সা.)-এর সিরাত অধ্যয়ন ও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের দেশে রাসূল (সা.)-এর প্রকৃত সিরাত জানতে দেওয়া হয় না। একটি কুচক্রীমহল রাসূল (সা.) জীবনাদর্শ ও সিরাতকে বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা তার ব্যক্তিগত জীবন, ইবাদত বন্দেগী এবং সমাজ-রাষ্ট্রের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচষ্টাকে আলাদা করেছে। অথচ রাসূল (সা.)-এর আদর্শের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন সহ সকল সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। মূলত, দেশের শিক্ষা কারিকুলামে রাসূল (সা.)-এর সিরাত অন্তর্ভূক্ত করা গেলে দেশ থেকে মানব রচিত সকল মতবাদের অপমৃত্যু ঘটবে এবং ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। তিনি সেই স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহবান জানান।
তিনি বলেন, ইসলাম মানেই শান্তি। যেখানে ইসলাম নেই সেখানে জুলুম-নির্যাতন সহ নানাবিধ অশান্তি মাথাচাঁরা দিয়ে ওঠে। জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। আর দোষ চাপানো হয় ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ অনুসারীদের ওপর। মূলত, মানবরচিত কোন মতবাদই মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়। কারণ, মানুষের তৈরি মতবাদ কখনো নির্ভূল হবে না। তাই কোন মুসলমানের মানবরচিত মতবাদ সহ্য করার কোন সুযোগ নেই। বস্তুত অহীর বিধানই নির্ভূল বিধান। রাসূল (সা.) অহীর বিধান দিয়েই একটি ন্যায়-ইনসাফপূর্ণ কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। কিন্তু আমরা এমন এক কপাল পোড়া জাতি যে, আমাদের কোন সরকারই অহীর বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা করেনি। তারা ইসলামকে মসজিদ ও মাদ্রাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। ফলে আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আমাদেরকে রাসূল (সা.)-এর সিরাত অনুসরণ করতে হবে। তিনি অহীর বিধানভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাসুল (সা.) জীবনই সর্বোত্তম জীবনাদর্শ। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে উত্তম বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। তাই এই অশান্ত পৃথিবীতের শান্তির বাতাস বইয়ে দিতে আমাদেরকে রাসূল (সা.)-এর অনুসৃত নীতি অনুসরণ করতে হবে। সমাজরাষ্ট্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য অনুসরণ করতে হবে অহীর বিধান। জামায়াতে ইসলামী সে লক্ষ্যেই দীর্ঘ পরিসরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দেশে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত, বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শই সর্বোত্তম জীবনাদর্শ। আর পুরো কুরআনই রাসূল (সা.)-এর জীবন। তাই দেশ থেকে সকল অশান্তি দূর করতে হলে ঘরে ঘরে কুরআনের দাওয়াত সম্প্রসারণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিরাত শেখাতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি কুরআন- সুন্নাহভিত্তিক ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
উল্লেখ্য-কুরআন ও ইসলামী জ্ঞান প্রতিযোগিতায় ২০ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী,বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন ইভেন অংশ গ্রহণ করে।এর মধ্যে বিজয়ী ২১৮ জনকে ক্রেস্ট,সার্টিফিকেট ও নগদ ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।