বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭ কোম্পানির ৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের বেশি অর্থ অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৮৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বেশি। রপ্তানির বিপরীতে এই অর্থ দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা আসেনি। ওই টাকা পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানির লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে এসব তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিষয়টি নিয়ে অর্থ পাচার আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সিআইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে ৩৩ হাজার কোটির বেশি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হওয়া এসব টাকার তথ্য জানতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশে থাকা এসব অর্থ ও সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর বিস্তর তদন্ত করা হবে। পরে বিভিন্ন ধাপে ও মাধ্যমে গোপন করা অর্থের তথ্য পাওয়ার পর পাচারের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। এ পর্যায়ে এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে অর্থ পাচার আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মামলার পর তদন্তের মূল কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এদিকে রপ্তানির ১৩৫ মিলিয়ন ডলার দেশে না এনে পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি একটি হত্যা মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশকে তিনি বলেছেন, ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করিনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বকেয়া রয়েছে ১০০ কোটি টাকা। রপ্তানির এই টাকা ধীরে ধীরে গ্রহণ করা হতো। কারণ বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্য বিক্রির পর টাকা পরিশোধের চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী রপ্তানিকৃত পণ্য সেখানে বিক্রির পর টাকা দেশে আনা হতো।
সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেক্সিমকোর ১৭ প্রতিষ্ঠান ৮৪৪ কোটি ৬৬ লাখের বেশি টাকা অপ্রত্যাবাসিত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার প্রকৃত সংখ্যা তদন্ত শেষে উঠে আসবে। এর মধ্যে অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার।
এর আগে সিআইডির মুখপাত্র আজাদ রহমান জানিয়েছিলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে ৭টি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি , আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রুপালী ব্যাংক থেকে ৫৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩.৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে শেয়ারবাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ হতে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে।