গ্যাস সরবরাহ না থাকায় জ্বালানি তেল দিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় খুলনায় বন্ধ রয়েছে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উৎপাদন হচ্ছে না প্রায় ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট থেকে ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ২৮ আগস্ট থেকে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আর ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে এক বছর। গ্যাস না পাওয়ায় ৩৩০ ও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি হয়। আর ১১৫ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টেও জ্বালানি তেল ব্যবহার করায় উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ‘খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয় ২০২২ সালের জুনে। নগরীর খালিশপুরে ভৈরব নদের তীরে ২৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। এখানে আগে ৬০ ও ১১০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল। সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের পর এ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।
এই কেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো ডিজেল। গ্যাস সংযোগ পেলে গ্যাস দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও গ্যাস আসেনি। সরবরাহ নিশ্চিত না করেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপশন রাখা হয়। সে কারণে এই কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় বেশি হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিডিবির নিজস্ব এই প্লাটে গ্যাস না থাকায় ডিজেল দিয়ে উৎপাদনে ব্যয় বেশি হতো। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করা গেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হতো মাত্র ২-৩ টাকা। আর আমদানি করা এলএনজি দিয়ে উৎপাদন করলে ব্যয় কিছুটা বেশি হবে। কিন্তু ডিজেল দিয়ে উৎপাদনে ব্যয় হতো ২০-২১ টাকা। মূলত উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে এই প্লান্টটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী গৌতম কুমার পাল জানান, গত ২৮ জুলাই সবশেষ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছিল। পিডিবির ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে চাহিদা না দেওয়ায় এরপর থেকে প্লান্টটি বন্ধ রয়েছে।
নগরীর খালিশপুরে ভৈরব নদের তীরে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১১ সালের জুনে। ব্যয় হয়েছিল ৪৮০ কোটি টাকা। ফার্নেস অয়েল দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট থেকে এই রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আগে এনএলডিসির চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হতো।
তবে এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির এজিএম (অ্যাডমিন) প্রকৌশলী ভোলানাথ রায় বলেন, এটি রেন্টাল হলেও ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ পদ্ধতিতে চলতো। অর্থ্যাৎ যতটুকু বিদ্যুৎ নেবে সে অনুযায়ী মূল্য দেবে। কিন্তু এখন এনএলডিসি থেকে চাহিদা না দেওয়ায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
নগরীর খালিশপুরে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ‘খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট’ নির্মাণ করে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এতে ব্যয় হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেশি হতো।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী কে এম এম রেসালাত রাজীব জানান, ডিজেল দিয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন করা হতো। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও গ্যাসের যে প্রেশার প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। ফলে ডিজেল দিয়েই প্লান্ট চালাতে হতো। তিনি জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই প্লান্টের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এনএলডিসি থেকে আর চাহিদা দেওয়া হচ্ছে না।