গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যাদের দম্ভে ও অহংকারে এতদিন আকাশ বাতাসও যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের বিদায় ঘটেছে। যারা মানুষকে অত্যাচার করেছেন, তারা এখন হাওয়া হয়ে গিয়েছে। আর জালিমের বন্দীশালা থেকে আটক মানুষগুলো মুক্তি পেয়েছেন। বিগত সরকারের সহযোগী অনেকেই পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে। এদের কেউ পালাতে গিয়ে খুব করুণ পরিণতির মুখে পড়েছেন আর যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদেরকেও চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নাম নেওয়ার বা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশ দিয়ে আসার সময় অফিসসহ আশপাশের এলাকাকে রীতিমতো ভুতুড়ে মনে হলো।
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে অসংখ্য মানুষের উচ্ছাস যেমন আছে, কিংবা বিগত সাড়ে ১৫ বছর যাবৎ অপশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট মানুষের স্বস্তি যেমন আছে, তেমনি অনেকের আবার নানা বিষয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আশংকাও রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো আশংকা আছে পুরনো ফ্যাসিবাদী অপশক্তির প্রত্যাবর্তন নিয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রাক্কালে জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস অবস্থান নেয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ বাহিনী। তাই সরকার পতনের পর জনরোষের মুখে পড়ে যায় তারা। প্রায় সপ্তাহখানেক তাদের কোনো উপস্থিতিই ছিল না। রাস্তায় ট্রাফিক ছিল না। থানাগুলো সচল ছিল না। তখন এই শহরবাসী প্রতিদিন রাত জেগে ডাকাতসহ নানা ধরনের দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলায় বিনিদ্র রজনি পার করেছে। তখনও মানুষ বারবার শুনেছে, ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব দুষ্কৃতকারীদের মাঠে নামানো হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তো বটেই, এমনকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু উপদেষ্টাও ষড়যন্ত্রের, অথবা প্রতিবিপ্লবের কিংবা ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। এগুলোও জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এরমধ্যেই সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশের আনসার বাহিনী সচিবালয় ঘেরাও করে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চালায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে। ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তারপর সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তখনও মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ জেনেছে যে, আনসার বাহিনীতে ঘাঁপটি মেরে থাকা বিগত সরকারের সমর্থকরা রীতিমতো একটি প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করেছে। এভাবে প্রতিটি ঘটনায় এরকম কিছু বাস্তবতা ফুটে ওঠায় মানুষের মাঝে সংশয় ও আশংকা বেড়েছে।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা আপাতদৃষ্টিতে নজরে না পড়লেও তারা বিলীন হয়ে গিয়েছে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে যতগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, এর প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগ ন্যূনতম ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। সাংবাদিক, ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী কিংবা সরকারী চাকরিসহ প্রতিটি পেশায় আগেও আওয়ামী মানসিকতার লোক ছিল, এখনো আছে। হয়তো তারা পরিস্থিতির প্রতিকূলতা অনুধাবন করে সরব হচ্ছেন না। তার মানে এই নয় যে, তারা নি:শেষ হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া যে কয়েকজন আটক হয়েছেন বা যাদের পালিয়ে যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি, সেগুলো আওয়ামী লীগের মূল কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোর ১-২ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থাৎ অধিকাংশই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গিয়েছেন। এ মানুষগুলো একদম নিরব হয়ে ক্ষমতাসীন অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নির্ভিগ্নে দেশ পরিচালনা করতে দেবেন- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয়ই তারা আছেন, নিজেদের পরিসরে কাজ করছেন। শলা পরামর্শ করছেন। বাংলাদেশে বিগত সাড়ে ১৫ বছরেও অনেক দলের নেতাকর্মীরা এরকম আড়ালে আবডালে থেকেও টিকে ছিলেন। আওয়ামী লীগ একটি পুরনো দল। তাই তারা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমনটাও ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এবারই প্রথম নয়। কঠিন ও কোনঠাসা অবস্থা থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস আওয়ামী লীগের রয়েছে।
কিন্তু একইসঙ্গে একথাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, এবার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় আওয়ামী বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগকে চিনেছে, আওয়ামী পাশবিকতাকে যেভাবে পর্যবেক্ষন করেছে এবং সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে তারা যেভাবে জানতে পেরেছে, অসংখ্য ভিকটিমের সাক্ষাতকার থেকে অজানা সব নিপীড়নের কথা জেনেছে- তাতে গণ মানুষের সিংহভাগ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় তো দূরের কথা এমনকি প্রভাব বিস্তার করার মতো কোনো অবস্থানেও আর দেখতে চায় না। প্রশ্ন হলো, প্রশাসনের সর্বত্র যারা আছেন তাদের মাঝেও কি একই ধরনের মানসিকতা কাজ করছে?
ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নমনীয় মন্তব্য করে এরই মধ্যে তোপের মুখে পড়েছেন। জনসাধারণ তাদের কথাগুলো ভালোভাবে নেয়নি। সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় কোনো পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো নরম সুর শুনতে চায় না। যেসব রাজনীতিবীদেরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার বার্তা দিচ্ছেন, তাদের এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াতেও দেখা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষ এ ধরনের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছেন না। বরং তারা চাইছেন আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর যেসব নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে যেভাবে আদালতে আনা হয়েছে এবং রিমান্ড ব্যাক শুনানির জন্য আবারও আদালতে আনা হয়েছে, তাদের অবস্থান দেখেও জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। কেননা, আওয়ামী আমলে যখন বিরোধী দলের কাউকে রিমান্ডে নেওয়া হতো, তারা কেউ সুস্থভাবে দাঁড়াতেই পারতেন না। আদালতে অসংখ্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে পুলিশ পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসেছেন, কিংবা বন্দী অজ্ঞানের মতো অবস্থায় আদালতে এসেছেন, এরকম অমানবিক দৃশ্যগুলো এদেশের মানুষ দিনের পর দিন দেখেছে।
আর এখনকার সময় আদালতে সাবেক সরকারের যেসব ভিআইপি ব্যক্তিকে আনা হয়েছে, তাদেরকে সাময়িকভাবে কিছু আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার কথা জানা যায়নি। আমরা রিমান্ডের নামে কারো ওপরই শারীরিক নির্যাতনের পক্ষে নই। এই অপচর্চা বন্ধ করা অপরিহার্য। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন হওয়ার কারণে বন্দীদের খুব বেশি স্বাভাবিক আচরণ বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্দী ব্যক্তিদের হাসিমুখ দেখে অনেকেই আশংকা করছেন, রিমান্ডে এসব ভিআইপি বন্দীদের হয়তো বেশ আরামেই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা তৈরির বড়ো কারণ হলো, পুলিশ বিভাগের স্পর্শকাতর অনেক পদেই এখনো পরিবর্তন আনা হয়নি। অনেকের ধারনা, যেসব ভিআইপি আটক হয়েছেন তাদের নিয়োগ দেওয়া মানুষগুলোই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। ফলে, রিমান্ডে তারা কতটুকু সত্য জানতে চাইবেন বা ভিআইপি ব্যক্তিরাও জানাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়।
যে কয়েকজন রাঘব বোয়াল এ পর্যন্ত ধরা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে, এসব গুরুতর অভিযোগে এসব ভিআইপিদের আটক না করে দেখা যাচ্ছে বেশ হালকা মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশ তার সনাতনী স্টাইলে একটি মামলায় কয়েকশ মানুষকে অভিযুক্ত করে তাদেরকে আটক করছে বা আটক দেখাচ্ছে। মামলার গুণগত মান বিচারে এগুলো যেমন বেশ দুর্বল মামলা তেমনি গণহারে অভিযুক্ত করার কারণে এসব মামলায় বড়ো ব্যক্তিরা সহজেই জামিন পেয়ে যান। অন্তত আমাদের অভিজ্ঞতা তাই বলে। এ কারণে প্রতিটি বন্দী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক অভিযোগগুলো বের করে সেগুলোর আলোকে মামলা দেওয়া উচিত। দুর্বল মামলায় যদি আসামীরা দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারেন তাহলে তারা বিদ্যমান অভিযুক্ত স্ট্যাটাস থেকে রাজবন্দীতে পরিণত হয়ে যাবেন যা ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, পুলিশের গণহত্যা চালানোর, নির্দয়ভাবে গুলি করে সাধারণ মানুষকে রাজপথে ফেলে রাখার এবং পরবর্তীতে সবগুলো লাশ একটার পর একটা ট্রাকে তুলে যেভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছে এসব ভিডিও আসার পর জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অথচ ওপরের দিকের কিছু কর্মকর্তার রদবদল আর বিতর্কিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালিয়েই জনগণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এর বাইরে, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় যেসব পুলিশ সদস্যরা ফ্যাসিবাদের শীর্ষ পর্যায়ের আদেশে জনগনের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদেরকে তদন্তপূর্বক চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
গুমের যেসব ভিকটিম মুক্ত হয়ে ফিরেছেন তারা এখন মুখ খুলেছেন। বিডিআর হত্যাকান্ডের ভিকটিম পরিবারগুলো সংবাদ সম্মেলন করে অনেকগুলো সত্য বাস্তবতা উম্মোচন করেছেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাঠগড়ায় দেখতে চায় মানুষ। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের নির্বাসিত সাংবাদিকেরা বিডিআর হত্যাকান্ডসহ বিগত সময়ের নানা অনাচারের বিষয়ে সিরিজ অনুষ্ঠান করছে। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অনেক অতিথিই বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী সময়কার আমলের অন্যায়গুলো প্রকাশ করে দিচ্ছেন। তাছাড়া এই অতিথিগণ বিগত সরকারের যেসব সমর্থক ও দোসর এখন কারাবন্দী বা পুলিশ রিমান্ডে আছেন, তাদের ব্যাপারেও নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করছেন, তাদের ব্যাপারে সতর্ক করছেন। আমরা আশা করবো, বর্তমান প্রশাসন এই আলোচনাগুলো শুনবেন। আসামীদের ব্যাপারে তারা স্টাডি করবেন। বিগত সরকারের প্রতিটি ভিআইপি যেহেতু বিপুল অর্থের মালিক, তাই তারা যেন এসব অর্থ ব্যয় করে কোনো বিশেষ সুবিধা না পান, আইনী ফাঁকফোকড় দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারেন- জনগণ তাও নিশ্চিতভাবে দেখতে চায়।
ওয়ান এলিভেন সরকারের মতো হাস্যকর মামলায় রাজনীতিবীদদের জড়ানোর সস্তা কৌশল মানুষ দেখতে চায় না। বরং ২৮ অক্টোবরের মামলা, বিডিআর হত্যাকান্ডসহ প্রতিটি ঘটনাকে আলাদা আলাদা স্টাডি করে সেই আলোকে অভিযোগ দাঁড় করানো প্রয়োজন। তাছাড়া সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া লোকেরা ভোল পাল্টে টিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক আওয়ামী কর্মীও কাছেই অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরেই আওয়ামী লোকেরা মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে সমাজে অনাচার ছড়িয়ে দিয়েছে। এই অনাচারগুলোর মোকাবেলায় অনেকেই^ যৌথ বাহিনীর একটি অভিযান দেখতে চায়। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ করা কোনো অপরাধ নয়। তবে যারা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সমাজে একের পর এক অন্যায় করে গিয়েছে তাদেরকে দমন করার কোনো বিকল্প নেই।
অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ আবার নানা বয়াণ তৈরি করে মানুষের সামনে না আসতে পারে, গুজব ছড়িয়ে সমাজে অস্থিরতা না ছড়াতে পারে বর্তমান সরকারের এসব বিষয়ে কড়া অবস্থান নেওয়া দরকার। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রথমদিকে, বাংলাদেশে সহিংসতা বা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে সিন্ডিকেটেড ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে- এই বাস্তবতা যেন আমরা ভুলে না যাই।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিজেদের রাজনৈতিক অভিলাষ না থাকার বিষয়টি জনগণের কাছে প্রমাণ করা এবং একইসাথে নির্দলীয় একটি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অন্যায় দমন করা। আর্থিকভাবে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বা আত্মসাৎ করেছেন, তাদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তার প্রথম ভাষণে বিগত সরকারের দুর্নীতি ও অনাচারের একটি শে^তপত্র প্রকাশের কথা জানিয়েছেন। এরকম শে^তপত্র প্রকাশ অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে পরীক্ষিত এবং শতভাগ দলীয় লোক বসিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের পুরো প্রশাসন কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। এই সব পদে সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক মানুষকে পদায়ন করা উচিত। সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হলো জনগণের আস্থা অর্জন করা। আর যদি ক্ষমতাসীন অন্তবর্তীকালীন সরকার এই আস্থা অর্জন করতে চায় তাহলে ফ্যাসিবাদী আর কোনো অপশক্তি যেন ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু গুটিকয়েক ব্যক্তির আটক করাই যথেষ্ট নয়। এ সরকার বিগত সরকারের অন্যায়ের সুরাহা আন্তরিকভাবেই করতে চায়, এটি যেন জনগণ নিশ্চিতভাবে অনুধাবন করতে পারে। জনগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য জনপ্রত্যাশা পূরণের কোনো বিকল্প নেই।