২২ আগস্ট ২০২৪, সকালে বয়োকনিষ্ঠ বন্ধুতুল্য এক ব্যক্তি আমাকে ফোন করেছিলেন। প্রাণবন্তু সেই সুজনের কণ্ঠে একরাশ হতাশা যেন ঝরে পড়ে। পতিত লীগ সরকারের আমলে মাঝে মধ্যেই তার কণ্ঠ থেকে এমনই বেদনা আর হতাশার সুর শুনতে পেতাম। তিনি কোনো জাতীয়তাবাদী অ্যাক্টিভিস্ট নন। তবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির দর্শন হৃদয়ে লালন করেন। মুক্তবুদ্ধির মানুষটির সাথে আমার সখ্য বহুদিনের। আমার ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস সম্পর্কেও তার ধারণা স্বচ্ছ। তবে জাতীয় স্বার্থ, চেতনা, বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও দেশের বৃহত্তর মানুষের আকাক্সক্ষা নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনোই কোনো দূরত্ব ছিল না।
টেলিফোনে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দু’টি খবর নিয়ে হতাশার সুরে প্রশ্ন করেন, ১৫ বছর পতিত লীগ সরকার যেসব কাজের জন্য ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়েছে, এখন সেই একই ধরনের আচরণের সূচনা হতে যাচ্ছে কি? এখন কি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারকরা সেই পথে হাঁটতে যাচ্ছেন? বন্ধুটি বললেন, এসব নিয়ে সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠবে, পতিত শক্তি আর তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তাদের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস কোথায় যাবে?
যে দু’টি খবরের প্রতি সেই সুহৃদ দৃষ্টি দেয়ার কথা বলেন, সে দু’টিই প্রকাশিত হয় গত ২২ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠায়। প্রথম পাতায় প্রকাশিত খবরটির শিরোনাম, ‘পরিবহনে চাঁদাবাজির হাতবদল’। খবরের সার নির্যাস হচ্ছে, সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের পরিবহন শ্রমিক নেতারা আত্মগোপনে, ওই ফাঁকে তাদের অফিসগুলো বিএনপির শ্রমিক নেতারা দখলে নিয়েছেন। আকলমন্দের জন্য বাকিটা বোঝা কঠিন নয়। শেষের পাতার খবরের শিরোনাম, ‘আওয়ামী লীগের সাম্রাজ্য বিএনপির দখলে’। এতে ছিল মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর বালুমহাল, মাছঘাট, লঞ্চ ও খেয়াঘাট ও চরের জমি দখল শুরুর প্রসঙ্গ। এসব অপকর্মের ১৬ আনা যে বিএনপি করছে, সেটি নাও হতে পারে। তবে আট-দশ আনা বিএনপির সমর্থকরা করছে না এমন নয়। তা ছাড়া এমন খবর আরো আসছে বিভিন্ন পত্রিকায়।
স্থানীয় পর্যায়ে যা হচ্ছে তার দায় কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রে এসে ধাক্কা দিচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। দুষ্কর্মের সাথে যেসব বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী জড়িত তাদের বিরত করা এবং যারা বিএনপির নাম ভাঙাচ্ছে তাদেরও চিহ্নিত করে প্রায় তেমন কিছুই বলা হচ্ছে না। এক-দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সেটি অতিশয় নগণ্য।
টেলিফোনে সে কথাই বলেন বন্ধুজন। এসব অব্যাহত থাকলে, শেষে দলটির ভাবমর্যাদার যে প্রভূত ক্ষতি হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের এক বিরাট পটপরিবর্তনের পর এমন অঘটন সবাইকেই মর্মাহত করছে। এখানেই শেষ নয়। দলটির বিপুল সমর্থক, তার বিরাট শুভানুধ্যায়ী গোষ্ঠীও এসব খবরে বিব্রত বোধ করবেন। আর সাধারণ মানুষ যারা এখন এই দলটিকে রাষ্ট্রের পরবর্তী শক্তি মনে করে, তাদের মনেও আঁচড় লাগবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বলয়েও এসবের কারণে দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। পতিত লীগ সরকারের যাবতীয় আমলনামা দেশের বাইরে যেভাবে মনিটরিং করা হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। এসব বিষয় মনে রেখে, বিএনপিকে এ মহূর্তেই নতুন প্রেক্ষাপট সামনে রেখে তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করা জরুরি। মনে রাখা দরকার, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। অসময়ে দশ ফোঁড়ও আর কাজে আসে না। গুটিকতক ব্যক্তির হাতে দলটির অমিত সম্ভাবনা নষ্ট হোক এটি কাম্য নয়। যারা এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে, অন্য আলোচিত দলের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ কিন্তু উঠছে না।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ভূমিকা ও সৈনিকদের সহায়তায় যে অভূতপূর্ব বিপ্লব, তাকে আরো অনেকদূরে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে ওই সব বিষয় বাধাগ্রস্ত করবে। বিপ্লব সংহত করতে বিএনপির ভূমিকা এখনো খুব ক্ষীণ। পক্ষান্তরে, জামায়াত বুদ্ধিমত্তার সাথে বিপ্লবের সারথি হয়ে আছে। বিপ্লবীদের ভূমিকার কথা স্মরণ রাখছে। বিএনপির এমন গাছাড়া ভাব জনমনে দৃষ্টিকটু ঠেকতে পারে। সময়কে ধারণ করা, সে আলোকে এগিয়ে যাওয়ার নামই গতিশীলতা। গতি নিয়ে চলতে না পারলে সময়ের অরবিট থেকে ছিটকে পড়তে হবে। বিএনপিকে অবশ্যই অরবিটে থাকতে হবে।
আবারো পুরনো কথার জের টানতে চাই। স্থানীয় বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে যে প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে, দিন শেষে সব মন্দ-ভালোর দায় নেতাদেরই বহন করতে হবে। মানুষের মন অনেকটা আয়নার মতো। যার চেহারা দীর্ঘক্ষণ সেখানে থাকবে, সেটিই মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যায়। ইংরেজিতে যেমন ‘আউট অব সাইট আউট অব মাইন্ড’ বলে একটা কথা আছে। গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘কাম (কাজ) পেয়ারীর ডাক পরে, ঘন ঘন পাত পড়ে’। এর ব্যাখ্যা এমন যে, যে বা যারা কাজের প্রতি সময়নিষ্ঠা দেখায়, কাজকে গুরুত্ব দেয়, তাদের ঘন ঘন পাত পড়ে, মানে তারা তাদের কাজের জন্য বারবার পুরস্কৃত হয়। এই প্রবাদ রাজনীতিসহ আরো বহু স্থানে প্রয়োগ করা যায়।
দেশের জনমনে এমন ধারণা দেয়া একেবারেই ঠিক হবে না যে, বিএনপি তার স্থপতি শহীদ জিয়ার অনুসৃত রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, কেউ কেউ এমনটিই ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে দলটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আবার অসময়ে এমন সব কথা বলছে, যেটা সাধারণের কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে উঠছে। এমন ভারসাম্যহীনতা শহীদ জিয়ার কখনো ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক শহীদ জিয়া যথাসময়ে যথাযথ কাজটি করতে কখনো বিলম্ব করেননি। যেমন দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ‘মেজর জিয়া’ জাতির ধমনিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তপ্রবাহে আবারো স্রোত জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু এখন সেই গতিময়তা বিএনপি হারাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। শহীদ জিয়ার প্রতিটি কাজে যে গতিময়তা, বিবেচনাবোধ ছিল, এখন সেটা যেন নেই। তাতে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন গতি হারানো এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতার পেছনে কী কারণ সেটা অনুসন্ধান করা জরুরি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে যে দক্ষতা-সক্ষমতা দেখা গেছে, পরবর্তীকালে বিএনপি আবার যখন রাষ্ট্রের স্টিয়ারিং ধরেছিল তখন সেটি দেখা যায়নি, বরং বিএনপির প্রশাসনে শৈথিল্য দেখা গেছে। তবে এটা ঠিক, বিএনপির প্রশাসনকে সমস্যায় ফেলতে দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র ছিল। এসব মোকাবেলা করা কঠিন ছিল। তবে গোয়েন্দারা কেন যথাসময়ে সরকারকে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল? তাদের ব্যর্থতার কারণ হয়তো খতিয়ে দেখা হয়নি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার পররাষ্ট্রনীতি কতটা গতিশীল ছিল তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। শহীদ জিয়া দ্রুতই ইসলামী বিশ্বে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ওআইসির ‘আল কুদস’ কমিটির তিন সদস্যের একজন ছিলেন জিয়া। পবিত্র ‘হারাম শরিফ’ যখন কিছু বিপথগামী সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা দখল করেছিল, তখন সৌদি সরকার শহীদ জিয়ার পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে হারাম শরিফ মুক্ত করতে সক্ষম হয়। শহীদ জিয়া গঙ্গার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। গঙ্গার পানি বাংলাদেশ যাতে তার হিস্যা ঠিকমতো পায় সে জন্য গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ আনতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে কেন অব্যাহত রাখা যায়নি সেটাও বিএনপির একটি দায়। শহীদ জিয়া ছিলেন সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা। এর মাধ্যমে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়াস ছিল। রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন। সে বিধানের আলোকে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেটি ছিল অংশগ্রহণমূলক। সেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হয়ে আসতে পেরেছিলেন জনগণের ভোটে। সেখানে তথা সেই সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। তা ছাড়া সেখানে মুসলিম লীগ ছিল, আইডিএল নাম নিয়ে জামায়াত ছিল। অতি বাম নেতা জনাব তোহা ছিলেন, ন্যাপ (মো)-এর সভাপতি জনাব মোজাফফর আহমদসহ তার আরো এক সহযোগী ছিলেন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সহযোগী সোনারগাঁওয়ের বিশিষ্ট নেতা জনাব এ এস এম সোলায়মান ছিলেন, একতা পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বহু দল নিয়ে রাষ্ট্রকে সংগঠিত করার এক ঐতিহাসিক রসায়ন রচনা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ ছিল এ দেশের এভার বেস্ট পার্লামেন্ট। নিছক বলার জন্য বলা নয়। এটি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। কিন্তু বিএনপি কি পেরেছিল ২০ দলীয় জোট অটুট রাখতে? কেন বিএনপি জোট ধরে রাখল না সেটি হয়তো ভিন্ন হিসাব।
যাক, অতীত যা ঘটেছে সে দিকে না তাকানোই ভালো। নিশ্চয়ই বিএনপি অগ্রসর হতে চায়। জাতীয় রাজনীতিতে নতুন চিন্তা ধারণা নিয়ে তাদের অভিযাত্রার অঙ্গীকার আছে এ বিশ্বাস সবার। সে নতুন বার্তা নিয়ে হাজির হতেই রচনা করেছে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এর অনুশীলন হবে। এর একটি পথনকশা থাকা তো জরুরি। সেটি এত দিনেও কেন হচ্ছে না। সেটি তাদের কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের মনে কষ্ট তৈরি করবে। সমালোচকরা ঠিকই বলে, পতিত লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্মার্ট বাংলাদেশ ছিল বায়বীয় একটি বিষয়। বিএনপির ৩১ দফা যেন সে রকম কিছু যেন না হয়। আরো একটা কথা স্মরণ রাখা দরকার, ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘ফেস ভ্যালু’। এর অর্থ এমন হতে পারে, কোন প্রতিষ্ঠান কতটা যোগ্য সক্ষম তা তাদের বাইরের চেহারাতেই স্পষ্ট হয়। সেখানে যারা দায়িত্বশীল তাদের সবার ব্যক্তিগত যোগ্যতা, তারা কতটা পারঙ্গম, সক্ষম সেই বিষয়গুলো সামনে আসে। তাদের সবার মান যদি সব বিচারে উত্তীর্ণ হয়, তবে মনে আস্থা তৈরি হয়। এটিই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ‘ফেস ভ্যালু’ নির্মাণ করে। কেউ ভুল বুঝবেন না, অনেকেই মনে করেন, গত প্রায় ১৬ বছরে নানা প্রতিকূলতায় বিএনপিদল বহু লোক হারিয়েছে। সে জন্য দলের ‘ফেস ভ্যালু’ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এই ‘ফেস ভ্যালু’ উপরে ওঠাতে দলে পুনঃভরণ দরকার। সোজা কথা, এমন সব মানুষকে দ্রুত দলে টানতে হবে যারা ‘ক্লিন অ্যান্ড ক্রিম’। শুধু তা-ই নয়, যোগ্যতা দক্ষতাও থাকতে হবে। কিন্তু এদের আনতে হলে এই নিবন্ধের সূচনায় যে প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে, তার অবসান দরকার।
বিএনপির পক্ষ থেকে যে নির্বাচনের দাবি উঠছে, সে নির্বাচনের আগে ঘর গোছানোর অন্যতম এজেন্ডা হতে হবে দলে যোগ্যদের আমন্ত্রণ জানানো। সবাই জানে, ভালো দলের প্রার্থীর অভাব হয় না। সারি বেঁধে বহু লোক দাঁড়ায়। সেখানে বহু লোক থাকে শুধু মধু লোভী। এখানে ভালো চয়েস না হলে ভবিষ্যতে সরকার চালানো অসম্ভব হতে পারে। কোনোক্রমেই ভোলা চলবে না, এটি ২০২৪। বিশ্ব অনেক পাল্টেছে, এখানে এনালক সিস্টেম অচল।
বিএনপির কিছু ঘাটতি তো লক্ষ করা যাচ্ছে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পেরে দল পিছিয়ে পড়েছে। এটি দিন শেষে জাতির জন্য আশাভঙ্গের বিরাট কারণ হতে পারে। এটি নেতৃত্বের দুর্বলতা হিসেবেও চিহ্নিত হবে। বিএনপিসহ সবাইকে বুঝতে হবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরনো রাজনীতির খোলস থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন দিনের বার্তা। এসেছে নতুন রাজনীতি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া, যিনি ছিলেন এ জনপদের হৃদয়ের ‘কমল’, তিনি তার সময়কালে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিক্যাল্ট’। এ কথা বলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ঢাকায় বসে এবং বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে রাজনীতির দিন শেষ। রাজনীতিকে জনতার দুয়ারে নিয়ে যেতে হবে। তাই তো শহীদ জিয়া চারণের মতো সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন, গণমানুষের হৃদয়ের কথাটি জানতে বুঝতে চেয়েছেন। আজো নতুন প্রজন্ম রাজনীতিকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলছে। তারা মাটিতে কান পেতে শুনছে আর সাথে সাথেই কর্মসূচি পাঠাচ্ছে। দেশের আনাচে কানাচে গিয়ে সবার পাশে দাঁড়াচ্ছে। বিএনপিকেও এসব থেকে নতুন করে সব কিছু রিকাস্ট করতে হবে। অবশ্যই ছাত্ররা একসময় ক্লাসে ফিরবে। তখন বিএনপি থাকবে। তখন যদি মানুষ ছাত্রদের শূন্যতা অনুভব করে, সেটি বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি একটি রাজনৈতিক দলের সঠিক সিদ্ধান্ত বলতেই হবে। যারা ১৬ বছর আন্দোলন করেও সে দাবি আদায় করতে পারেনি তারা এখন এ নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন যেকোনো দাবি তোলার আগে অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হবে। সময় পরিবেশ উপযুক্ত কি না দেখতে হবে। আজ দেশে কত দিক থেকে বিপদ আসছে, ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে- সেটি মোকাবেলা করা সবার প্রধান কাজ। তা ছাড়া এ দাবি নিয়ে বিএনপি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে কি? কখনো বলছে, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই, আবার বলছে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন নিয়ে এসব দোদুল্যমানতা আসলে দলের জন্য ভালো কিছু হবে না। অবশ্যই নির্বাচন হবে। তবে কখন হবে। উপযুক্ত সময় সম্পর্কে একটা চমৎকার উত্তর দিয়েছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। এর অর্থ একটা নির্বাচন। জনগণ যখন মনে করবে সেই মুহূর্তেই।
বিএনপিকে বিব্রত করতে চাচ্ছি এমন কেউ মনে করবেন না। যে খবর পাচ্ছি সেটি আপনাদের দৃষ্টিতে আনতে চাই। দেশের বহু মানুষ চান আপনাদের হাতে ক্ষমতা আসুক। যেসব ঘটনা ঘটছে বা ঘাটতি আছে, তা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, আটঘাঁট বেঁধে তৈরি হন। এটিই নির্বাচন মোকাবেলার অন্যতম শর্ত।
ndigantababar@gmail.com