বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন,আওয়ামী ফ্যাসীবাদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও গুলী করে রুখে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সংগ্রামী ছাত্র-জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি বরং রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের জুলুম- নির্যাতনের অবসান ঘটিয়েছে। তাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ ও টেকসই করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা,কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক,শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি সালাহ উদ্দীন সহ ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য বৃন্দ।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কোন নির্বাচন হয়নি বরং ষড়যন্ত্র ও সমঝোতার নির্বাচনের মাধ্যমে কারচুপী করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল। আর একথার সত্যতা মিলেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের আত্ম স্বীকৃত থেকে। এর পরের ইতিহাস কারো অজানা নয়। ২০১৪ একতরফা তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন, ২০১৮ সালের নৈশ্যভোট এবং ২০২৪ সালে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষোলকলা পূর্ণ করেছিল। কিন্তু তারা দেশে সুশাসন উপহার দিতে পারেনি। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমের অর্থনৈতিক সেক্টরকে একেবারে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছিল। মূলত আওয়ামী লীগ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষে ওপর নির্মম জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং তাদেরকে অতীতের মত লজ্জা জনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। তাই পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে একটি মানবিক ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করতে চায়। একাজকে গতিশীল ও অগ্রগামী করার জন্য আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে গণমানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সকল দায়িত্বশীলদের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করার কোন বিকল্প নেই। নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি কুরআন,হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। দেশে একটি সফল বিপ্লবের জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। প্রতিটি ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছাতে পারলেই দ্বীন কায়েমের পথ প্রশস্ত হবে। সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ধর্না দিতে হবে। সিজদায় লুটিয়ে পড়তে হবে একান্তভাবে। তাহলেই আল্লাহ আমাদের বিজয়ী করবেন। তিনি একটি সফল বিপ্লবের জন্য দায়িত্বশীলদের আরো অধিক কর্মতৎপর ও নিষ্ঠাবান হওয়ার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূলমন্ত্রই ছিল ন্যায়-ইনসাফ তথা জাস্টিস প্রতিষ্ঠা। তাই শত শহীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমাদেরকে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে শহীদদের প্রতি। মূলত, নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি হতে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি দেশে ন্যায়- ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদের যেকোন কোরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিম উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদরা আমাদের জাতীয় বীর; গর্বিত ও শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই জাতীয় স্বার্থেই শহীদদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। শহীদ পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে যথাযথ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুচিকিৎসা সহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অবদান রাখতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতির যেকোন দুর্ভোগকালে নতুন প্রজন্ম সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য উদ্বুদ্ধ হবেন। তিনি শহীদদের স্বপ্ন ন্যায় বিচার ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। তাহলে শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।