আলেম-উলামাগণ উম্মাহর পথপ্রদর্শক ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান;তাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অর্থবহ ও টেকসই করতে জাতির জাগ্রত বিবেক আলেম সমাজকেই অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিজয়ের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা,কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু ইহসান।আরো বক্তব্য রাখেন জামিয়া ইমদাদিয়া ঢাকার নায়েবে তালিমাত মাওলানা মুফতি রিজওয়ানুল কারীম, আল্লামা আবু মোমেন নাসারী পীর সাহেব, দারুল উলুম মাদ্রাসা মিরপুরের মুহাদ্দিস মুফতি মাওলানা হাফিজুর রহমান, মিসবাউল উলুম কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মীর হোসেন, জামিয়া আরাবিয়া খাদিমুল ইসলাম মিরপুর ঢাকা-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা শহীদুল্লাহ কাসেমী, পাইকপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ, মারকাজুল আহলি সুফফা মাদ্রাসা মুহতামিম মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী, ঢাকা মহানগরী উত্তরের উলামা বিভাগের সভাপতি ড.মাওলানা হাবিবুর রহমান,মহানগরীর কর্ম পরিষদ সদস্য শাহআলম তুহিন প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, উম্মাহ ও জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় বড় অর্জন এসেছে মূলত আলেম সমাজের হাত ধরেই। মীর নিসার আলী তিতুমীর ও হাজী শরীয়তুল্লাহর অবদান গোটা মুসলিম উম্মাহকেই সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ সহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উপমহাদেশের আলেম সমাজ যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশ ও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে আলেম সমাজ ছিলেন সদা সোচ্চার ও আপোষহীন। তারা বয়ান ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে জাতিকে সঠিক দিকে নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। সাম্প্রতিক আন্দোলনেও আমাদের আলেম সমাজ নানাভাবে ছাত্র সমাজকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। যা আন্দোলনকে শানিত ও বিজয়ের পথে নিয়ে গেছে। তাই এই অর্জিত বিজয়কে ফলপ্রসূ ও সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলেম সামজকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে।তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে দেশের আলেম সমাজের ওপর নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে। তারা তাদের দাওয়াতি মিশন নির্বিঘ্নে চালাতে পারেনি। এমনকি সরাদেশে তাদেরকে ওয়াজ মাহফিলও করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তবুও তারা হতোদ্দম হননি বরং জালিমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই দ্বীনে হক্বের দাওয়াত প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর জন্য তারা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এজন্য তাদেরকে কারা নির্যাতনও বরণ করতে হয়েছে। ফ্যাসীবাদী ও বাকশালীরা অনেক আলেমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যাও করেছে। কিন্তু এতোকিছুর পরও তাদেরকে দমানো যায়নি বরং সকল জুলুম-নির্যতন উপেক্ষা করেই আলেম সমাজ তাদের দাওয়াতি ও কল্যাণকামী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতার যুগপৎ আন্দোলন আমাদেরকে এক মহাবিজয় এনে দিয়েছে। যা ছিল অভাবনীয়। অনেকেই বিষয়টিকে কল্পনাতীত মনে করতেন। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম এই অসাধ্যকে সাধন করতে সমর্থ হয়েছে। তারা এই বিজয়কে কাজে লাগিয়ে দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ কায়েম করতে চায়। কিন্তু ন্যায়-ইনসাফের মানদন্ড কী সে সম্পর্কে ছাত্র-জনতার জন্য মোটিভেশন চালাতে আলেম সমাজ নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহই যে ন্যায়-ইনসাফের মানদন্ড এ বিষয়ে জনমত গঠনে আলেম সামজকে আপোষহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।নতুন প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে আলেম সমাজ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি অর্জিত বিজয়কে স্থায়িত্ব প্রদান করতে আলেম সামজকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহবান জানান ।