আওয়ামী লীগ কথিত জঙ্গীবাদকে বিরোধী দল দমনের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি গতকাল রাত ৮.৩০টায় রাজধানীর মিরপুরে গ্র্যান্ড প্রিন্স রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর Mohammad Selim Uddin সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি MD. Mahafuzur Rahaman পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, বক্তব্য রাখেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ,
ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, কাফরুল থানা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম বাবুল, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি তপনিমদ্রক নারায়ণ হোড় ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবচক্রবর্তী, লেখক ও গবেষক এবং মিরপুর-১৩ নং মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফয়সাল জালালী, জামিয়া মুহাম্মাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা লতিফ ফারুকী, ঢাকা মহানগরী ওলামা মাশায়েখ আইম্মাহ পরিষদের সেক্রেটারি মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ আনছারী, দক্ষিণ কাফরুল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের কো-চেয়ারম্যান মুফতি মাহবুবুর রহমান বিপ্লবী, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সিনিয়র পুরোহিত রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী ,
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শাহ আলম তুহিন ও শহীদুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা দেশকে অঘোষিতভাবে ফ্যাসীবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে করেছিলো। যা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। আওয়ামী নেত্রী জরুরি সরকারকে তাদের আন্দোলনের সফল হিসাবে দাবি করেছিলেন। কথিত এই জরুরি সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে অবৈধভাবে ২ বছর পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত এবং তারা নিজেরাই ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। আর এসব দুর্নীতি ও অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতেই আওয়ামী- বাকশালীদের পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় আনা হয়। এই ফ্যাসীবাদী শক্তি ক্ষমতায় এসে দেশপ্রেমী শক্তিকে বিশেষভাবে টার্গেট করে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা কথিত বিচারের নামে দেশ বরেণ্য জাতীয় নেতাদের হত্যা করে। তারা দেশের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে এক মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তারা কথিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা বিদেশ পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। বাকশালীরা সারাদেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, জমি জবর দখল, টেন্ডারবাজি সহ দেশকে অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। তিনি এসব দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথিত জঙ্গীবাদকে বিরোধী দল দমনের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। ‘সঙ্গে থাকলে সঙ্গী আর না থাকলে জঙ্গি’ এটিই ছিল তাদের অপরাজনীতির মূলমন্ত্র। স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকার স্লোগান ছিল তাদের প্রতিপক্ষ দমনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এসব অপপ্রচার নতুন প্রজন্মের কাছে হালে পানি পায়নি বরং তারা নিজেরাই ¯স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করে বলেছিলো, ‘তুমি কে, আমি কে; রাজাকার, রাজাকার’। তিনি ছাত্র আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করার জন্য সরকার হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। তারা শত শত শিক্ষার্থীদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে অসংখ্য।প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী অন্ধত্ব বরণ করেছেন। তারা আয়না ঘর বানিয়ে মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে। তারা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আজমী ও ব্যারিস্টার আরমানের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের শত শত প্রাণের বিনিময়ে আমাদের জুলুমের অবসান হয়েছে। তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, কারো ওপর প্রতিশোধ নেবেন না। জামায়াত প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মূলত আমাদের দেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু ইস্যু হচ্ছে সমাজকে শোষণ করার অন্যতম হাতিয়ার। আমরা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলেই বাংলাদেশি। আমরা একই মায়ের সন্তান। তাই কোন ভাবেই সম্প্রতি নষ্ট করা চলবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। আর কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেওয়া যাবে না। মূলত ছাত্ররাই আগামীর বাংলাদেশ; তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই শিক্ষার্থীদের কোন ভাবেই বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি নতুন প্রজন্ম আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামি দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মুহতারাম আমীরে জামায়াতে নির্দেশনায় অপশাসন, ঢাকা উত্তরকে দুঃশাসন চাঁদাবাজি ও দখলদার মুক্ত মানবিক এবং সম্প্রতির নগরী প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আর এজন্য আমরা নগরীতে অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠার পরিচালনা করছি। তিনি এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় ঢাকা-১৫ আসনের বিভিন্ন শ্রেণি,পেশার সহস্রাধিক সুধী অংশ গ্রহণ করেন।