বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে শহীদ পরিবারগুলোর কমপক্ষে একজনের করে চাকরি অথবা ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘যারা তাদের আপনজনকে হারিয়েছেন, বাবাকে হারিয়েছেন, ছেলেকে হারিয়েছেন মেয়েকে হারিয়েছেন এজন্য তাদেরকে যেন কষ্টে দিনাতিপাত করতে না হয়। এই ব্যপারে রাষ্টের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে যারা বেশি অসুস্থ প্রয়োজনে তাদেরকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ভাটারায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৭ শহীদদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাটারা থানা আমীর অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি আহমদ সালমানের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর Abdur Rahman Musa এবং সেক্রেটারি Dr. Rezaul Karim, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা, বসুন্ধরা থানা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল বাশার। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আব্দুল মোতালেব মঈন, ডা. আনোয়ার হোসেন মোল্লা, মো. জাহিদুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কাশেম প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের ছাত্রমাজকে ধন্যবাদ জানাই তারা সাহসীকতার সাথে এই দেশের ও জাতির মুক্তির জন্য তারা শুধু কোটা সংস্কার চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তারা ন্যায় বিচার চেয়েছে। তাদের স্লোগান হলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। তারা বলেছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের এই আন্দোলন।
মহানগরী আমীর বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঘর থেকে শুরু করে গ্রাম-মহল্লায় সালিশের ক্ষেত্রেও যার টাকার জোর আছে-তিনি টাকা দিয়ে ন্যায় বিচারকে হরণ করেন। এখন সবাইকে সজাগ হতে হবে। ঘর থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা এমনকি বঙ্গভবন পর্যন্ত কোথাও কোনো বৈষম্য চলবে না। আর কোথাও কোনো অবিচার চলবে না। আর কোনো ঘুষের লেনদেন চলবে না। ঘুষ কেউ দেবেও না, আর ঘুষ যদি কেউ চায়-তাকে উচিৎ শিক্ষা দেবেন।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো আপনারা স্থিতিশীল হন। তারপরে যে নতুন সরকার আসবে তার কাছেও আমাদের দাবি থাকবে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন গুলোকে বাণিজ্যমুক্ত করতে হবে। লেখাপড়ার খরচ কমিয়ে ন্যূনতম করতে হবে। যাতে করে আমাদের গরিব মানুষদের কোনো অসুবিধা না হয়।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ছাত্রসমাজ বাস-ট্রেন, বিমান যে যানবাহনে চলাচল করবে, সেগুলোতে তাদের জন্য বিশেষ ছাড় রাখতে হবে। ছাত্র সমাজই আগামী দিনের বাংলাদেশের চালিকাশক্তি। আগামী দিনের বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের ছাত্রসমাজ। এই দেশের কোনো মহল যাতে তাদের প্রতি কোনো ধরনের অপমান, অপদস্ত, হয়রানি ও অন্যায় করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস করতে হবে।
শহীদ পরিবারগুলোর উদ্দেশে মহানগরী আমীর বলেন, একযোগে গোটা বাংলাদেশে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। ঘরে ঘরে কান্না। গোটা দেশ শোকাবহ। এতে যারা শহীদ হয়েছেন তারা তো আল্লাহর দরবারে মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে রিযিকপ্রাপ্ত। তারা আমাদের মাঝে আছেন। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তারা মৃত নয় বরং জীবিত। শহীদের আল্লাহ এমন মর্যাদা দেন যে আল্লাহ স্বয়ং তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সন্তানহারা মা-বাবাদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। এসময় সাতজন শহীদ পরিবারের কাছে অর্থ সহায়তার প্যাকেট তুলে দেন সেলিম উদ্দিন।
এরআগে সোমবার পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে যাদের হাত-পা কাটা পড়েছে, তাদের জন্য আর্টিফিসিয়ালি হাত-পা লাগানোর জন্য যে খরচ হবে, তা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান