কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকস্থানে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল তিনটা থেকে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া দিয়ে শুরু হয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মাথায় হেলমেট পড়ে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গুলী চালিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৮২ জনকে চিবিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাড়াও রাজধানীর কয়েকটি নামি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে হামলা হয়েছে। রোববার রাত পৌনে তিনটার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। খুলনার জিরোপয়েন্ট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে বিশাল ছাত্রসমাবেশ ঘটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয় বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। কোটা আন্দোলনে যাওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ সময় তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
জানা গেছে, দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। এই আন্দোলনকে ঘিরে শাহবাগসহ আশপাশের রাস্তায় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাবিতে অবস্থান নেয় পুলিশ। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে অভিযান শুরু করে তারা। এ সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি গ্রুপ এবং পুলিশের সাঁজোয়া যান একসঙ্গে সামনের দিকে যেতে দেখা যায়।
অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেওয়া শুরু করে। এসময় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। এদিকে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটের দিকে শহীদউল্লাহ হলের ভেতরে অবস্থান করা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেনের উপস্থিতিতে হলের নিচে নেমে আসেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশকে দেখে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে নারী শিক্ষার্থীরা বাসে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে তাদের নামিয়ে হামলা করতে দেখা যায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। হামলা পরবর্তী ছত্রভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, রড দেখা যায়। বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেছেন, তাদের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ দিকে আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে সেখানেও দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি নিয়ে হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা- ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা , দেশটা কারো বাপের না’ অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, হামলা/মামলা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
উত্তেজনার শুরু যেভাবে : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বেলা বারোটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিসহ শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সমবেত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা নার্সিং ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের ব্যানার নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ দুপুর প্রায় সোয়া দুইটার দিকে ছেলেদের হলের দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেয়া ও আটকে রাখার খবর পেয়ে তারা সেখানে অগ্রসর হয়। কবি জসীম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি ছেলেদের হল এখানে রয়েছে। হলগুলোর সামনে পৌঁছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন হলগুলোর সামনে থেকে পিছিয়ে মলচত্বরে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ডাল ভেঙ্গে হাতে নেয়। এখানে এসে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সোয়া তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থাকা বাকি শিক্ষার্থীরাও ভিসির বাসভবনের সামনে আসে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মল চত্বর থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। তাদের সাথে বহিরাগত অনেককেই অংশ নেয়।
সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, বহিরাগতদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে টানটান উত্তেজনা চলছে। এমনকি সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। বিকেলে সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসএম ছাত্রলীগ, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হকিস্টিক, লাঠি নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের মহানগরের নেতা-কর্মী এবং বহিরাগতরা ঢামেকে যান। তারা মেডিকেলের গেট ঘিরে থাকায় আহত কেউ হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারছেন না। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজু ভাস্কর্যে শেখ ওয়ালী ইনান ঘোষণা দেন, সবাই দোয়েল চত্বরে যান। তখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ, ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দোয়েল চত্বর ও মেডিকেল মোড় এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ দিন দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, নার্সিং কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল নিয়ে প্রতিদিনকার মতো ঢাবির হলগুলোতে যান। এ সময় দুপুর তিনটার দিকে খবর আসে, বিজয় একাত্তর হলে মিছিলে শিক্ষার্থীদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। খবর পেয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। এ সময় বিজয় একাত্তর হলে হেলমেট, লাঠিসোটা, হকিস্টিক নিয়ে হলগেটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলগেটে ভাঙচুর চালান। এ সময় পার্শ্ববর্তী কবি জসীমউদ্দীন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। দুই-তিনজন শিক্ষার্থীকে মারতে থাকে ছাত্রলীগ। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি রবিউল হাসান রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন রশীদ এবং বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তকে এ হামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এসে মহড়া দেন এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ সবাইকে নিয়ে মলচত্বরে যান।
এ দিকে পরিস্থিতির অবনতি হলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মলচত্বরের দিকে চলে যান। এদিকে আগে থেকেই মধুর ক্যান্টিনে লাঠিসোটা, স্টিলের পাইপ, হকিস্টিক, মোটা কাঠ নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেন। তার সঙ্গে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতও ছিলেন। তারা প্রায় সবাই হেলমেট পরিহিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মলচত্বরে গেলে ঢাবির শ্যাডোর দিক থেকে তাদের ওপর হামলা চালান তারা। এ ছাড়াও সূর্যসেন হল, প্রশাসনিক ভবন, ভিসি চত্বর থেকে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতরা লাঠিসোটা, স্টিলের পাইপ নিয়ে হামলে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর। তখন তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় ভিসি চত্বর হয়ে ফুলার রোডের দিকে পালাতে শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেশি বিপাকে পড়েন নারী শিক্ষার্থীরা। মেয়েদেরকে দৌড়ে দৌড়ে হকিস্টিক-লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে বহিরাগতরা। ভিসি চত্বরে বিআরটিসি বাসে আত্মরক্ষার্থে উঠেন বহু নারী শিক্ষার্থী। তাদেরকেও বাস থেকে নামিয়ে পেটাতে থাকেন তারা। ফলে অনেকে ব্যাগ, ছাতা ফেলে কোনোমতে দৌড়ে পালান। কেউ ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে, কেউ পলাশীর দিকে, কেউ নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও রাজিবুল ইসলাম বাপ্পিকে দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আর বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় ক্যাম্পাসজুড়ে। অন্যদিকে সৈকতও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী নিয়ে মহড়া দেন। এ সময় সবার হাতে মোটা কাঠ, স্টিলের পাইপ, হকিস্টিক ছিল। পরে তারা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তারা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী’ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, প্রায় দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। অনেকেই আটকে আছেন। সাংবাদিকরা দয়া করে তাদেরকে নিরাপদে আসতে কাভারেজ দিন। হলপাড়ায়, রেজিস্ট্রার ভবনে, এস এম হলে, টিএসসিতে আটকে আছে নারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্রী তানজিলা তাসনীম বলেন, ‘ভিসি চত্বরে মৈত্রী হলের এক মেয়ের হাতে ইটপাটকেল লাগার কারণে নড়তে পারছিল না। ফলে আমি ওকে ছেড়ে আসতে পারিনি। এ সময় হেলমেট পরা কয়েকজন এসে আমাদের সরে যেতে বলেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমি বলেছিলাম, আমি জাস্ট যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। তারপর উনি আমার ডান হাত মুচড়ে দিয়েছে। আমরা এখন ওই মেয়েকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছি। আমার খারাপ লাগছে, নিজ ক্যাম্পাসে এভাবে হামলার স্বীকার হয়েছি। এ দিকে সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাসের এক শিক্ষার্থীকে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে পেয়ে পিটুনি দেয় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়াও শিক্ষার্থী পেলেই মারধর করা হচ্ছে। সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের তারা উস্কে দিয়েছে। আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। আজকে তাদেরকে আমরা ৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে শয়ন বলেন, ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নন, তারা বিএনপির ইশরাকের কর্মী। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০-২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের এক্টিভিস্ট। এসময় তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের তিন থেকে চারজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত রাতে (রোববার) বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কারে সরকারকে দেয়া দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যহত থাকবে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার সময় পুলিশকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করতে থাকে। অনেক আহত শিক্ষার্থীকে রিক্সায় করে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে এ সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে বের হয়ে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন, কলাভবন, লেকচার থিয়েটারসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘাত।
ঢাকাতে পুলিশ মোতায়েন: সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পাশে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে উপস্থিত ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতির পর ঢাবি এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এদিকে পুলিশের ১০০ গজ দূরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘জবাব চাই জবাব চাই, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এর আগে বিকেল ৬টা থেকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছিল। একই সঙ্গে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে এখনো সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। একই সঙ্গে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিকেল ৬টার দিকে শহীদুল্লাহ হল এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে পিছু হটে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই এলাকায় এখনো উভয়পক্ষের মধ্য দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছিল। শোনা যায় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ।
১৮২ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ১৮২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে আহত অবস্থায় অন্তত ১৮২ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইডেন কলেজের ভেতরে ছাত্রলীগের হামলায় ছয় ছাত্রী আহত হয়। এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, জিয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। আহতদের বেশিরভাগ মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। ঢামেকে আসা আহতদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- সায়মা, তামান্না, ফাহমিদা, এসকায়া, মাহমুদুল হাসান, ইয়াকুব, নাজিব, মাসুদ, জাহিদ, সাখাওয়াত, সায়মন, সাকিব, ইভা, ইমরান, কাজি তাসনিম, সাকিল, ইভা, ফাহিম, এনামুল, শাকিল, হামজা, রিফাদ রশিদ, জহির, তিশা, রানা, সুজন, সাখাওয়াত, রফিক, সীমা, ইমু, ইসরাত, জুয়েল, জুবেল, লিখন, সাজ্জাদ, আভানা, নাঈম, সাব্বির, রায়হান, কাইয়ুম, মেঘ বাসু, সাকিব, ফাহিম, আহসানুল্লাহ, লাবিব, তানভীর, ফাহমিদুল, রেয়োম, শাকিল, প্রিয়া, সাব্বির, মাসুম, ফাহিন, ইমন, আবু যাহেদ, শুভ, সাকিব, মাহবুব, জুনায়েত, মুরাদ, মেহেদী আসাদুল্লাহ, খোকন, উজ্জ্বল, অরপি, ইতি, রাফিম, সিয়াম, অমি, জামিয়া, সুমন, রিজভী, আবিদ ও তরিকুল। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে আসা পাঁচ শিক্ষার্থীর নাম জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় হামলা করেছে ছাত্রলীগ। ‘প্রধানমন্ত্রী সংবাদিক সম্মেলনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকার ডেকেছেন’ এ অভিযোগে রোববার রাত ১১টার দিকে চবি ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সেখানে একদফা হামলার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে।
জানা গেছে, বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার, রাজাকার’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। জিরো পয়েন্টে প্রায় আধাঘণ্টা অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কাটা পাহাড় রোড হয়ে শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায়। এসময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সুমন নামে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি ও বাঁশ নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ করেছে বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে ঘটনাস্থলেই আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে। পাশাপাশি বেলা আড়াইটার শাটল ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে ছাড়তে দেয়নি ছাত্রলীগ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ক্যাম্পাস থেকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা শহরে যেতে পারেননি।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী খান তালাত মাহমুদকে শাটল ট্রেন থেকে ধরে এনে মারধর করে প্রক্টর অফিসে আনেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তার ভর্তি বাতিলের দাবিতে প্রক্টর অফিসে রাফিকে নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তালাত মাহমুদকে ধরে নেওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে প্রক্টর কার্যালয়ের দিকে রওনা হন। তবে এই মিছিল শহীদ মিনারের সামনে এলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হামলার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাও করেন। ওই কার্যালয়ে তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবস্থান করছিলেন। ঘেরাও করে তখন তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইউজিসি থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। যারা এ নির্দেশনা মানবে, আমি তাদের পক্ষে। আর হামলার বিষয়ে তারা কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।
ক্যাম্পাসে সমন্বয়কারী খান তালাত মাহমুদকে মারধর করে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া ও মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধীপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও বর্তমানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টায় আমরা ষোলশহর স্টেশনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু ৫টার দিকে হঠাৎ করে পেছন থেকে ছাত্রলীগ দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তখন আমরা নিজেদের আত্মরক্ষায় পাল্টা হামলা করি। পুলিশ সেখানে থাকলেও আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এতে যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন না আটকালেও বন্ধ রয়েছে নগর থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেন।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ষোলশহরে আমাদের আজ (সোমবার) অবস্থান কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। শাটল ট্রেন আসতে দেওয়া হচ্ছে না। শাটল ট্রেনের লোকোমাস্টারকেও অপহরণ করা হয়েছে। আমরা বাসে করে ষোলশহর যাচ্ছি। যতই হামলা হোক আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। রোববার রাতে আমরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা হয়। দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ হামলার বিচার না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন তারা।
জানতে চাইলে ষোলশহর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, শিক্ষার্থীরা ষোলশহর রেলস্টেশনে আন্দোলন করছেন। আবার ক্যাম্পাসেও ছাত্ররা ইঞ্জিনের চাবি নিয়ে গেছেন। এ কারণে বেলা আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে। সেখানে কয়েকজন ‘সামান্য’ আহত হয়েছেন জানিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, চবিতে আমাদের একটি টিম আছে। একজন মারা গেছেন বলা হলেও সেটি সম্পূর্ণ প্রপাগান্ডা। কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। আর প্রপাগান্ডা যারা ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১. সাভার সংবাদদাতা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযাগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। এছাড়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার রাত চার টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘট। এর আগ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১১ টার দিকে বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, ‘তুমি ক আমি ক, রাজাকার রাজাকার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জড়ো হন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্বকবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর হলের দুইজন আন্দোলনকারীকে অবরুদ্ধ করে ফোন তল্লাশির অভিযাগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই খবর জানাজানি হলে রাত সাড় ১২টার দিকে বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষাভ মিছিল নিয়ে হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় দুই শিক্ষার্থীকে আটক রেখে মোবাইল তল্লাশির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে প্রাধ্যক্ষকে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর অনুরাধ জানান আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসেন বিশ্বকবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। তখনো শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের সামনে ও ক্যাম্পাসে বিক্ষাভ করছিলেন।
এরপর রাত দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি রাত সোয়া দুইটার দিকে ফের রবীদ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধা দেন এবং মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ কয়কজন শিক্ষক দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দেন ও নারী শিক্ষার্থীদর উদ্দেশ্য গালাগাল করন।
এক পর্যায়ে রাত চার টার দিকে বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকারীরা হলের ফটকে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় বিশ্বকবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ৪৬তম ব্যাচর ছাত্র প্রাচুর্যসহ বেশ কয়েকজন হামলা করেছেন।
এদিকে ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনকারীদের মধ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়াটকনালজি অ্যান্ড জনটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা আহত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘আজ যা ঘটনা ঘটেছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে হল চালানা সম্ভব না। আমি প্রাধ্যক্ষর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।’
রাবি রিপোর্টার: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা পৌনে ১টা থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক ও ছাত্র হিসেবে আমাদের দাবি উত্থাপন করতে রাজপথে এসেছি। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন তখনই হবে, যখন মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হবে। দাবি আদায় না হলে আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’ এর আগে রোববার দিবাগত রাতে একই দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ও প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
সিলেট ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করে তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে, শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সঙ্গে অতিদ্রুত সংসদে আইন তুলে কোটা সংস্কার পাস করতে হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জেরে রোববার মাঝরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাবিপ্রবির ক্যাম্পাস। রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হলে সেখানে ছাত্রলীগ বাধা প্রদান করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হওয়ার অভিযোগ উঠে।
খুলনা ব্যুরো : কোটা সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার জিরোপয়েন্ট মোড় অবরোধ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল ৫টা থেকে তারা মিছিল নিয়ে জিরোপয়েন্ট অবস্থান নেয়। তাদের আন্দোলনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। এ সময় খুলনা-সাতক্ষীরা এবং খুলনা-ঢাকা-বাগেরহাট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এসময় ‘কোটা দিয়ে বৈষম্য নয়, বৈষম্যমুক্ত দেশ চায়’,’আমার সোনার বাংলায় কোটা প্রথার ঠাঁই নায়’, ’চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, শিক্ষার্থীদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে,‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে সড়কপথ প্রকম্পিত করে তোলে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা প্রথার সংস্কার সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চরম অপমানজনক আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এবং একই সাথে বলতে চাই, শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকা একটি যৌক্তিক আন্দোলনের উপর পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এর বিচার চাই এবং কোটা প্রথার সংস্কার চাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবার মাঝরাতে হল ছেড়ে রাজপথে নেমে এসেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খান জহান আলী হল, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগদেন। এ সময় তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। ‘চাইলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ এমন সব স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক থেকে বের হয়ে নগরীর জিরো পয়েন্টের দিকে যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তবে এসময় রাস্তা অবরোধ করেননি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রোববার বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদিক সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে? এটি দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে তারা ক্ষুব্ধ। এর প্রতিবাদ জানাতেই তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
যশোর সংবাদদাতা : যশোরে কোটা বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন সরকারি এম এম কলেজ থেকে আসা একটি মিছিল হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এমনকি মাসুম নামে এক সংগঠককে ধরে নিয়ে গেছে তারা। কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় পালবাড়ি থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন সরকারি এম এম কলেজ থেকে আসা একটি মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এমনকি মাসুম নামে এক সংগঠককে ধরে নিয়ে গেছে তারা।
মিছিলে আশা এক শিক্ষার্থী বলেন, এম এম কলেজ থেকে ছাত্র সংগঠক মাসুমের নেতৃত্বে তারা মিছিল নিয়ে বের হন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয়ার কথা ছিল তাদের। মিছিলটি মুসলিম একাডেমী স্কুল মার্কেটের সামনে পৌঁছেলে তিনটি মোটরসাইকেলে ৬-৭ জন ছাত্রলীগ কর্মী এসে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এসময় মাসুমকে ধাওয়া দিয়ে গরীবশাহ মাজারের কাছে নিয়ে যায়। এরপর তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
ফরহাদ আহমেদ অপর এক আন্দোলনকারীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর অযৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। একইসাথে সব ধরনের কোটার সংস্কার চান। স্কুল, কলেজ, চাকরি সব ক্ষেত্রে মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেবার দাবি তাদের। কিন্তু সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে দাবি পূরণ না হওয়ায় পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা : চলমান কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক নিয়োগে সরকারি পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে মানববন্ধন করতে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগের বাঁধায় মানববন্ধন পন্ড হয়ে যায়। তবে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হাফিজ চত্ত্বরে বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করে সাধারন শিক্ষার্থীরা।কিন্তু ছাত্রলীগের প্রতিবাদের মুখে আন্দোলন করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক শেজ্জাদুল শীষ অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগের বাধার কারনে সমাবেশ করতে পারি নি আমরা। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আমাদের ব্যানার টানাটানি করে এবং আমাদের প্রান নাশের হুমকি দেয়’।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের রায়কে সবসময় সম্মান জানাই। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই এবং ছাত্ররাই কোটা আন্দোলন সফল করে দেখাবে ইনশাআল্লাহ’।
এ সময় কালীগঞ্জ থানার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।