গত সপ্তাহে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। সকাল সকাল বাস কাউন্টারে গিয়ে জানতে চাইলাম, “গন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে? কাউন্টারের স্টাফরা বললেন, ‘সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে তো ৪-৫ ঘন্টাতেই যাওয়া যায়। কিন্তু এখন যে কত সময় লাগবে তা অনিশ্চিত। আমাদের গতকালের গাড়িগুলো আসতে ও যেতে ১৪-১৫ ঘন্টা সময় লেগেছে। ঢাকা থেকে বের হতে কিংবা ঢাকায় ঢুকতেই মূলত কয়েক ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে বিধায় যাত্রার সময়ও দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, মহাসড়কের পাশে যেসব বিশ^বিদ্যালয় আছে সেখানকার ছাত্ররাও চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মহাসড়ক অবরোধ করার কারণে হুটহাট যে কোনো জায়গায় যানজট তৈরি হয়ে যাচ্ছে।”
দূরপাল্লার বাস যখন ৭-৮ ঘন্টা বেশি রাস্তায় আটকা থাকে তখন মানুষের যে কী পরিমাণ ভোগান্তি হয় বা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের এখানে সিংহভাগ মানুষ নন-এসি এবং দুর্বল ধরনের বাসে যাতায়াত করে। ফলে, গাড়ি থেমে থাকলে তাদের কষ্ট কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বাসগুলোতে যাত্রী হিসেবে অনেক বয়স্ক থাকেন, শিশুরা এবং অসুস্থ রোগীরাও থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই এ ভোগান্তিগুলো তাদের জন্য অনেকটা শাস্তির মতোই হয়ে যায়।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়েই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই দাবিগুলোর সাথে সমাজের সিংহভাগ মানুষই একমত। মেধার মূল্যায়ন চান সবাই। এই দেশে দরিদ্র সীমার নীচে যেখানে অসংখ্য মানুষ বসবাস করে, কোটি কোটি যুবক যেখানে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত, সেখানে ৫৬ শতাংশ চাকরি বরাদ্দকৃত কোটা পূরণেই চলে যায় তাহলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিয়তায় পড়ে যায়। এই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থাতেই বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, টাকার বিনিময়ে দুর্নীতি এবং পিএসসির কর্মচারিদের ভয়াবহ অসততার তথ্যগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলে আন্দোলন যেন ভিন্নমাত্রা পায়। ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবক সবাই তাই কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং মেধার যথাযথ মূল্যায়নের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।
তবে একমত হলেও মানুষের তো আসলে ঘর থেকে বের না হয়ে উপায় নেই। জীবন ও জীবিকা, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় কাজে মানুষকে বের হতেই হয় আর তখনই তারা পড়েন অসহনীয় ভোগান্তিতে। সরকার ও প্রশাসকদের প্রতি জনগণের ক্ষোভও দৃশ্যমান। কারণ আন্দোলনকারীরা নির্বাহী বিভাগকে কোটা ইস্যুসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বললেও সরকার বারবারই আদালতের রায়কে সামনে এনে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের সময় আদালতের রায়কে অজুহাত বানানোর চেষ্টা চোখে পড়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা এই কূটকৌশলগুলোর বিষয়ে সচেতন হওয়ার কারণে আর এই ফাঁদে পা দেয়নি।
আন্দোলন ও কর্মসূচি চলমান থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা। শহরের মোড়ে মোড়ে আন্দোলনকারীরা বসে যাওয়ায় অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যাতায়াত ব্যবস্থা। বাসসহ অন্য যানবাহন প্রধান সড়কগুলোয় আটকা পড়েছিল। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। দেখা গেছে শহরের ভেতর আধাঘন্টার পথ যেতে নাগরিকদের এখন আড়াই তিন ঘন্টা সময় লাগছে। আমি নিজেও দেখেছি, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সুযোগ নিচ্ছেন রিকশাচালক, সিএনজিচালক, রাইড শেয়ারিং করা মোটরসাইকেল চালকরা। ২০০ টাকার ভাড়া চাচ্ছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। রিকশাওয়ালারা কোথাও যেতে চাইছেন না। যারা একটু নমনীয় হচ্ছেন তারা ভাড়া চাইছেন দুই থেকে তিনগুণ। একে তো সব সড়ক বন্ধের কারণে দুর্ভোগ, তার ওপর আবার অস্বাভাবিক ভাড়ার চাপে বিপর্যস্ত রাজধানীর সাধারণ মানুষ।
সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের তরফ থেকে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বেশ কিছু জায়গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় জনজীবনে ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। শুধু রাজধানীতেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। রাজধানীর সঙ্গে সংযোগকারী দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কও অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় বাস পৌঁছাতে পারেনি।
এরকম জনদুর্ভোগ আমাদের নাগরিকদের জন্য নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে, রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্তমা বা মেগাসিটিসহ নানা নামে বিশেষায়িত করা হলেও বাস্তবে এই নগরের নাগরিকরা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও পান না। গত শুক্রবারের কথাই ধরা যাক। সেদিন মধ্যরাত থেকে একটানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টিপাত হওয়ায় গোটা শহরটি যেন ইতালির বিখ্যাত ভেনিস নগরীর রূপ ধারণ করেছিল। এত বছর চলে গেলো, এত সরকার বা মেয়রের পরিবর্তন হলো। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর। এ থেকে মুক্তি পেতে মহাপরিকল্পনার পর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা ফেলায় নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে অল্প সময়ে ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী।
যদিও সেদিন শুক্রবার হওয়ায় অফিস স্কুল বন্ধ থাকায় মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এরপরও কোনো প্রয়োজনে যারাই বের হয়েছেন বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। অনেকে সঙ্গে ছাতা বহন করলেও প্রবল বর্ষণে তা কাজে লাগেনি। ফলে পথচারীসহ ছিন্নমূল মানুষদের অনেককে আশ্রয় নিতে হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনার নিচে। এ সময় রিকশাসহ গণপরিবহন চলাচলও ছিল কম। ফলে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষের। টানা ছয় ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে সড়কের জলাবদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চাকরির পরীক্ষাকেন্দ্র, নিউ মার্কেট, কৃষি মার্কেটসহ অনেক এলাকার বাসাবাড়ির নিচতলায়।
বিশেষ করে রাজধানীর নীচু এলাকাগুলোতে যেমন সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানাধীন রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মহল্লার অলিগলি ছিল পানির নিচে। খিলগাঁও থানার ভূঁইয়াপাড়া, তিতাস রোড, বনশ্রীর বেশির ভাগ সড়ক সন্ধ্যা পর্যন্ত হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত ছিল। জলাবদ্ধতায় এসব এলাকায় দেখা দেয় দুর্ভোগ। সড়ক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে রিকশাসহ অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
সাধারণত আমাদের এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষা বা কর্ম কমিশনের নানা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এদিন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি ও নগরজুড়ে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বিপাকে পড়েন অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে অনেকে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। অনেকে বের হলেও সড়কে পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় বিপাকে পড়েন। এই সুযোগে সিএনজি-রিকশাচালকরা ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের।
ভারী বৃষ্টির কারণে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে প্রবেশের সময় ডান দিকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে সড়ক থেকে উপচে পড়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এতে ক্যাম্পের ফ্লোর পুরোটাই তলিয়ে যায়। পুরনো ভবনের নিচতলায় ভ্যাকসিন সেন্টার বেইসমেন্টেও পানি প্রবেশ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গতকাল ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দুই হলের গেট থেকে শুরু করে পেছন পর্যন্ত কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। হল দুটিতে বিদ্যুৎও ছিল না। ফলে, বন্ধ হয়ে যায় ক্যান্টিনসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এই দুই হলের নারী শিক্ষার্থীরা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শাহনেওয়াজ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ প্রায় সব হলের একই অবস্থা ছিল। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, সরকারী কলেজের ডরমিটরি কিংবা ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবাসন কাঠামো যে কতটা নাজুক ও অমানবিক-তা এসব জায়গায় যাদের যাতায়াত আছে তারা ভালোভাবেই জানেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, দীর্ঘদিন একই সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও এই বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া হয়নি। আর ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রছাত্রীদের অবর্ণনীয় জীবন যাপন নিয়ে যতটা সরব হতে পারতো, ততটা হয়নি।
রাজধানীর বাজার ও মার্কেটগুলোতে পানি জমা অনেকদিনের পুরনো একটি সমস্যা। একটু বৃষ্টি হলেই এসব স্থান আর মানুষের যাতায়াতের উপযোগী থাকে না। যেহেতু সপ্তাহের ছুটির দিন অধিকাংশ পরিবারের কর্তারা বাজার সদাই করেন, এবার জলাবদ্ধতার কারণে তারা বাজারও করতে পারেননি। শুক্রবারের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নিউমার্কেট, মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেট ও শান্তি নগরের কাঁচাবাজারের মতো বড়ো বড়ো বাজারগুলো। এই বাজারগুলোতে যেমন অনেক সমিতি আছে তেমনি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের সংস্থা আছে। এরপরও বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনো পর্যন্ত কার্যকরী কোনো প্রয়াস দেখা যায়নি।
বৃষ্টি বেশি হলে ঢাকা শহরে আরেকটি যে সংকট দেখা দেয় তাহলো সড়কগুলোতে গণপরিবহনের প্রচন্ড সংকট বেড়ে যায়। সরকারের সাথে নাগরিক কিছু দায়িত্ববোধের অভাবও ঢাকা শহরের এই সংকটগুলো তৈরির নেপথ্যে ভূমিকা রাখছেন। জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাতেও নাগরিক দায়িত্বহীণতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, “শুক্রবার কম সময়ে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরাতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের তিনটি পাম্প চলছে, যেগুলো সেকেন্ডে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি সরাতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পাম্প টানা চালানো যাচ্ছে না। একটু পর পর ময়লায় পাইপে জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে। পানি সরাতে যে কত প্রতিবন্ধকতা, তা গণমাধ্যমকর্মীরা এসে দেখে যেতে পারেন। পলিথিন বর্জ্য থেকে মানুষের বাড়ির ছোট-বড় এমন কোনো ময়লা-আবর্জনা নেই, যা পানির স্রোতের সঙ্গে এখানে আসছে না। ড্রেনের মুখগুলো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খালগুলো দখল করায় সংকুচিত হয়ে এখন ড্রেনের পর্যায়েও নেই। পাম্প টানা চালানো না গেলে কিভাবে পানি দ্রুত সরবে?”
মূলত, রাজধানী ঢাকার কোনো সংকটই একদিনে তৈরি হয়নি। কোনো সংকটের জন্যেও কোনো এক পক্ষকে দায়ী করাও সমাধান নয়। প্রশাসন যেমন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে চলে যাওয়ার কারণে নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধানে তৎপর হচ্ছে না, অন্যদিকে, বেশিরভাগ নাগরিক নিজেদের ভালো থাকার বাইরে অন্য কারো জন্য ভাবতে রাজি নয়। তাই নগর সমস্যার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে নাগরিকদেরই। যদি আমাদের প্রশাসন জনবান্ধব, নৈতিক ও জবাবদিহিমূলক হয়ে উঠতে পারে আর নাগরিকেরাও তাদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে যদি সচেতন হন- তাহলে হয়তো এই শহরের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। আর যেভাবে চলছে সেভাবেই যদি সব চলতে থাকে তাহলে সংকটের কোনো সমাধান তো হবেই না, বরং এই শহরটিই হয়তো পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা শহর শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের সকলের। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন হয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই।