প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি এখনো আদায় না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোববার পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কর্মসূচি পালন করেছেন। এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পেনশন নিয়ে শিক্ষকদের ধারণা বিভ্রান্তকর। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। এর মধ্যে রোববার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায় ‘প্রত্যয়’ স্কিমের বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়েছে সরকার। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শনিবার আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ নেতারা। শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদাসহ ১২ জন শিক্ষক এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শিক্ষকদের তিন দফা দাবির বিষয়ে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি। এরপর রোববার সকালে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এতে সব শিক্ষকই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের একটি সভা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে আমাদের মাঝে বোঝাপড়ায় যথেষ্ট ব্যবধান রয়ে গেছে। আজ আমরা আলোচনা করেছি। যেহেতু আমাদের দাবি পূরণ হয়নি, তাই সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমাদের আন্দোলন যেভাবে আছে, সেভাবেই চলবে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের সঙ্গে যেহেতু একটি সভা হয়েছে, সবাই একে ইতিবাচক হিসাবে নিয়েছেন। আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমেই এর সুরাহা হবে।
এদিকে রোববার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের (শিক্ষকদের) একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, এখানে একটি পেনশন ফান্ড আছে। কিন্তু পেনশন ফান্ড বলে কিছু নেই। যারা আমাদের ট্যাক্স পেয়ার, তাদের টাকা থেকে পেনশন দেওয়া হচ্ছে। আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম করে দিয়েছি সবার জন্য। তাদের (শিক্ষকদের) অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, এগুলো বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। পেনশন নিয়ে তাদের ধারণা বিভ্রান্তকর।
প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমি আসলে এখনো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনিনি। যে আন্দোলন করছি, তারপর অনেক কষ্টে একটা সভা করেছি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। কিন্তু তিনি শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী নন। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি এই মন্তব্য করেন, সেটার ওপর এখনই আমাদের কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সহায়ক কর্মচারীরা। এ সময় শিক্ষকরা আন্দোলন বন্ধ করে ক্লাসে ফিরলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসরুমের তালা খুলবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে তারা প্রধান ফটকের সামনে সদরঘাটগামী রাস্তা অবরোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামাল হোসাইন বলেন, আমাদের এই আন্দোলন সরকার বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের আন্দোলন কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে। প্রত্যয় স্কিম বাতিল না হলে আমরা কেউই কর্মক্ষেত্রে ফিরব না।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ফেডারেশনের মহাসচিব ও জবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে মহাসমাবেশ ডাক দেব। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি শনিবার আলোচনার নামে প্রহসন সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের বুঝ দেওয়া হয়েছে, তারা ক্লাসে ফিরলেও আমরা ফিরব না। প্রয়োজনে আমরা ইউজিসি ঘেরাও করব।
এদিকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। রোববার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন। এ সময় শিক্ষকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, ‘আজ (রোববার) সকালে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মিটিং হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমাদের গতকাল (শনিবার) আলোচনা হলেও কোনো আশানুরূপ ফল আমরা দেখতে পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, দাবি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. মমিন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : ১৪তম দিন রাববার সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঘণ্টাব্যাপী তারা অবস্থান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, প্রত্যয় স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকবেন না-এমন প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সব শিক্ষকের মতামত ছাড়া আমরা ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্তই জানাব না। আমরা সরকারের কোনো প্রলোভনে পা দেব না। প্রয়োজনে আমরা মাসের পর মাস এখানে বসে থাকব। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (সভাপতির অবর্তমানে) অধ্যাপক কামরুল হাসানসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
পবিপ্রবি (পটুয়াখালী) : সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালায় ১২ দফা সংযোজনের দাবিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মবিরতি কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা এ কর্মবিরতি পালন করেন। পরে দুপুর ১২টায় জয় বাংলার পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
https://www.jugantor.com/index.php/todays-paper/first-page/828159